ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • গ্র্যামি, রাজনীতি, ধন্যবাদজ্ঞাপন


    অর্ক দাশ (Arka Das) (April 9, 2022)
     

    গত সপ্তাহে, কিছু বোঝার আগেই রিকি কেজ ধাঁ করে তাঁর দ্বিতীয় গ্র্যামি জিতে বসলেন, আর ওদিকে নিউ ইয়র্ক-বাসী ফাল্গুনী ‘ফালু’ শাহ আর একটা। দুই ‘ভারতীয়’ সঙ্গীতশিল্পীর একই বছরে দু-দুটো গ্র্যামি পাওয়া এর আগে কখনও হয়নি। প্রত্যাশিতভাবেই, ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সাধুবাদ দিলেন, এবং সঙ্গে-সঙ্গে সারা দেশে সবাই রিকি এবং ফালুর নাম জেনে গেল।

    রিকির জন্ম আমেরিকায়, নর্থ ক্যারোলিনায়; বড় হয়ে ওঠা বেঙ্গালুরুতে। বেঙ্গালুরুতেই প্রথম ব্যান্ডে বাজনা এবং কি-বোর্ডিস্ট হিসেবে নাম করা, তার পর বিজ্ঞাপন জগতের কাজ এবং ধীরে-ধীরে কন্নড় চলচ্চিত্র জগতে সুরকার হিসাবে পরিচিতি। প্রথম জীবনে সঙ্গীতে স্বশিক্ষিত হলেও, ২৪ বছর বয়স থেকে মার্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রিকি, তাঁর কথায় ‘জীবনের বাধা পেরোতে’। আন্তর্জাতিক উত্থান ২০১০-১১ সাল থেকে। ঢাকায় ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ ২০১১-র উদ্বোধনী গান রচনা করা থেকে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসাবে দেশে-বিদেশে বহু অনুষ্ঠান করেছেন রিকি; বিগত এক দশকে পরিবেশ সচেতনতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব-ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। আজকাল এ-দেশে দশম শ্রেণির আই-সি-এস-সি সিলেবাসে পড়ানো হয় তাঁর জীবনকাহিনি।

    ২০২২ সালে যে অ্যালবামটার জন্য রিকি এবং স্টুয়ার্ট গ্র্যামি জিতলেন, সেটার নাম ‘ডিভাইন টাইড্‌স’, এবং সেটা তাঁরা জিতলেন ‘সেরা নিউ-এজ অ্যালবাম’ ক্যাটেগোরিতে। ‘নিউ এজ’-এর বিশদ বিবরণ কী, তা জানি না— নেট ঘেঁটে দেখা যাবে এ-ধরনের গান মূলত ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট’-এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেমন যোগাসন বা মেডিটশন অর্থাৎ ধ্যান। তবে এই বিভাগের বেশির ভাগ শিল্পীই যে ‘ফিউশন’ বা ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক’ ঘেঁষা কাজ করেন, তা বিগত বিজয়ীদের তালিকা দেখেই বোঝা যায়— বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান জ্যাজ গিটারিস্ট প্যাট মেথেনি, জাপানি নিরীক্ষণ-ধর্মী সঙ্গীতকার কিটারো, আইরিশ গায়িকা এনিয়া, রুমেনিয়ান-জার্মান ব্যান্ড এনিগ্‌মা ইত্যাদি।

    শুধুমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার দোষে দোষী মানুষ যে বর্ণ-বিভক্ত আমেরিকায় পায়ে বেড়ি দেওয়া, রাস্তায়-রাস্তায় হাড়ভাঙা পরিশ্রমে বাধ্য কয়েদী হয়ে ওঠেন, সেই প্রথার উল্লেখ করে ২০১৬-র গ্র্যামি মঞ্চে কেনড্রিক লামার আর তাঁর ব্যান্ড, ‘চেন গ্যাং’-এর বেশে, ‘দ্য ব্ল্যাকার দ্য বেরি’ নামে তাঁর গান গেয়ে তোলপাড় ফেলে দেন

    মজার কথা হচ্ছে, এটা রিকির দ্বিতীয় গ্র্যামি, এবং এই অ্যালবামের আগে তিনি আরো ১৬টা অ্যালবাম বার করেছেন— যার বেশির ভাগই এ-দেশে পাওয়া যায় না। রিকির কথায়, ভারতে ‘গান কেনা’-র সংস্কৃতি এতটাই খারাপ (বা প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে), যে তিনি এ-দেশে অ্যালবাম রিলিজ করতেই চান নি।

    ফাল্গুনী ‘ফালু’ শাহ বড় হয়েছেন মুম্বইতে; জয়পুর ঘরানায় রাগসঙ্গীতে তালিম পেয়েছেন, তালিম নিয়েছেন সারঙ্গী সম্রাট ওস্তাদ সুলতান খান এবং বিদূষী কিশোরী আমোনকরের কাছে। ২০০০ সালে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার পর থেকে মূলত কার্শ কালে-র সঙ্গে কাজ করার সূত্রে ফালুর আন্তর্জাতিক স্তরে প্রবেশ। বিখ্যাত চেলিস্ট ইয়ো ইয়ো মা থেকে শুরু করে ওয়াইক্লেফ জ্যাঁ, রিকি মার্টিন, ফিলিপ গ্লাস এবং এ আর রহমান-এর সঙ্গে কাজ করেছেন ফালু, এবং তাঁর নিজস্ব ব্যান্ড ‘অ্যামেরিকান প্যাচওয়ার্ক কোয়ার্টেট’-এ বারবার তুলে ধরেছেন আমেরিকার অভিবাসী ইতিহাস এবং পটভূমিকা, সমান্তরাল সংস্কৃতি। ২০২২-এ ফালু গ্র্যামি জিতলেন ‘বেস্ট চিলড্রেনস মিউজিক অ্যালবাম’ বিভাগে, তাঁর অ্যালবাম ‘অ্যা কালারফুল ওয়ার্ল্ড’-এর জন্য।

    ঠিক ‘ভারতীয়’ না হলেও, ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই শিল্পীর গ্র্যামি বিজয় অবশ্যই গর্বের ব্যাপার।

    ২০১৪ সালের গ্র্যামিতে কুইন লাতিফাহ ৩৩ দম্পতির বিয়ে দেন অনুষ্ঠান মঞ্চেই, যাদের মধ্যে সমকামী এবং বিষমকামী, দুই ধরনের মানুষই ছিলেন

    গ্র্যামি পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে রিকি এবং ফালু, দুজনেই যে-বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য রাখলেন, তার সারমর্ম হল ইনক্লুসিভনেস; অন্তর্ভুক্তিকরণ। ‘আমরা সবাই এক’, বললেন রিকি; ‘আমাদের স্বপ্ন হওয়া উচিত, যেভাবে ক্রেয়নের বাক্সে নানা রং মিলে-মিশে থাকে, আমরাও যেন সেভাবেই এই পৃথিবীতে সহাবস্থান করতে পারি,’ তাঁর অ্যালবামের নামের প্রসঙ্গ টেনে বললেন ফালু।

    প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, যে-দেশের নাগরিক হিসাবে আমরা এই শিল্পীদের সঙ্গীতজগতে জয়-বিজয় উদযাপন করছি, একটা অতিমারী পেরিয়ে আসা সে-দেশের মৃত্যু-সম্মুখীন লড়াইয়ে অটল সাধারণ মানুষ, ভয়ানক শীতে জলকামান অগ্রাহ্য করে চালিয়ে যাওয়া আন্দোলনকারী কৃষকদল, এবং হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে ঘরে ফেরা রোজগার-হারানো পরিযায়ী শ্রমিকরা এই অন্তর্ভুক্তির হিসাবে পড়ে তো?

    প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, যে-দেশের নাগরিক হিসাবে আমরা এই শিল্পীদের সঙ্গীতজগতে জয়-বিজয় উদযাপন করছি, একটা অতিমারী পেরিয়ে আসা সে-দেশের মৃত্যু-সম্মুখীন লড়াইয়ে অটল সাধারণ মানুষ, ভয়ানক শীতে জলকামান অগ্রাহ্য করে চালিয়ে যাওয়া আন্দোলনকারী কৃষকদল, এবং হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে ঘরে ফেরা রোজগার-হারানো পরিযায়ী শ্রমিকরা এই অন্তর্ভুক্তির হিসাবে পড়ে তো?

    গ্র্যামি-মঞ্চের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক প্রতিরোধের রেশ-টানা পারফর্ম্যান্স এবং পুরস্কার গ্রহণের ভাষণে সামাজিক-রাজনৈতিক রেফারেন্সের একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বিশেষত ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর রাষ্ট্রপতি জমানায় চার বছরে (২০১৭-২০২১) যে সব অনুষ্ঠান হয়েছে, সেখানে বেশ কিছু শিল্পী তাঁদের বিরোধিতার বার্তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। এর আগেও, দক্ষিণপন্থী এবং পরিত্যাজ্য রাজনীতি এবং সেকেলে সামাজিক প্রথার প্রতিবাদে গ্র্যামি-মঞ্চ বহুবার সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের গ্র্যামিতে কুইন লাতিফাহ ৩৩ দম্পতির বিয়ে দেন অনুষ্ঠান মঞ্চেই, যাদের মধ্যে সমকামী এবং বিষমকামী, দুই ধরনের মানুষই ছিলেন।
    ২০১৫ সালের গ্র্যামিতে ফ্যারেল উইলিয়ামস-এর ব্যাক-আপ ডান্সাররা সবাই কালো হুডি পরে মঞ্চে ওঠেন, মিসিসিপির ফার্গুসন শহরে ১৮ বছরের কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন-এর শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ড্যারেন উইলসন-এর হাতে মৃত্যুর প্রতিবাদে।

    ২০১৬ সালে, কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের প্রতি বর্ণবিদ্বেষের প্রতিবাদে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে আমেরিকা তথা গোটা বিশ্ব উদ্বেল। সে-বছরের গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস-এ র‍্যাপার কেনড্রিক লামার এবং তাঁর ব্যান্ড একটা ‘চেন গ্যাং’-এর বেশে মঞ্চে ওঠেন। শুধুমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার দোষে দোষী মানুষ যে বর্ণ-বিভক্ত আমেরিকায় পায়ে বেড়ি দেওয়া, রাস্তায়-রাস্তায় হাড়ভাঙা পরিশ্রমে বাধ্য কয়েদী হয়ে ওঠেন, সেই প্রথার উল্লেখ করে কেনড্রিক আর তাঁর ব্যান্ড ‘দ্য ব্ল্যাকার দ্য বেরি’ নামে তাঁর গান গেয়ে তোলপাড় ফেলে দেন।

    গ্র্যামির এই ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমার এত কথা লেখার উদ্দেশ্য এই নয় যে আমাদের বিজয়ী ‘ভারতীয়’ শিল্পীরা তাঁদের পুরস্কার গ্রহণের ভাষণে এ-সবের ধার-পাশ দিয়েও গেলেন না। বরং উল্টোটা। তাঁদের ভাষণে যে অন্তর্ভুক্তির কথা আমরা শুনলাম, তা আন্তর্জাতিক। তাতে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে, দেশ-দর্শনে ত্যাগ-তিতিক্ষা-সহিষ্ণুতার কথা বলা হল ঠিকই, কিন্তু সুকঠিন বাস্তবের কোনো প্রসঙ্গ উঠে এলো না। আর তাই প্রশ্নগুলো রয়েই গেল— এই অন্তর্ভুক্তি, এবং প্রধানমন্ত্রী-অভিবাদিত এই গ্র্যামি, ঠিক কোন ভারতের?

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook