নাঃ! তেমন কোনও একটি নির্দিষ্ট অসুর আমার জীবনে বিভিন্ন সময়ে প্রতিভাত হয়ে আমাকে ভয় পাইয়েছে, সেরকমটা হয়নি। নাচের মাধ্যমে হোক বা জীবনে হোক, এমন শক্তির আরাধনা করেছি যে হয়তো কিছুটা ভয়ে অসুর সব পালিয়েছে। আমার চৌহদ্দির মধ্য়ে আসেনি।
তবে, এখন একটি আছে বটে আমার জীবনে। তার নাম চিন্তাসুর। তিনি আমার জীবনে তীব্রভাবে প্রবেশ করেছেন আমার মেয়ে সানা যবে থেকে লন্ডনে পড়তে গেছে। আমি যখন ওর থেকে দূরে থাকি, তখন সব সময় একট চিন্তা মাথার পেছনে চলতেই থাকে। দুঃশ্চিন্তা বলব না। কারণ আমি জানি, ও খুব স্বাবলম্বী। নিজের কাজ, নিজের খেয়াল রাখা, বিদেশে নিজের জীবন ম্যানেজ করার কাজটা ও নিজে নিজে করতে চায়। একদিক থেকে ভালই, ওরও জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হবে। অবশ্য সৌরভ একটি বেশি চিন্তা করে। বলেছিল, ওর সঙ্গে একজনকে ওখানে রেখে দিতে। কিন্তু আমি বা আমার মেয়ে কেউই চাইনি। মেয়েও বলেছিল যে ও নিজেই নিজের জীবন সামলাতে চায়।
তবে সত্যি কথা বলতে কী, কথা হিসেবে এসব ব্যাপার যতটা উৎসাহব্যঞ্জক শোনায়, কাজে করতে গেলে তখন বেশ কঠিন হয়ে যায়। মেয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবিক ভাবে আর আমার ক্ষেত্রে চিন্তার পাহাড় নিয়ে আসে। যতই চেষ্টা করি এই চিন্তাটা কিছুতেই মাথা থেকে যায় না।
এ তো গেল বর্তমান অসুর। সানা যতদিন স্কুলে পড়াশোনা করত, তখন আর একজন অসুর ছিল বটে। ভোরবেলা। যখন আমায় উঠতেই হত, সানাকে স্কুলে পাঠানোর জন্য আগে উঠে ওর জন্য টিফিন তৈরি করা, ওকে ঘুম থেকে তুলে ব্রেকফাস্ট খাইয়ে স্কুলে পাঠানো। এটা অন্তত টানা বারো বছর করতে হয়েছে। আমার যতই প্রোগ্রাম থাকুক, ট্রাভেল থাকুক, যত রাতেই আমি বাড়ি ফিরি না কেন আর যত ক্লান্তই থাকি না কেন, অ্যালার্ম শুনে উঠে পড়তেই হয়েছে। এক এক সময় শরীর ভেঙে আসত, কিন্তু কোনও উপায় ছিল না। ভেবেছিলাম, এই অসুরকানি কবে বিদায় নেবে। বিদায় নিলে একটু বাঁচি। বাপ রে!
ও মা! কোথায় কী! সে বিদায় নিল তো, আর একজন হাজিরা দিতে উপস্থিত হল। কী জানি, এই চিন্তাসুর কতদিন স্থায়ী হবে! মা তো আমি, তাই মনে হয় এটা বোধহয় বহু কালই থাকবে। আমাকেই দেখি, পোষ মানিয়ে নিতে হবে চিন্তাসুরকে।
ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র