ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শিকড়: পর্ব ১


    অপরাজিতা দাশগুপ্ত (March 18, 2022)
     

    শুরুর দিনগুলো এখন খুব স্পষ্টভাবে মনে করতে পারেন নয়নতারা। অথচ পুরনো সব কিছু ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি। স্মৃতির উপর বিস্মরণের পলেস্তারা পুরু হচ্ছিল। হয়তো ভুলেই যেতেন, যদি না একদিন টুম্পা উইদাউট ওয়ার্নিং-এ হঠাৎ ওরকম একটা প্রশ্ন করে বসত।

    ‘ঠাম্মা, তোমাদের সময় ভ্যালেন্টাইন্স ডে ছিল?’

    ভিতরে-ভিতরে একটু চমকালেও, সে-কথা বুঝতে দেননি নয়নতারা। স্কুলে পড়িয়েছেন চৌত্রিশ বছর। তার মধ্যে শেষ চোদ্দো বছর হেডমিস্ট্রেস ছিলেন তাঁর স্কুলে। জীবনে অনেক বেয়াড়া প্রশ্নের মোকাবিলা করেছেন। আর এটা তো একটা নির্দোষ কৌতূহল। তাও আবার আদরের একমাত্র নাতনির কাছ থেকে। হাতের বইটা কোলে রেখে, চশমাটা একটু নাকের উপর নামিয়ে চশমার উপর দিয়ে স্ক্রুটিনি করার ভঙ্গিতে একবার তাকিয়েছিলেন টুম্পার দিকে।

    ‘তোমার প্রশ্নটা কী? আমাদের ছোটবেলায় ভ্যালেন্টাইন্স ডে পালিত হত কি না, না কি আমার কোনও ভ্যালেন্টাইন ছিল কি না?’

    ‘দুটোই ধরো। কোন অর্ডারে উত্তর দেবে সেটা তোমার উপর।’ টুম্পা ফিক করে একটু হাসে। ওর সামনে আইসিএসই বলে এখন স্টাডি-লিভ। নয়নতারার কাছে ও মাঝে মাঝে বাংলাটা দেখে নেয়। নয়নতারা লক্ষ করেছেন, যখন একটা কিছু পড়ে-পড়ে আর পড়তে ইচ্ছে করে না, তখন ও ঠাম্মির কাছে এসে বসে বাংলা পড়ার অছিলায়। একটু গল্পগাছা করাটাই আসল উদ্দেশ্য।

    ‘প্রথম কথা হল, আমার ছোটবেলায় ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলে কিছুর নাম শুনিনি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথাও জানতাম না কস্মিনকালে, প্রেমদিবস হিসেবে দিনটা পালন করা দূরে থাক। আর এরকম একটা দিন হতে পারে, সেটাই যেহেতু জানা ছিল না, তাই ভ্যালেন্টাইন থাকা দরকার, ওই চাহিদাটাই তৈরি হয়নি কখনও।’

    ‘দাদুকে তুমি কবে দেখলে প্রথম?’ টুম্পা তাও নাছোড়বান্দা!

    ‘ছাঁদনাতলায়। ছাঁদনাতলা বোঝো?’ নয়নতারা গম্ভীর ভাবে উত্তর দেন।

    না, ছাঁদনাতলা কী টুম্পা জানে না। বাংলা শব্দভাণ্ডারে যেমন অবিরত সংযোজিত হচ্ছে নতুন-নতুন শব্দ, তেমনই নিঃশব্দে ঝরেও যাচ্ছে কিছু-কিছু। নতুন প্রজন্মের কেউই বোধহয় ছাঁদনাতলার মানে জানে না। ইংরেজিও এখন সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে জেনারেশন জেডদের চটজলদি হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেজে ব্যবহারের জন্য। বাংলার তো কথাই নেই। কিছুদিন বাদে হয়তো ভাবলুপ্ত বাংলা ভাষার জন্য একটা মিউজিয়াম চালু হবে— না ভেবে পারেননি নয়নতারা। মুখে বলেছিলেন, ‘তোমার দাদুর আর আমার তো অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয়েছিল— তাই বিয়ের আসরে শুভদৃষ্টির সময়ই ওঁকে প্রথম দেখি। আপাতত তোমার সেই গল্প না শুনলেও চলবে। দেখি কী ব্যাকরণে আটকে গেলে?’

    টুম্পা কয়েকটা সমাস কী হবে জিজ্ঞেস করে চলে যায়। দ্বন্দ্ব, দ্বিগু, মধ্যপদলোপী কর্মধারয়, বহুব্রীহি সমাসে এসে ও আর থৈ পায় না। টুম্পার মা-বাবা দুজনেই পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। অগ্নিভ আর সুতপা দুজনেই সুপ্রতিষ্ঠিত। স্টিল প্ল্যান্টে কাজ করে দুজনেই। অগ্নিভকে মাঝে বেশ কয়েক বছর ভুবনেশ্বরে থাকতে হয়েছিল। সুতপাও বোকারোতে পোস্টেড ছিল তখন। টুম্পা ছোট থেকেই কারমেলে পড়ত। কলকাতায় ওর দেখভাল ও দায়িত্ব সামলানো, সবই হাসিমুখে করতেন নয়নতারা এবং তাঁর স্বামী। অমলজ্যোতি সারা জীবন কাজ করেছেন জেসপে। সেখান থেকে ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়েছিলেন নব্বই সালে। তখন ওঁর ঠিক পঞ্চান্ন। কিছুদিন এ-ফার্ম সে-ফার্ম করে পাকাপাকি ভাবে অবসর নিয়ে থিতু হয়ে বসলেন নিরানব্বইয়ে। ততদিনে ছেলে দাঁড়িয়ে গেছে। সুতপাও সবে এসেছে পুত্রবধূ হয়ে। দিব্যি ছিলেন অমলজ্যোতি। টুকটাক এদিক-সেদিক বেড়াতে যেতেন। নাতনিকে নিয়েও সময় কাটত অনেকটা। স্কুলে পৌঁছে দেওয়া, নিয়ে আসা, দোকানপাট, বাজারহাট করা, সবই করতেন নিজেই। বাজারহাট, কারমেল স্কুল, সবই অবশ্য এ-বাড়ি থেকে খুব কাছেই। বাড়িটা এক সময় করেছিলেন অমলজ্যোতির বাবা। সেটা ষাটের দশক। নয়নতারা বিয়ে হয়ে এই বাড়িতে এসেছেনই তো একাত্তর সালে! তখন এ-বাড়ির সামনে-পিছনে-পাশে কোথাও কোনও বাড়ি ছিল না। চারদিকে ধু-ধু জমি, একটা-দুটো টিনের চালের ঘর।

    সদ্য হওয়া দোতলার ব্যালকনি থেকে ওপাশে গল্‌ফ ক্লাবটা স্পষ্ট দেখা যেত। শীতের রোদ-মোড়া সকালে দাঁড়িয়ে নয়নতারা আর তাঁর ননদরা দেখতেন গল্‌ফ খেলতে আসা খেলোয়াড়দের। পতৌদি কলকাতায় এলেই গল্‌ফ খেলতে আসতেন। এ-বাড়িতে ঠিকে কাজের লোক ছিল বিন্দুদি। পাশের ঝুপড়িতে থাকা বিন্দুদির স্বামী, দেওররা সব ক্লাবে ক্যাডির কাজ করত। শুধু পতৌদি নয়, গল্‌ফ খেলতে আসা তখনকার সব বম্বের তারকাদের গল্প এসে সবিস্তারে বর্ণনা করত বিন্দুদি। নয়নতারা আর তাঁর দুই ননদ চোখ বড়-বড় করে শুনতেন। পঞ্চাশ বছর আগের কথা। অথচ মনে হয় এই সেদিন! সময় কী দ্রুত চলে যায়! বিন্দুদি’র খবর বহু বছর জানেন না নয়নতারা। মারা গেছে নিশ্চয়ই। অমলজ্যোতিই চলে গেলেন পাঁচ বছর হয়ে গেল। সবে আশি হয়েছিল। পাঁচ বছর আগে এরকমই একটা বিকেলে চা খেতে বসেছিলেন কর্তা-গিন্নি। ‘একটু জল দেবে?’ অমলজ্যোতি বলেছিলেন। জল আনতে ঘরের ভিতর দিয়ে রান্নাঘরে গেছিলেন নয়নতারা। রান্নাঘরটা শেষপ্রান্তে। যেতে সময় লাগে। জল নিয়ে ফিরে এসে দেখেছিলেন বেতের চেয়ারে বসা অমলজ্যোতির মাথাটা একদিকে কাত হয়ে আছে। অমলজ্যোতি দশ বছরের বড় ছিলেন নয়নতারার থেকে। আগে যাবেন যে তা মোটামুটি জানাই ছিল যেন। তা বলে এমনভাবে জানান না দিয়ে, চললাম না বলে যে চলে যাবেন উনি, নয়নতারা তা বিশ্বাস করতে পারেনি। পাঁচ বছর পরেও স্বামী যে নেই তা মেনে নিতে অসুবিধে হয় তাঁর। তারপর থেকে আস্তে-আস্তে বদলে গেছে অনেক কিছুই। অগ্নিভ চেষ্টাচরিত্র করে কলকাতায় পোস্টিং পেয়েছে। সুতপা কলকাতায় চলে এসেছিল অমলজ্যোতির মৃত্যুর মাস দুয়েক আগে থেকেই। এখন সংসারের পুরো দায়িত্ব ছেলে-বউই কাঁধে তুলে নিয়েছে। নয়নতারা কাজের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু মাঝে মাঝে তাঁর নিজেকেই এই সংসারের বাড়তি মানুষ বলে মনে হয়। শরীরও ভাঙছে দ্রুত। মেঘে-মেঘে বেলা তো কম হল না। এই ফাল্গুনে নয়নতারার তিয়াত্তর হবে। বিয়ের পর থেকে এ-বাড়িতেই বাস তাঁর। যখন নতুন বউ হয়ে এসেছিলেন, জায়গাটা একেবারে টিমটিমে ছিল। ভামের উপদ্রবে দরজ-জানালা বন্ধ রাখতে হত। সন্ধের পর গল্‌ফ ক্লাবের মাঠের ওধার থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসত। একবার একটা শিয়াল কী করে যেন পাড়ার মধ্যে চলে এসেছিল। এখন আর আসে না। মধ্যরাতের স্তব্ধতা খান-খান করে দিয়ে যেমন আর শোনা যায় না কাছের রেললাইন দিয়ে ট্রেন যাবার শব্দ। পাড়াটা আস্তে-আস্তে বদলে গেছে। মানুষগুলোও। শুধু বাড়িটা ভেঙে এখনও মাল্টিস্টোরিড ফ্ল্যাটবাড়ি ওঠেনি। তার অবশ্য কারণ আছে। অগ্নিভ অনেক আগে থেকেই ফ্ল্যাটের পক্ষপাতী ছিল। দোতলা পুরনো বড় বাড়ি মেনটেন করা মুশকিল। অমলজ্যোতিও আপত্তি করেননি। কিন্ত বাদ সেধেছিল অমলজ্যোতির দুই বোন। তারা পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ চেয়েছিল। সেই গোলমালের জেরে বাড়িটাকে প্রোমোটিং করা সম্ভব হয়নি। মালিকানাস্বত্ব গোলমেলে হলে বা বাড়ির টাইটেল ডিড ঠিক না থাকলে প্রোমোটাররাও পিছিয়ে যায়। বাড়িটা খাতায়-কলমে এখনও করুণাসিন্ধু দত্ত-র নামে। অমলজ্যোতির বাবা, যিনি চল্লিশ বছর আগে চলে গেছেন। এই গন্ডগোলে বাড়িটা টিকে গেছে। পুরু দেওয়াল, কাঠের মজবুত দরজা-জানলা, লাল মেঝের বাড়িটা এখনও নয়নতারার এক ধরনের আশ্রয়ের মতো। অগ্নিভরা গত বছর আপাদমস্তক সংস্কার করেছে বাড়িটার। সুতপা নিজে আর্কিটেক্ট বলে কোথায় কীভাবে সংস্কার করা সম্ভব— আদি রূপ অক্ষুণ্ণ রেখে— তা ওর কাজেরই অংশ। এখন মেরামতি আর একটু-আধটু মর্ডানাইজ করার পর বাড়িটা অন্তত আরও পঞ্চাশ বছর টিকে যাবে। আরও অন্তত দুটি প্রজন্ম। টুম্পার নাতি-নাতনি হলে তারা এই বাড়িটা দেখে কী ভাববে কে জানে! ততদিনে এই পাড়াটা নিশ্চয়ই আরও পাল্টে যাবে। চেনা লোকগুলোও। ওপাশে গল্‌ফ ক্লাবের মাঠটা থাকবে কি, না কি অশ্বারোহী সময় চলার বেগে গুঁড়িয়ে দেবে যাবতীয় চেনা অভিজ্ঞান? যেমন নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে শিয়ালগুলো, ধু-ধু জমি যতদূর চোখ যায়, বিন্দুদি, অমলজ্যোতি, এবং তাঁর যৌবনের প্রাসঙ্গিক মানুষগুলো। টুম্পার এখন সামনে জীবনের প্রথম পরীক্ষা। সে কবে বড় হবে, বিয়ে করবে, ছেলেমেয়ে, তারপর নাতি-নাতনি আসবে, এসব ভাবা হাস্যকর। দক্ষিণের খোলা প্রশস্ত ব্যালকনিতে বসে ডানদিকে ঈষৎ ঢলে পড়া সূর্যাস্ত দেখতে-দেখতে একা-একাই এসব ভেবে হাসতে লাগলেন নয়নতারা। হেসেই চললেন। 

    ‘অর্ঘ্য তোমায় আনিনি বহিয়া বাহির হতে, ভেসে আসে পূজা পূর্ণ প্রাণের আপন স্রোতে, অধীরতা তার মিলনে তোমার হোক না সারা।’ অদৃশ্য কোনও দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নয়নতারা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন দু’বিনুনি বাঁধা স্কার্ট-ব্লাউজ পরা রোগা মেয়েটাকে। বহুদিন বাদে আবার রবীন্দ্র রচনাবলী সিস্টেমেটিকালি পড়তে শুরু করেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাসগুলো আবার নতুনভাবে পড়ছেন। কত কবিতা পড়া নেই তাঁর। পুরনো, জানা কবিতা, গানে আবার নতুন করে মানে খুঁজে পাচ্ছেন নয়নতারা। এই পড়ার সূত্রেই চোখের সামনে দেখতে পান ওই কিশোরী মেয়েটাকে, যে ছুটির দিনে রবীন্দ্রনাথের ‘সঞ্চয়িতা’ নিয়ে ছাদে উঠে যায়। একা নির্জন নিভৃত উচ্চারণে পড়ে চলে ‘ক্ষণিকা’, ‘বলাকা’ বা ‘শেষ সপ্তক’। একা-একা গোপন মনটিকে ডায়েরির নিভৃত পরিসরে ধরে রাখার অভ্যেসও তৈরি হয় তখন থেকে।

    নয়নতারা আগে ডায়েরি লিখতেন নিয়মিত। এখন আর লেখেন না। শুধু ভাবেন। মনের মধ্যে ব্রেক কষে-কষে হাঁটতে থাকেন পিছন দিকে। স্মৃতি রোমন্থন করেন। জীবনে অনেকগুলো বছর নাকে-মুখে গুঁজে স্কুলে ছুটতেন। মধ্য কলকাতার স্কুলে চাকরি পেয়ে গেছিলেন এমএ-র পরই। স্কুলে চাকরির পর পরই বিয়ের সম্বন্ধটা এনেছিলেন তাঁর সম্পর্কে এক পিসি, যিনি আবার অমলজ্যোতির মাসিমা হতেন। বিয়ের পরও পিসি বলেই ডাকতেন তাঁকে। অমলজ্যোতির বাবারা দেশভাগের পর রেফিউজি হয়ে এপারে চলে এসেছিলেন। অমলজ্যোতি তখন ছয়-সাতের বালকমাত্র। তাঁর বোনেদের এপারেই জন্ম। তাঁর কাছাকাছি বয়সেরই ছিল টিয়া আর ময়না। কতদিন ওদের মুখ দেখাদেখি নেই। এখন কোনও বিয়েটিয়েতে যা দেখা হয় ওটুকুই। সম্পত্তি বড় সাংঘাতিক জিনিস। ভাইবোনের মধুর সম্পর্কেও ফাটল ধরিয়ে দেয়। কলকাতায় বড়-বড় বাড়ির মালিক হয়েও যে দাদার বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবতে পেরেছিল ওরা, সেই বিষয়টাই বড় যন্ত্রণা দিয়েছিল অমলজ্যোতিকে। নিশ্চয়ই ওদের স্বামীদেরও কিছু মদত ছিল, নয়নতারা ভাবলেন একবার। অথচ তাঁরও তো পৈতৃক বাড়ি ছিল। তিন ভাইয়ের সঙ্গে সেই বাড়িতেই বড় হয়েছেন নয়নতারা। বিয়ের পর স্বামীর সংসারকেই নিজের জায়গা হিসেবে দেখেছিলেন। পৈতৃক বাড়ির অংশ নিতে হবে এ-কথা কখনও মনেই হয়নি। দুই দাদার মধ্যে বড়জন পুনায় থাকতেন। অন্যজন সেট্‌ল করেছিলেন এডিনবরায়। দাদাদের ছেলেমেয়েরা প্রায় অবাঙালিই বলা যায়। ছোড়দার মেয়েদের সঙ্গে বুম্বাদের ইমেলে যোগাযোগ হয় মাঝেমধ্যে। অগ্নিভ বা বুম্বার স্বভাবটা হয়েছে একেবারে ওর বাবার মতো। পৃথিবীর কোনও ঘোরপ্যাঁচ ওর মাথায় ঢোকে না। নয়নতারাদের নাগেরবাজারের বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে বহুকাল হল। ছোড়দা নিজের অংশটা ছেড়ে দিয়েছিল ছোট ভাইকে। বড়দার ফ্ল্যাটটার তালাচাবি দেওয়া থাকত বহু কাল। ক্বচিৎ কখনও কলকাতায় এলে ফ্ল্যাটে ঝাড়পোঁছ হত তখন। বড়দার ছেলে মারাঠি বিয়ে করেছে, মেয়ে তামিল ব্রাহ্মণকে। যতদিন বেঁচে ছিল বড়দা, মেয়ে বা ব্যাঙ্গালোরবাসী ছেলের কাছেই যেত বেশি। এখন বৌদি কেমন আছে, কলকাতায় আসে কি না, এসব কিছুই আর খবর রাখেন না নয়নতারা। ছোড়দার উপর একটা চাপা অভিমান হয়েছিল বটে, যখন ওর প্রাপ্য ফ্ল্যাটটা ও অবুর নামে লিখে দিল। ভাই-এর তো দু’খানা বাইশশো স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট দরকার ছিল না। ছোড়দা তো নয়নতারার কথাও ভাবতে পারত! নয়নতারা এসব দুঃখ অমলজ্যোতির কাছে অবসর সময়ে প্রকাশ করে ফেলতেন। হা-হা করে উদাত্ত গলায় হাসতেন অমলজ্যোতি। ‘এই সব ক্ষুদ্র, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ভেবে মন খারাপ কোরো না রাণু। জীবন অনেক বড়। তার চেয়ে তুমি যদি পৃথিবীর কত দেশ আছে, যেখানে যাওয়া হয়নি, কত ভাষায় কত গান শোনা হয়নি’ এইসব বলে হা-হুতাশ করো, সেটাই অনেক বেশি জাস্টিফায়েড। একটা ফ্ল্যাট যদি তোমার দাদা তোমাকে দিত, তাহলে সেটা নিয়ে কি মোক্ষলাভ হত তোমার? তুমি কি বুড়ো বয়সে আমাকে ফেলে নাগেরবাজারের ওই ফ্ল্যাটে থাকতে যেতে?’

    না, থাকতে হয়তো যেতেন না নয়নতারা। কিন্তু তাঁর নিজস্ব একটা আস্তানা থাকত। জানতেন, ইচ্ছে হলেই সেখানে চলে যেতে পারেন। ‘আ রুম অফ ওয়ান্‌স ওন’— ভার্জিনিয়া উল্‌ফের সেই লেখাটা কতদিন আগে পড়েছিলেন, এতদিন বাদে ঠিক মনেও পড়ে না। শুধুই কি মেয়েদের একটা নিজস্ব ঘরের কথাই বলতে চেয়েছিলেন ভার্জিনিয়া? আজকাল ইন্টারনেট হয়ে এই একটা সুবিধা হয়েছে। যে-কোনও বিখ্যাত মানুষের লেখা একবার পড়তে চাইলেই হল। একটা ক্লিকে সব হাতের কাছে এসে যায়। একবার টুম্পাকে বললেই হল, সঙ্গে-সঙ্গে ও জোগাড় করে দেবে। টুম্পার আজকাল ফিরতে বেশ দেরি হয়। আজকাল বেশ ম্যাচিওর হয়ে গেছে ও। আগের মতো আর ‘ঠাম্মি একটা গল্প বলো না’ বলে আসে না। ইলেভেনে সায়েন্স পড়বে বলে ঠিক করেছে। ডিসিশনটা ওর নিজেরই। নয়নতারা ভেবেছিলেন ও ইংরেজি নিয়ে পড়বে। অবশ্য ভাবার কোনও কারণ ছিল না। শুধু টুম্পার বাবা নয়, মা-ও ইঞ্জিনিয়ার। যাদবপুরে পড়তে-পড়তে ওদের আলাপ-প্রেম।

    ‘টুম্পা, কী নিয়ে পড়বে ঠিক করলে কিছু? মা-বাবার প্রফেশনে যাবে নাকি?’

    ‘খেপেছ?’ টুম্পা কলকল করে বলছিল। ‘আপাতত সায়েন্স স্ট্রিম রাখব। পরে কী করব পরের কথা। সব চ্যানেলগুলো তো খোলা রাখি, তাই না ঠাম্মি?’ এটা দীপ্তিময় রায়ের কথা। নয়নতারার গৃহশিক্ষক। বৃদ্ধ মানুষটি অঙ্ক আর বিজ্ঞান পড়াতে আসতেন ওঁদের বাড়িতে। ম্যাট্রিকের পর উনি চেয়েছিলেন নয়নতারা আইএসসি পড়ুন। ‘সায়েন্স পড়লে সব চ্যানেগুলো খোলা থাকে মাগো’— খুব স্নেহের সঙ্গে নয়নতারাকে বলতেন উনি। নয়নতারা অবশ্য আর্ষবাক্য মানেননি। বিজ্ঞান না পড়ে অজ্ঞানতার রাস্তাই বেছে নিয়েছিলেন উনি। বাংলা-ইংরেজি গল্পের বইয়ের পোকা ছিলেন। তাই বাংলা সাহিত্য নিয়েই পড়বেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন একরকম।

    তাঁরা ভাইবোনেরা সকলেই মেধাবী ছিলেন। উচ্চশিক্ষার সময় বড়দা ইঞ্জিনিয়ার হন। ছোড়দা ডাক্তারি পড়ে পরে ইংল্যান্ডে চলে গেল। থাকার মধ্যে কলকাতায় থেকে গেলেন নয়নতারা আর স্বপন, তাঁর ছোট ভাই। স্বপন দমদমেই কলেজে পড়িয়েছে সারা জীবন। ভাইদের মধ্যে ওই একটু কম সাকসেসফুল। নয়নতারাদের সময় কলেজ শিক্ষকদের মাইনে খুব একটা ভাল ছিল না। তবে শিক্ষকতাকে সম্মানজনক পেশা হিসাবে মনে করা হত। অবসর নেবার পরেই অকালে চলে গেল স্বপন। হঠাৎ বহুদিন বাদে নয়নতারার মনে পড়ল তাঁর ছোট ননদ ময়নার সঙ্গে স্বপনের একটু প্রেম-প্রেম ব্যাপার হয়েছিল। তখন বাদ সেধেছিলেন তিনি নিজেই। কেন যে আপত্তি ছিল মনে, এখন আর সঠিক মনেও করতে পারলেন না তিনি। ওরা প্রায় সমবয়সি ছিল। বোধহয় ময়না তিন-চার মাসের বড়ই হবে। সেজন্য কি কিন্তু-কিন্তু ছিল নয়নতারার? ময়নাকে স্পষ্ট বলেছিলেন— ‘যাকে খুশি বিয়ে করো, আমার ভাইটাকে ছেড়ে দাও।’ স্বপনকে একদিন বাপের বাড়ি গিয়ে আচ্ছা করে বকুনি লাগিয়েছিলেন। ওদের চুম্বনরত অবস্থায় একদিন দেখে ফেলার পর কড়া হতে হয়েছিল। এখন হঠাৎ মনে হল সে-সময় অত কড়া বোধহয় না হলেই ভাল হত। স্বপনের বউ হলে ময়নাই ওই দুটো ফ্ল্যাট ভোগ করত। তাহলে আর এই বাড়ি নিয়ে আর এত মামলা-মোকদ্দমা হত না। অবশ্য কী হত তা নিয়ে ভেবে আর লাভ কী? ভাইদের মধ্যে অবুই তো সবচেয়ে আগে গেল। বড় মায়াকাড়া চেহারা ছিল অবুর। স্বপ্ন-স্বপ্ন দুটো ভাসা-ভাসা চোখ। ময়নার সঙ্গে প্রেমে বাধা দেবার পর অবু নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল। বহু বছর আসত না এ-বাড়ি। ভাইফোঁটায় নয়নতারাই যেতেন ফোঁটা দিতে। সেই ফোঁটাও বন্ধ হয়ে গেছে কত বছর হল। অমলজ্যোতি বেঁচে থাকতে টুম্পা ফোঁটা দিত দাদুকে। তাঁদের বাড়িতে আর ফোঁটা দেবার বা নেবার কেউ ছিল না। বুম্বার ভাইবোন হলে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হত। সুতপারও ছোট বোন বম্বেতে থাকে। ভাই নেই ওদের।

    ফোনটা বাজছে। ল্যান্ডলাইনে এখন আর প্রায় কেউই ফোন করে না। মোবাইলেই যত কথা। ল্যান্ডলাইনটা তুলে দিতেই চেয়েছিল বুম্বারা। নয়নতারা আপত্তি করেছেন। নম্বরটা অনেকদিনের। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত নাহয় থাক। তারপর তো ওরা ওদের মতোই করে নেবে। সুতপা এসে বলল, ‘মা, দমদম থেকে মামিমা ফোন করেছেন। আপনি ভিতরে যাবেন, না কি পরে করতে বলব?’

    মামিমা মানে কৃষ্ণা। স্বপনের বউ। এবার বেশ অনেকদিন পরে ফোন করল কৃষ্ণা। বড় ভাল মেয়ে। অবুর কলেজে ছাত্রী ছিল ও। বুদ্ধিদীপ্ত, ঝকঝকে চেহারা। কৃষ্ণাকে বিয়ে করে ভালই করেছিল অবু। যারা গুছিয়ে, পরিপাটি সুন্দর করে সংসার করে কৃষ্ণা সেইরকম মেয়ে। ওর দুর্ভাগ্য বেশিদিন স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে পারেনি ও। অবুর চেয়ে আট বছরের ছোট ও। এখন কৃষ্ণারও বয়স ষাট পেরিয়ে গেছে। অবু চলে গেছে ন’বছর হয়ে গেল। তখন কৃষ্ণার সবে বাহান্ন, আর মুনা চব্বিশ বছরের তরুণী। অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে মা-মেয়ের উপর দিয়ে। তবু ওরা জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করেছে।

    নয়নতারা ভিতরে গিয়ে ফোন ধরলেন।

    ‘হ্যাঁ কৃষ্ণা! কেমন আছ তোমরা?

    ‘ঠিকই আছি দিদিভাই। সরি গো! ফোন করা হয়নি অনেকদিন।’ আগেই অ্যাপোলোজাইজ করছে ও। নয়নতারা অবশ্য কিছুই মনে করেন না এসব নিয়ে। ভাইটাই নেই ন’বছরের বেশি হয়ে গেল। ভাই-বৌ যে নিয়ম করে ফোন করে খোঁজখবর নেবে, এরকম কর্তব্যের সংজ্ঞায় আর বিশ্বাসী নন তিনি। তাছাড়া কৃষ্ণা একটা এনজিও-র সঙ্গে খুব কাজকর্ম করে। সমাজসেবার কাজে ওর কমিটমেন্টের তারিফ না করে পারেন না নয়নতারা। ওদের মেয়ে মুনাও খুব সমাজ-সচেতন। পুনায় ফিল্মমেকিং-এর একটা কোর্স করেছে মুনা। নয়নতারার বড়দাদের সঙ্গেও ওদের খুব গাঢ় সম্পর্ক, পুনায় বড়দারা থাকতেন বলে। পুনায় পড়ার সময় ফিল্ম ইন্সটিটিউটের চত্বরে থাকলেও প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ছোটুর বাড়িতে যেত ও। মেয়েটাও মায়ের মতোই শুধু পরিবারের জন্য নয়, সমস্ত সমাজের জন্যই নিবেদিতপ্রাণ।

    এসবের মধ্যেই নয়নতারার একটু খটকা থাকে। প্রায় চৌত্রিশ বছর বয়স হতে গেল মুনার। ও কি সংসার-টংসার করবে না? এতদিনেও মুনার বিয়ের কথা কিছু শোনেননি। এ ব্যাপারে মা-মেয়ে দুজনেই যেন একরকম। মুনা নাহয় আজকালকার মেয়ে, কিন্তু বয়স তো আর থেমে থাকছে না। শেষ অবধি ও যদি বিয়ের ধার না মাড়ায়, তবে কৃষ্ণা কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে? তবু নয়নতারা জানেন, আজকাল এসব ব্যাপারে একেবারেই কথা তোলা ঠিক নয়। বিয়ে করবে কি করবে না, এসব এখন ব্যক্তিগতর আঙিনায় চলে এসেছে, নিজের ছেলেমেয়েরাই এসব বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেই মাইন্ড করে, ভাবে তাদের জীবনে অতিরিক্ত ইন্টারফেয়ার করা হচ্ছে, তো ভাইঝি! কে জানে হয়তো মুনা কাউকে পছন্দ করেছে, বিয়ে করবে, হয়তো সেই খবর দিতেই ফোন করেছে কৃষ্ণা। কৌতূহল থাকলেও বুঝতে না দিয়ে আলগা ভাবে নয়নতারা জিজ্ঞেস করলেন, ‘মুনা কেমন আছে? কী ফিল্ম করছে এখন?’

    মুনা একটা ফিল্ম প্রোডাকশন টিমের হেড। ওর বাবার পাওয়া দুটো ফ্ল্যাটের মধ্যে একটাতে ও থাকে। ফিল্ম লাইনের অজস্র লোকজন ওর ফ্ল্যাটে সারাক্ষণ ঘোরাঘুরি করে। সে নিয়ে কৃষ্ণার কোনও অভিযোগ তো নেইই, বরং ও-ই পারলে মেয়ের সঙ্গে তাল দেয়। নয়নতারার প্রশ্নের উত্তরে কৃষ্ণা বেশ উচ্ছ্বসিত ভাবে বলতে লাগল, ‘মুনা ওর ইউনিটের সঙ্গে শুটিং করতে বাংলাদেশ গিয়েছিল। ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট কোলাবোরেশনে একটা ছবি হচ্ছে। বাংলাদেশের মাটিতে শিকড় খোঁজা নিয়ে তথ্যচিত্রের ঢঙে গল্প। শুটিং শেষ হয়ে গেছে, এখন এডিটিং-এর কাজ চলছে।’ কৃষ্ণাও মেয়ের সঙ্গে গেছিল এবার।

    ‘মুনা তো এই নিয়ে চার-পাঁচবার গেল বাংলাদেশে। আমি তো যাইনি কখনও। তোমার ভাই তো বেড়াতে যেত না বেশি, গেলেও ওই পুরী কি দার্জিলিং! মুনা এবার জোর করল, মা চলো, না গেলে তুমি বুঝতে পারবে না কী জিনিস মিস করেছ এতদিন। তাই গেলাম। জানো দিদিভাই, গিয়ে মনটা ভরে গেল। মানুষ যে এখনও কত আন্তরিক ওখানে…’ বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষ সবকিছু নিয়ে উচ্ছ্বসিত কৃষ্ণা। ওর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও যোগাযোগ নেই। ওর বাপের বাড়ি ছিল নবদ্বীপে। ওখানকার বৈষ্ণব পরিবার ওদের। সবশেষে কৃষ্ণার হঠাৎ আরেকটা জিনিস মনে পড়ে গেছে।

    ‘ওঃ হো! আরেকটা আশ্চর্য জিনিস তো বলাই হয়নি তোমাকে। ওখানে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হল। তিনি দেখলাম তোমাদের পুরো ফ্যামিলিকে চেনেন। কী যেন নামটা, আল-নূর না কী যেন… মুনা বলতে পারবে’— প্রবল ভাবে মনে করার চেষ্টা করছে কৃষ্ণা।

    ‘আজকাল বয়স হচ্ছে বুঝতে পারি। কিচ্ছু মনে রাখতে পারি না। অথচ জানো, এই ভদ্রলোকের বিরাশি-তিরাশি বছর বয়স। বড়দার ক্লাসমেট ছিলেন বললেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ওখানে সেট্‌ল করেন। নদিয়ার কোথায় যেন আদি বাড়ি। উনি বলছিলেন, এখন হলে তো তাড়িয়েই দিত। কাগজপত্র তো কিছুই ছিল না। ভাগ্যিস চলে এলাম। তবে তা পার্সোনাল কারণে। তোমাদের সবাইকে চেনেন বললেন। বড়দা আর তোমার ভাই দুজনেই চলে গেছেন শুনে খুব দুঃখ পেলেন। তোমার কথা বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন। মুনা বলেছে, তোমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে একবার স্কাইপে বা হোয়াটসঅ্যাপে। চমৎকার ভদ্রলোক। তুমি চিনতে পারছ তো দিদিভাই, কার কথা বলছি?’

    হ্যাঁ, আল-নূর বলামাত্রই চিনতে পেরেছেন নয়নতারা। ছবির মতো তাঁর মনে পড়ে গেছে সব। এতকাল ভুলে ছিলেন কী করে তা ভাবতেই অবাক লাগছে ওঁর। মন বড় বিচিত্র জিনিস। ভুলতে চেয়েছিলেন বলেই কি বিস্মৃতি? অনেককাল বাদে বিস্মরণের সব অভিজ্ঞান হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। কত বছর আগে তাও মনে পড়ে না। পলেস্তারা খসিয়ে আবার একটু-একটু করে জেগে উঠছেন নয়নতারা।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook