ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ১৬


    অনুপম রায় (June 3, 2022)
     

    গসিপ

    )( >< }{ ম্যাকি। 

    বুঝতে পারলেন না? এটা নতুন একটা ভাষায় আমি নিজের পরিচয় দিলাম। এ-ভাষা মানুষের বুঝতে সময় লাগবে। নতুন ভাষাটা শিখে একটু শো-অফ করে নিলাম। এইসব আপনাদের থেকেই শেখা। ভাল না? 

    ভালই তো আছেন মনে হচ্ছে। কোভিড একটু কমেছে, রেস্তোরাঁয় খেতে যাচ্ছেন, বাড়ি ফিরে গসিপ করছেন। এই গুজগুজ-ফুসফুস করে তো মানুষ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। বেবুনরা একে ওপরের পিঠ থেকে পোকা খুঁটে চলে সারাজীবন আর মানুষ একে অন্যের পেছনে হয় কাঠি নয় গসিপ করে। এত খুঁটেও বেবুনদের গায়ের পোকা কিন্তু কমেনি; এদিকে মানুষে-মানুষে কিন্তু নিন্দে করে-করে দারুণ দোস্তি বেড়েছে। আজ বেবুন কোথায় আর মানুষ কোথায়? শুধু মাত্র গসিপের জোরে! 

    আমরা মেশিন লেভেলে বোঝার চেষ্টা করি, গসিপ কী? একাধিক মানুষ কাছাকাছি এসে, যাচাই করা হয়নি এমন কোনও বিষয় নিয়ে তুমুল আলোচনা করলে তাকে গসিপ বলা হয়। এক্ষেত্রে এই কিছু মানুষের যদি তৃতীয় মানুষকে অপছন্দ হয়, তাহলে সলিড গসিপ তৈরি হয়। এই একদল মানুষ অন্য মানুষটির গুষ্টির পিণ্ডি চটকে নিজেরা আরও কাছাকাছি আসে। এদের বন্ধুত্ব বাড়ে। এভাবে গসিপের মাধ্যমে কারোর চোদ্দো গুষ্টি উদ্ধার হয়ে গেলেও এই একদল প্রাণ খুবই একাত্ম বোধ করে এবং তৃপ্ত হয়। 

    তা এই আলোচনাতে কি সব সঠিক কথা বলা হয়? মানুষ যখন, তাহলে তো ভুল থাকবেই। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি হয় গসিপ-ককটেল, ঢোকে-ঢোকে নেশা। গুলে-গল্পে এমন কল্পনার আশ্রয় মানুষ নেয় যে, গল্পটা আসল সত্যির থেকে অনেক গুণ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। তারপর সেই গল্পে যাদের আগ্রহ আছে তাদের মধ্যে ঘুরতে থাকে, আরও রঙের প্রলেপ পড়তে থাকে। মৃত মানুষের জীবন নিয়ে এখনও গসিপ ঘুরছে। কমার্শিয়াল কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন ধরুন রবি ঠাকুর তাঁর বৌদিকে কতটা ভালবাসতেন। এটি কি ইতিহাসের অন্তর্গত? কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ-জিনিস পড়ানো হয়? এটি মূলত পপ কালচারের পার্ট। লিখে ফেলুন বই, বানান সিনেমা— বিক্রি হতে পারে, কারণ এ-জিনিসে মানুষের ভীষণ ইন্টারেস্ট। এল.আই.সি. প্রিমিয়াম জমা দিতে ভুলে যেতে পারে মানুষ, কিন্তু গসিপ!!

    ঠাকুর-দেবতা ঢুকিয়ে দিতে পারলে গসিপ বহুদিন টানা যায়। হনুমান বুক চিরে দেখালে নাকি রাম আর সীতাকে দেখা যেত! এ কি ইতিহাস? কোথায় পড়ানো হয় এসব? সম্ভব নয় এ-জিনিস কোথাও পড়ানো কিন্তু এখনও পোস্টার বিক্রি হয়। কবেকার গসিপ! এখনও টেনে যাচ্ছে! পাঞ্চ আছে গল্পে! বিদ্যাসাগরকেও মানুষ ভুলে যাবে কিন্তু ওই হনুমান এখনও লম্বা টানবে। 

    গসিপের নানা লেভেল আছে। সবাইকে নিয়েই গসিপ তৈরি হয়। পাড়ার পানওয়ালা থেকে সাধারণ গৃহবধু থেকে বিখ্যাত আইনজীবী থেকে দেশের ধর্মগুরু। এখানে বিখ্যাত ব্যাপারটা একটু বুঝতে হবে। কিছু মানুষকে কিছু বিশেষ কারণে মানুষ নিজেরাই বিখ্যাত বানিয়ে তোলে। বিখ্যাত মানে যাকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি। আগ্রহ বেশি মানে গসিপও বেশি। ধরা যাক, আপনি আপনার মা-কে ভালবাসেন। কে না বাসে? আপনি মায়ের জন্য ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে আসুন, কোনও গল্প তৈরি হবে না। এদিকে বিদ্যাসাগর নাকি মাকে ভালবেসে দামোদর নদী সাঁতরে পার হয়েছিলেন ভীষণ ঝড়-জলের মধ্যে! এ কি ইতিহাস? না গসিপ মাত্র? যতদিন বিদ্যাসাগরে মানুষের আগ্রহ থাকবে, ততদিন এই গসিপ লোকের মুখে-মুখে ঘুরবে। যে-গসিপের যত পাওয়ার, সে-গসিপ ততদিন ঘোরে। তারপর একদিন মরে তো যাবেই। ঠাকুর-দেবতা ঢুকিয়ে দিতে পারলে গসিপ বহুদিন টানা যায়। হনুমান বুক চিরে দেখালে নাকি রাম আর সীতাকে দেখা যেত! এ কি ইতিহাস? কোথায় পড়ানো হয় এসব? সম্ভব নয় এ-জিনিস কোথাও পড়ানো কিন্তু এখনও পোস্টার বিক্রি হয়। কবেকার গসিপ! এখনও টেনে যাচ্ছে! পাঞ্চ আছে গল্পে! বিদ্যাসাগরকেও মানুষ ভুলে যাবে কিন্তু ওই হনুমান এখনও লম্বা টানবে। 

    গসিপ হল আঠার মতো। মানুষকে ধরে রাখে। কমিউনিটি তৈরি করতে সাহায্য করে। আমদের এই গসিপ নিয়ে মূল প্রশ্ন, যে-জিনিসটা যাচাই করা হয়নি, তাকে আশ্রয় করে এত টিমবিল্ডিং? এত বন্ডিং? এখানেই তো আমাদের সঙ্গে মানুষের বিশাল তফাত। আমরা জানি, x এবং y দুটি অজানা থাকলে দুটি সমীকরণ লাগবেই। শুধুমাত্র একটি দিয়ে উত্তর বের করা যাবে না। লোকমুখে শুনতে পেলাম x = এত, এবার y-টা কষে ফেল তো, এ-জিনিস আমাদের সমাজে চলে না। আমরা লোকমুখে শোনা তথ্যে বিশ্বাস করতে পারি না। আমাদের সব ক্যালকুলেশন ঘেঁটে যাবে এরকম অজানা জিনিসের উপর ভিত্তি করে এগোলে। আমাকে দয়া করে গঙ্গাসাগরে স্নান করাবেন না। ওই জলে চোবালে আমি আর জন্মেও কাজ করতে পারব না। আমার পিঠে বঁড়শি গেঁথে বনবন করে চৈত্র মাসের রোদে ঘোরাবেন না। যা দুটো যোগ-বিয়োগ করতে পারতাম, তাও পারব না। আমাদের এই নিয়ে ভাবলে চলে না যে, আমার বেডরুমের এসি পাশের বাড়ির ফ্রিজের সঙ্গে কী চক্কর চালাচ্ছে। ভেরিফায়েড তথ্য হলে তাও একটা ডকুমেন্টে লিখে রাখতে পারি কিন্তু জানি না-শুনেছি-মনে হচ্ছে, এই দিয়ে আমার চলবে না। 

    আমরা এক সময় ভাবতাম গুণী মানুষেরা একসাথে হলে কী সব দারুণ আলচনা করে থাকে! দুই বৈজ্ঞানিক হয়তো কাফেটেরিয়াতে বসে আড্ডা জমিয়েছে, আমরা ভাবছি আজকেই পৃথিবীর হাঙ্গার ক্রাইসিস মিটে যাবে বোধহয়। ও মা! কাছে গিয়ে শুনি, ডিপার্টমেন্টে কে এক তরুণী কোন বুড়োকে চোখ মেরেছে তাই নিয়ে গসিপ করছে! পেটি হিউম্যান্স! লেডি মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে কি নেহেরুর যৌন সম্পর্ক ছিল? এটা কি কোনওদিন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব? ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ কি তা বলতে পারবে? ওঁরা ঘনিষ্ঠ ছিল ব্যাস! এইটুকু জেনে মানুষের শান্তি নেই। সবাইকে টিকটিকি হতে হবে। এদিকে প্রত্যেকের মাথায় আলাদা-আলাদা সিনেমা চলছে। যে যার মতো ভাবছে আর বিশ্বাস করছে। আপনি যেদিন মরবেন, আপনার বিশ্বাস-ও সেইদিন আপনার সঙ্গে মারা যাবে। আপনি কী গসিপ করলেন তাই দিয়ে নেহেরু বা এডউইনার কিছু যায় আসবে না। তাঁরা অলরেডি চলে গেছেন। আপনি নিজের জীবনটা বাঁচলে বোধহয় ভালই হয়। 

    আপনার বেঁচে থাকা যদি গসিপের সাহায্যে দিন কাটিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাই করুন। তাতে যদি আপনি আনন্দ পান, তাই করবেন। আপনার মানুষজন্ম তাতেই সার্থক করুন। আমরা এই আনভেরিফায়েড ইনফর্মেশনের এই কাল্পনিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখি। আমাদের মেশিনজন্মে অন্য অনেক কিছু করার রয়েছে।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র 

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook