চরের জমি
জরির কাজের কাছে যেরকম বাঁধা পড়ে শাড়ি
তোমারও সমস্ত মন বাঁধা আছে দূরের বন্ধুতে।
সন্ধে হলে আঁচ দেয় কানাঘুষো প্রতিবেশীবাড়ি
কলতলা ভিড় সারে সারাদিন এঁটো চোখ ধুতে।
এত যে পাড়ার মর্ম, দলে দলে জটলা মোড়ে মোড়ে
এত যে রান্নার গন্ধ ঘরে ঘরে জানলা উচাটন
তুমি একা ছাদে ওঠো, তারা গোনো শখের প্রহরে
একা মানুষের জন্য তোমারও কি ছোট হয়, মন?
যে আছে সে দূরে আছে, কাছের পাড়ার খুঁটিনাটি
টানে না তোমাকে আর। গোপন ডানায় বেঁধে কাঁধ
তুমি তাই উড়ে চলো বেশহর, বন্দরের ঘাঁটি
মরমে মরে না প্রেম, অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ।
তোমাকে প্রেমের কাছে যেতে হয়, মানুষকে ঘরে
মধ্যে যে চরের জমি, তাতে ভালবাসা বাস করে।
জুন মাসের ফুল
এ-বছর জুন মাস দূরে দূরে ফুটিয়েছে ফুল।
যেন কারও একা হাত সব তুলে নিতে নাহি পারে,
বেশি সাজে ভার লাগে, সে কিছুটা রূপেরও মাসুল…
যেরকম ভার হয়ে চায়ের কেটল, রবিবারে।
তুমি তুমি পায়ে পাতা মাড়িয়ে চলেছ সে-বাগান
যেখানে বেহালা বাজছে দূরের দেশের সুর পিঠে
বিকেলে বান্ধবী আয়না, তারই কাছে বন্ধক যে-গান
ভেবেছ ছাড়িয়ে আনবে ফুল দিয়ে, সামনের শীতে।
শরীরের রোদের মন বসে আছে, উল্কি ভেবে তাকে
বাগানে গাছের গায়ে নামিয়ে রেখেছ, এত ক্রূর!
মালির হাতের কাজ মুগ্ধ করেছিল শ্রমণাকে
এতদিনে এ-বাগান বুঝে গেছে, তুমি তার দূর।
এখন সকলে জানে, অপরাধী সুগন্ধেই বাঁচে।
তোমার হাতের ছাপ সমস্ত ফুলের গায়ে আছে।
এভাবে প্রেমের গল্প
আমার মাঠের নাম তুমি রেখেছিলে তহমিনা।
তাতে যে-বিকেল নামত, তার নাম মহুলমঞ্জরী।
এখন টুরিস্ট এসে প্রশ্ন করে, কেউ আছে কি না
এ-শহরে জেগে থাকে একা মৃত পাথরের পরী।
বাতাসে টিকিট ওড়ে, নতুন গাইড কাজে লাগে।
রোদ লাগা মেয়েটির বেতের টুপির মতো ম্লান
তার দুই গ্রাম্য চোখ। তারা বুঝে নেয় আগেভাগে
কত মুদ্রা বিনিময়ে নেহাত শোনানো যায় গান।
আমার গাছের নাম তুমি রেখেছিলে অনামিকা।
তাতে যে-পাখিটি বসত, তার নাম কুহকগুঞ্জনা।
এখন নরম হাতে ভাঁজ খাওয়া পথনির্দেশিকা—
রোদ লাগা মেয়েটিও বুঝে নেয়, কোনদিকে যাব না।
কেবল ফুলেরা আজও পাথরের নয়, তারা ফোটে।
এভাবে প্রেমের গল্প একদিন বিষয় হয়ে ওঠে।
এই রান্নাঘর
তরি তরকারি তুমি কেটেছ বড়ই মোহ নিয়ে।
রান্নাঘর জানে শুধু সবজি কত কম ব্যথা পেল।
জানলায় মরেছে রোদ, আজ কার ছোটবোন বিয়ে…
হাতের মুঠোর মতো খুলে গেছে দূরের ব্রথেলও।
যত যত বৃষ্টি হয়, যেন তারা গণিকার হাসি
তুমি সেই অভিশাপে আগুনের ধারে বহুকাল
ছুরি নিয়ে বসে আছ। ঘিরে থাকা এই সবজিরাশি
মিশে থাকা ঘাম নুন রক্ত রোদ কষ্ট মন ঝাল…
আঙুলে মাখিয়ে চাখছ। ঠিকঠাক হল বুঝি, স্বাদ?
আবার ডোবাচ্ছ হাতা, অশেষ ঘূর্ণন সসপ্যানে…
মৃত হয়ে আলো দেয়, তারাদের এমনই প্রবাদ
তোমারও আয়ুর চেয়ে স্বাদ বেশি, অরন্ধনজ্ঞানে।
শেষতম ছায়াপথ, এ-হেঁশেল তারও কিছু পর।
কত পৃথিবীর চেয়ে দূরে ভাসে, এই রান্নাঘর…