১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ না হলে, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ না করলে, ১৯৭১ সালে পূর্ব-পাকিস্তানের খোলস ছেড়ে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র রাষ্ট্রমর্যাদা না পেলে এবং সদ্য স্বাধীন দেশটি সেই দেশের মুষ্টিমেয় নাগরিকদের হাতে ক্রমাগত এবং লাগাতার লাঞ্ছিত না হলে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম অ্যাকটিভিস্ট হয়ে উঠতেন না। অ্যারেস্টও হতেন না।
দেশের ইতিহাস সে-দেশের নাগরিকরা লেখেন না। ফ্যাক্ট নয়, যুগ-যুগান্ত ধরে মানুষ লিখে চলে ফিকশন। মহাভারতের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মানুষের ইতিহাস লিখতে বসে শাসককুল তাদের যাবতীয় পলিটিক্যাল হাইলাইট বর্ণনা করে পাতার পর পাতা জুড়ে। ব্যক্তি গান্ধী ও জিন্না সম্পর্কে আমরা যতটা শুনতে পাই, দুটি দেশের আমজনতার জীবন সম্পর্কে ততটা নয়। বছরের পর বছর ধরে মানুষ আসলে কেমন আছে বা ছিল, তা জানা হয়ে ওঠে না। যাঁরা ভাল থাকেন তাঁরা মাথাও দেন না। দম বন্ধ হয়ে আসা, খাদের কিনারায় পৌঁছনো জ্যান্ত মানুষদের বিক্ষোভ মাত্রা ছাড়ালে খুবই মুশকিল হয় বাকি সবার। বাংলাদেশের পুরনো ইতিহাসটা তলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয় অনেক কিছু। মাঝখানে ইন্ডিয়া। দু’প্রান্তে একই দেশের দুটো টুকরো। পশ্চিম পাকিস্তানের অবহেলা, সামরিক শক্তির অপব্যবহার, ধর্মীয় উচ্ছৃঙ্খলতা কুরে-কুরে খেয়েছে তখনকার পূর্ব-পাকিস্তান, তথা আজকের বাংলাদেশের মানুষকে। একের পর এক অভ্যন্তরীণ অশান্তি ও গণ অভ্যুত্থানে শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে বার বার। ভারতের মদতে পাকিস্তানকে তাড়িয়ে নতুন দেশ সৃষ্টি হয়েও স্বস্তি আসেনি। মুক্তিযুদ্ধের নায়ক মুজিবুরের হত্যা, পরবর্তী শাসকদলের খেয়োখেয়ি, ক্রমাগত ঝড়-বন্যায় বিধ্বস্ত, প্রায় শিল্পহীন দেশটি কোণঠাসা হতে-হতে ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গেছিল। গোপনে বিকিয়ে গেছিল বিগ ব্রাদারদের কাছে।
আজকের পরিসংখ্যান সুবিধেজনক নয়। খাতায়-কলমে উন্নয়ন হয়েছে। গ্রোথ, জিডিপি ঝলমলিয়ে উঠেছে। ঝকঝকে বাড়ি-গাড়ি দেখা গেছে বিক্ষিপ্ত অঞ্চলে। কিছু সুবিধেবাদী লোক তলে-তলে ‘করে খেয়েছে’ কোরাপশনের প্রশ্রয়ে। মার খেয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ করলে সেনা ও পুলিশকে কাজে লাগিয়ে কোতল করা হয়েছে নির্বিচারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে। হিউম্যান রাইটস এক শৌখিন শব্দদ্বয়। পড়েছে এক সরকার। এসেছে আর এক। ছবি তেমন বদলায়নি। আশির দশকে দুনিয়ার যাবতীয় ঘটনা সবার হাতের মুঠোয় এসে যাওয়ার পর কোনও কিছুই আর গোপন রাখা যায়নি। এরই মধ্যে উদয় হয়েছেন শহিদুল আলমের মতো লোক। শুরু করেছেন নিজের কাজ। রাজনৈতিক নেতা নন; পার্টির লোক নন; ধর্মগুরু নন; অথচ সারা দুনিয়ার কাছে অগ্রগণ্য, প্রভাবশালী; বাংলাদেশি ব্যক্তিত্বের কথা উঠলে ওঁর নাম সবসময় প্রথম সারিতে। কী করেছেন উনি? একদিকে চিত্র-সাংবাদিক। অন্যদিকে মাস্টারমশাই। ১৯৮৯ সালে সৃষ্টি করেছেন ‘দৃক’। ‘পাঠশালা’, ১৯৯৮ সালে। ‘ছবিমেলা’ এর পরের বছর থেকে। বাংলাদেশি এই উদয়ন পণ্ডিত উৎসাহী হয়েছেন জনচেতনা জাগরণের কাণ্ডারি হিসেবে। বন্দুকের চেয়েও শক্তিশালী অস্ত্র ক্যামেরাকে ব্যবহার করেছেন যাবতীয় পরিস্থিতির দলিলচিত্রকে তুলে ধরতে। সেইসব পরিস্থিতি, যা ইতিহাস সযত্নে এড়িয়ে যেতে চাইবে। শিক্ষিত এই মানুষের স্পষ্ট, ঝকঝকে, প্রভাবশালী কথাবার্তা ও ছবি লুফে নিয়েছে বহির্বিশ্ব। বেড়েছে পশ্চিমি চাপ, ঋণগ্রস্থ দেশটির ক্ষমতাসীন পরিচালকদের ওপর। বলা বাহুল্য, ফোটোগ্রাফির রোম্যান্টিক বিনোদনে উৎসাহী ছিলেন না শহিদুল। হার্ড ফ্যাক্ট এক্সপোজ করে গেছেন ক্রমাগত। আর স্বভাবতই, শাসকের চোখে উনি বাংলার সোনার ছেলে হয়ে ওঠেননি।
কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি-তে চলছে শহিদুল আলমের ছবির প্রদর্শনী। SINGED BUT NOT BURNT। আয়োজক : ইমামি আর্ট। গ্রন্থনায় ইনা পুরী। প্রদর্শনীর বিন্যাসে রেজাউর রহমান। এর নাম হতে পারত, ‘এক ঝলক শহিদুল’। দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার শেষ প্রান্তে সুবিশাল ও আধুনিক এই গ্যালারিতে সারা বছর দৃশ্যমান আর্ট দুনিয়ার নতুন দিগন্ত চেনা যায়। ঢোকার মুখে একটি লাইন দর্শকের মাইন্ডসেটকে প্রবল ঝাঁকুনি দেয় প্রথমেই। If you are not making some people uncomfortable with your work, you are probably doing something wrong. শহিদুল সম্পর্কে দু’এককথা যাঁদের জানা নেই, এটি পড়ে তাঁরা অবাক হবেন নিশ্চয়ই। স্পটলাইটের নীচে দাঁড়িয়ে প্রথম ছবি দেখার পর আবার শক। দিব্যি সুন্দর, স্বপ্নিল ছবি, নাগরিক উদ্যান, প্রকৃতি, ইংল্যান্ড। সূত্র রয়েছে ছবির ক্যাপশনে, বর্ণনায়। বিলেতে লেখাপড়া করার সময় তোলা। পুরস্কার প্রাপ্তিও। ১৯৮৩ সালে। তবে লঘু চিত্রের আরামদায়ক কুর্শি দ্রুত ত্যাগ করে নিজেকে খোঁজার পর্যায় শুরু এর পর থেকে। ঘন কালো ব্যাকড্রপে এক প্রাণীর কঙ্কাল-স্কাল্পচারের পরেই ন্যুড সেলফি; পাশে আরও একটা। আন্দাজ করছিলাম, খুব শিগগিরই শহিদুল প্রবেশ করবেন অন্য এক রঙ্গমঞ্চে। তার আগে নিজেকে ও নিজেদের একবার উন্মুক্ত করে দেখে ও দেখিয়ে দিলেন। এই স্টেটমেন্টের আই গ্লাস দিয়ে দেখতে-দেখতে অনুভব করছিলাম, ফোটোগ্রাফি-শিল্পের বিনোদনের চেনা সংজ্ঞাগুলো ধুলোয় লুটচ্ছে। কনটেন্ট ও স্টাইলের পাশাপাশি পলিটিক্স ও এস্থেটিক্স চলছে তার সমান্তরাল দৌড়ে। পশ্চিমে যা দেখার দেখে-বুঝে শহিদুলের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন। সে-সময়ের বাংলাদেশের পরিস্থিতি শিল্পীকে গদিমোড়া সোফায় নিশ্চিন্তে বসে থাকতে দেয়নি। মাথা থেকে শরীর যখন ক্রমাগত দগ্ধ হয়ে চলেছে, রোম্যান্স-আর্ট বিলাস কীভাবে অগ্রাধিকার পাবে? এই প্রদর্শনীতে তারই কর্ড প্রগ্রেশন।
চরিত্রের মধ্যে ছিল নিশ্চয়ই, তাই ইউরোপের সংগ্রামের নাড়িটা বুঝে নিতে দেরি হয়নি ইন্টেলিজেন্ট, ইন্টেলেকচুয়াল,সফিস্টিকেটেড মানুষটির। ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন নিজের জীবনবোধ ও একমাত্র হাতিয়ার ক্যামেরাকে নিয়ে। সর্বাগ্রে শিক্ষাপ্রসারের প্রয়োজন। ‘দৃক’ বেড়ে উঠছে প্রায় একক উদ্যোগে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অপরিহার্য আলোকচিত্র-ভাণ্ডার হিসেবে সম্মান পেতে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে। স্রেফ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা ওঁর উদ্দেশ্য ছিল না। তবে দেশের ‘আসল চেহারা’কে উন্মুক্ত করে পশ্চিমের ফোকাসটা টেনে নেওয়ার ব্যাপার অস্বীকার করা যায় না। ‘পাঠশালা’র আকর্ষণ অনুভূত হতে শুরু করে নতুন প্রজন্মের আলোকচিত্রীদের কাছে। যাঁরা স্রেফ পিকটোরিয়ালিজম নয়, চালু ঠাঁটবাটের নিরাপত্তার বাইরে বেরিয়ে জীবনের গল্প অন্য ভাষায় বলতে উৎসাহী, তাঁদের কাছে। এই প্রদর্শনীতে শহিদুলের অজস্র কাজের অংশ দেখলে আলোচ্য মননটির আন্দাজ পাওয়া যাবে। জানিয়ে রাখি, প্রথম ঘরে কিঞ্চিৎ হলুদাভ আলোয় স্নাত বেশ কিছু চিত্রগুচ্ছ রয়েছে। সবই সিঙ্গল ইমেজ, তবে প্রত্যেক ছবির আগের ও পরেরটি অদৃশ্য এক রেখায় যুক্ত। এক গল্পাংশ থেকে অন্যটিতে যাওয়ার মাঝখানে নৈর্ব্যক্তিক ‘ফিলার’ আছে, যা পরের কাহিনিতে প্রবেশ করার আগে একটু জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। সব প্রিন্টের মাপ এক নয়, তার ওপরে আলোর তারতম্য রয়েছে। সন্দেহ নেই, এই একজিবিশনের ক্রাফ্ট অত্যন্ত উপাদেয়।
প্রথম ঘরের মধ্যে রয়েছে একটি উপকক্ষ। প্রায় অন্ধকার। ভিডিও চলছে, শিল্পীকেও দেখা যাচ্ছে লাইভ। শোনা যাচ্ছে তাঁর কথা, সঙ্গে ঘটনাবহুল নাগরিক কোলাহল। এটি দেখলে সমগ্র প্রদর্শনীর প্রেক্ষাপট বুঝতে সুবিধে হবে। এর বাইরে, ডান ও বাম দিকে পর পর ছবি এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে এগিয়ে চলেছে। একটি দেখে তার পরেরটিতে গিয়ে আর একবার পিছনে ফিরলে ধরা পড়ে যাচ্ছে অল্পের জন্য মিস হয়ে যাওয়া ম্যাজিকটা। এই যেমন, দুটি ছবি, তুমুল বন্যায় বিপর্যস্ত এক মহিলা ভগ্ন আশ্রয়ের ধ্বংশস্তূপের ওপর রান্না করার চেষ্টা করছেন। পাশেই, একই সময়ে, সব বিপদের উর্দ্ধে, বিলাসবহুল এক বিবাহ অনুষ্ঠানে সুসজ্জিত নারীদের সমাহার। এই বৈষম্য দুনিয়ার সর্বত্র। আমরা ওয়াকিবহাল। কিন্তু এয়ারকন্ডিশন্ড প্রদর্শনীর মধ্যে এটি দেখলে আত্মগ্লানি তৈরি না হলেও, অস্বস্তি হয়। দর্শকমন অস্বস্তি পেতে শুরু করে বইকি! এই অস্বস্তি তৈরি করা, যা পরে ক্ষোভে-বিক্ষোভে পরিবর্তিত হতে পারে; এটা শহিদুলের ফোটো আর্ট-এর অন্যতম অঙ্গ। কিছু নেতিবাচক চিত্র-হাঙ্গামা দর্শকের সামনে উগরে, উস্কে দিয়ে জলদি জনপ্রিয়তার মতলবে আছেন, এমন সরলীকরণ করলে ভুল হবে। শুধুমাত্র মহিলা আলোকচিত্রীদের উপস্থিতি নিয়ে ১৯৯২ সালে তোলা ‘অন্য চোখে দেখা’ ছবির বিশাল প্রিন্টটি এক অনন্য মাধুর্যের রেশ রেখে চলেছে এক কোণে।
বাংলাদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের দেশ ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পা রাখার মুহূর্তে, এয়ারপোর্টের কাঁচের সীমান্তে তোলা ছবি ও সঙ্গের কথোপকথন আমাদের হঠাৎই মনে করিয়ে দেয় নিজেদের আত্মীয়-অনাত্মীয়দের কথা। আর্টের বর্ণনায় আর কোনও কথা খুঁজে না পেলে ‘বিমূর্ত’ শব্দটি সহজেই হাজির হয়। এখানে ওসবের ব্যাপার নেই। ‘আইজ ওয়াইড শাট’ অবস্থায় দেখলেও প্রায় নিউমোনিকের মতো ফিরে আসে সেই উন্মোচিত অস্থিসজ্জা আর নগ্নতার রেফারেন্সটা। একজিবিশন ও একজিবিশনিজমের অন্য মাত্রা অনুভূত হয় প্রতি মুহূর্তে। পালাবার পথ থাকে না। ক্যাপশনের সঙ্গে ফুটনোটগুলো পড়লে মনে হয়, পিছনে দাঁড়িয়ে শহিদুল আলম নিজেই বলছেন ফিসফিস করে, হাসতে-হাসতে। কলকাতায় এটা ওঁর দ্বিতীয় প্রদর্শনী। নিজে উপস্থিত থাকতে পারেননি। কারণ, ভিসা পাননি। না পাওয়াই স্বাভাবিক। পরের ঘরটি জানলা দিয়ে আসা আলোয় উদ্ভাসিত। সেখানকার ছবির চরিত্র অন্য ধরনের। একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচার সম্ভবনা তৈরি হওয়ার আগেই এসে পড়ে আরও এক ঝাঁক নিস্তব্ধ ছবির র্যাপিড ফায়ার। ২০০৪ সালে দুষ্টের দমন করতে, নৈরাজ্য সামলাতে বাংলাদেশে তৈরি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের আইন বহির্ভূত অজস্র গুমখুনের ঘটনা আজ অজানা নয়। এই পরিস্থিতির ফোটোগ্রাফিক দলিল, ওঁর দীর্ঘ কাজ ‘ক্রসফায়ার’। তার কিছু কালার প্রিন্ট রয়েছে অপরিমিত আলোয় থমথমে একটি প্যাসেজে। তার শরীর ছুঁয়ে আর একটি উপকক্ষ। কল্পনা চাকমার অন্তর্ধানে রহস্য ছিল না। রাষ্ট্রস্বার্থে বাধা পড়ায় তাঁকে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছিল। এর প্রতিবাদে বহু বাংলাদেশি অ্যাকটিভিস্ট লড়াই চালিয়েছিলেন নিজেদের জীবন বাজি রেখে। রয়েছে তাঁদের একগুচ্ছ পোর্ট্রেট, বিচিত্র স্টাইলাইজেশনে।
ঘুরতে-ঘুরতে চোখ আটকে যায় আর এক জায়গায়। পাশাপাশি দুটো ছবি। হীরকখচিত, পাদুকা পরিহিত এক গর্বিত ধনকুবের। প্যারিসের ফুটপাথে সাঁঝবাতির রূপকথার চরিত্র হয়ে ওঠা এক ঘুমন্ত ইমিগ্রান্ট লেবারের পা। রাষ্ট্রীয় মেশিনারি অপব্যবহার করে বিত্তবান হয়ে ওঠা লোকের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বললে, মানুষকে প্রভাবিত করলে, দুনিয়ার কাছে ছবি ফাঁস করে দিলে একজন মানুষ জনপ্রিয় হতে পারেন, সরকার প্রিয় হবেন কী করে? ২০১৪ সালে শহিদুল আলম শিল্পকলা পদক পেয়েছেন প্রেসিডেন্টের হাতে। ২০১৮ সালে হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড। ওই বছরেই ক্রমাগত পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলনে সামিল হওয়া, আল-জাজিরা-কে দেওয়া টিভি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হন শহিদুল। অত্যাচার হয়েছিল। খবর ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো। দেশ-বিদেশের অজস্র মানুষের আবেদনে শেষপর্যন্ত মুক্তি দেওয়া হয় তাঁকে। এই মুক্তিকে একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে একাসনে বসালে ভুল হবে। জেলের বাইরে থাকলেও, নজরদারি ও ঘাতকের অস্ত্র ওঁর শরীরের আরও কাছে মোতায়েন থাকবে এটা উনি জানেন। জেনে নিজের কর্মপন্থা পাল্টাবেন, না কি স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে নিজের কাজ চালিয়ে যাবেন, তা ভবিষ্যৎ বলবে।
দেওয়ালে সজ্জিত বিভিন্ন ছবি, টুকরো কথাবার্তা, মতামত ছাড়াও খুব ইন্টারেস্টিং একটি বস্তু স্থান পেয়েছে এখানে। ১৯৯৮ সালে ‘পারিবারিক জীবন’ নামের এক সচিত্র ক্যালেন্ডার। বাংলাদেশের রোজকার আটপৌরে জীবনের মরমি চিত্রগুচ্ছ। এটি সম্পর্কে আপাতত কিছু বললাম না। রাজনীতিই জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সর্বত্র। অতএব তার ছবি পলিটিক্যাল হতেই হবে, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। পলিটিক্স কীভাবে পলিটিশিয়ানকে পিছনে ফেলে দেয়, গ্রাস করে ফেলে, তার দুর্দান্ত পরিচয় আছে এক জোড়া ছবির সূক্ষ্ম কম্পোজিশনে। শহিদুল আলমের ফোটোগ্রাফ-বক্তব্য-ব্যক্তিত্ব, বাজারি ছবিতে প্রাপ্ত অস্থিমজ্জার বিন্যাস-রং-বর্ণহীনতা-আলো-ছায়ার চতুর বিনোদন ছাপিয়ে এডওয়ার্ড মুংখ-এর ‘স্ক্রিম’ ছবির মতো, চিৎকার করা জীবনের মুখ হয়ে ওঠে বার বার। যা আমাদের গ্রাস করে ফেলে মুহূর্তের মধ্যে। প্রদর্শনীর প্রবেশ ও বহির্গমন পথ একটিই। দর্শন শেষে যেখানে শেষবারের মতো একবার দাঁড়াতে হয়, সেখানে রয়েছে ১৯৯১ সালে তোলা একটা আপাত সাধারণ ছবি। ভোট দিচ্ছেন কেউ, ঘেরাটোপের আড়ালে। তবে, অবয়বটি ভৌতিক। সিম্বলিজমটি ডিকোড করতে অসুবিধে হয় না।
SINGED BUT NOT BURNT শুরু হয়েছে ১৮ জুন, ২০২২। চলবে ২০ আগস্ট, ২০২২ পর্যন্ত।
কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি। ৭৭৭, আনন্দপুর ই এম বাইপাস। কলকাতা ৭০০১০৭। চতুর্থ তল। সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬.৩০। সোমবার বন্ধ।
ছবি সৌজন্য : দৃক (বাংলাদেশ) ও ইমামি আর্ট