ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • অবাক অ্যাবস্ট্র্যাকশন

    অনুপম রায় (January 13, 2023)
     

    গানের মধ্যেই আছি তাই গানের কাছে ফেরা সত্যি খুব অদ্ভুত। তবে এই গানের মধ্যে ডুবে থাকা হয়তো জীবনের একটা ম্যাজিক থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে। গান এক সময়ে আমার কাছে ছিল একটা বিশাল ম্যাজিক। দুঃখের গান লেখার ফর্মুলা যে মাইনর কর্ডে লুকিয়ে আছে তা জানতাম না। দেশি নাচের জন্য ফর্মুলা শিখলাম, ডবল দাদরা। যত জানতে থাকলাম কিছুটা করে ম্যাজিক নষ্ট হতে থাকল। এমন একটা সময় ছিল যখন কিছু বুঝতাম না, কোনো রকম পাকা-পাকা শব্দ জানতাম না। আমি আসলে সেই সময়টার কাছে ফিরতে চাই। সেই সময় এক গুচ্ছের গান, এক গুচ্ছের মন-কেমন-করা, কাকে বেছে নেব? 

    যদি একটি মাত্র গান বেছে নিতে বলা হয় তাহল বলব, ‘ব্রেন ড্যামেজ’; অ্যালবাম : ‘ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন’, ব্যান্ড : পিঙ্ক ফ্লয়েড। গান আসলে কবে, কীভাবে মানুষ শুনছে তার একটা বিরাট প্রভাব সারা জীবন থেকে যায়। সবার আগে প্রয়োজন কাঁচা বয়স। অর্থাৎ নতুন মন। আমার শুধু মনে হয় এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। ১৮ বছর বয়সে যখন ওই কাঁচা মনে গান শুনতে বসতাম তখন গানের আমি কিছু বুঝি না। বেস গিটার কাকে বলে, কর্ড কাকে বলে, হারমনি কাকে বলে, কোমল গান্ধার লাগছে না শুদ্ধ, এসব নিয়ে একদম ভাবিনি। ওখানে একটা বিস্ময় ছিল। সেই বিস্ময় থেকে মুগ্ধতা জন্মেছিল। অবশ্যই গানের কথাগুলো বুঝতে পারতাম কিন্তু সঙ্গীত যে কী কারণে আকর্ষণ করছে ধরতে পারতাম না। মিউজিক এক অবাক অ্যাবস্ট্র্যাকশন, যেখানে কোনও লজিক কাজ করে না। দেশ বা মেঘ মল্লার বেজে উঠলে আমাদের মনটা ভেজা-ভেজা লাগে, তার জন্য নোটেশন লিখে নিষাদের বা গান্ধারের রূপ জানতে হয় না। এই ম্যাজিকটার কথাই আমি বলতে চাইছি। 

    এই ম্যাজিকটা কাজ করেছে আমার উপর। ভেবে দেখেছি, আমার সবচেয়ে ভাল লাগে যখন কোনো শিল্পের সামনে এসে আমি দাঁড়াই আর আমার ভেতরটা হু হু করতে থাকে। প্যারিস টেক্সাস দেখে কেন এত ভালো লাগে? কারণ মনের ভেতরটা হু হু করতে থাকে। অ্যানি হল কেন বার বার দেখতে ইচ্ছে করে? কারণ দেখার পর মনটা হু হু করতে থাকে। আমার ভাল লাগা মানে হল হু হু করা। 

    এবার আসি সেই গানের কাছে। সেই গানে কী আছে? এখন আমার অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী অ্যানালিসিস করতে ভয় লাগে। ওই গিটারের আওয়াজ কি আমাকে টানছে? না কি ওই মাথার ভেতরের পাগলটা আমাকে টানছে? সাবধান, ওর হাতে একটা ব্লেড আছে। একটা অদ্ভুত হাসির শব্দ আছে। খবরের কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা কারও মুখ যা রূপকের সাহায্যে ভাঁজ হয়ে পড়ে আছে। চাঁদের অন্ধকার দিক কি আমাকে টানছে? নাকি ওই ডি মেজরের পর জি ডমিন্যান্ট সেভেন্থ-এর চেঞ্জটা অর্থাৎ শুদ্ধ গান্ধার থেকে কোমল গান্ধারে যাওয়াটা? ব্যাকরণ নিশ্চয় আছে, কিন্তু সেটা আমাদের না জানিয়েই টানে। 

    একটা গান নয়। হয়তো গোটা অ্যালবামটাই আমাকে টানে। ফিরে যেতে চাই বার বার। আসলে এই ফিরে যাওয়া সেই বিকেলগুলোর কাছে, সন্ধেগুলোর কাছে। একটা-একটা করে স্ট্রিট ল্যাম্পের জ্বলে ওঠা। তার আলোর নীচে জমে থাকা হলুদ বিষণ্ণতা। তার মধ্যেই হঠাৎ দেখতে পাওয়া— ‘The lunatic is on the grass.’ 

    গান বা মিউজিক বাজলে আমার চোখের সামনে অনেক রং আমি দেখতে পাই মাঝে মাঝে। এই গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটা মায়া-মায়া খয়েরি। আমি এক্সপ্লেন করতে পারব না কেন। মিউজিক এমন বিমূর্ততার জন্ম দেয়, যা কিছু ভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার ভেতর আন্দোলন হচ্ছে মানেই যে পাশের মানুষটিরও হবে, এমন কথা কিন্তু নেই। আমার রং সে নাও দেখতে পারে।

    তখন বয়স অল্প, সামনে ফাঁকা মাঠের মতো জীবন। কত সম্ভাবনা। কত এক্সপেক্‌টেশন। তখন-ও তো গিটার বাজাতেই জানি না। মনে হচ্ছে আমি এই গানটা একদিন তুলতে পারব, বাজাতে পারব, গাইতে পারব। গলা দিয়ে শব্দগুলো উচ্চারিত হলে মনটা হু হু করে, ভাল লাগে। এই গানটা যতবার শুনি আমি টাইম ট্র্যাভেল করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজকাল আমি সিনিক্যাল হয়ে গেছি। ঘষা লেগে লেগে আমার ইনোসেন্সটা কিছুটা হলেও গেছে। আমার বন্ধু শমিত রায় প্রায় পনেরো বছর আগে বলেছিল, ‘জীবন একটি পাতি লেবু, আমি পয়সা ফেরত চাই।’ তখন ভাল লেগেছিল কথাটা, আজকাল আরও বেশি করে লাগে। জীবনে কিছুই করার নেই। শুধু তাকিয়ে থাকা শূন্যতায়। যদি ফিরে যেতে হয় তাহলে সেই গানের কাছেই যাব। তখনও কত কিছু হওয়ার ছিল। 

    গান বা মিউজিক বাজলে আমার চোখের সামনে অনেক রং আমি দেখতে পাই মাঝে মাঝে। এই গানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটা মায়া-মায়া খয়েরি। আমি এক্সপ্লেন করতে পারব না কেন। মিউজিক এমন বিমূর্ততার জন্ম দেয়, যা কিছু ভাবে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার ভেতর আন্দোলন হচ্ছে মানেই যে পাশের মানুষটিরও হবে, এমন কথা কিন্তু নেই। আমার রং সে নাও দেখতে পারে। তার রং আমিও হয়তো দেখতে পাচ্ছি না। 

    এই একটা গান আমাকে মনে করায় আমার প্রথম কম্পিউটার, প্রথম প্রিন্টার। অনেক কষ্টে ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া লিরিক এবং কর্ড চার্ট। শুধু তো ক্যাসেটের ফিতেতে জড়িয়ে নেই গানটা, আমার প্রথম গিটারের জং-ধরা তারেও তার কিছুটা লেগে আছে। আমার হারিয়ে যাওয়া ঠাকুরপুকুরের দোতলার ঘরটাতেও তার কিছু পালক হয়তো এখনও পড়ে রয়েছে। সেই পাগলামির কাছে ফিরতে চাই, যখন প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মনে হত আজ একটা স্পেশাল কিছু ঘটবে, একটা স্পেশাল কারোর সঙ্গে দেখা হবে। পকেটে ওয়াকম্যান, দু’কানে বাজছে ‘ব্রেন ড্যামেজ’, আমি এক অটো থেকে আর এক অটো লাফ দিচ্ছি। রোলের দোকানে লেগ স্পিন করছি। হাত দেখিয়ে সরকারি বাস থামিয়ে রাস্তা ক্রস করে যাচ্ছি। আমি এই সব কিছুর কাছে ফিরতে চাইছি। হয়তো একটা লোবোটমি চাইছি— 

    ‘You raise the blade, you make the change,
    You re-arrange me ‘til I’m sane.’

    আমি চাইছি? না অন্য কেউ? 

    ‘There’s someone in my head but it’s not me!’

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook