ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সামথিং সামথিং: পর্ব ২৯


    চন্দ্রিল ভট্টাচার্য (April 23, 2022)
     

    ক্রোধহীন ছক্কা

    আইপিএল-এর ধারাবিবরণীতে ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হচ্ছে, দ্যাখো, এই মারটা ও মারছে, কিন্তু তার মধ্যে কোনও ক্রোধ নেই! অর্থাৎ লোকটা ক্রিকেটীয় শট মারছে, বুদ্ধি খাটিয়ে প্লেসমেন্ট করছে, প্যানিক করে তাড়ু মারছে না, ওরেবাবারে তাবৎ বলে ছক্কা চাহিয়ে ভেবে তাড়াতুড়ি নেই, ঠান্ডা মাথায় অঙ্ক কষছে। বাঙালি সমাজে প্যাশনকে খুব দর দেওয়া হয়, হিসেব করা বা ছক সাজিয়ে এগিয়ে যাওয়াকে একটু খাটো চোখে দেখা হয়, ভাবা হয় এর মধ্যে প্রতিভা কম ও চাতুর্য বেশি। প্রেম থেকে শিল্প, সর্বত্রই একই সিদ্ধান্ত। কেউ যদি ভেবেচিন্তে মেয়েটার আগ্রহ-প্যাটার্ন বুঝে সেই অনুযায়ী পড়েশুনে সেজেগুজে ধাপে ধাপে প্রেম করে, তার চেয়ে আমরা অনেক বেশি সমর্থন করব সেই লোককে যে হুডুম করে পায়ে পড়বে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলবে এবং ছাদ থেকে ঝাঁপাবার উপক্রম করে চিল্লাবে, বল সর্বনাশী তুই আমার! শিল্পেও, আমাদের ধারণা, যে লোকটা চিৎকৃত ও অযত্নশীল (মানে, নিজের হু-হু প্লাবন-প্রতিভার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তার শিল্প-যত্ন চলতে পারেনি, মাঝে মাঝে স্লিপ খেয়েছে), তার দর বেশি, যে গুনেগেঁথে পরিকল্পনা করে ঐশ্বর্য ও আয়ুধ সাজায় তার চেয়ে। এমনকী ক্রিকেটেও, যে ব্যাটসম্যান চার আস্কিং রেট থাকা সত্ত্বেও গদার মতো ব্যাট চালিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়েছে, তাকে আমরা সহস্র স্যালুট জানিয়েছি, আর যে ধীরে পরপর সিঙ্গলস নিয়ে ট্রফির কাছে পৌঁছেছে তাকে বলেছি নিষ্প্রাণ ধূর্ত। ‘বাক্স বদল’ নামে একটা ছবি হয়েছিল, তা দেখে অনেকেরই ভাল লেগেছিল, কিন্তু সে-ছবির নায়ক যেমন নায়িকার ডাইরি পড়ে একদম পাক্কা গোয়েন্দার মতো প্ল্যান ভেঁজে তাকে জিতে নিল, সে প্রকল্পকে আমরা মর্যাদা দিই না, কারণ তা দৈবনির্দিষ্ট নয়, তার মধ্যে নিয়তির ছাপ কম, মানুষের চেষ্টার ছাপ বেশি। তা অবধারিত মনে হয় না, গণিতসাধ্য মনে হয়। এককালে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত হুড়ুদ্দুম পিটিয়ে ঝোড়ো রান করে আউট হয়ে যেতেন, আর রবি শাস্ত্রী একেবারে টার্গেট বুঝে পা টিপে টিপে নিশ্চিতভাবে জয়ের সিঁড়িতে পৌঁছতেন। খেলার শেষে সব্বাই শাস্ত্রীর নিন্দে করত, শ্রীকান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হত। বলত, শাস্ত্রী নিজের জন্য খ্যালেন, আর শ্রীকান্ত টিমের জন্য। যেন, শাস্ত্রীর রানগুলো টিমের রানে যোগ হয়নি। যেন, শাস্ত্রী শ্রীকান্তের চেয়ে অনেক বেশি রান করেননি। যেন, শ্রীকান্ত আউট হয়ে যাননি আর শাস্ত্রী গোটা খেলাটার হাল ধরে থাকেননি। আসলে, বাঙালির কাছে, যে জিনিসটা আসল, তা হল, ভঙ্গি। কাজটা যা-ই হোক, প্রকৃত সৃষ্টিশীলের ভঙ্গি হবে ক্যাজুয়াল, কলার-তোলা, অপরিশ্রমী এবং আকস্মিক গুপ্তধন পেয়ে ‘ইউরেকা’-স্মিত। সে খোঁজে না, সে পায়। সে খাটে না, তার হাতে সোনার পিণ্ড গড়িয়ে আসে। সে মদে-প্রেমে-আড্ডায় মজে থাকে, রেওয়াজ বা নেট-প্র্যাকটিসে মন দেয় না, সেগুলো মিডিওকারেরা করে এবং সে তাকিয়ে শ্লেষাত্মক মুচকি মারে, শেষে জয়ী হয়। কারণ মাঝারিদের সাধনা যদি-বা প্রাইজ পায়, বাঙালির বৈঠকখানায় তার দর ধুলোর নুটি-সম। তাই কমেন্ট্রির ওই অক্রোধী রোবটবাবু, আর যাই হোক, বং-শংসা পাবেন না।

    কিন্তু এই আবেগ বনাম যুক্তির ডিম পাড়তে গিয়ে ক্রোধের ব্যাপারটা ভুললে চলবে না। ধারাভাষ্যকার প্রশস্তি-বাক্যে বলছেন: মারটার মধ্যে রাগ নেই। রাগ জিনিসটা, প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে, পারফরম্যান্সের পক্ষে খারাপ। রেগে গেলে বিচারবুদ্ধি লোপ পায়, খুব বড় বক্তাও রেগে গেলে যুক্তি ও ফ্লো হারিয়ে তোতলায়। রাগের চোটে ড্রাইভার লোক চাপা দেয়। রেগে সঙ্গম করতে গেলে অঙ্গেরা কথা শোনে না। তাই রেগে খেলতে গেলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। প্রচলিত গল্প: বিখ্যাত ফাস্ট বোলারের বল গাভাসকারের মাথায় এত জোরে লেগেছে যে স্টেডিয়ামের সব্বাই আওয়াজ শুনতে পেয়েছে। নন-স্ট্রাইকার ভেবেছেন, পরের বলটা গাভাসকার বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে সমুচিত জবাব দেবেন। পরের বল গাভাসকার দেখেশুনে ঠুকলেন, যেন আগের বলে কী হয়েছে তাঁর মনেই নেই। তখন নন-স্ট্রাইকার বুঝলেন, গাভাসকার কত বড় প্লেয়ার। কারণ প্রতিটি বলকে তিনি সেই বলের যোগ্যতা অনুযায়ী মর্যাদা দেন, রাগ বা অনুরাগ বয়ে নিয়ে চলেন না। পণ্ডিতরাও বলেন, রাগের অ্যাসিড ক্রোধীর মনটাকেই ক্ষইয়ে দেয়, যার ওপর রাগ তার ক্ষতি হয় না। কিন্তু খেলার মাঠে ক’জন গাভাসকার? ও ময়দান তো যুদ্ধক্ষেত্রেরই ভায়রাভাই। সেখানে তো আক্রোশ আগ্রাসন ‘আয় তোকে পুঁতে দিই’-এরই রবরবা? নইলে জেতার পর অমন আস্ফালন? বা পরপর ছক্কা মেরেছে যে, তাকে আউট করে নাকের সামনে অঙ্গভঙ্গি করে তুমুল উল্লাস? যখন আমির সোহেল ইশারা করে বোলার ভেঙ্কটেশ প্রসাদকে বলেছিলেন পরের বলটা ঠিক কোথা দিয়ে বাউন্ডারি মারবেন, আর উল্টে পরের বলে আউট হয়েছিলেন, তখন ভেঙ্কটেশের তীব্র চিৎকার? কিরণ মোরেকে ভেঙিয়ে জাভেদ মিয়াঁদাদের ব্যাঙের মতো লাফ? লিলির মিয়াঁদাদকে লাথি মারতে যাওয়া? মিয়াঁদাদের লিলিকে ব্যাট তুলে খুলি তুবড়ে দেওয়ার পোজ? গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে আফ্রিদির অকথ্য গালাগাল-বিনিময়? হরভজন সিং-কে খেলার শেষে বিরোধী পক্ষের শ্রীসন্থ হ্যান্ডশেক করে ‘হার্ড লাক’ বলতেই হরভজনের সপাট চড়? আর শোয়েব আখতারের অভদ্রতা তো বিশ্ববিদিত, মাঠে পল অ্যাডামসকে গালি, নিজেদের ড্রেসিং রুমে মহম্মদ আসিফকে মার। কত স্লেজিং, কত অভব্যতা পটকার মতো ফেটেছে-ফুটেছে খেলার মাঠে, কত ক্রোধ মেগা-বগবগাচ্ছে, ইয়ত্তা নেই।

    তবে এও মনে রাখতে হবে, এগুলো আনস্পোর্টিং কাণ্ড, বিচ্ছিরি আঙ্গিক-বাচিক ঘনঘটায় প্রকাশিত, আইপিএলের ধারাভাষ্যকার বলছিলেন: ব্যাটের মারে বা বলের সুইং-এ নিহিত ক্রোধের কথা। মানে, রাগ মূল ক্রীড়াকৌশলে বাড়তি ইঞ্জিন জুগিয়েছে কি না (এবং তা করতে গিয়ে স্টিয়ারিঙের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা ফসকেছে কি না)। রাগ যে প্রয়াসের, চেষ্টার পিঠে ‘হেঁইয়ো’ ধাক্কা একটা দেয়, তা নিশ্চিত। বহু মন-বিশারদ ক্রোধের ইতিবাচকতা নিয়ে কথা বলেন। রেগে গেলে বহু ক্ষেত্রে জেদ ও মনোযোগ ধারালো ঝকঝকে হয়ে ওঠে। অনেক অলস লোক অপমানিত হলেই চেগে ওঠে, দুরন্ত গতিতে ও নৈপুণ্যে কাজ করে। প্রচুর শিথিল মনোবৃত্তির মানুষ রেগে (স্বভাব-বিরোধী) চোয়াল-শক্ত প্রতিজ্ঞা করে। রাগ যদি ভেতরে একটা কঠিন ইস্পাত দেয়, যে রেলিংটা ধরে জোর সাধনায় থিতু হওয়া যাবে, মন্দ কী? কোনও বোলারের ওপর রাগে যদি ব্যাটসম্যান অধিক প্র্যাকটিস শুরু করেন, বা কোনও ব্যাটসম্যানের ওপর রাগে কোনও বোলার রাত তিনটেয় উঠে ইয়র্কারে নিখুঁত পালিশ দেন, বা খেলাকালীন ক্রোধ পরের ওভারেই আঁটো-ডাঁটো করে দেয় আত্মপ্রয়োগ, দুর্ধর্ষ। নীতিকথাটা বোধহয় এ-ই, রাগ অবশ্যম্ভাবী, তাকে দমন করে ইনিংসটা খেলতে হবে, খেলার শেষে জিতে গেলে, বা যার ওপর রাগ তার পতন ঘটলে, প্রতিশোধের আনন্দ প্রকাশ করতে পারো। আর হারলে? রাগ জমা রাখতে হবে, মোটিভেশনের কাজে লাগাতে হবে। তক্কে তক্কে থাকতে হবে। রাগ, যা বাই ডেফিনিশন তাৎক্ষণিক ও চূড়ান্ত হেস্তনেস্ত-কামী, তাকে তোরঙ্গে মজুত রাখা, টিপে খরচা করা— প্রায় প্যারাডক্সের নৌকোয় টুইস্ট নেত্য। বেহিসেবি আবেগকে হিসেব করে বিনিয়োগ করব কীভাবে?

    ভেবে দেখলে অবশ্য, রাগ ঢেকে লুকিয়ে পাশিয়ে আমরা সবাই জীবন চলছি। পাড়ার লোফারের ঔদ্ধত্য দেখে খুব রাগ হল, কিন্তু প্রতিবাদ করে ফল নেই, কারণ সে মস্তান এবং শাসক-চ্যালা। এই রাগটাকে নীচের তাকে চালান করতে হবে। বাসে উঠে সহ-প্যাসেঞ্জারের ওপর প্রকাণ্ড রাগ হল, ম্যানার্স জানে না, মুখ বাড়িয়ে বাড়িয়ে থুতু ফেলছে, আপত্তি করলে ভাব দেখাচ্ছে জীবনে বাংলা ভাষা শোনেনি। এর স্তরে নেমে কলহ সম্ভব নয়। নীচর তাক। অফিস গিয়ে দেখা গেল সদা-তৈলমর্দনকারী অপদার্থকেই বস তোল্লাই দিচ্ছেন এবং আপনাকেই ঠেস দিয়ে টিটকিরি। ফের নীচের তাক। বাড়িতে এসে যেই না মাছের ঝোল নুনেপোড়া, পাশের পাড়া থেকে আপনার গাঁকগাঁক শোনা গেল। আইপিএলের উপদেশ হল, এই বউয়ের ওপর ফেটে পড়াটাও পারলে কোঁত করে গিলে নিন, কারণ এখানে বউ তো প্রক্সি দিচ্ছে মস্তানের প্যাসেঞ্জারের বসের, তা তার প্রতি অন্যায়। তার চেয়ে অফিসে কাজ করার সময় মনের ওপরতলায় রাগের বদলে, স্রেফ ফোকাস রাখতে হবে, যদি কাজে এমন সাফল্য আসে যে কলিগ পড়ে রইল নীচের চেয়ারে, তখন ঠেস দিয়ে কথা হবে’খন। যদি বেশি রোজগার করে অন্য পাড়ায় ভাল বাড়িতে উঠে যাওয়া যায়, তখন পাড়ার মস্তানকে কটাং কামড়ে লরিতে লাফ। কিন্তু তদ্দিন এই ফ্যান্টাসি-পূরণের তাড়নাই আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ধ্যানের গোড়ায় জ্বালানি দিক। এসব বলা সোজা, কারণ তা জিভ নাড়া, উপদেশ দান, যার প্রায় কোনও মূল্য নেই। কিন্তু কাজে এ জিনিস করা শক্ত, কারণ নিরুপায় হয়ে রাগ হজম করা, আর স্বল্পমেয়াদে তাকে ভুলে থাকা— এক কথা নয়। যে লোকটা বর্বর প্যাসেঞ্জারকে একটি প্রত্যুত্তরও দেয়নি, সে বাথরুমে বারান্দায় বাগানে সম্ভাব্য মোক্ষম জবাব অভ্যাস করেছে ছ’মাস আটমাস আটাত্তর মাস। রাগ সত্যি সত্যি রং-বেরং রুমাল নয়, এ ড্রয়ার থেকে বার করে জাস্ট ওখানটায় গুঁজে দিলাম। রাগ নিয়ত পুড়িয়ে দেয়, উত্তাপে নার্ভ থেঁতলে দেয়, দাউদাউ শিখায় অন্ধ করে, ক্ষতি হচ্ছে জানলেও তাকে ত্যাগ করা প্রায় আগুনকে পাট করে গুছিয়ে চিলেকোঠায় তুলে রাখার মতোই অসম্ভব।

    কিন্তু কয়েকজন প্লেয়ার নাকি এই আইপিএল-এ এই ম্যাজিক করে দেখাচ্ছেন। নিশ্চিতভাবে বহু মহান মানুষ প্রায়ই তা করে দেখিয়েছেন, কারণ তাঁরা যে বৃহৎ ও নিরন্তর অপমানের বুলেট খেয়েছেন— তার ক্ষতকে উপেক্ষা না করতে পারলে তাঁদের অতিমানুষিক কর্মকাণ্ডে নিয়েজিতই হতে পারতেন না। হয়তো নিজের কাঁধে এক গুরুদায়িত্ব আছে, ভুবনের ভার ন্যস্ত, এই মর্মে ২৪X৭ ব্যস্ত থাকতে পারলে, রাগকে নিয়ে না-ভাবা, বা অন্তত ওই সময়ে না-ভাবা, অনেক সহজ হয়ে যায়। ব্যাটসম্যানের একটা এই-মুহূর্তের চিন্তা আছে, তা হল, বোলারের হাত দেখে বলটা আন্দাজ করা এবং ফিল্ডার-সজ্জার ম্যাপটা বুঝে সেটাকে গ্যাপে পাঠানো। এই প্রত্যক্ষ কর্মে বারবার ঝুঁকে পড়লে, রাগটাকে সেকেন্ড বেঞ্চে নির্বাসন সম্ভব। বোলার স্টাম্পের দিকে লক্ষ রাখে, বলটা বাউন্সার দেবে না শর্ট ফেলবে ভাবেন, কাজের খুঁটিনাটি ও জটিলতাই তাকে আবেগ এড়িয়ে ঝপাং বর্তমানে ডুবে থাকতে সাহায্য করে। রবীন্দ্রনাথের রাগ ভুলে থাকা সহজ— তাঁর সাহিত্য আছে, জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞানচর্চা আছে, বহু লোক প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের ঠেস দেওয়া কথা সয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন ও পরে সাততলা বাড়ি করে তাদের চোখে কুর্নিশ দেখেছেন, কারণ এইট-নাইন-টেনে টেস্টপেপার মানেবই ও রাফ-খাতার ঝাঁক তাঁদের রাগের দিকে অতটা তাকাতে দেয়নি। এখন থাক, পরে সুদে-আসলে ফেরত দেব— এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গেলেও ‘এখন’টায় একটা কাজের ভেতর তিরের ফলার মতো প্রবেশ করে যেতে হয়, নিবিষ্ট ও নিবিড় কর্ম-কম্বলে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে হয়, ওই কাজের ব্যাকরণ-প্রকরণ দায়িত্ব-নিষ্ঠা সিদ্ধি-তৃপ্তিই বর্ম রচে, ক্রোধের শলাকা থেকে রক্ষা করে। অধিকাংশ সাধারণ মানুষই তেমন কাজ জীবনে পান না। ক’টা লোক কবিতা লেখে? ক’টা লোক রাস্তা দিয়ে আনমনে ভাবতে ভাবতে আসে, গিনিপিগগুলোকে কাল অমুক ইঞ্জেকশন দিয়ে দেখতে হবে কী রিঅ্যাকশন হয়? ক’টা লোক প্রাণ দিয়ে ঝিনুক জমায়, আর শুঁড়তোলা ঝিনুক পেয়ে গেলে পাড়ার ছেলেদের টোন কাটা তার কানেই ঢোকে না? অধিকাংশ মানুষই তো তার দিনে দশ ঘণ্টার কেরানি-কাণ্ডকে অহরহ ঘেন্না করে, আর বাকি লোকের ‘মনোনিবেশ’ বানান ভাবলেই জ্বর আসে। কারণ সাধারণ মানুষের সুবিধেই হল, কখনও কোনও কিছুতে গভীর মন না দেওয়ার আরাম আয়ত্ত ও লালন করা। তাই তার জীবন পানসে, উদ্দেশ্যহীন এবং সুতরাং অনুশীলনহীন, ফলে রাগ ও আফশোসগুলো হইহই করে চোখ-মাথা-কপালে ফার্স্ট বেঞ্চে পালে পালে বসে পড়ে। তাহলে এই ক্রোধ-ব্যাটালিয়নকে রুখতে সে ফোঁসফাঁস প্রাণায়াম ব্যতীত আর কী করবে? কী আবার, হাঁ করে আইপিএল দেখবে!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook