হ্যালো!’
‘হ্যালো ‘মাসিক সমন্বয়’?’
‘কে বলছেন?’
‘হ্যালো! আপনি অনিন্দ্য স্যার বলছেন?’
‘আপনি কে বলছেন সেটা বলুন।’
‘আ… আমি মধুসূদন দত্ত বলছি।’
‘কী নাম বললেন?’
‘আজ্ঞে মধুসূদন দত্ত।’
‘বাবাঃ! বলুন। তাড়াতাড়ি বলুন।’
‘ইয়ে আমি গত জানুয়ারি মাসে একটা কবিতা জমা দিয়েছিলাম।’
‘তাতে আমরা কী করতে পারি?’
‘না। মানে সেটা অ্যাপ্রুভ হয়েছে কি না জানার জন্য… মানে বলা হয়েছিল দু-তিন মাস পরে খোঁজ নিতে।’
‘কোন ফর্ম্যাটে পাঠিয়েছিলেন? কোন ফন্টে?’
‘ফর্ম্যাট বলতে?’
‘আরে দাদা, এগুলোও কি বোঝেন না? কী লেখেন আপনি? ইউনিকোডে লিখে ওয়ার্ড ফাইল বা পিডিএফ ফাইল অ্যাটাচড করে যদি মেল করে থাকেন তো আছে কোথাও না কোথাও…। রাখছি।
‘এক মিনিট দাদা, এক মিনিট! আ… আমি সাদা কাগজে মার্জিন টেনে কাগজের একদিকে কালো কালি দিয়ে গোটা-গোটা অক্ষরে লিখেছি। আপনাদের দপ্তরে গিয়ে জমা দিয়েছি। ওতে হবে না?’
‘মধুবাবু, আপনি যখন এই নামে আগের জন্মে বা তার আগের জন্মে কবিতা লিখতেন, তখন ওইভাবে লেখা জমা নেওয়া হত। এখন কেউ ওই মান্ধাতার আমলের মতো লেখা দেয় না। নতুনরা তো নয়ই। আপডেটেড হতে হবে তো দাদা!’
‘তাহলে আমার লেখাটা?’
‘আপনার কবিতা লেখা কাগজে হয়তো দপ্তরের লোকেরা বিকেলে মুড়ি-বেগুনি খেয়ে ফেলেছে।’
‘তাহলে আমাকে ইমেল করেই পাঠাতে হবে?’
‘এতক্ষণ কথা বলে কী বুঝলেন? পত্রিকায় নিয়মাবলিতে সব দেওয়া আছে। দেখে নেবেন। আর বিরক্ত করবেন না। লাইনটা ছাড়ুন এবার।’
‘এক মিনিট স্যার। বলছিলাম যে কবিতাটা তো খুবই ছোট। মাত্র ষোলো লাইন। আমি আর একবার বাই পোস্ট পাঠাই। কেউ যদি একটু টাইপ করে দেন। ফর্ম্যাট, ফ্রন্ট সাইজ এসব ব্যাপার তো আমি ঠিক…’
‘সত্যি বলছি দাদা, আপনি না আমাকে পাগল করে দেবেন! শুনুন মশাই, আপনার লেখা টাইপ করার জন্য কেউ এখানে বসে নেই। কীভাবে লেখা পাঠাবেন, সেটাও এখানে শেখানো হয় না। শিখে-বুঝে লেখা জমা দিতে হয়। আর হ্যাঁ, কথাটা ‘ফ্রন্ট’ নয়, ‘ফন্ট’। ‘সমন্বয়’-এর পাতায় আমরা স্মার্ট, ঝকঝকে লেখক-কবিদেরই শুধু এন্টারটেইন করি। রাখলাম। নমস্কার।’
২.
‘দাদা একটু সরে যান। টেবিলের এত কাছ ঘেঁষে দাঁড়াবেন না।’
‘কোথায় দাঁড়াব স্যার? যা ভিড়! তিনদিন ব্যাঙ্ক ছুটি। কাল গুড ফ্রাইডে। পরশু আবার ফোর্থ স্যাটারডে!’
‘ছুটিগুলো সরকার দেয়। আপনার… যাক গে। কী ব্যাপার বলুন চটপট।’
‘আমার এন.পি.এস অ্যাকাউন্টটা তো এখনও চালু হল না। এখানে কিছু টাকা ট্রান্সফার করতে না পারলে ইনকাম ট্যাক্সে সমস্যা হয়ে যাবে তো!’
‘ঠিক সময়ে চালু হয়ে যাবে।’
‘আর কবে হবে? ইয়ার এন্ডিং-এর সময় এসে গেল যে!’
‘চালু হলেই বুঝবেন সময় এসেছে। আর এসব কাজ একটু আগে থাকতে করতে হয় দাদা! তো এন.পি.এস-এ টাকা জমা করেছিলেন কীসে? অ্যাপ থেকে?’
‘না। মানে চেকে। পেছনে মোবাইল নম্বর, ডিপোজিট স্লিপে প্যান নম্বর সব ঠিকঠাক লিখেছি।’
‘দাদা, ‘প্যান নাম্বার’ বলে কিছু হয় না, কেমন? প্যান কথাটার ‘এন’ লেটারটাই নাম্বার বোঝায়। বুঝলেন?’
‘হুঁ।’
‘হুঁ নয়। এগুলো তো জানতে হবে। বুঝতে হবে। না হলে সবই যে উটের পাকস্থলি হয়ে যাবে। কী নাম আপনার?
‘অনিন্দ্যসুন্দর সেন।’
‘আরিব্বাস! ইনিশিয়ালটা তো ভয়ঙ্কর! অ্যাঁ! হাহাহাহাহাহাহা…’
‘স্যার একটু আগে আপনিই চটপট করার জন্য তাড়া লাগাচ্ছিলেন না?’
‘হ্যাঁ, তখন তো আপনার ইনিশিয়ালটা জানতাম না মশায়! হাহাহাহা…!’
‘আমার এন.পি.এস অ্যাকাউন্টটা কি থার্টি ফার্স্ট মার্চের আগে চালু হবে? হ্যাঁ অথবা না…?’
‘সব প্রশ্নের উত্তর কি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’তে দেওয়া যায় দাদা? যদি প্রশ্ন করি, আপনি কি প্রত্যহ গঞ্জিকা সেবন করেন? পারবেন ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’তে উত্তর দিতে?’
‘এক্সকিউজ মি, আ… আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন…’
‘আপনি যদি একটু তাড়াতাড়ি করতেন, আমাকে এই বাড়াবাড়িটা করতে হত না। ইলেভেন্থ আওয়ারে এন.পি.এস অ্যাকাউন্ট খুলতে এসেছেন। অ্যাপ ইন্সটল না করে মান্ধাতার আমলের চেক দিয়ে টাকা জমা করছেন। আবার ইয়ার এন্ডিং আর ইনকাম ট্যাক্সের কথা বলে চোটপাট করছেন। আবদারটা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?’
‘অ্যাপ দিয়ে কীভাবে পেমেন্ট করব সেটা তো বলবেন?’
‘এটা ট্রেনিং সেন্টার নয় দাদা। এটা ব্যাঙ্ক। ওয়েবসাইটে সব আছে। দেখে নিন। এন.পি.এস ইজ ফর স্মার্ট পিপল। চেয়ার ফাঁকা আছে। বসে-বসে ট্রাই করুন। বিরক্ত করবেন না। দুটো বেজে গেছে। ইট্স টিফিন টাইম। আমি উঠলাম।’
‘দাদা, সেকেন্ড হাফে আমার কাজটা হবে তো…?’
‘কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কীসে
কভু আশীবিষে দংশেনি যারে…’
‘হুঁ-হুঁ বাওয়া! সবাই ভাবে লাইনটা মধুসূদন দত্ত-র। কিন্তু আসলে এ-কবির নাম হল কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। এনিওয়ে, আমি কিন্তু দিব্যি বুঝতে পারছি আপনার যাতনা।’
‘আমিও বুঝতে পেরেছি আপনাকে। খুব সুন্দর আবৃত্তি করলেন কবিদাদা।’
‘ধন্যবাদ সম্পাদক মশায়।’
‘বলছি দশ মিনিট সময় হবে? আমাকে এন.পি.এস অ্যাপটা একটু দেখিয়ে দিতেন। আর আমিও লেখা পাঠানোর ফর্ম্যাট, ফন্ট এগুলো বুঝিয়ে দিতাম আপনাকে।’
‘অতি উত্তম প্রস্তাব। এক কথায় অনিন্দ্যসুন্দর! দাঁড়ান, চা বলে আসি।’
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র