ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ৩৮


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (January 7, 2023)
     

    আলাদা আহ্লাদ

    কাছের মানুষ ছাড়া অন্য কারও অসুখ বা মৃত্যু মানে উৎসব। থুতনির কাছটা বাটখারা ঝুলিয়ে, দীর্ঘশ্বাসগুলোকে নির্দিষ্ট ব্যবধানে পরপর সাজিয়ে, মাথা নিচু ও ঠোঁট শক্ত করে, চোখে সমঝদার ও মলিন বালব জ্বালিয়ে, বাইরে চটি ছেড়ে হলঘরে দাঁড়াতে হয়, খুব সামনে নয় (পাছে কোনও দায়িত্ব ঘাড়ে পড়ে), খুব পেছনে নয় (পাছে কেউ বলে কই ও তো অ্যাটেন্ড্যান্স দেয়নি) এবং টেরিয়ে দেখতে হয় কে কী করছে (পরে আড্ডা-ইয়ার্কিতে কাজে লেগে যাবে)। মৃতদেহের দিকে মন দিয়ে তাকাতে নেই, তাদের বিলেতে থাকা পরিজন কবে এসে পৌঁছবে তা নিয়ে অবিচ্ছিন্ন কৌতূহল প্রকাশ করতে হয়, জানিয়ে দিতে হয় কোমরে খুব ব্যথা বলেই আসতে একটু দেরি হয়েছে (বোঝানো গেল শারীরিক বেদনা অতিক্রম করে সামাজিকতার নিশান পতপতাচ্ছে এবং একইসঙ্গে  বডি ধরাধরি ও বওয়াবওয়ি থেকে নিজেকে বের করে আনা গেল), ভাবতে হয় এই বুড়োটা মরেছে বলে এদের একটা ঘর ফাঁকা হয়ে গেল এবং আমি একটা ফাঁকা ঘর পেলে কী প্রাইভেট আলস্যে-আনন্দেই না জিন্দেগি কাটাতাম। তারপর অবশ্যই কাজকম্মের স্রোত হড়বড়াতে থাকে আর সাংঘাতিক স্লিপারি শিঙির মতো বারেবারে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েও চুল না ভিজিয়ে ভিকট্রি সাইন গজাতে হয়। যে মালা আনতে যাচ্ছে, তাকে বলতে হয়, চলুন চলুন, বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে তার প্রতিটি প্রস্তাবে সায় দিতে হয় (অমুক জায়গায় বেশি দাম নেয়, তমুক জায়গায় সেকেন্ড-হ্যান্ড ফুল দেয়) আর সে যখন দরাদরি করছে তখন ভুরু কুঁচকে বিরক্তিসহ দোকান অবলোকন করতে হয় (শুদ্ধ ও স্পর্শকাতর জায়গায় অবধি ব্যবসা-বাণিজ্য ঢুকে বসে আছে), দর ঠিক হয়ে গেলে সামান্য দেরি করে মানিব্যাগ বার করতে হয় এবং ফোঁস ছেড়ে বলতে হয় ‘ওঃ, আপনি দিয়ে দিলেন?’, তারপর ফিরে অনেককে জানাতে হয় এই মালার দোকান যাওয়া যা হ্যাপা, আজকাল ফুলের যা দাম হয়েছে, রজনীগন্ধার চারটে স্টিক এনেছি ঠিক আছে তো অবিনাশদা, এবং তারপরেই ধূপ আনতে যে দেরি করছে তাকে ফোন করতে ফের একবার হন্তদন্ত বারান্দায়, এবং গণিতের নিয়ম মেনে ফের রাস্তায়। এট্টু জগিং, জীবনের অনিত্যতা বিষয়ে দার্শনিক সন্দর্ভ সেকেন্ড পাঁচেক। সবাই হাঁপাতে হাঁপাতে চারতলা থেকে দেহ নামিয়ে গাড়িতে তোলার পর, আচমকা চিন্তাকুল মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস, ডেথ সার্টিফিকেট এবং আধার কার্ড নেওয়া হয়েছে কি না, সঙ্গে জেরক্সও আছে কি না (এই ডিটেল এই সংকটের সময় আমার ছাড়া কার মাথায়), তারপর নিজের গাড়িতে এলিয়ে বসে ড্রাইভারকে বলতে হয় কোন শ্মশান। এই সময় থেকেই আত্মগুরুত্বের মূল ঝাপটায় স্নান। আমি তো সামান্য নই, কর্তব্য করতে অ্যাদ্দূর এলাম, অফিসটা অবধি আজ যাওয়া হল না— বসকে ফোন করে কাঁদো-কাঁদো গলায় বলতে হল নিজের না হলেও দূরসম্পর্কের মামা কোলেপিঠে মানুষ করেছিলেন, এবার সমস্ত কাজে পাশে দাঁড়াচ্ছি প্লাস শ্মশানে অবধি সঙ্গ ছাড়ছি না (রাজদ্বারে শ্মশানে চ না কীসব ডেফিনিশন আছে না প্রকৃত বন্ধুর?), কাজ মিটে গেলে বিকেলটা অফ থাকছে ফলে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে তিন পেগ কে না গাবলায়। কিন্তু সেই মেসেজ একটু পরে করলেই চলবে, আপাতত বডি চুল্লিতে ঢোকানো এবং অসুখ নিয়ে রগরগে আলোচনা।

    গল্পের শেষে ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে ও কপালে তর্জনীর উল্টোপিঠ দিয়ে টকাটক করে বলতে হবে আসলে সবই ললাটলিখন। বিজ্ঞানসম্মত ও নিয়তিবাদী— মাল্টি-পারপাস জ্যোতি ঝলকিয়ে, এবার পবিত্র কর্তব্য পালতে অন্যদের কাছে গিয়ে ডাক্তার-কোটেশন বেঁকিয়েচুরিয়ে বোঝাতে হবে, কিডনি উঠেছিল হার্ট পড়েছিল, ইনটেস্টাইন আইনস্টাইনের চেয়ে ঘোরালো, সুগারই নর-জাতির আসল শত্রু, এবং প্রকৃত অসুখের নাম বার্ধক্য রে ভাই, জরা ধরে গেলে জরা সা ঝুম লেনা না রে বাবা না বাতিল।  

    আত্মীয়দের মধ্যে কেউ না কেউ ডাক্তার থাকবেই, তাকে আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, ঠিক কী হয়েছিল এবং আর কিছু করার ছিল কি না। অচিরে ভিড় জমে যাবে এবং সেখানে এই উদ্যোগের কলম্বাস হিসেবে নিয়মিত প্রশ্নের জোগান দিতে হবে, অবাক হতে হবে, আতঙ্কিত, শিহরিত, সবার দিকে চোখ গোলগোলিয়ে ওয়ার্নিং মচাতে হবে আমরা সতত সতর্ক থেকেও টপকে যেতে পারি ভয়াবহ গাড্ডায়। মাঝেমাঝে দু’তিনবার পয়েন্ট রিপিট করিয়ে নিতে হবে, খতিয়ে বোঝা তো সব্বার প্রয়োজন, এর মধ্যে সরবরাহ হবে আত্মীয়ের ও আয়ার রোগী-এন্তেকাল-বিবরণ, কেমন চোখ উল্টে গেছিল দম আটকে এসেছিল হাতে-পায়ে খিঁচুনি হচ্ছিল, লক্ষণ মিলিয়ে ও অনুপস্থিত সিম্পটম আন্দাজিয়ে গল্প মাখতে হবে নুনেঝালে। এমনকী জুড়তে হবে বেয়াড়া তক্কও, অমুক স্পেশালিস্টকে একবার কনসাল্ট করা হল না কেন যখন লেকটাউনের কাছেই বসেন, তমুক টেস্টটা আগে করাবার কথাই বা কারও মনে আসেনি ইসস চুকচুক, আচ্ছা ডাক্তারবাবু গ্যাসের ব্যথা বলে কি কিছুই ইগনোর করা যাবে না— তাইলে তো আমায় ডেলি রাত বারোটায় হাসপাতালে ছুটতে হয় হিহিঃ। গল্পের শেষে ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে ও কপালে তর্জনীর উল্টোপিঠ দিয়ে টকাটক করে বলতে হবে আসলে সবই ললাটলিখন। বিজ্ঞানসম্মত ও নিয়তিবাদী— মাল্টি-পারপাস জ্যোতি ঝলকিয়ে, এবার পবিত্র কর্তব্য পালতে অন্যদের কাছে গিয়ে ডাক্তার-কোটেশন বেঁকিয়েচুরিয়ে বোঝাতে হবে, কিডনি উঠেছিল হার্ট পড়েছিল, ইনটেস্টাইন আইনস্টাইনের চেয়ে ঘোরালো, সুগারই নর-জাতির আসল শত্রু, এবং প্রকৃত অসুখের নাম বার্ধক্য রে ভাই, জরা ধরে গেলে জরা সা ঝুম লেনা না রে বাবা না বাতিল।  

    এবার দাহ শেষ, ডোমের সঙ্গে ঝগড়ার পরে বাকি প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে গাড়ির এক চক্কর, নাভি ভাসাবার সময় একবার মনে করিয়ে দিতে হবে, মাথায় জল ছেটাবার পর যেন আর পেছনে না তাকায়। নিয়ম মানার মধ্যে ক্ষতি কিছু নেই তো রে বাবা। শাস্ত্রে যখন বড় বড় ঋষি লিখে গেলেন (আর মাইমা যখন মাথার ওপর আছেন) তখন রিচুয়ালের তাৎপর্য অসীম। এই মোড়ল-মাফিক ঘোষণার (ও ধর্মে-মতি মার্কা আত্মতৃপ্তির ঢেকুরের) পরেই তেড়ে ছুটি, সামনে আনন্দময় প্রতিশ্রুতি— শ্রাদ্ধ আর নিয়মভঙ্গের নেমন্তন্ন বাঁধা, এরা বড়লোক, ফলে বিজলী গ্রিল তো অ্যাট লিস্ট বলবেই। এখন বাড়ি গিয়ে গরম জলে চান (কর্মকর্তার টোনে: ‘শুনছ, গিজার-টা চালিয়ে রেখো, সব ভালয় ভালয় মিটল, এই আসছি’), তারপর একপিস পাওয়ার-ন্যাপ দিয়েই, সিধে বন্ধুর বাড়ি, ক্যারম খেলতে খেলতে চুমুক, চুমুক মারতে মারতে চাপ বসিয়ে রেড। 

    আমি হেলে পড়ি উইলপাওয়ারের দিকে। সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই শুধু মনের জোর কর। রামদেব থেকে সদগুরু, দক্ষিণরায় থেকে মারাংবুরু। নিতান্ত শরীরের ঝামেলা ও ওষুধের উগ্র ঝাঁঝের ঘরে এতক্ষণ চলছিল টিভির হেডলাইন লোফালুফি, সহসা মিষ্টি ও মিস্টিক টপিক পেয়ে সকলেই দাঁত খোঁচাতে থাকে, প্রত্যেকেই গোল্লা-হজমির মতো একবার চেখে দ্যাখে। আমি গাঢ় সারমন-টোনে বলি, আশা কীভাবে হরমোনের ইঞ্জিনে হেঁইয়ো দেয়, ইতিবাচকতা কীভাবে রক্ত ও লসিকাকে তুইয়ে তুইয়ে শুদ্ধ করে। মিথ্যে আশা সাপ্লাই বেআইনি কি না, তা নিয়ে কে আমার কান মলবে?

    কেউ আইসিইউ-তে ঢুকলে কিছু কম ফেস্টিভ্যাল নয়। সেখানে খাটনি কম, এদিকে মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলছে বলে থ্রিল বেশি। এই তো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে বলে ঋষভ পন্থ হাসপাতালের আইসিইউ-তে ছিলেন। ভিজিটিং আওয়ার্স-এর তোয়াক্কা না করে, তাঁকে দেখতে লাইন দিয়ে ঢুকে পড়ছেন ভিআইপি-গণ। কারণ পন্থকে দেখে এলে বিশ্বসমাজে স্টেটাস বাড়ে (নিজের কাছে নিজেরও: দেকেচো, সেলেব মম বন্ধু, আমি কি রামাশ্যামা?) আর, পন্থের কাছে নিকটজন হিসেবে আবেদনপত্র দাখিলও। তাই ক্রিকেটার, রাজনীতিক, ফিল্মস্টার, লোকাল প্রশাসন-কত্তা, কেউ বাকি নেই, সবাই দিনের মধ্যে উঁকি মেরে একটু পন্থ দেখে আসছেন। ডাক্তাররা বলছেন এভাবে চললে তাঁর সুস্থ হতে সময় লাগবে, এতজনের সঙ্গে কথা বললে গুরুতর আহত রোগীর প্রাণশক্তি অনেকটা খরচা হয়ে যাচ্ছে, শেষে বোধহয় প্রাইভেট ওয়ার্ডের বন্দোবস্ত। আমরাও যেই শুনি, অমুক আইসিইউ-তে আছে, এবং পরশু রোববার, তখুনি সাজো-সাজো। সেখানেও হাসপাতালের নীচে অনবরত সিগারেট ও অসুখের দুরন্ত খুঁটিনাটি, সেখানেও আহাগো ওহোরে এবং শিরশিরিয়ে নিজের সৌভাগ্যকে স্মাইলি-প্রদান কারণ এ অসুখ ওর ধরা পড়েছে এবং আমার পড়েনি, তারপরেই কে অপারেশন করছেন কে ইঞ্জেকশন দিচ্ছেন কে হাগু মোছাচ্ছেন নিয়ে প্রকাণ্ড মতামত ঠেলাঠেলি, নার্সিং হোমই বা এইটা বাছা হল কেন যখন ন’মেসো অমুকটায় ভর্তি ছিলেন এবং সিঁড়ি মোছা হত দিনে তিনবার বিদিশি ফিনাইল দিয়ে (এরা আমাকে একবার ফোন করা দরকার মনে করে না), এবং অবশেষে ভিজিটিং পাস করতলগত। লিফট থেকে নেমে বাঁদিকে গিয়ে প্রথমে থতমত, কই মিলছে না, তারপর নার্সের তাড়া খেয়ে বারতিনেক সরি আউড়ে, সিঁড়ি দিয়ে নেমে হ্যাঁ ওই তো ১০৬। ঢুকে দেখা গেল অন্তত সাতজন হররা চালাচ্ছে। মোহনবাগান মমতা মতিচুর। আরে, তোমার কার্ডটা দাও, সুনুকাকুকে দিয়ে আসি, বারবার ফোন করছে। দুটো মাত্তর কার্ড নিয়ে জ্যান্ত জাগলিং, এ গিয়ে লুকিয়ে ওর মুঠোয় চোরাই নকুলদানার মতো, সে সুট করে লিফট-কে চুক্কি মেরে সিঁড়ি দিয়ে সাঁইসাঁই, মেট্রনের টেবিলের সামনে হাঁটা-কালে সড়াৎ মাথা নিচু (হোয়াটসঅ্যাপ-পাঠরত), ১৭জন ঢুকে পড়লেই বা ক্ষতি কী, কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দেওয়ার মধ্যে ছুপা-বিপ্লব নেই? এর মধ্যে একজন উর্দিপরা লোক বারণ করতে এসে খ্যাঁকানি খেয়ে গেছে, নিজেরা সব নিয়মকানুন ঠিকঠাক মানেন আপনারা, এই তো স্যালাইন দিতে গিয়ে হাতে কালশিটে ফেলে দিয়েছেন।তারপর খিলখিল, এবং বকবক।এখানে পাত্তা পেতে গেলে নতুন কিছু বলতে হবে, তাই আমি হেলে পড়ি উইলপাওয়ারের দিকে। সব ঠিক হয়ে যাবে, তুই শুধু মনের জোর কর। রামদেব থেকে সদগুরু, দক্ষিণরায় থেকে মারাংবুরু। নিতান্ত শরীরের ঝামেলা ও ওষুধের উগ্র ঝাঁঝের ঘরে এতক্ষণ চলছিল টিভির হেডলাইন লোফালুফি, সহসা মিষ্টি ও মিস্টিক টপিক পেয়ে সকলেই দাঁত খোঁচাতে থাকে, প্রত্যেকেই গোল্লা-হজমির মতো একবার চেখে দ্যাখে। আমি গাঢ় সারমন-টোনে বলি, আশা কীভাবে হরমোনের ইঞ্জিনে হেঁইয়ো দেয়, ইতিবাচকতা কীভাবে রক্ত ও লসিকাকে তুইয়ে তুইয়ে শুদ্ধ করে। মিথ্যে আশা সাপ্লাই বেআইনি কি না, তা নিয়ে কে আমার কান মলবে? কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে বাথরুমের আয়নায় নিজেকে চোখ মারি।নেমে গরমাগরম রাধাবল্লভী, সঙ্গে বৃদ্ধাকে সান্ত্বনা: কিচ্ছু ভয় নেই মাসিমা, দেখে এলাম তো, দু’হপ্তার মধ্যে ও হাডুডু খেলবে, এবং অবশ্যই আড়ে আড়ে ডবকা ভাগ্নিটিকে জরিপ।

    সবাই ভাই বোন ভাইপো ভাড়াটে নই? সেখানে ওর কালান্তক অসুখ হল আমায় বলল না? তার শেষদিন ঘনিয়ে এল আমায় খবর দিল না? ওদিকে শুনছি মৎস্যমুখীতে ইয়াব্বড় চিংড়ি হয়েছিল? অকৃতজ্ঞতায় চোখে জল আসে, ফোনে বেশ একটা বিষাক্ত বার্তা ঝেড়ে দিই। সিরিয়াল-করিয়ের রোগবার্তায় উতলা হয়ে পড়ি, ফুটবলারের মরণসংবাদে ফুটকড়াইয়ের ন্যায় ফুটতে থাকি। উঁচু জানলা দিযে দেখি রাস্তাময় খতরনাক স্পিডে লাখো গাড়ি চলেছে। একখানাও কি বিপজ্জনক ভাবে স্কিড করবে না আর ঠসাঠস সঙ্গে নেবে না আরও তিন-চার ভিকটিম? বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে, একটা উত্তেজনার উৎসব লাগিয়ে দাও ভগবান।

    কাছাকাছির মধ্যে কেউ না মরলে কেউ না রোগে পড়লে, নিদেন বাইক চড়তে গিয়ে ফ্লাইওভারে জাপানি মাঞ্জায় কারও ব্রহ্মতালু না ছেঁচে গেলে, ফাঁকা-ফাঁকা লাগে। এমন নিরিমিষ্যি জীবনে লাভ কী? আমার প্রিয়জনেরা ভাল থাকুক সিরিয়াল দেখুক লিপস্টিক কিনুক, কিন্তু লতায়-পাতায় আত্মীয়বন্ধুদের তো রেগুলার দুর্দশা হতে পারে। সিমপ্যাথি দেখাতে কী ভাল্লাগে, ধীরে ধীরে সেই নিম্ন-স্বরের হাস্কি গতিতে আরও গলে পড়তে ইচ্ছে হয়, মনে হয় মায়া আর প্রীতির ছলছলে  ঝিল বুকের সেন্টারে বয়ে বেড়াচ্ছি, কে নিবি রে দয়ার রসা কে নিবি রে আয়, ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে যায় এই লোকটার সঙ্গে ডাংগুলি খেলেছি সেই লোকটার থেকে গোয়েন্দাগল্প ধার নিয়েছি, উফ মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ কি কম? সবাই কি আমরা একই ধুলোকণা দিয়ে তৈরি না? সবাই ভাই বোন ভাইপো ভাড়াটে নই? সেখানে ওর কালান্তক অসুখ হল আমায় বলল না? তার শেষদিন ঘনিয়ে এল আমায় খবর দিল না? ওদিকে শুনছি মৎস্যমুখীতে ইয়াব্বড় চিংড়ি হয়েছিল? অকৃতজ্ঞতায় চোখে জল আসে, ফোনে বেশ একটা বিষাক্ত বার্তা ঝেড়ে দিই। সিরিয়াল-করিয়ের রোগবার্তায় উতলা হয়ে পড়ি, ফুটবলারের মরণসংবাদে ফুটকড়াইয়ের ন্যায় ফুটতে থাকি। উঁচু জানলা দিযে দেখি রাস্তাময় খতরনাক স্পিডে লাখো গাড়ি চলেছে। একখানাও কি বিপজ্জনক ভাবে স্কিড করবে না আর ঠসাঠস সঙ্গে নেবে না আরও তিন-চার ভিকটিম? বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে, একটা উত্তেজনার উৎসব লাগিয়ে দাও ভগবান।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook