ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ইয়ে হাত মুঝে দে দে ঠাকুর

    দেবজ্যোতি (June 18, 2022)
     

    গব্বর : এই হাত আমায় দিয়ে দে, ঠাকুর!

    ঠাকুর : দেব। তবে তার আগে, তুই আমার একখানা প্রশ্নের উত্তর দে।

    গব্বর : উফ, এর মধ্যে আবার প্রশ্ন!

    ঠাকুর : হ্যাঁ, প্রশ্ন। আমার হাত নিয়ে তুই মাল করবিটা কী, শুনি।

    যাসশালা, এইটে তো গব্বর ভাবেনি। প্রাণে মারবে না, খালি হাতটুকুন কেটে নিয়ে ছেড়ে দেবে, এই পর্যন্তই চিন্তা করেছিল।

    আচ্ছা, এরম হাত-পা কেটে নেওয়ার চল তো নতুন না, পুরাণ থেকে পার্টির রাজত্ব, আ বে, খালি উল্টো দিকে ভোট মেরেছে বলে পাঞ্জাখানা কেটে নিয়েছে বে, পেপারে বেরিয়েছিল, কিন্তু কাটা সে-হাতখানা নিয়ে তারপর শেষে করেছেটা কী, সেইটে তো আর কাগজে লেখেনি, আরে ও সাম্বা, কাটা হাত নিয়ে লোকে কী করে রে? খেয়ে নেয়? ছ্যাঃ, তাইলে তো নরখাদক। জানোয়ার ডেকে খাইয়ে দেয়? পুঁতে দেয় মাটিতে? একলব্যের বুড়ো আঙুল কি বাঘের নখের মতো গলায় পকেট করে পরে নিয়েছিল গুরু? শুনেছিস কিছু?

    কালিয়া : মেয়েদের হলে শুনেছি সতী করে দেয় বস, সেখেনে তারপর থান বাঁধিয়ে মাথা ঠুকতে আসে আরও শয়ে-শয়ে মেয়েরা। আরও শয়ে-শয়ে বচ্ছর ধরে।

    গব্বর : আ বে, ঠাকুর কি মেয়ে? ব্যাটাছেলেদের কাটা হাত নিয়ে কী করা হয়, সেইটে বল।

    ডাকাতডেরা স্তব্ধ। শালা সবেমাত্র সাতের দশক! গুগল নেই। হাওয়া পর্যন্ত একফোঁটা। চড়চড়ে রোদে, চিন্তায় বুঁদ চাঁদিখানায় নিজেই চাঁটি মারতে-মারতে, গব্বর এ-পাথর থেকে ও-পাথর পায়চারি করছে, শরদিন্দুর ঐতিহাসিক উপন্যাসের মতো। তার চ্যালামুন্ডারা সক্কলে ব্যোমকে থম। বাপের জন্মে কোনওদিন সর্দারকে এমন প্যাঁচে পড়তে দ্যাখেনি।

    সাম্বা : অঙ্গদান বলে কী একটা হয়েছে, সর্দার, সক্কলে করছে এখন। খবর দিলে, তারা এসে মুড়ো থেকে চোখ খুবলে নিচ্ছে, লোকের হার্ট অবধি তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে, ওস্তাদ, হাত নেবে না?

    চিন্তায় গব্বর দাড়ি চুলকোচ্ছিল এতক্ষণ, হতাশায় এবার চুল ছিঁড়তে লাগল। শালা, কোন গাম্বাটদের নিয়ে দল করেছে সে!

    না, গব্বর দেশ স্বাধীন করতে নামেনি। সত্তরের দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করবার ডাক ছাড়েনি। তার রেডিও নেই। ভিয়েতনামে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, তা সে জানেও না। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের উচ্চকিত তর্জনী, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’, তার কানে পৌঁছয়নি কোনওদিন। এমনকী দেশজুড়ে যে জরুরি অবস্থা জারি হয়ে গেছে, নেতা-নেত্রী-শিল্পী-সাংবাদিক ধরে-ধরে জেলে পোরা হচ্ছে, তাও সে জানতে পারেনি। এই সমস্ত কিছু থেকে, বহু-বহু যুগ দূরে তার একখানা দ্বীপ, চাদ্দিক টিলা দিয়ে ঘেরা, সেখেনে নির্লিপ্ত এক সিংহের মতো সে একা পড়ে থাকে, তার ছোট্ট পরিবার নিয়ে; যে-পরিবারে বাপ-মা-বউ-বাচ্চা কিচ্ছু নেই কারুর, খালি ক-টা স্যাঙাত। দরকার পড়লে, আশপাশের গ্রামে গিয়ে, যাকে বলে এক্কেবারে বেসিক নিড, খানিক জোয়ার-বাজরা-গম, এই দুনিয়ায় তো সেইটুকখানিও এমনি চাইলে পাওয়া যায় না, তাই ছিনিয়ে নিতে হয়, তাই বন্দুক ধরতে হয়; বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস, শাস্ত্রে আছে।

    ভারতবর্ষের উত্তর ভাগে এই ধরনের ডাকাতদের ডাকাত বলা হয় না সে-সময়ে। তারা বাগী। বিদ্রোহী। যারা মানে না, যারা উল্টো পথে চলে। নিয়মের বাইরে চলে যায়। জাতপাতের লাথ খেতে-খেতে, জমিসর্বস্ব শোষণকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত হতে-হতে, একদিন ওই জমিটুকুন, ভাঙা চালার ঘরটুকুন, ঘরের মেয়েমানুষটুকুন, জীবনে যা কিছু প্রয়োজনীয় আর প্রিয়, দখল করে নেয় উচ্চজাতের-উচ্চকোটির প্রভু সম্প্রদায়; তাকে ঠ্যাকনা দিয়ে রাখে যে-পুলিশ প্রশাসন, তাকে নিত্য শিল্পপুষ্টি দিয়ে যায় যে-ধর্ম, যে-সংস্কার, যে-সমাজ, রীতিনীতি-নিয়মশৃঙ্খল-সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে একদিন তো মানুষ হয় মরে যায়, নয় বিদ্রোহী হয়ে যায়, তাই না? সভ্যতা থেকে যতখানি সম্ভব দূরে, বেহড়ে বেহুড়ে বাগীর দল ঘুরে বেড়ায় বন্দুক কাঁধে। প্রেতের মতো। একটা পান সিং তোমর, একটা ফুলন, একটা-দুটো-দশটা-বিশটা এরকম অসংখ্য আরও কত প্রেত! ওদেশে হলে, কেউ লিখত— ইউরোপ ভূত দেখেছে। এদেশের বিপ্লববাবুরা কপিবুক। তত্ত্ব টুকে পাশ। তাঁরা ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করেন না। এই বাগীদেরকে শ্রেণিবিভাগের ঠিক কোন কুঠুরিতে ফেলবেন, বুঝে উঠতে পারেন না। তাঁদের তামাদি বিপ্লবের বেঁধে দেওয়া পথে এরা সহায়ক শক্তি নয় যখন, আবার লুম্পেন-প্রলেতারিয়েতও যেহেতু বলা যাচ্ছে না, তখন নিশ্চয়ই ‘ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট’। কমিউনিস্ট বাওমে প্রবেশ নিষেধ।

    গব্বর এত কিছু বোঝে না। হাত নিয়ে সে কী করবে, আদৌ কিছু করবে কি না, কাটা হাত নিয়ে আসলে কী করা হয়, কী করা উচিত, এই বেফালতু বৈঠকি বাবুবিলাসে আর কিছু এসে যায় না তার। তার জিনে গর্জে ওঠে হাজার-হাজার বছরের ইতিহাস। তার খালি মাথার মধ্যে জ্বলতে থাকে, এই হাত তার ফাঁসির দড়ি হয়ে উঠতে চেয়েছিল একদিন, শেষ করে দিতে চেয়েছিল তাকে। এই হাতকে তার কেটে ফেলতেই হবে। হবেই। সে তলোয়ার তোলে, উন্মত্তের মতো চিৎকার করতে-করতে, এক কোপে সে নামিয়ে দেয় ঝপাৎ।

    হাত দুটো নিয়ে কী করবে, সে পরে দেখা যাবে’খন। আর যাই হোক, আজ ‘কাটা হাত দ্যাখাইল, দেশটারে ডুবাইল” শ্লোগান দিয়ে, কাল আবার সেই হাতটাকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইবে না বেহায়া বেপথুর মতো। এইটুকখানি শিওর।

    ছবি এঁকেছেন অনুষ্টুপ সেন

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook