১৮।
ঝিঁঝিঁর মতো আওয়াজটা শুরু হওয়ার দুই সেকেন্ডের মধ্যেই হঠাৎ কী একটা রশ্মি এসে পড়ল আশ্চর্যের গায়ে। একটু পরেই রশ্মিটা তার উৎসে অর্থাৎ ছায়ামূর্তির অবয়বে ফিরে মিশে গেল। সতর্ক ভঙ্গি থেকে নিশ্চিন্তিতে পৌঁছে অন্ধকারের অতিথি এবার গড়গড় করে বাংলাতেই বলে উঠল— আশ্চর্য, তুমি কনট্রোল প্যানেলের টেবলটার নীচের দেরাজে বড় নাইলনের দড়ি পাবে। ওটা ওখানে আপৎকালীন নিরাপত্তার জন্য রাখা থাকে। দড়িটা বার করে খুব ভাল করে পড়ে থাকা লোকটাকে বেঁধে ফেল এক্ষুনি। লোকটা আরও চল্লিশ মিনিট ঘুমোবে। তাই মুখ বাঁধবার কোনও দরকার নেই। আমি অত্যন্ত দুঃখিত, এই বাঁধবার কাজে তোমায় সাহায্য করতে পারছি না…
আশ্চর্য বাধা দিয়েই বলল— আরে না না, ব্রহ্মদা, আপনাকে সব করে দিতে হবে কেন? আমিই বেঁধে ফেলছি একে। আসল কাজটাই তো করে রেখেছেন, আর কী চাই! এর’ম তাগড়া জোয়ান লোককে দিব্যি ঘায়েল করেছেন! লোকটা বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে—
— এটা আমি করেছি আমার ডান হাতের সম্মোহনী শক্তির সাহায্যে। ওটা বড় ব্যাপার না। আর আমার কাছে অন্য একটা জিনিস আছে, একটা নিউক্লিয়র অস্ত্র। এটা একটা তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ তৈরি করে। এলিয়েন উপস্থিতির কাছাকাছি এলে যেমন তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণে পুড়ে যায় শরীর, এতেও ঠিক তাই হয়। তবে সেসব কথা থাক। আমি আসাতেই অনেকটা ক্ষতি সামলে নেওয়া গেছে। বাকি কাজটা যদি তুমি করতে পারো, আমাদের প্রযুক্তির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক আবিষ্কার আরও দ্রুততায় হবে, সে আবিষ্কার উন্নতও হবে। আশা করছি, তুমি তা পারবে।
এসব কথা শুনতে শুনতেই নাইলনের দড়িটা বের করে পড়ে থাকা অনুপ্রবেশকারীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলল আশ্চর্য। লোকটার আর নড়বার উপায় রইল না। একদা এনসিসি ট্রেইনিং নিয়েছিল, সেখান থেকে শেখা বিশেষ গিঁট বাঁধার বিদ্যে কাজে লাগল। লোকটাকে বেঁধে দু’হাত ঝেড়ে সে বলল— ব্রহ্মদা, আপনি কী যে সব কথা বলছেন, আমার মাথার অনেকটা ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ়—
— বলছি। তবে তার আগে তোমাকে আমার পরিচয়টা দেওয়া দরকার। তোমার আমায় চিনতে ভুল হয়েছে। আমি ড: ব্রহ্ম ঠাকুর নই।তোমার জেনে নেওয়া প্রয়োজন, আসলে আমি কে। আমারও জেনে নিতে হবে, তুমি আমায় সাহায্য করতে চাও, নাকি তা করতে চাও না।
—হিমশীতল কণ্ঠে আশ্চর্যকে কথাটা বলল অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুক। তার শেষ কথাটায় বোধহয় একটা প্রচ্ছন্ন হুমকিও মিশে ছিল।
আশ্চর্য অবশ্য হুমকিটাকে পাত্তা না দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই হাসল। বলল— তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমি যেমন ভাল্লুক-মানুষের ছদ্মবেশে এখানে এসেছি, আপনিও সেরকমই মুখোশ পরে আছেন! মুখোশ বনাম মুখোশ। ছদ্মবেশ বনাম ছদ্মবেশ। বলছি, এটা কি একধরনের কাব্য করবার চেষ্টা? নাকি নিদারুণ এক রসিকতা? দাঁড়ান তো, মোবাইলের আলোটা জ্বেলে আপনার উপর ফেলি— এই আলো আঁধারির যাত্রাপালাটা এবার বন্ধ করা দরকার…
মোবাইল-টর্চের আলোটা অতিথির উপর ফেলতেই আশ্চর্যের একটা অদ্ভুত জিনিস নজরে এল। সে দেখল অতিথি ব্রহ্ম ঠাকুরের মতোই দেখতে হলেও তার চোখদুটো একটা লাল রঙের চশমার আড়ালে ঢাকা। ব্রহ্ম ঠাকুর হঠাৎ এ রকম লাল রঙা চশমা পরবেন কেন? তাঁর মুখই বা অমন দয়ামায়াহীন ঠেকবে কেন? আশ্চর্যের হিসেব হঠাৎ গুলিয়ে গেল। সে মনেমনে ভাবল— লোকটার কথাই কি তবে ঠিক? এ বোধহয় সত্যিই ড: ব্রহ্ম ঠাকুর নয়। তাহলে রহস্যময় এই ব্যক্তিটি আসলে কে?
অন্ধকার ঘরটায় আশ্চর্যের হঠাৎ খুব ভয় করে উঠল। কেঁপে উঠল তার হাতে ধরা আলো জ্বলা মোবাইল। এ কি তবে সেই কুখ্যাত গোষ্ঠী ‘দ্য হিডেন ব্যালেন্স’-এরই কোনও ছদ্মবেশী প্রতিনিধি? তবে প্রথমে ইংরেজি বললেও এখন তো বাংলা ভাষাতেই কথা বলছে! তাহলে এ কি ওদের কলকাতা শাখার সেই দলপতি, যার নির্দেশে ঘটেছিল গত রাতের ‘ব্যালেন্সকিপার’দের ব্যর্থ অভিযান? নাকি বিটিটু-ও নয়, ব্যালেন্সও নয়, তৃতীয় কোনও অজানা পক্ষ এসে হাজির হয়েছে ব্রহ্ম ঠাকুরের এই আস্তানায়?
১৯।
মস্ত বড় গির্জাটার বিরাট খিলান প্রায় আকাশ অবধি উঠে গেছে। একটা বিরাট ত্রিভুজ আকারের গেট— তার ভেতরে অনেকটা অংশ জুড়ে ছড়ানো দালান। দালানের পেছনদিকে আবার উঠে গেছে তিনধাপ সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে উঠলে প্রথমেই একটা হলঘরের কাঠামো এতটা দূর থেকেও বোঝা যাচ্ছে। ব্রহ্ম ঠাকুরের পেছনে দাঁড়ানো কিশিমোতো ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন, ওইটাই হল সেই ভূতুড়ে ঘর, যেখানে বহুযুগ আগে চালানো হয়েছিল আদিম মানুষের ওপর মেডিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট। অথবা বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষার শিকার কিছু মানুষকে রাখা হয়েছিল ওখানে। তারপর ধরা পড়ে, ঘরটা আসলে এক অদ্ভুত শব্দকুহর। ঘরটার দেওয়ালগুলোতে প্রকৃতির অধিকার আশ্চর্য ছাপ ফেলেছে। সে ঘরের দেওয়ালগুলো গুহার দেওয়ালের মতোই হয়ে উঠেছে বুনো বড় গাছ, শ্যাওলা আর অর্কিডের বাসা। ওই মিশ্র টেক্সচারের অনন্য জ্যামিতি তো রয়েইছে, তার উপরে এ ঘরের নির্মাণে ভিনগ্রহীদের কোনও অজানা বিজ্ঞানের প্রয়োগ যে ঘটেনি, তাও হলফ করে বলা যাচ্ছে না। ফলে শব্দ দেওয়ালে প্রতিফলিত হয়ে সাধারণ নিয়মে বোবা হয়ে যায়নি, বরং বেড়েছে, বাড়তেই থেকেছে। ঘরটায় জড়ো করে রাখা আদিম লোকগুলোর আর্তনাদ অথবা বিড়বিড়ানি, গুহার মতো দেখতে সে ঘরের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে যখন লক্ষগুণে বর্ধিত হয়ে ফিরে এসেছিল, আক্রমণ করেছিল ওদেরই, অসহায়ভাবে মরে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না মানুষগুলোর।
ঘরটার ছাদ অনেকটাই ভাঙা। বোঝা যাচ্ছে এখানে উৎপন্ন শব্দ মাঝেমাঝে যে বাইরের পৃথিবীতে আকাশপথে চুঁইয়ে মিশেছে, তার গতিপথটা। আরেকটা বিশেষ ব্যাপার হল, ঘরটার রয়ে যাওয়া দেওয়ালঅংশে কয়েকটি বড় বড় জানলায় আছে রঙিন কাচের শার্সি। এত দূর থেকেও চাঁদের আলোয় হঠাৎ হঠাৎ তা ঝলমল করে উঠছে।
কিশিমোতো যে ইঙ্গিতে ব্রহ্মের দৃষ্টি ঘরটার দিকে আকর্ষণ করালেন, তার কারণ এখন আর কথা বলবার উপায় নেই। পেছনে বন্দুক ঠেকিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি ব্রহ্মকে নিয়ে চলে এসেছেন আরও কয়েকজন লোকের সামনে। চারিপাশে কয়েকজন রক্ষী আছে, কয়েকজন কম গুরুত্বের সহকারী বা চ্যালাচামুণ্ডাগোছের লোকজন আছে, তাদের কথা বাদ দিলে যে দু’জন পড়ে থাকেন, তাঁরাই আসল। ডান হাতের আঙুলের ফাঁকে হাভানা চুরুট গুঁজে রেখেছেন যিনি, সেই সোনালি চশমা কোঁকড়া চুলের প্রমাণ চেহারার মানুষটি হলেন উইলিয়াম ‘বিলি’ গিলচার, অন্যজন নিরুদ্দিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান স্যর কেভিন ‘ক্যাভি’ আইজ়্যাক। চার্চের বিশাল খোলা চত্বরটায় বসানো আছে কয়েকটা চেয়ার। রাখা রয়েছে একটা বিলিয়ার্ডস টেবিল। বিলি এবং স্যর ক্যাভি মশগুল হয়ে বিলিয়ার্ডস খেলছিলেন। তাই প্রথম যখন পিঠে রিভলভার ঠেকানো অবস্থায় ব্রহ্ম ঠাকুর ওখানে ঢুকে এলেন, তাঁকে বা অস্ত্রধারী কিশিমোতোকে লক্ষ করলেন না দু’জনের মধ্যে কেউই।
রক্ষীদের মধ্যে গুনগুন কথা শুরু হতেই অবশ্য এঁদের আগমন সম্পর্কে সচেতন হলেন বিলি গিলচার। এমন অপ্রত্যাশিত ব্যাপারটা দেখে হাঁ-হাঁ করে প্রায় যেন ছুটেই এলেন তিনি।
— আরেহ কিশিমোতো, কর কী— কর কী? মহাসম্মানিত এক এবং অদ্বিতীয় ব্রামহো টেগোরের পিঠে তুমি বন্দুক ঠেকিয়েছ? হাঃ হাঃ হাঃ! তুমি তো ভাল করেই জান যে, পিঠে উঠে আসা তুচ্ছ আরশোলার মতোই এক ঝাঁকানিতে ওটা যখন-তখন ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা টেগোরের আছে। তাই তোমার এমন আবির্ভাবকে আমি নাটকই ধরব। তা কেন কিশিমোতো? রিভলভার ঠেকানোর নাটকটা করবার মতো কী হল এমন?
কিশিমোতো ঘাবড়ে গেলেন। এই প্রশ্ন আসতে পারে তা তো ব্রহ্ম বলেননি। জবাবও তাই তৈরি করা নেই। তবুও খানিক আমতা-আমতা করেই বললেন— না না! বিশ্বাস করুন, এটা না-না-নাটক না! আসলে ড: ঠাকুর বলছিলেন, আমাদের লুকনো পারমাণবিক গবেষণার কথা উনি জেনে ফেলেছেন। পারমাণবিক গবেষণাটি নিশ্চয়ই ভুল উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে, নইলে এর কথা তো তাঁর আগেই জানবার কথা! উনি এর সম্পর্কে যা ধারণা করেছেন, এবার সেটাই রাষ্ট্র করবেন। ওঁর বক্তব্য, এখানে নাকি স্যর ক্যাভিকে বন্দি করে রেখেছি আমরা। ভীষণ ছটফট করছিলেন, তাই শান্ত করতেই ওঁকে এভাবে নিয়ে আসতে হল। ভাবলাম স্যর ক্যাভি নিশ্চয়ই ওঁকে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।
ব্রহ্ম মনেমনে মুচকি হাসলেন। এক ঢিলে অনেক কটা পাখি মেরে ফেলেছেন তিনি। প্রথমত, কিশিমোতোর কোনও ফাঁদ ছিল কি না ব্রহ্মের স্পষ্ট জানা নেই, তবে উলটে কিশিমোতোই এখন ব্রহ্মের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন। এর ফলে প্রথমত যেমন বিলি গিলচার একটি বার্তা পেয়ে গেলেন— ব্রহ্ম একলা নন, কিশিমোতোও তাঁর পক্ষেই আছেন, তাঁদের কোনও গোপন ষড় হয়েছে— ঠিক তেমনই কিশিমোতোও ব্রহ্মের নির্দেশ পালনে বাধ্য থাকবেন। তরুণ বিজ্ঞানী বুঝবেন, বিলি গিলচার এখন খানিকটা হলেও তাঁর ছলনা ধরে ফেলেছেন। ফলে তাঁর এই বিপদের পরিত্রাতা একা ব্রহ্মই হতে পারেন। ব্রহ্মের তরফেই কাজ করা ছাড়া তাঁর আর কোনও উপায় রইল না।
আসলে ব্রহ্ম ঠাকুর ভালই জানেন, এরিক দত্তের যদি কোনও বিপদ ঘটেই থাকে, তবে তাঁকে বাঁচানোর মিশনে এই মুহূর্তে যাঁকে নেতৃত্ব দিতে হবে, দায়িত্ব নিতে হবে, তিনি ড. কিশিমোতো ছাড়া আর কেউ নন।
ব্রহ্ম অবিচলিতভাবে বললেন— তাহলে বিলি, তুমি স্বীকার করছ তো, এই অঞ্চলের মাধ্যমে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের পর একটা ওয়র্মহোলের দ্বিতীয় জোরদার সম্ভাবনা নিয়ে যেসব গালভরা তত্ত্ব আমাদের কাছে কপচিয়েছ, আসলে ওগুলো ছিল নেহাতই আইওয়াশ। বরাবরই তোমার লক্ষ্য ছিল নির্জন একটা দ্বীপের প্রাকৃতিক খামখেয়ালিপনা কাজে লাগিয়ে পারমাণবিক গবেষণা করা, যে গবেষণার উদ্দেশ্য আসলে অস্ত্রসম্পদ তৈরি এবং তার বেচাকেনা—
বিলি গিলচার একটু বিরক্তির সঙ্গে খানিকটা ঝাঁঝিয়েই বললেন— নাও হিয়ার মি আউট টেগোর, আমাদের বিটিটু প্রোজেক্টের শুরুতে তোমাকে হকিং সাহেব যে মনোনীত করেছিলেন, আমি যতটা জেনেছি, তা মূলত তোমার জনসংযোগ ক্ষমতার জন্য। কিন্তু কী জানো, যতই এই ধরনের গবেষণা জটিল থেকে জটিলতর হয়, এর গোপনীয়তার স্তরও বাড়তে থাকে। আর ততই কমতে থাকে এর জনসংযোগের প্রয়োজনীয়তা। কীসের জনসংযোগ? জনবিয়োগটাই তো দরকার! মানুষকে তো রিপ্লেস করবেই যন্ত্র। হকিং সাহেবের গোটা অস্তিত্বই, তাঁর হাঁটাচলা কথা বলা সবই তো ছিল যন্ত্রনির্ভর, সেটা ভেবে দেখেছ? আমি যেটা বলতে চাইছি, বিজ্ঞানের বোধ তোমার এত দুর্বল— এরকম একজনকে এই প্রকল্পে জুতে দেওয়া একটা ট্যাকটিকাল ভুল বলেই আজ প্রমাণিত হচ্ছে। রাগ কোরো না, সত্যি কথাটা বললাম। এবার তোমার প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেব। না থাক, বরং আলাপ করিয়ে দিই— বোধহয় চিনতেই পারছ, ইনিই বিশ্বখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী স্যর কেভিন আইজ়্যাক। এই বয়সের কাউকে সাধারণত স্যর বলা হয় না বিজ্ঞান জগতে, আর ইনি নাইটহুডও পাননি। তবুও শ্রদ্ধায়, আদরে এই মাঝবয়েসী মাভেরিককে ‘স্যর’ উপাধি দিয়েছে বিজ্ঞানমহল। তোমার প্রশ্নের উত্তরটা উনিই দেবেন।
এই পর্যায়ে বেশ নার্ভাস হয়ে পড়া কিশিমোতো কাঁপা কাঁপা গলায় জাপানি কায়দায় কয়েকবার বাও করতে করতে বললেন— স্বীকার করছি, ড: ব্রহ্ম ঠাকুরের পিঠে আমার বন্দুক ঠেকিয়ে রাখা ভুল ছিল। আপনারা মন খুলে কথা বলে নিজেদের মতামতের অমিলগুলো মিটিয়ে নিন। বিশ্বাস করুন— বিটিটু প্রকল্পের ভালর জন্যই আমি এবং আমার পিতা কাজ করে থাকি। আমাকে কেউ দয়া করে ভুল বুঝবেন না। বিলি এবং ড: ঠাকুর, দু’জনকেই অনুরোধ— কেউ হঠকারিতা করবেন না। এবার আমায় বিদায় দিন। আমাকে পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরতে হবে, কিছু কাজ আছে।
কিশিমোতোকে বিদায় জানানো হল। চলে যেতে যেতে একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে কিশিমোতো একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলেন। ব্রহ্ম হাত পিছমোড়া করে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য সবাই ব্রহ্মের সামনের দিকটা দেখতে পাচ্ছেন, কিশিমোতো দেখছেন পিঠের দিকটা। অন্য সবার অলক্ষ্যে দুই হাতে একটা সংকেত তৈরি করে রেখেছেন ব্রহ্ম ঠাকুর। তাঁর বাঁহাতে তিনটি আঙুল খুলে রেখে যেন তিনি ‘তিন’ সংখ্যাটি দেখাচ্ছেন। ডান হাতের তর্জনীটি আবার শুইয়ে রেখেছেন বাঁহাতের খোলা তিনটি আঙুলের একেবারে গোড়ায়, আড়াআড়িভাবে। কিশিমোতো ব্রহ্মের আঙুলগুলো দেখতে পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই সংকেত তাঁকে দেখিয়ে কী বলতে চাইছেন ব্রহ্ম? হয়তো এটার মানে উদ্ধার করাটা জরুরি, খুব জরুরি!
(ক্রমশ)
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র