ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ব্লাউজ দিয়ে জাতীয় পতাকা

    সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় (August 13, 2022)
     

    ১৯৪৭ সালে যেদিন স্বাধীনতা এল, আমি তখন ছোট একটি ছেলে। কিন্তু সেই মাঝরাতের একটা স্মৃতি আমার মনে এখনও উজ্জ্বল ভাবে গেঁথে রয়েছে। আমরা ১৪ অগাস্ট মধ্যরাতে স্বাধীনতা পাব, এ-কথা জেনে যাওয়ার পর থেকে প্রত্যেকে রূদ্ধশ্বাস উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম কখন রাত বারোটা বাজবে। আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল থানা, গঙ্গার ধারে। যে-থানাটা ছিল পাথুরিয়াঘাটার হরকুমার ঠাকুরের বৈঠকখানা। সেই সময় ইংরেজরা সেই বৈঠকখানাকে থানা বানিয়েছিল। থানার সামনে একটু রাস্তা, তারপরেই গঙ্গা। উল্টোদিকে বেলুড় মঠ। তখন অবশ্য এখনকার মতো এত বিশাল রূপ ছিল না বেলুড় মঠের। 

    সেইদিন সন্ধে থেকেই দেখছি বড়দের মধ্যে সাংঘাতিক উত্তেজনা। চারদিকে পতাকা উড়ছে, আলোর মালা ঝুলছে। রাত যত বাড়তে লাগল, বারোটার আগে— এমনকী আমরা ছোটরাও থানার পাশে গঙ্গার ধারে গিয়ে দাঁড়ালাম। থানার যত পুলিশ ছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকে আকাশের দিকে নল তুলে গান-স্যালুট দিয়ে স্বাধীনতাকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হলেন। আমাদের পাড়ায় থাকতেন হরিধন দাঁ। বলতে গেলে বাংলায় বেনারসি শাড়ি জনপ্রিয় করেছিলেন তিনিই; তাঁরা খুব বড়লোক ছিলেন। ডাচ গভর্নরের পাঁচতলা বাড়িটি তাঁদের ছিল। সেই হরিধন দাঁ-এর ছেলে, আমাদের পাড়াতুতো দাদা,  ছাদে উঠে নিজের রিভলভার নিয়ে প্রস্তুত ছিল আকাশে ফায়ারিং করবে বলে। 

    সবার ভেতর গুড়গুড় করছে। বারোটা বাজবে— দু-মিনিট বাকি, আর এক মিনিট বাকি। সেই সময় থানায় বিউগল বেজে উঠল। চতুর্দিকে শুরু হল ফায়ারিং। সেই শুরু হল আমাদের স্বাধীনতা। সে-রাতটা খুব সুন্দর লেগেছিল আমার কাছে। আবহাওয়া খুব সুন্দর ছিল। কোনও ঝড়-বৃষ্টি ছিল না। সামনে গঙ্গা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজদের কাছে যেসব ডেস্ট্রয়ার শিপ ছিল, সেগুলো একজন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী কিনেছিলেন। আমাদের এই কুটিঘাট থেকে বাগবাজার ঘাট অবধি পর পর সেই ডেস্ট্রয়ারগুলি সেদিন গঙ্গার বুকে দাঁড় করানো ছিল। যেখানে ইলিশ মাছ ধরার জন্য পর পর নৌকা বাঁধা থাকত, সেখানে সেই রাতে ওই ডেস্ট্রয়ারগুলো দাঁড়িয়ে ছিল। সেই রাতে আমরা কেউ ভাল করে ঘুমোতে পারিনি।

    সকালে উঠে দেখলাম চারিদিকে কাগজের পতাকা পতপত করে উড়ছে। তিনকোনা পতাকা। রাস্তার ওপরদিকে তাকালে আকাশ দেখা যাচ্ছে না। তখন তো এত মাইকের চল ছিল না! আশেপাশে অনেক ক্লাবের ব্যান্ড বাজতে শুরু করেছিল। তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল বিভিন্ন পাড়া থেকে। আর আমরা সাদা জামা-প্যান্ট পরে রাস্তায় লেফট-রাইট করতে নেমে পড়লাম। 

    সেসব তো হল, কিন্তু চারিদিকের পতাকা দেখে আমিও বায়না শুরু করলাম যে, আমারও একটা পতাকা চাই। বড়রা তখন আর পতাকা কোথায় পাবেন! এর পরের ঘটনাক্রম মনে পড়লে এখনও আমার হাসি পায়। আমার সম্পর্কের এক কাকাবাবু ছিলেন, তিনি কোথা থেকে পতাকার তিন রঙের তিনটি ব্লাউজ জোগাড় করলেন এবং সেফটিপিন দিয়ে টেঁকেটুঁকে, তার মধ্যে দিয়ে একটা লাঠি ঢুকিয়ে একটা বেশ ভারী কী যেন তৈরি করলেন। তারপর সেটা হাতে দিয়ে বললেন, ‘এই নে তোর পতাকা।’  আমি তো মহা খুশি। কিন্তু তারপর দেখলাম, পতাকা তোলা খুবই একটা দায়িত্বের কাজ। কারণ রাতের বেলা পতাকা নামিয়ে নিতে হবে, তখন এমনটাই নিয়ম ছিল। ভিজে গেলে, ছিঁড়ে গেলে, সে এক মহাকাণ্ড! ওদিকে স্বাধীনতাও ধীরে-ধীরে সয়ে গেল। 

    দিনকয়েক পরে দেখলাম, কাকেরা গৈরিক রংটি নিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম করেছে; ঠোঁট দিয়ে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা চলছে। তখন আবার পতাকা নামিয়ে নিলাম। আসলে, পতাকা তুলতে গেলে পতাকার যত্ন করতে হয়, পতাকার দায়িত্ব নিতে হয়। প্রতিটি দায়িত্ব পালন করে একজন পূর্ণ নাগরিক হয়েছি কি না আজও তা বলতে পারি না।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook