কিংবদন্তী নাট্য-পরিচালক পিটার ব্রুক-এর মহাভারত বিশ্ববিখ্যাত একটি প্রযোজনা। আশির দশকে বেশ শোরগোল ফেলেছিল সারা বিশ্বে এই নাটক। পরে এই নাটকটিকে একটি পূর্ণ দৈঘ্যের সিনেমার রূপ দেওয়া হয়। মহাভারত নিয়ে এই নাটকটি লেখেন বিশ্বখ্যাত ফরাসি ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার ও নাট্যকার জঁ ক্লদ ক্যারিয়ের। পিটার ব্রুক ছিলেন পরিচালক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি চরিত্রাভিনেতাদের বেছে নিয়েছিলেন। একমাত্র দৌপদীকে বেছেছিলেন ভারত থেকে। এবং ভারতের কোনও নামজাদা নাট্য বা সিনেমা অভিনেত্রীকে বেছে নেননি। চরিত্রের জন্য বেছে নিয়েছিলেন একজন নৃত্যশিল্পীকে। তা-ও আবার অডিশন ছাড়া। অথচ ভারতে কিন্তু অডিশন হয়েছিল।
১৯৮৪ সালের জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের প্রথম সারির দৈনিক ইংরেজি কাগজে ফলাও করে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল এই অডিশনের। তখনকার নামজাদা নাট্যাভিনেতা এবং সিনেমার প্রখ্যাত অভিনেতারা তৎকালীন মাদ্রাজে গিয়ে অডিশন দিয়েছিলেন। অথচ কোনও চরিত্রের জন্য, কাউকেই মনে ধরল না পিটারের। অথচ মল্লিকা সারাভাই, যিনি তখন হেপাটাইটিসে আক্রান্ত, গর্ভবতী অবস্থায় তাঁর বাড়িতে শুয়ে রয়েছেন, তাঁর কাছে সেধে গেল পিটার ব্রুকের প্রযোজনা সংস্থার লোকজন এবং তিনি নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী হিসেবে।
এর পরের গল্প রোমাঞ্চকর। ফরাসি না জানা এক জন নৃত্যশিল্পী, সদ্য মা হওয়া এক জন মেয়ে, ভারত থেকে অনেক দূরে সুদূর প্যারিস শহরে গিয়ে, থেকে, কী ভাবে একজন দক্ষ অভিনেত্রীর মতো বিশ্বখ্যাত একটি নাটকে দ্রৌপদীর ভূমিকায় অভিনয় করলেন। কেমন করে পরিচালকের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে নেমে, কখনও নাটক ছেড়ে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েও ফের নাটকে ফিরে গিয়ে সাফল্যের সঙ্গে অভিনয় করলেন। আর কেমন করেই বা এই একটি নাটকের ট্রেনিং, অভিনয়, পড়াশোনা, তাঁর জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আমূল পরিবর্তন আনল, সে সব কথাই তিনি আলোচনা করেছেন মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সদ্যপ্রয়াত নাট্যপরিচালকের প্রতি এর চেয়ে ভাল শ্রদ্ধার্ঘ্য আর কী-ই বা হতে পারে।