ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • বিশ্বকাপের ডায়েরি: পর্ব ২


    অনুপম রায় (December 15, 2022)
     

    স্টেডিয়ামের ছিপি কাহিনি

    এসে গেছি আবার পরের দিনে ডায়রিতে। বারোটার সময় তো উঠলাম, তাই কি করব, ব্রেকফাস্ট করব না লাঞ্চ করব বুঝতে পারছিলাম না। একটা দোকানে খেলাম যার নাম আমরা পড়লাম আল মহাশ্বেতা। এখানে সবকিছুই ‘আল’ দিয়ে শুরু হয়; সেখানে আমরা প্রচুর খেলাম, তারপর বাড়িতে ফিরে কোনোমতে চান-টান করে বেরিয়ে পড়লাম, কেননা কাল যে স্টেডিয়ামে আমরা ফ্রান্স-ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে গেলাম, আল-বায়াত, সেটা খুবই দূর, ধরা যাক কলকাতা থেকে ডানকুনি ছাড়িয়ে যাওয়া দূরত্বে। 

    পর-পর দুটো খেলা; একটা দেখে পরেরটা দেখতে হবে। প্রথম খেলা পর্তুগাল বনাম মরক্কো। যা বুঝলাম, এটা আরব দেশ, তাই মরক্কোর বিশাল সাপোর্ট চারিদিকে, সবাই মরক্কোর ফ্ল্যাগ নিয়ে ঘুরছে, চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে। আমারও এই বিশ্বকাপে মরক্কোর খেলা ভালো লেগেছে; যা স্পিড, যা স্কিল দেখেছি ওদের মধ্যে তা নজরকাড়া। 

    তা আমরা গেলাম ফ্যানজোন বলে একটা জায়গায়; কর্নিশ বলে একটা স্টেশন আছে, সেখানে নেমে হেঁটে-হেঁটে যেতে হল। সাবটেক্সট-টা হচ্ছে এখানে যেখানেই যাও, হেঁটে মরো। লোকজন দাঁড়িয়ে আছে, তারা এদিকে যাও, ওদিকে যাও বলছে, লাইন দিয়ে, পাক খাইয়ে সে একটা প্যান্ডেলে ঢোকার মতন ব্যাপার। 

    দেখতে শুরু করলাম পর্তুগাল ভার্সাস মরক্কো। খেলা ভালোই হচ্ছে; ফার্স্ট হাফে গোলও দেখলাম আমরা। সমস্যা হচ্ছে ততক্ষণে টেম্পারেচারটা ভালো ড্রপ করেছে; ড্রপ বলছে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কিন্তু হু-হু করে হাওয়া দিচ্ছে। বাঙালির শরীর একটুতেই খারাপ হয়ে যায়; যে হাওয়াটা দিচ্ছে তাতে আমরা কী দিয়ে কী করব বুঝতে পারছিলাম না! সেই অবস্থায় আমরা হাফ-টাইম অবধি খেলা দেখে আমরা বেরিয়ে পড়লাম, এবার আমাদের একটা বাস ধরতে হবে, নয়তো আমরা পরের খেলায় পৌঁছতে পারব না। 

    বাস ধরলাম, বাস আমাদের বরযাত্রীদের মতো নিয়ে গেল আল-বায়াত স্টেডিয়ামে, সঙ্গে পালে-পালে লোক। এটা লুসেইল-এর চেয়ে আকারে ছোট স্টেডিয়াম; আমরা আগে যে স্টেডিয়ামে খেলা দেখলাম তার ক্যাপাসিটি ৮৩,০০০, এটাতে বোধহয় ৭০ বা ৬৮,০০০। পৌঁছে দেখলাম ফ্রান্স-ইংল্যান্ড খেলার সাপোর্ট সমান-সমান; ইংরেজ সমর্থক এবং ফ্রেঞ্চ সমর্থকেরা পাল্লায় সমান-সমান, সবাই ফ্ল্যাগ নিয়ে, মুখে দেশের পতাকার রং মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

    ম্যাচ দেখতে বসে পড়লাম। প্রচন্ড দাম দিয়ে ফিফা’র নিজস্ব দোকান থেকে বার্গার খেলাম, যেখানে জল, খাবার, সফট ড্রিংক সব কিছুই খুব বেশি দামে বিক্রি হয়, এবং বাইরে থেকে কিছু নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।

    ওপেনিং সেরেমনি থেকেই ম্যাচ দেখলাম। আমাদের পিছনে কিছু ইংলিশ ফ্যানেরা বসে ছিল, যাদের দেখে নিরীহ মনে হলেও খেলা শুরু হওয়ার পর বোঝা গেল ততটা নিরীহ নয়। বিশাল তাদের গলার জোর, এমন জোর চিৎকার করছে যে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়! ও-রকম গলা পেলে আমি সত্যিই মাইক ছাড়া গাইতে পারতাম। বেশ ভালোই গালি-গালাজ চলছিল; আমি বসেছিলাম ফ্রান্সের একটা কর্নারের কাছাকাছি, তাই সেখানে থেকে ফ্রান্সের গোলকিপারকে গালাগালিতে ধুয়ে দিচ্ছিল এই ইংরেজ ফ্যানেরা। 

    খেলা জমে উঠেছিল চমৎকার; গোটা ম্যাচটা বেশি আকর্ষণীয় খেলেও ইংল্যান্ড বেরিয়ে গেল নিজেদের দোষে। গোলগুলো কনভার্ট করতে পারল না, পেনাল্টিটা হ্যারি কেন মিস করল। ফুটবল খেলাটা এমনই যে চান্স খুব কমই আসতে পারে, কিন্তু সেগুলোকে কনভার্ট করতে পারলে তুমি জিতে যেতে পারো। যাই হোক, ফ্রান্স-ও যথেষ্ট যোগ্য টিম; ফ্রান্স-ও কয়েকটা চান্স বানিয়েছিল, জিরু সেটাকে কনভার্ট করতে পারে। 

    হোটেল ফিরলাম আবার বরযাত্রীদের বাসে ফিরে। এসে সেই টার্কিশ দোকান, যেখানে গতকালও খেয়েছিলাম, এবার একটু জমিয়ে খেলাম। খেয়ে ঘুম, এই উঠলাম। আজকে-কালকের দিনটা ফাঁকা, তাই আমরা একটু কাতার ভ্রমণের প্ল্যান করছি। আপাতত এটুকুই।

    ছিপি পার্ট ১ 

    স্টেডিয়ামের একটা গল্প বলা বাকি থেকে গেছে। স্টেডিয়ামে তো জল, খাবার, কিছু নিয়েই ঢুকতে দেয় না; ফিফা’র স্টল থেকে বিয়ার, জল, খাবার ইত্যাদি কিনে খেতে হয়। তা কাতারে তো অ্যালকোহল ব্যান, তাই নন-অ্যালকোহলিক একটা ড্রিংক বিক্রি হচ্ছিল, সেটা আমরা খাওয়ার চেষ্টা করে দেখেছি, না খাওয়াই ভালো। ভয়ঙ্কর বেশি একটা দাম, খেতে খারাপ, নেশাও হবে না। 

    রইল পড়ে জল আর খাবার। অত দূরে স্টেডিয়াম, আমাদের হেঁটে-হেঁটে যেতে হয়, খিদে পেয়ে যায়, তাই ফিফা’র ছাপ মারা অতি সাধারণ খাবার প্রচন্ড দাম দিয়ে কিনে খেতে হয়। শেষে জল, বা কোকা-কোলা। মাঠে ঢোকা কিন্তু পরিশ্রমের কাজ— মাইল চার-পাঁচ হেঁটে, ছ-তলা, সাত তলা সিঁড়ি বেয়ে-বেয়ে উঠে সেই খেলা দেখতে হয়। জল তেষ্টা পাওয়া স্বাভাবিক। 

    গাড়ি ছ-সাতজনকে নিয়ে চলে যায় মরুভূমির মাঝে, সিটবেল্ট পরিয়ে দেয়, আর গাড়ির চাকার হাওয়া একটু কমিয়ে দেয়। তারপর মরুভূমির মধ্যে উত্তাল গাড়ি চলে, যাতে গাড়ির ভিতরে সবাই প্রবলভাবে দুলি। সামনে যারা বসে তারা একটু বেঁচে গেলেও, গাড়ির নাচন-কোঁদনের ঠেলায় পেছনের সিটে যারা বসে, তাদের মাথা থেকে পা অবধি, কোমর-টোমর সব ভেঙে যেতে পারে।

    এবার জলের ক্ষেত্রে, যদি কেউ চারটে-পাঁচটা বোতল কেনে, ফিফার দোকানের কর্মচারীরা বোতলের ছিপিগুলো খুলে নিজেদের কাছে রেখে দেয়, মুখ খোলা, ভর্তি বোতল আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়। এই বোতল নিয়ে যেতে-যেতেই কারোর হাত থেকে পড়ে যেতে পারে, সিটের পাশে রাখলে সেখানেও জল চলকে পড়ে যেতে পারে। তাতে ফিফা’র দোকানেরই সুবিধে, যাতে আমরা আবার আরো জল কিনতে আসি! ওদের যত বলি ভাই তোমরা বোতলের ছিপিগুলো কেন দিয়ে দাও না, উত্তর আসে এটা নাকি ফিফা’র নির্দেশ, যাতে কেউ খেলার মাঠে ছিপি না ছুঁড়তে পারে! এই গোটা জিনিসটাই খুব অযৌক্তিক মনে হয় আমাদের কাছে, কেননা যে ছিপি ছুঁড়তে পারে সে বোতলও ছুঁড়তে পারে। ফিফা’র অদ্ভুত আইন! এই ছিপি খোলা বোতলের যে কী যন্ত্রণা তা আমরা খেলা দেখতে-দেখতে বুঝি, কার পা ভিজে যাচ্ছে, কার বোতল উল্টে যাচ্ছে! এটা এই বিশ্বকাপের একটা অভিনব এক্সপিরিয়েন্স! 

    ছিপি পার্ট ২

    বাঙালি, বা ভারতীয় বুদ্ধিও বলা যেতে পারে, কিন্তু মারাত্মক। আমরা সকাল থেকে যে-যে বোতল থেকে জল খাচ্ছি, সেই বোতলগুলো ফেলে দিলেও, ছিপিগুলো পকেটে নিয়ে ঘুরছি! স্টডিয়ামে ছিপি-খোলা বোতল দিলে কি, আমাদের পকেটে তো তিন-চার রকমের স্পেয়ার ছিপি রয়েছে, যে বোতলে আঁটবে, লাগিয়ে দেব! আমরা সাকসেসফুলি দু-তিন ধরনের বোতলে ওই স্পেয়ার ছিপি লাগিয়ে জল উলটে যাওয়া থামাতে পেরেছিলাম, পারিনি যেটায় সেটা কোকা-কোলার বোতল।  

    কাতার ভ্রমণ

    হায়া কার্ড থাকলে কাতারে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ফ্রি হয়ে যায়। বিনা পয়সায় দারুণ মেট্রো চড়ে আমরা চলে গেলাম ৩-২-১ অলিম্পিক অ্যান্ড স্পোর্টস মিউজিয়ামে, আমাদের লিস্টে দেখার জন্য প্রথম স্টপ। যারা খেলাধুলো ভালবাসেন, তাঁদের জন্য এটা দর্শনীয়। 

    এর পর গেলাম কাতারা হেরিটেজ ভিলেজে। খুবই সুন্দর স্থাপত্যে গড়া বিশাল জায়গা হেঁটে ঘুরে দেখার জন্য, লোকাল জিনিসপত্রের হরেক দোকান, ঘুরে-ঘুরে বিচের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় যেখানে আবার একটা বিচ মার্কেট, খাবারের দোকান ইত্যাদি রয়েছে। বিচের ধারে হু-হু করে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, দূরে ডাউন-টাউনের বিল্ডিংগুলো দেখা যাচ্ছে। মেলা-মেলা পরিবেশ, স্পোর্ট আর্ট-এর গ্যালারি রয়েছে। গতকালটা সেখানে আমরা বেশ টুরিস্টি অ্যাকটিভিটিই করেছি। 

    গতকাল আমরা সকালে উঠে গাড়ি করে চলে গেছি মরুভূমি, ডেজার্ট সাফারি এবং ‘ডিউন-ব্যাশিং’ করতে। গাড়ি ছ-সাতজনকে নিয়ে চলে যায় মরুভূমির মাঝে, সিটবেল্ট পরিয়ে দেয়, আর গাড়ির চাকার হাওয়া একটু কমিয়ে দেয়। তারপর মরুভূমির মধ্যে উত্তাল গাড়ি চলে, যাতে গাড়ির ভিতরে সবাই প্রবলভাবে দুলি। সামনে যারা বসে তারা একটু বেঁচে গেলেও, গাড়ির নাচন-কোঁদনের ঠেলায় পেছনের সিটে যারা বসে, তাদের মাথা থেকে পা অবধি, কোমর-টোমর সব ভেঙে যেতে পারে। আমরা ওখানে গিয়ে একটা সমুদ্রের শেষ কর্নার দেখলাম যেখানে নাকি সৌদি আরবিয়ার বর্ডার দেখা যাচ্ছে। 

    এই দেখে আমরা সদলবলে ফিরে এসে আমরা লাঞ্চে পাকিস্তানি খাবার খেলাম, যা দারুণ ছিল। আমি যে রাইসটা খেলাম, তার নাম যদিও ছিল আফগানি পোলাও, দোকানটা ছিল পাকিস্তানি; রান্নার হাত, মাংসের কোয়ালিটি খুবই ভালো। সেই খেয়ে আমরা দুপুরে একটু বিশ্রাম নিলাম, কেননা সাড়ে তিন দিনে আমরা একটু হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, চারদিকে এত এক্সাইটমেন্ট! 

    একটু ক্লান্তি কাটিয়ে ‘আল-জাদেজা’ বা ওই ধরনের নামের স্টেশনে পৌঁছে মেট্রো ধরে আমরা গেলাম ‘সুক ওয়াকিফ’ নামের একটা মার্কেটে, যেটাকে এখানকার নিউ মার্কেট বলা যেতে পারে। সেখানে লোকাল হ্যান্ডিক্রাফটও আছে, পাখির বাজারও আছে, জামা-কাপড়ের দোকান ইত্যাদি; ঘুরে ঘুরে দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল। 

    এর পর আরো কিছু কমন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা হল; আমাদের গ্রুপে ইন্দ্রদার পরিচিত দুই বন্ধু যারা ‘আল-জাজিরা’ সংবাদ-মাধ্যমে কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে আলাপ হল, এই প্রথম আমি ‘আল-জাজিরা’-য় কর্মরত কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করলাম, তাঁদের এখানকার কাজ-কর্ম সম্বন্ধে অল্প হলেও একটা ধারণা হল, এবং আমরা মাছ-মাংস সহযোগে খুব সুন্দর মালয়ালি খাবার-দাবার খেলাম। 

    এখানে প্রতি রাতেই আমরা তাসের খেলা পাসিং ব্রে বা বিবি পাশানোর খেলা খেলি, যেটাকে আমরা প্রায় বিশ্বকাপের মানে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। আজকে সেমি-ফাইনাল বলে কথা, আবার দেখতে চলেছি মেসির খেলা! উত্তেজনা খুব বেশি!     

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook