ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • সেদিন মুসলমান পাড়ায় গিয়েছিলাম

    চিত্রা সেন (August 13, 2022)
     

    স্কুলে পড়ার সময় একবার স্কুলের লোহার গেট টপকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এর দু’পাশে জনসমুদ্রের মধ্যে দিয়ে খোলা গাড়িতে ঋজুভাবে দাঁড়িয়ে, স্বভাবচিত স্যালুটের ভঙ্গিমায় দেখেছিলাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে। ফলে সেই ছোট বয়সেই দেশের লড়াইয়ের উন্মাদনার বীজ আমার মধ্যে ঢুকে যায়।  আর আমার মধ্য়ে সেই বীজ বপন করেছিলেন আমার মা। আমার মা এসব ব্যাপারে খুব উদ্যোগী ও তৎপর ছিলেন; বরং বাবা ছিলেন খানিকটা রক্ষণশীল। মা সবসময়েই বলতেন, ছেলেমেয়েদের ছেড়ে দাও, ওদের স্বাধীনতা দাও, ওরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে শিখুক। 

    আমরা তখন থাকতাম লেক অ্য়াভিনিউ-এ। সেখানকার কাছাকাছি মাঠে একবার গান্ধীজি এলেন বক্তৃতা দিতে। মা আমাকে নিয়ে গেলেন সেখানে। আমার পরের ভাইবোনেরা তখন খুবই ছোট, তাই তাদের আর এসব সৌভাগ্য হয়নি। কী বুঝেছিলাম জানি না, কিন্তু দেশ সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পেরেছিলাম। আর এই আন্দোলন, সংগ্রাম— এসবের উন্মাদনা এত ছোঁয়াচে ছিল যে, সেই বয়স থেকেই তা আমার মতো ছোট ছেলেমেয়েদের মনে ছড়িয়ে গিয়েছিল। 

    স্বাধীনতা ঘোষণা হওয়ার পর পরই, সেই সন্ধে থেকে গোটা শহর কেমন চাঞ্চল্যে ভরে গিয়েছিল। আমাদের পাড়া থেকে পাড়াতুতো দাদাদের এবং আমার মায়ের উদ্যোগে লরি করে আমরা মুসলমান এলাকায় গিয়ে-গিয়ে তাঁদের অবস্থা দেখে এসেছিলাম। তাঁদের সঙ্গে আরও একাত্ম হতে চেষ্টা করেছিলাম। তাঁরাও কিন্তু আমাদের স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি তো আর আগের মতো ছিল না! মনে আছে, আমাদের লরি থেকে শরবত বিতরণ করা হচ্ছিল। আর আমি কাচের গ্লাসে সেই শরবত খেয়েছিলাম। সে-শরবতের স্বাদ এখনও আমার জিভে লেগে আছে। সেটা শরবতটা ভাল খেতে ছিল বলে, না কি আমার বয়স কম ছিল বলে, তা বলতে পারব না।  তার মধ্যে স্বাধীনতার উন্মাদনা মেশানো ছিল বলেও হতে পারে! তবে বুঝতে পারছিলাম আমি একটা ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকছি। তখন সবার আশা ছিল, এর পর থেকে আমাদের শুধুই ভাল হবে। একটা ছোট মেয়ের পক্ষে একটা দেশের জন্মের মতো  বৃহৎ ব্যাপারে সামিল থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।  

    তার পর থেকে আমরা প্রতি বছর নিষ্ঠার সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস পালন করতাম। সকালে প্রভাতফেরি বেরোত। দেশাত্মবোধক গান গাওয়া হত। তখন ভাবতাম এইসব গানের বাণী দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে দেশের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ থাকতে, দেশের জন্য কাজ করতে। বিকেলের অনুষ্ঠানে অবশ্যকর্তব্য ছিল গান্ধীজির ছবি রাখা এবং তাতে মালা পরানো। আরও একটা কাজ করতাম। এখন সেই কাজটির কথা শুনলে কেউ হাসবে কি না জানি না, কিন্তু আমরা মন থেকে খুব বিশ্বাস করেছিলাম সেই কাজটিকে। সেটা হল, বড়রা তখন আমাদের বুঝিয়েছিলেন যে, যাঁরা দেশের জন্য এই স্বাধীনতা এনেছেন, তাঁরা খুব কষ্ট করেছেন, অত্যন্ত কষ্ট সয়েছেন; সুতরাং, তাঁদের সেই কষ্ট এবং যন্ত্রণার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদেরও সেই কষ্টের অনুভূতি কিছুটা হলেও হওয়া দরকার। তাই আমরা প্রত্যেকে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে হাতের কড়ে আঙুলে সেফটিপিন ফুটিয়ে এক ফোঁটা রক্ত বের করে, সেই রক্ত দিয়ে গান্ধীজির ছবিতে টিপ পরাতাম। সেটার মধ্যে একটা তৃপ্তি ছিল। মনে হত সক্রিয়ভাবে না হলেও, আমিও যেন তাঁদের আন্দোলনের শরিক হতে পারলাম। দেশমাতৃকার সেবায় থাকলাম। 

    তবে, যে-স্বাধীনতার স্বপ্ন আমাদের নেতারা, অগ্রজরা, আন্দোলনকারীরা দেখেছিলেন— তা কত দূর পূর্ণ হয়েছে, জানি না!

    ছবি এঁকেছন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook