ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • কয়েকটি কবিতা


    রূপক চক্রবর্তী (November 5, 2022)
     

    সম্

    বাহিরে রিমঝিম বৃষ্টি, মৃদুমন্দ বা—
    পুরোনো কলের গানে ওয়ালি উল্লা খাঁ।
    সেতারে তোলেন মীড় খাদে ও নিখাদে
    কী সুর বিধুর হৈল… রাধে কৃষ্ণ রাধে

    মধুর আলাপে মগ্ন, কালক্রমে জোড়ে
    ঘন হইয়া মসীমেঘ ঝরিল অঝোরে।
    সাঁঝের তারায় ঘন হরিষে বিষাদে
    খাম্বাজ উঠিল বাজি ভজি কৃষ্ণ রাধে।

    ঝালায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট চিকারির তার।
    অস্পষ্ট হয়েছে। সাঁঝ-বিশ্ব একাকার
    রাগ হইতে অনুরাগে দোঁহে দুঁহু বাঁধে
    দেহে দেহ দ্রবীভূত। হরে কৃষ্ণ রাধে।

    ত্রিতালে ত্রিকাল ঘোরে চারি কল্পে ধা
    ঘোরেন সমের ফেরে ওয়ালি উল্লা খাঁ।


    কলি

    শ্রীখোল খঞ্জনি নাই, বেলা যায় সাঁঝের গলিতে।
    দীপ জ্বালো কলিকাতা, সুতানুটিগুছির পলিতে
    ঊরুতে পাকাও বসি, দেখ দীন গোবিন্দপুরের
    গৌর ধূলির পথে নিত্যানন্দে হাওয়া ওঠে ফের…

    জ্যৈষ্ঠে করো কথকতা, দশকুশী তালের গুরুগুরু
    তাউটি তাখিনা বোল, আখরে আষাঢ় হল শুরু
    উত্তরে সঘন শ্যামপুকুরে সিনান শেষে রাধা—
    বাজারে নিঙাড়ি শাড়ি বারিধার নাহি মানে বাধা

    ঝরো ঝরো জানালার একা ঘর বিরহবিধুর
    বেতের কেদারা দুটি পাশাপাশি… মাঝে ঝাপসা দূর
    আমাদের জোড়াসাঁকো পার হয়ে কুমোরটুলিতে
    কলস ভাসিয়া যায় অবিরল রবীন্দ্র সঙ্গীতে

    শ্রীখোল খঞ্জনি নাই, গোবিন্দপুরের দীন দুখী
    কীর্তনীয়া কতিপয়। বরষা জমায় জীবনমুখী।


    পা

    রাধিকান বিনা কে বাজায় ভিতরের বনে
    এ বিধুর মালগুঞ্জ! বেলা যায় বাদল-কৃন্তনে।
    অঙ্গুলি পরশে সাঁঝ জড়াতেছে মেঘবর্ণ মীড়ে
    ছায়াচ্ছন্ন বৃক্ষতল। কখন মেদুর হল ধীরে

    গহনে আলাপচারি, ঘন হও ক্রমশ জলদে।
    জলের নিক্কন শুনি রিমঝিম ঝাপসা দ্রুত পদে
    চলেছে অনন্ত লয় শ্রাবণের সজল মুকুরে।
    ও মুখ দেখিতে ভয়, যদি হই দ্রবীভূত সুরে?

    হৃদয় ঘুমায়ে পড়ে। অঙ্গুলির চলে অবলীলা
    তন্ত্রীর মধ্যম ছুঁয়ে মধ্যমায় স্থিরপ্রভ নীলা
    খচিত নিকষ রাত্রি, মেঘতনু ঘিরে নীলাম্বর
    নিখাদ আঁধারে লীন বাহিরের স্তব্ধ চরাচর
    পেরিয়ে ভিতর বনে ঢুকি যেই পায়ের সন্ধানে
    রহস্য নিথর আরও। শুক মূক, সারি শুধু জানে।


    আনন্দমল্লার

    কেন এই মেঘজন্ম? কেন ডাকা? আজি ধারাপাত
    পাঠে আর নাহি মন। ঝিঁঝিদের কাকালীনিষাদ
    নেমেছে সজল সাঁঝে কে গাহিল আনন্দমল্লারে
    বৃষ্টির প্রথম কলি অঝোর জানলার পরপারে।

    কখনও গরাদ ছিল… দ্বিধাহীন বাদলবাতাসে
    আজ শুধু চারিধার একাকার যূথীগন্ধ ভাসে
    ঘরের ভিতরে ঘরে মেঘের সংসার গড়ে নারী
    কোনও জন্মে বৃষ্টি হয় প্রজন্মে হৃদয় মৃদু ভারী

    একাকী হৃদয়ে ঝরে অবিরল টুপটুপ ধ্বনি—
    ভিতরে কি জলঘড়ি? দিনে দিনে খণ্ডকাল গনি
    মরে যায় কোনওদিন। পেলব তুলোর অবয়বে।
    মেঘজন্ম পুনর্বার, ডেকে ওঠা… ধারাপাতে আজ
    নাহি মন। শিশুগণ বাহিরের জল কলরবে।
    আনন্দমল্লারে ভাসে, আমাদের ভাসে গৃহকাজ…


    অনন্তবালার সুর

    একাকিনী ভাসিলেন লাউবর্ণ জ্যোৎস্নার হাওড়ে
    বৈষ্ণবী অনন্তবালা। থই নাই! ভাঙাভগ্ন ডোঙা।
    নিতম্ব নড়িলে ভয়— যে অকূল! যদি ডুবে যাই…
    ‘একবার হেরিব তোরে’, কেঁদে উঠি, ‘দাঁড়া রে নিমাই’
    বঙ্‌ বঙ্‌… একতারা দূর টানাদরিয়ার সুরে সুরে
    ভুলোতে ঘোরায় মাগো রাত্রিভর প্রপঞ্চ মায়ায়
    ফুটেছে শালুকফুল… সাধগুলি ঢেউয়ের আকার
    প্রসারিত ব্যাসকূটে পরাবৃত্ত, পরিধি ছাড়িয়ে
    পরক্ষণে কিছু নেই জ্যোৎস্নার কাদায় বাদায়
    শুনশান একবিংশ, হাওয়াহীন, লগিও ঠেকে না
    এ গহন তলদেশে, মৃতবৎ পাথরের মতো
    তালের ডোঙাটি স্থির… গুরুভার আর এগুবে না।

    উপরে অনন্তবালা… বঙাবঙ্‌ একতারাটি তার
    টানাদরিয়ার সুর পার হয় অনন্ত বলয়।


    বসন্তভৈরবী

    বসন্তের আম্রকুঞ্জ শুনেই আনন্দ গুঞ্জরণে
    মৌমাছিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে যায় নীলান্তের বনে।
    পরক্ষণে মনে হয়, এখন শরৎকাল, ওরা
    কীভাবে স্মরণে রাখে? ভাবতেই হাসির পাগলাঝোরা

    ছড়িয়ে মুকুলগন্ধ পুনশ্চ জানালা দিয়ে দূর
    চৈত্রের বনান্ত থেকে ঘরের ভিতরে সুমধুর
    ঢুকেছে বসন্তরেণু পুঞ্জপুঞ্জ ছায়া ঘেরা আরও
    দূরের সাঁওতালপল্লি গ্রাম শেষে অরণ্যপ্রগাঢ়…

    এখানে এভাবে হাওয়া… আসা যাওয়া অবাধ স্বাধীন
    কোথাও নিষেধ নেই, মধুমাস নিদাঘ আশ্বিন
    মাঝে মাঝে বর্ষাকাল, বৃষ্টি হয়, কখনও-বা রোদে
    বসন্তভৈরবী রাগে পাতাদের সেতার সরোদে

    জায়গাটি মনোরম। কাছেই। কিছুটা ট্রেনে এসে
    যেখানে বাহির শেষ, বাহির ভিতর হয়ে মেশে…


    রাগ কিরমানি

    হাওয়ার ঝরোখা আঁকা দূর নদীতীর
    সুদীর্ঘ রেখার মতো যেন চিকারির
    তারের নিক্কণধ্বনি এপার ওপার
    ঝালায় স্পন্দিত… ক্রমে ঝাপসা একাকার।

    খর্জূর বীথির দেশ। ভাঙাভগ্নপ্রায়
    গম্বুজ… খিলান ভাসে দ্রাক্ষাকুঞ্জছায়
    নদীটি কিরমানি-ধারা, ডারা ডারা রিম্
    নদীর কৃন্তনে মগ্ন জাফর হালিম

    দেখান স্বপ্নের প্রায় আদিগন্ত সারি
    উটের কাফিলা যায়, রৌদ্র, বালিয়াড়ি,
    কাঁটা ও ক্যাকটাস ঝোপ… এ কোন অচিন
    নদীটির রূপ! যেন আগে কোনওদিন
    হুবহু ছবির মতো ছোট ছোট মীড়ে
    ঢেউ ভাঙে, ছায়া সৌধ… নদীটির তীরে।


    বসন্ত ওস্তাদ

    চৈত্রমাস মধুমাস। তোমরাও তো সেকাল দেখোনি… গাছে-গাছে
    পাতাদের উল্লাস ছিল। কোকিলও অগুনতি। তারস্বরে
    সে কুহুপঞ্চম, আহা! বসন্তের সে অনন্য স্বাদ
    তোমরা জানো না, শুধু বুড়োদের কিছু মনে আছে।

    মুখুজ্জেবাড়ির লাল শান-বাঁধা রোয়াকের পাশে
    সারি সারি জানলা খোলা, তেনাদের বৈঠকখানা-ঘর
    ভিতরে হ্যাজাক বাতি, শতরঞ্জি, ডুগি-তবলা, হাতুড়ি, হারমোনি
    কালোয়াতি আসর বসত। খিটি তাং খিটি তাং…
                      একমনে তবলা বাঁধছেন বাজনদার কালো সূত্রধর—
    বাঁয়ার চাপড়ে যার গুরু গুরু মেঘ ডাকত বুকের ভিতর।
    এদিকে গাইয়ের নাম সর্বত্র হাওয়ায় উড়ছে, বীরভূমের বসন্ত ওস্তাদ।

    নিবাস কাদপুর গ্রাম। গুরুধাম বিষ্ণুপুর। গুরুনাম জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ।
    জ্ঞান গোঁসাই নামে খ্যাত— এত বাক্যে শ্রীগুরুচরণ
    স্মরণপর্বের শেষে, কাকবর্ণ খর্বকায় অতিশয় খেঁকুরে গড়ন
    মাথায় ঢাউস পাগড়ি, ইয়া মোচ, গালে কালো বেঢপ আঁচিল
    যখন খরজ থেকে চকিতে মধ্যম ছুঁয়ে ফোটাতেন কোমল নিখাদ
                                                    … তার কাছে কোথায় কোকিল?

    কোথা সেই চৈত্রমাস? মনে পড়ে গাছে-গাছে অজস্র অবাধ
    পাতাদের মত্ত তালে অন্তরালে গান গাইছেন বীরভূমের বসন্ত ওস্তাদ।

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook