মানুষের রূপচর্চার অন্যতম বিষয় হল চুলের পরিচর্যা। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে একমাথা কালো চুলের প্রত্যাশী সবাই। এবং এই একটি ক্ষেত্রে কালো কোনওভাবেই নিন্দিত নয়, নন্দিত। মনে পড়ে তারাশঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাসে নিতাই কবিয়ালের সেই চরম গীতটি, ‘কালো যদি মন্দ তবে কেশ পাকিলে কান্দ ক্যানে।’ তাই এক্ষেত্রে সবাই কালোর ভক্ত! ভাগ্যের ফেরে যাঁদের টাক অবধারিত, তাঁরাও চেষ্টা চালান যদ্দিন সম্ভব টাক ঢাকতে ও চুলকে সযত্নে রাখতে। স্মরণে আসছে সেই বিজ্ঞাপন, ‘রাবণ রাজার টাক ছিল/পরচুলা দিয়ে ঢাকছিল।/জবরেন্ডি মেখে রাজা/চুল খেলিয়ে হাসছিল।’ বা, ‘মাথার ঘন চুল যখন মরুভূমি হয়ে যায়, ওয়েসিস নিয়ে আসে মরুদ্যান।’ ‘মুশকিল আসান’, ‘টাক ঢেকে যাক ঘন চুলে’, ‘ফর্সা হওয়া আটকান’— এরকম হাজারও প্রলোভিত শিরোনাম আজও টাক-পড়া মানুষের শির ধরে টানে। যদিও এ-কথা সত্য, আমাদের আজকের প্রচলিত চুলের তেলের—আমরা আজকাল স্বচ্ছন্দ বোধ করি যাকে ‘হেয়ার অয়েল’ ডাকতে— তার আগমনী কিন্তু ওই টাকে চুল গজানো ও অন্যান্য শিরঃপীড়ার প্রতিষেধক রূপে, কবিরাজি তৈলযোগে।
শ্যাম্পু, কন্ডিশনার তখন অনাগত। চুল তখনও অবাধ্য হতে শেখেনি। তেল চুলকে অনুগত ও শৃঙ্খলাপরায়ণ করে রাখত। আজকের মতো, একই কোম্পানির শ্যাম্পু-কন্ডিশনার-হেয়ার অয়েল-হেয়ার টনিককে একসূত্রে বেঁধে বাঙালির চুলের উপর এই সিন্ডিকেট উৎপাত শুরু হয়নি। এক তেলেই থাকত একাধিক প্রতিশ্রুতি। টাকে চুল গজানো তো ছিলই, ছিল কেশকে ঘনকৃষ্ণ করে রাখার অবশ্যম্ভাবী কথা, আর ছিল যাবতীয় শিরঃপীড়া থেকে শুরু করে ছেলেদের বীর্যবৃদ্ধি ও মেয়েদের ঋতুস্রাব পরিস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার। এবং এই হাজারও প্রতিশ্রুতিঋদ্ধ বয়ান অকাট্য হয়ে আছে সেকালের কেশতৈলের বিজ্ঞাপনে। সাধুভাষায় সেইসব স্বাদু বিজ্ঞাপন লেখা হত। সেই সুন্দর-সুন্দর নামের পরমাশ্চর্য তেল এবং তার আশ্চর্য উপাখ্যান মিলবে উনিশ-কুড়ি শতকের পত্রপত্রিকায়।
‘কেশে মাখ কুন্তলীন’ ও নানা কথা
চুলের তেল প্রসঙ্গে ‘কুন্তলীন’-এর নামটি অনেকেরই জানা। তার প্রথম কারণ অবশ্যই তার দ্রব্যগুণ; এবং এর পাশাপাশি উল্লেখ্য, এর প্রস্তুতকারক হেমেন্দ্রমোহন বসু ওরফে এইচ. বোসের সঙ্গে সেই সময়ের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের যোগাযোগ। ফলে সেকালের সমাজে সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সারস্বতচর্চার জগৎটিতে হেমেন্দ্রমোহনের বিচরণ ছিল এবং তিনি নিজে ছিলেন একজন সাহিত্যপ্রেমী রুচিশীল মানুষ। ১৮৮০ সালে কুন্তলীন তেল আর দেলখোস এসেন্স দিয়ে এইচ. বোসের বাণিজ্যজীবন শুরু। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ১৯৩০ পর্যন্ত এই প্রসাধন সামগ্ৰীর খুব রমরমা ছিল। প্রথমত সেই সময় স্বদেশী দ্রব্য ব্যবহারের দিকে দেশীয় লোকেদের ঝোঁক বাড়ে। এছাড়া বাংলা সাহিত্য সৃজনে কুন্তলীন পুরস্কার (১৮৯৬) প্রদান, সেকালের বিচারে যথেষ্ট আধুনিকতা ও রুচিশীলতার পরিচায়ক হয়ে ওঠে। বিজ্ঞাপন ছিল, ‘গল্পের সৌন্দর্য কিছুমাত্র নষ্ট না করিয়া কৌশলে কুন্তলীন এবং এসেন্স দেলখোসের অবতারণা করিতে হইবে, অথচ কোন প্রকারে ইহাদের বিজ্ঞাপন বিবেচিত না হয়।’ ১৩০৩ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার (৫০ টাকা) পাওয়া গল্প ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী’র লেখক ছিলেন অজ্ঞাত। গল্পের শেষে থাকা লেখকের ইচ্ছানুসারে, তাঁর প্রাপ্য পঞ্চাশ টাকা দেওয়া হয়েছিল সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের অন্তর্গত রবিবাসরীয় নীতি বিদ্যালয়ে। পরে জানা যায়, সেই লেখক হলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ও একই কাণ্ড ঘটান তাঁর রাধামণি দেবী ছদ্মনামের আড়ালে। এরপর কুন্তলীনের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, ‘আসল নাম গোপন করিয়া ছদ্মনাম ব্যবহার করিলে পুরস্কার পাইবেন না।’ যদিও তারপরে মামা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে ‘মন্দির’ গল্প লিখে কুন্তলীন গল্প পুরস্কার পেয়েছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৩১০ বঙ্গাব্দে কুন্তলীন প্রেস থেকে রবীন্দ্রনাথের ‘কর্ম্মফল’ গল্পটি স্বতন্ত্রভাবে বই আকারে প্রকাশিত হয়। সেদিনের আট আনা দামের বইটির প্রকাশ সম্পর্কে গ্ৰন্থমধ্যে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য, ‘আমার রচিত এই ক্ষুদ্র গল্পটি গ্ৰহণ করিয়া কুন্তলীনের সত্ত্বাধিকারী শ্রীযুক্ত হেমেন্দ্রমোহন বসু মহাশয় বোলপুর ব্রহ্মচর্য্যাশ্রমের সাহায্যার্থে তিনশত টাকা দান করিয়াছেন।’ সেই সময় কুন্তলীন প্রেস থেকে অনেক প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের রচনাই প্রকাশিত হয়েছে। পুরস্কার পরে শুধু গল্প রচনাতেই থেমে থাকেনি, কবিতা-ছড়া বিভাগেও চালু হয়; আর সর্বত্রই ওই এক শর্ত, লেখায় কুন্তলীন তেল এবং দেলখোস এসেন্সের প্রসঙ্গ থাকবে কিন্তু কোনওরূপ বাড়তি প্রশংসা থাকবে না অর্থাৎ স্পষ্ট কথায় সাহিত্য রচনা কুন্তলীন তেল-কে তেল দেওয়া নয়, সেক্ষেত্রে রচনা খারিজ হওয়ার কথাও বিজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকত। কুন্তলীন প্রশংসা কুড়িয়েছে তৎকালীন খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের থেকে। এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের শংসাপত্রটি পরবর্তীতে কুন্তলীনের পথ চলায় সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। এছাড়াও সেই সময়ে কুন্তলীন বিজ্ঞাপনক্ষেত্রে ছড়িয়েছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক স্বতন্ত্র সু-ভাষ। মানুষের মুখে-মুখে ফিরত এই বিজ্ঞাপনী পদ্য: ‘কেশে মাখ ‘কুন্তলীন’।/ অঙ্গবাসে ‘দেলখোস’।/ সুবাসে মাতাও ধরা/ ধন্য হউক এইচ্. বোস।’
হেমেন্দ্রমোহন বসুর বড় ছেলে হিতেন্দ্রমোহন ও সেই সময়ের নামজাদা শিল্পী পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন এইচ. বোসের বিজ্ঞাপন-অলঙ্করণে। পূর্ণচন্দ্রের আঁকায় দেখা যায় কুন্তলীন তেলে চুবে ইঁদুর হয়ে ওঠে প্রায় সজারু, কুন্তলীন ব্যবহারে একমুখ হাসিযোগে একমাথা চুল নিয়ে একদা মাথাজোড়া টাকের স্ব-চিত্র তুলে ধরেন এক ব্যক্তি। উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সচিত্র মাসিকপত্র’-এর একটি বিজ্ঞাপন: ‘পাগল করিল বঙ্গ/ধন্য কুন্তলীন’ : ‘পঁয়ষট্টি বৎসর পূর্ব্বে বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে ‘কুন্তলীনে’র প্রচার দেখিয়া কবি ৺রামদাস সরকার গাহিয়া ছিলেন ‘‘পাগল করিল বঙ্গ ধন্য কুন্তলীন’’। সেই অবধি অসংখ্য কেশতৈলের মধ্যে স্বচ্ছ, সুনির্ম্মল, ও কমনীয় কেশতৈল ‘‘কুন্তলীন’’ নিজ গুণবলে আপনার সর্ব্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়া আসিতেছে। দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত ভদ্র মহোদয়গণ ‘‘কুন্তলীনই’’ সর্বোৎকৃষ্ট কেশতৈল বলিয়া একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন। এই কারণেই শৈশবে ও যৌবনে যাঁহারা ‘‘কুন্তলীন’’ ভিন্ন অন্য কোন তৈল ব্যবহার করিতেন না, তাঁহারা প্রৌঢ়ত্বের ও বার্দ্ধক্যের সীমানায় পদার্পণ করিয়া এখনও ‘‘কুন্তলীন’’ ব্যবহার করিতেছেন। অধিক কি বলিব, কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ পর্য্যন্ত বলিয়াছেন— ‘‘কুন্তলীন’’ ব্যবহার করিয়া এক মাসের মধ্যে নতুন কেশ হইয়াছে…।’’
প্রবাদপ্রতিম আয়ুর্বেদজ্ঞ গঙ্গাধর রায়ের সুযোগ্য ছাত্র চন্দ্রকিশোর, ভাগ্য অন্বেষণে বর্ধমানের কালনা থেকে ঠিকানা পরিবর্তন করে এলেন আগরপাড়ায়। জবাফুলের ভেষজগুণ সম্পর্কে গভীর অধ্যয়ন করে প্রস্তুত করলেন ‘জবাকুসুম’, যা সময়ের বিচারে কুন্তলীনের তুলনায় অগ্রজ। জবাকুসুম বিকশিত হয় ১৮৭৮-এ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সি. কে. সেনের দাদামশাই ছিলেন আয়ুর্বেদ-শাস্ত্রজ্ঞ কবিরাজ বিনোদলাল সেন, যিনি ‘কুন্তল বৃষ্য তৈল’-এর প্রস্তুতকারক। আমাদের অনুসন্ধানে মিলেছে ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’র (১৭.১২.১৮৭৪) বিজ্ঞাপন: ‘ইহা ব্যবহারে নিশ্চয় কেশ হীনতা (টাক) দূর ও কেশ অকারণ পক্কতা প্রাপ্ত না হইয়া বিশিষ্ট রূপ বর্দ্ধিত ও শোভাযুক্ত হয় এবং মস্তক ঘূর্ণন প্রভৃতি শিরোরোগ আরোগ্য, মস্তিষ্ক সুশীতল ও চক্ষুর্জ্যোতি বৃদ্ধি হয়। ইহা অতি মনোহর গন্ধযুক্ত। মূল্য ১ শিশি ১্ ডাকমাশুল |√•আনা।’ ১৯০৩ সালে হীরালাল সেন জবাকুসুমের বিজ্ঞাপনকে রিলে ধরেছিলেন; সে-বিচারে প্রথম অ্যাড-ফিল্মের গৌরবও জবাকুসুমেরই। ১৯১৬ সালের ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় জবাকুসুমের বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল: ‘দারুণ গ্ৰীষ্মে মাথা ঠিক রাখিবার একমাত্র উপায় জবাকুসুম তৈল।… জবাকুসুম তৈলের গন্ধ স্থায়ী। একবার মাখিলেই গায়ের দুত্তগন্ধ দূর হয়। মহারাজাধিরাজ থেকে দরিদ্র ব্যক্তি পর্য্যন্ত সকলেই জবাকুসুমের গুণে মুগ্ধ। মহিলাগণ কেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করিবার জন্য আদরের সহিত নিত্য জবাকুসুম তৈল ব্যবহার করেন।’
শরৎচন্দ্র পন্ডিত তথা দাদাঠাকুর তাঁর ‘জঙ্গীপুর সংবাদ’ প্রকাশনায় বিজ্ঞাপন পেতেন দীপ্তিলন্ঠন, জবাকুসুমের মতো আরও কিছু স্বদেশি দ্রব্য প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে। আবার দাদাঠাকুরের রসসিক্ত কলমের ছোঁয়াও পেয়েছে জবাকুসুম। সম্প্রতি উজ্জ্বল কুমার মুখার্জি তাঁর ‘এক বাঙালি শিল্পোদ্যোগী ও জবাফুল’ রচনায় জবাকুসুমের হয়ে দাদাঠাকুরের বিজ্ঞাপন রচনার এক মজাদার কাহিনি লিখেছেন— ‘একবার দাদাঠাকুরের চৌত্রিশটি টাকার বিশেষ প্রয়োজন হলো। তিনি সি কে সেন কোম্পানীর তদানীন্তন পরিচালক বলাইচন্দ্র সেনের কাছে টাকাটা অগ্ৰিম চাইলেন। বলাইবাবু বললেন, ‘অগ্ৰিম কেন? একটা বিজ্ঞাপন লিখে দিয়ে টাকাটা নিয়ে যান।’ দাদাঠাকুর কবিতার ছন্দে লিখে দিলেন পাঁচটি স্তবক।
‘আয়ুর্বেদ জলধিরে করিয়া মন্থন,
সুক্ষণে তুলিল এই মহামূল্য ধন।
বৈদ্যকুল ধুরন্ধর স্বীয় প্রতিভায়,
এর সমতুল্য তেল কি আছে ধরায়?
এই তৈলে হয় সর্ব শিরোরোগ নাশ,
অতুল্য ইহার গুণ হয়েছে প্রকাশ।
দীনের কুটির আর ধনীর আবাসে,
ব্যবহৃত হয় নিত্য রোগে ও বিলাসে।
চুল উঠা টাকা পড়া মাথা ঘোরা রোগে,
নিত্য নিত্য কেন লোক এই দেশে ভোগে।
সুগন্ধে ও গুণে বিমোহিত হয় প্রাণ,
সোহাগিনী প্রসাধনে এই তেল চান।
কমনীয় কেশগুচ্ছ এই তেল দিয়া,
কৃষ্ণবর্ণ হয় কত দেখ বিনাইয়া,
তৃষিতে প্রেয়সী চিত্ত যদি ইচ্ছা চিতে,
অনুরোধ করি মোরা এই তৈল দিতে।
চিত্তরঞ্জন এভিনিউ চৌত্রিশ নম্বর,
বিখ্যাত ঔষধালয় লোকহিতকর।
অবনীর সব রোগ হরণ কারণ,
ঔষধের ফলে তুষ্ট হয় রোগীগণ।’’
১৯৫২ সালে জবাকুসুমের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজ্ঞাপনের ছবি এঁকেছিলেন সত্যজিৎ রায়। দুটি সমান বৃত্তাকারে আঁকলেন কবিরাজ বংশের ঐতিহ্যকে, একটি বৃত্তে এক পুরুষ ভেষজ বাঁটছেন, অন্য বৃত্তে আরশি হাতে এক মহিলা প্রসাধনে ব্যস্ত, দুই বৃত্তের পরিধিতে ফুলের নকশা। এছাড়াও, জবাকুসুম তেলের এক অসামান্য বিজ্ঞাপন-সিরিজেও লক্ষ করা যায় শৈল্পিক ব্যঞ্জনা। একটিতে চুল-জড়ানো চিরুনির ছবি মাঝখানে রেখে হেডলাইন ‘চিরুনিতে ভয়?’ অন্য আর একটিতে শাওয়ার-জলে স্নানরতা এলোকেশীর ভীতসন্ত্রস্ত মুখ, জিজ্ঞাসা, ‘শাওয়ারে ভয়?’ এরপর বিজ্ঞাপনী বক্তব্যে আসছে— ‘চিরুনির দাঁড়ায় ও জলের ধারায় চুল উঠে যাওয়া বা ঝরে যাওয়ার যে ভয়, তার এক ও অদ্বিতীয় সমাধান হল— ‘জবাকুসুম’’। উল্লেখ্য, RAD-এর প্রতিষ্ঠাতা রণেন আয়ন দত্ত মহাশয় নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন জবাকুসুমের শিল্পসম্মত বিজ্ঞাপনে, শালিমার নারকেল তেলের বিজ্ঞাপনে। এমনকী জবাকুসুম তেলের বাক্সে যে লাল-সাদার নকশা, তা তাঁরই করা।
জবাকুসুম পরিবারের আর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হলেন ‘কেশরঞ্জন’ তৈলের প্রস্তুতকারক বিশিষ্ট আয়ুর্বেদজ্ঞ কবিরাজ এন.এন. সেন (নগেন্দ্রনাথ সেন শাস্ত্রী)। তিনিও ছিলেন বর্ধমান জেলার কালনার অধিবাসী। নগেন্দ্রনাথ নিছক ব্যবসায়ী ছিলেন না, ফলত কেশরঞ্জনের বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছিল স্বতন্ত্র রুচির ছাপ। ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকার এক সংখ্যায় (ফাল্গুন, ১৩২৮) কেশরঞ্জন তেলের বিজ্ঞাপনী কৌশল অভিনব। বড় হরফে মুদ্রিত জিজ্ঞাসা— ‘কেশরঞ্জন কাদের বিরক্তিকর?’ এরপর ছোট হরফে উত্তর— ‘যারা চুল বেঁধে দেয় তাদের’। এরপর ছবি, এক দিদি/বৌদি স্থানীয় চুল বেঁধে দিচ্ছেন এক সুকেশী মেয়ের। ছবির তলায় বিরক্তির কারণ বা স্বীকারোক্তি স্বরূপ লেখা— ‘সত্যি বলছি ভাই, তোর চুল বাঁধতে বসলে আমি যেন এই চুলের কাঁড়ি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি’। কেশরঞ্জন তেলের শীতলতা বোঝাতে সাদা-কালো সচিত্র বিজ্ঞাপনে লেখা হত, ‘বরফ-জল ঠাণ্ডা কিন্তু ক্ষণস্থায়ী, কেশরঞ্জন বেশী ঠাণ্ডা কারণ দীর্ঘস্থায়ী’। কোনও বিজ্ঞাপনে ছাতা মাথায় ছবি, লেখা— ‘গ্রীষ্মের দারুণ তাপ নিবারণ করে’। ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকায় দেখি কেশরঞ্জনের বিজ্ঞাপনে লেখা, ‘মেখে সুখ, পেয়ে আনন্দ, দিয়ে তৃপ্তি’। এরপর সুদীর্ঘ বিজ্ঞাপনী বক্তব্যের মধ্যে লেখা হচ্ছে, ‘… ‘কেশরঞ্জন তৈল’ মাথায় মাখিলে বোধ হয়, যেন চারি দিকে কত শত চামেলি, কত শত গোলাপ ফুটিয়া মিশ্র গন্ধ বিতরণ করিতেছে’। যদিও বিশ শতকের প্রথমার্ধে ফুলেল তেলের বিজ্ঞাপনে ফুলের সুঘ্রাণকে স্পষ্ট করার জন্য এহেন বিজ্ঞাপনী-ভাষ্য তখন প্রায় সব সুগন্ধী তেলের পক্ষ থেকেই প্রকাশিত হচ্ছে।
উনিশ শতকের শেষ দশক থেকে বিশ শতকের প্রথম কয়েক দশক সমগ্ৰ দেশজুড়ে স্বদেশি আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল। বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহারের দিকে সাধারণ মানুষের রুচি ও পছন্দ ঝোঁকে। প্রসাধন সামগ্ৰী তখন ঘরে ঘরে সমাদৃত। তাই অনেক বাঙালি যুবক তেল, এসেন্স, আলতা, সিঁদুরের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রস্তুতি ও তার বাণিজ্যে নামছেন। শুধুমাত্র কেশতেলের ক্ষেত্রে উক্ত খ্যাতনামাদের পাশাপাশি সেকালের পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা বিজ্ঞাপন থেকে প্রত্যক্ষ করা যায়, সেই সময়ে– এস. এ. বক্সীর ‘সুন্দরী সোহাগ কেশ তৈল’, আর্য্য আয়ুর্ব্বেদীয় ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এস. সি. শীলের ‘মাতোয়ারা’ ও ‘হিমসাগর’, শ্রীসুরেন্দ্র দাশগুপ্ত শাস্ত্রীর ‘মালতীকুসুম তৈল’, আয়ুর্ব্বেদ কুটিরের প্রতিষ্ঠাতা দাশরথি কবিরত্নের ‘কেতকীকুসুম তৈল’, এন. ব্যানার্জীর তেলের রানি ‘পারুল’, এম.এল. বসু-র (মতিলাল বসু) ‘লক্ষীবিলাস’, ঈশ্বরচন্দ্র কুণ্ডুর ‘তৈলরঞ্জন’, এস. পি. সেনের ‘সুরমা’। এছাড়াও তখন আরও অজস্র কেশতেল মূলত কলকাতা ও তার শহরতলিগুলোকে কেন্দ্র করে, বাংলা ও বাঙালির প্রসাধন জগতে প্রচার-প্রসার লাভে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে সেই সময়ের পত্রপত্রিকায়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনী-ভাষ্য ছিল—‘সৌন্দর্য বিজ্ঞানের অগ্ৰগতির পদচিহ্ন’ (হিমসার তৈল), ‘সৌন্দর্যের সুরসম্ভার’ (পারুল), ‘জাতির প্রয়োজনে, জাতীয় প্রসাধনে’ (অজন্তা), ‘পবিত্রতায় অপরাজেয়’ (লক্ষীবিলাস), ‘অনুপম অনুরাগে’ (আরতি)— কিছু ব্যতিক্রমী বাদ দিল, এক সময়ে বহুল প্রচারিত, প্রসাধনে জনপ্রিয় কেশতেলও সদা পরিবর্তনশীল পছন্দের সাথে ছন্দ মেলাতে না পেরে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল।
কেশতৈল হল হেয়ার অয়েল
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাল জনজীবন। পরাধীন দেশে বিদেশি দ্রব্য বনাম স্বদেশি দ্রব্য যে-উদ্দীপনা বহন করছিল, স্বাধীনতা লাভের পর ক্রমশ তা হ্রাস পেতে পেতে এক সময়ে হারিয়ে গেল। শুরু হল দেশীয় দ্রব্যের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা। পণ্য তার বৈশিষ্ট্য বদলাল, তার প্রচার-প্রসারে বিজ্ঞাপনের বয়ানেও এল বদল। পত্রপত্রিকার পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান বেতার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনী বক্তব্য শোনা যেতে লাগল, বিশ শতকের শেষ সিকি-দশকে যুক্ত হল দূরদর্শন, বিজ্ঞাপনের চলমান ছবি ও বক্তব্য সরাসরি পৌঁছে গেল অন্দরমহলে। যদিও পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনের ধারাটি থাকল, যা আজও অটুট আছে, বরং আগের তুলনায় বেড়েছে বই কমেনি!
কেশতৈলের বৈশিষ্ট্যে বদল এল, বদল এল বিজ্ঞাপনে। প্রথমত, কেশতৈল হল কেশতেল, তারপর সাত/আটের দশকে চুলের তেল, এখন শুনি ‘হেয়ার অয়েল’। স্মরণে আসে, ১৮৭২-এর বিজ্ঞাপনে ‘হিয়ার প্রিজারভার’ কথাটি। তবে শুধু যে ভাষা ঘুরেফিরে আসে তা নয়, প্রসাধন সাজগোজ সর্বত্রই বদলের এই নিয়ম। একদিন আয়ুর্বেদিক তৈলকে কোণঠাসা করেছিল ফুলেল তেল, তারপর এক সময় সুগন্ধী তেলের সৌরভকে ছাপিয়ে গেল পুষ্টিকর গুণসমৃদ্ধ তেল, ইদানীং আবার দেখা যাচ্ছে ভেষজ তেল ফিরে আসছে।
তবে বিজ্ঞাপনে বদল শুরু হয়েছে বিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই। ১৯৫৫ সালের ‘দেশ’ পত্রিকার একটি বিজ্ঞাপন, জুয়েল অফ ইন্ডিয়া-র ‘কোকোলা’ নামক কেশতেলের। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ‘নববিধান’, লেখা— ‘রুচি কোন ঐতিহ্যের অধীন নয়, সে যুগে যুগে পরিবর্তনশীল। তাই সেকালের অনেক জিনীষ আজকের রুচির বিচারে অচল। ‘কোকোলা’ ঠিক এযুগের উপযুক্ত একটি মনোরম কেশতেল’। ১৯৫৮-তে ‘বর্ষপঞ্জী’ পত্রিকায় ‘আরতি’ কেশতেলের বিজ্ঞাপনে লেখা— ‘প্রসাধন আপনার কৃষ্টি ও আভিজাত্যের সাক্ষ্য’। এই যে বিজ্ঞাপন-ভাষ্যে ক্রেতার রুচিকে প্রাধান্য দেওয়া, ব্যবহারকারীকে সচেতন করে তোলার ভঙ্গিমা, প্রাচীন ঐতিহ্য নয় আধুনিকতার জন্য চাই নতুনত্ব, বিজ্ঞাপনে সেই স্বর শোনা গেল। চুলের তেলের পাশাপাশি বাজারে চুলের ক্রিম ‘প্যামোলিভ’-এর মূল কথা: ‘কেতাদুরস্ত পুরুষদের সুবিন্যস্ত চুলের জন্য’। ‘ব্রিলক্রিম’-এর বিজ্ঞাপনী ব্যঞ্জনা— ‘সাফল্য কি ওঁর মাথায় চড়ে বসেছে?’। ধীরে ধীরে চুলের সাফল্য কামনায় শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, হেয়ার-টনিক এল হাত ধরাধরি করে। দেখা গেল শুধু সুগন্ধ নয়, চুলের গোড়ায় পুষ্টি চাই। এবং এই বক্তব্যেই অনেকের মধ্যে নজর কাড়ল ‘কেয়োকার্পিন’। যে-তেলের বিজ্ঞাপনী ক্যাচ-লাইন ‘প্রতিটি ফোঁটাই পুষ্টি যোগায়’ (‘যুগান্তর’, ২৫ জানুয়ারি ১৯৮০)।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ‘কেয়োকার্পিন’ তেলের নেপথ্যেও এক সাধারণ মধ্যবিত্ত উদ্যমী বাঙালি, নাম ভূপেন্দ্রনাথ দে। কলকাতার জোড়াবাগানের বাসিন্দা। অর্থাভাবে ম্যাট্রিক পাশ করেই জীবিকার সন্ধানে নিউ মার্কেটের কাছে ইস্টার্ন ড্রাগ স্টোরস-এ সাধারণ কর্মচারী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এই কর্মজীবনই তাঁর পরবর্তী জীবন-জীবিকা স্থির করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালে স্ব-উদ্যোগে নিউ মার্কেটে একটি ছোট্ট জায়গায় প্রতিষ্ঠা করলেন দে’জ মেডিক্যাল স্টোরস। ওষুধের পাশাপাশি সেখানে বিক্রি হতে লাগল প্রসাধনী দ্রব্যসামগ্ৰী। এখানে কেয়োকার্পিন তেলের উৎপাদন আগে থেকেই ছিল, কিন্তু তার গুরুত্ব বাড়ে ১৯৭৭ সাল নাগাদ। সেই সময় কোম্পানির ওষুধ বিক্রির লভ্যাংশের ঘাটতি মেটানোর জন্য প্রসাধনী দ্রব্যের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এগিয়ে আসেন পারিবারিক আত্মীয় বারীদ মজুমদার; কেয়োকার্পিনের বিজ্ঞাপনের জন্য ক্ল্যারিয়ন কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনের কাজে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব রাখেন বরুণ চন্দ, তৈরি হয় প্রেস-অ্যাড এবং অ্যাড-ফিল্ম। বিজ্ঞাপনচিত্রে আঁকা তেলের ফোঁটায় লেখা হয়, ‘হালকা, দাগ পড়ে না, পুষ্টি জোগায় প্রতিদিন’। পণ্যের পরিচিতিতে লেখা, ‘অনেকদিনের প্রিয়/ আর প্রতিদিনই পাচ্ছে নতুন নতুন বন্ধু’।
বিজ্ঞাপনে খ্যাতনামা থেকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর
এখন তো অ্যাড-ফিল্মে দেখি, এক-এক হেয়ার-অয়েলের এক-এক ব্র্যান্ড-অ্যাম্বাসেডর। ইমামি নবরত্ন তেলের ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’ বিজ্ঞাপনে গোবিন্দা-রম্ভা, পরবর্তীতে দীর্ঘদিন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, শিল্পা শেঠি হয়ে ইদানীং নবরত্ন তেলের বিজ্ঞাপনে চুলে চাম্পি দিয়ে হাজির হয়েছেন সলমন খান। নীহার হেয়ার-অয়েলের হয়ে স্মিত হাসি নিয়ে হাজির হন বিদ্যা বালান। অরিশ-এর স্বপক্ষে অর্পিতা চ্যাটার্জী বলেন, ‘আমার চুল, আমার কনফিডেন্স’। আগে কেশ-কিং এর হয়ে সওয়াল করতেন জুহি চাওলা, এখন সেই অ্যাড-ফিল্মে হাজির টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সানসিল্ক তেল-শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনী-ছবি বানাতে এসে মন দেওয়া-নেওয়া বিরাট কোহলি-অনুষ্কা শর্মার। ডাবর আমলা হেয়ার-অয়েলের ব্যবহারে তরতাজা ঘন চুলের বিজ্ঞাপনে দেখা যেত সোনাক্ষী সিনহা, করিনা কাপুরকে; এখন সে-পণ্যের জন্য পণ্যদূত নির্বাচিত হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।
সময়কালটা যখন উনিশ শতকের শেষ বা বিশ শতকের শুরু, যখন অ্যাড-ফিল্মের রমরমা বাজার আসেনি, পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠেনি যখন তারকাখচিত, তখন সেই প্রেস-অ্যাডের কালে খ্যাতনামাদের শংসাপত্র হয়ে উঠত যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপনে অন্যতম হাতিয়ার। বিশ শতকের গোড়া থেকেই স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহারে বা তার সমর্থনে সামিল হয়েছিলেন অনেক বিদগ্ধজনেরা। সেই ক্ষেত্রটিতে সুভাষচন্দ্র বসুও যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। ‘কুন্তলীন’ তেলের স্বপক্ষে তিনি লিখেছিলেন যে, তাঁর কোনও আত্মীয় ‘কুন্তলীন’ ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন। পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ স্বাক্ষরিত সেই চিঠিই হয়ে উঠল কুন্তলীনের সেরা শংসাপত্র তথা বিজ্ঞাপন। এছাড়াও কুন্তলীনকে সেকালে শংসাপত্র দেন মতিলাল নেহেরু, লালা লাজপৎ রায়, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী প্রমুখ। ‘মুকুল’ পত্রিকায় (বৈশাখ-চৈত্র, ১৩৩৭) ফুলেলিয়া-র বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুদ্রিত বক্তব্য— ‘আমার এই বৃদ্ধ বয়সে চুল উঠিয়া যাইতেছিল। আপনার এক শিশি ফুলেলিয়া ক্যান্থারো ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করিয়া সেই চুল পড়া বন্ধ হইয়াছে। অন্যান্য অনেক তেল পরীক্ষা করার পর আপনার এই তেলেই সর্ব্বাপেক্ষা উপকার পাইয়াছি’। প্রথিতযশাদের প্রশংসাপত্র যোগে বিজ্ঞাপন দেওয়ার ধারায় পি. এম. বাকচীর ‘সুবাসিনী’ তৈল নিয়ে এল, একসঙ্গে একাধিক বিশিষ্টজনদের বক্তব্য; শুরু হল বিজ্ঞাপনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
শংসাপত্র বা প্রশংসাসূচক বক্তব্য ছেপে বিজ্ঞাপন যে সেই সময়ের এক ট্র্যাডিশন, এবং সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে পণ্যকে উচ্চ সম্প্রদায়ের ব্যবহার্য বা অভিজাত-মহলে সমাদৃত প্রমাণ করে পণ্যের গরিমা বাড়ানো যে এক কৌশল, তা বোঝা যায়। আবার খ্যাতনামাদের সুখ্যাতিকে কেন্দ্র করে কেশতেলের বিজ্ঞাপনগুলিতে প্রবল রেষারেষির ছবিও মেলে। এইভাবেই বিশ শতকের গোড়ায় যেকোনও পণ্যের বিজ্ঞাপনদাতারা, সমাজের বিশিষ্টজন বা সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ দশজনের ভাল-ভাল মন্তব্য বা প্রশংসাতে ভর করে, তাঁদের বিজ্ঞাপনী বক্তব্যের ধার-ভার বাড়াতেন। এখন, ইদানীং যে-ভূমিকায় পণ্যের পক্ষে অবতীর্ণ হয়েছেন সেলিব্রেটিরা। পণ্য ব্যবহারে গালভরা কথা আর উচ্ছ্বল হাসিযোগে তাঁরা হয়েছেন পণ্যদূত, ইংরাজিতে যাকে বলে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর!
ছবি সৌজন্যে: লেখক