মুক্তমঞ্চে তখন লাল প্রেক্ষাপট
মুক্তমঞ্চে লাল বিপ্লবের দৃশ্যপট;
সেই নবীন স্বরভঙ্গির ব্যোমচারী শিখা
শব্দবন্ধন বিরহ ধ্বনি
লীন সাধের রাহাজানি
মৃদঙ্গ কালিন্দী যামিনী—
শিকে ছেঁড়া ফকির মাজারে
চৌচির তাদের শীর্ণ সোপান,
মানত তখন লেলিহান।
গণিতের দেওয়াল ছুঁয়ে
অর্ধবৃত্ত আধপেটা খোয়াব
ফুরিয়ে যাওয়ার রীতি।
তবু সামনে তরঙ্গকল্লোলের নির্বিকার দর্শকসমূহ।
নাটুকে সভ্য ক্ষুদ্রতায়
বিস্মৃতির ইতিবৃত্তে বিহ্বলতা আদল হারায়।
যৎকিঞ্চিত সারমেয়তায়
মূর্ছিত মফস্সলের মাঝে সভ্যতার জ্বর বেড়েছে মাঝরাতে।
লেবুর পাতা করমচা
শেষ আল ধরে খাসজমিতে
ফণিমনসা ঝোপের ধারে
জেগে ওঠে আলতো আবছায়ায় বকুলতলার আবেশখানি।
সে কবেকার জুঁই আপামর
জোড়া শালিখ,
পাঠ চুকোনো ভরদুপুরে
শব্দে না রাখা আলগা সুতো
আবদার কেমন শিমুল তুলো।
সে কতকাল ধরে বারণ ছোঁয়াছুঁয়ি।
তুমুল মশগুল
কুহক বন্দি ঝিলাম সঁপে
ফিসফিসিয়ে বলবে কীসে?
পলাশযাপন
খনিক ফুরোচ্ছি এবার—
তবু শিকড়-নিবাসে তৃষ্ণা আঁকি।
যখন শীত শেষে তার শুকনো বিবর্ণ পাতা
এক এক জন্মের ইচ্ছা বয়ে আনে,
সে সদরদরজা ভেজিয়ে দাঁড়ায়,
যখন তার জন্যে বরাদ্দ এক চিলেকোঠায়
পংক্তিজুড়ে শুধু পায়রার খোপ।
রোজনামচা পোয়া বারো;
নুন কাঁকড় বালি
অতল অপার আবছায়ায়,
মৃদু কেঁপে ওঠা পাখির আদল।
আড়াল আবডালে,
বুকের কোনখানে সহসা ফাটল বেঁধে,
ঘুরেফিরে আসে
ইচ্ছের শিউলি পলাশ।
তারপর সে সাধের নোঙর—
আবেশের ফাগুনে পলাশযাপন।
যাত্রাপালার আর খানিক বাকি
চিলেকোঠার কোণে
রাতুল ব্যানারে—
‘পল্লীশ্রী অপেরা’।
এক পুরোনো সান্ধ্যমঞ্চের আগাগোড়া
হৈমন্তী হওয়ায় ভেসে আসা
আগাপাশতলা জুড়ে বিবর্ণ পাতা
আঙ্গিক প্রকরণে
তিয়াস-কাতর সঙ্গীতস্বর;
এক এক পালার আবেশে
চরিত্র তার কপোতাক্ষ টালমাটাল:
মীরার বঁধুয়া কিংবা বিষ্ণুপ্রিয়ার স্নিগ্ধ কৈবল্য কুশীলব;
কখনও-বা ইন্দ্রের মতো
কল্লোল স্বেচ্ছাচারী।
শেষবেলায় আয়োজন হতে পারত খানিক বেশি কিছু…?
শতদ্রুর চরে খানিক নেশার ঘোরে বালি হাতড়ানো
অথচ সত্তা শূন্যের সম্মুখে সিন্ধুর জলোচ্ছাস…
চৌচির হয়েছে সব
বেজায় বড় সস্তায়
সেকালের কোলাহল পেরোনো
কপাল এখন কি কেবল খাঁ খাঁ রোদ!
পকেটে কত খিদে রেখে
শীর্ণ শখপূরণ
নিরন্তর অভিযোজন;
যেন শুধু ধূসর পথে ছায়ানটের বলয়।