ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • সরস্বতীকে বোঝা শক্ত

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (February 4, 2022)
     

    বেশিরভাগ হিন্দুই দেবী সরস্বতীকে কারিগরি-বিদ্যার দেবীতে পরিণত করেছে-– যে বিদ্যা স্কুলে হাতে-কলমে শিখে ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়া যায়। খুব বেশি হলে তাঁর রাজ্যকে টেনেটুনে পারফর্মিং আর্টস অবধি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। বই, পেন, লাইব্রেরি নিয়ে ব্যস্ত বিদ্বানদের পরিসরে দেবী সরস্বতীর অধিষ্ঠান। পুরোহিত আর শিল্পীদের কাছে তাঁর কদর, যেমন দেবী লক্ষ্মীর (বা তাঁর কৃপায় প্রাপ্ত সম্পদের) কদর ব্যবসায়ীদের কাছে, আর দেবী দুর্গা বা শক্তির কদর ক্ষত্রিয়দের (ভূস্বামীদের) কাছে। কিন্তু সরস্বতীর মূল কদর হওয়া উচিত আত্মজ্ঞান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। আত্মপরিচয়ের সন্ধান– আমি কে– এই প্রশ্নের নিরন্তর খোঁজই মানুষকে পশুর থেকে আলাদা করে তুলেছে। 

    পশুরা জানে, তারা কে বা কী। বা তাদের বেঁচে থাকার তাগিদেই জানতে হয়, খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক কী, খাদ্যশৃঙ্খলে তাদের অবস্থান ঠিক কোথায়। একটি ইঁদুরকে জানতেই হয় যে সে বেড়ালের খাদ্য হতে পারে, তা না হলে বেড়ালকে দেখে ইঁদুরটি কখনওই দৌড় লাগাবে না। ঠিক তেমনই, একটি দুর্বল সিংহকে জানতে হয় যে সে দুর্বল, নয়তো একটি শক্তিশালী সিংহ নিজ জায়গা বা সঙ্গিনী দখলের ক্ষেত্রে দুর্বল সিংহকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেবে। এই আত্মপরিচয় পশুদের মধ্যে বুনে দেওয়া আছে।

    মানুষের মধ্যেও হয়তো এই পরিচয় মস্তিষ্কে খচিত আছে, কিন্তু আমাদের কল্পনাশক্তি বা ভাবনা তাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। আমরা কল্পনায়, নিজেকে যেমন খুশি রূপে দেখতে পাই। সেইজন্যই সমাজের চাপিয়ে দেওয়া ভূমিকাটাকে অধিকাংশ সময়েই ঘৃণা করি। বংশ-পরম্পরা, জাতপাত কিংবা লিঙ্গের ভিত্তিতে সমাজ আমাদের ওপর যেসব কাজ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, সেগুলো করতে আমরা অস্বীকার করি। নিজেদের স্বপ্নকে অনুসরণ করার এই প্রবণতাই, রীতি আর নীতি দিয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার পথে প্রধান বাধা। 

    বেদ-এ, সবর্ত্র বাক্ বা কথার উল্লেখ রয়েছে এবং বলা হয়েছে ভাষার প্রয়োগই  নির্ধারণ করে দেয়, আমরা কে। ধরা যাক, হিন্দি ভাষায়, সম্বোধনগুলি (আপনি, তুমি, তুই) সামাজিক অবস্থান চিনিয়ে দেয়। ফরাসি ভাষাতেও তা-ই। কিন্তু ইংরেজিতে এমন কোনও বিভাজন নেই। ভাষা, যা আসলে সরস্বতীই, নির্ধারণ করে একজনের পরিচয়। অন্যরা কেমন ভাবে আমাদের সম্বোধন করেন, আমরাই বা তাঁদের কীভাবে সম্বোধন করি? 

    পশুরা খাদ্যের (লক্ষ্মী) এবং শক্তির (দুর্গা) সন্ধান করে, নিজেদের খাদ্য-সংগ্রহের জন্য এবং অন্যের খাদ্য যাতে না হতে হয়, তার জন্য। খাদ্য ও শক্তি ছাড়া কারও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সামাজিক-বিজ্ঞানে লক্ষ্মী বিষয়ে পড়াশোনা হয়ে ওঠে অর্থনীতি, দুর্গা-বিষয়ক পড়াশোনা হয় রাজনীতি। সরস্বতী-বিষয়ক পড়াশোনা হয় দর্শন। 

    একটা সময়ে, বিজ্ঞান ছিল দর্শনের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু এখন আর তা নেই। এখন বিজ্ঞান কেবল বস্তু ও পরিমাপের (সগুণ)  মধ্যে আবদ্ধ আর দর্শনের পড়াশোনার ক্ষেত্র হল নির্গুণকে (যা পরিমাপ করা যায় না) কেন্দ্র করে। আমরা নিজেদের বোঝার জন্য আর বিজ্ঞান পড়ি না। বিজ্ঞান এখন প্রযুক্তি-সর্বস্ব (তন্ত্র), যা আমাদের সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।  

    পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছে, আর সম্পদ ও শক্তি দিয়ে নিজেদের পুষ্ট করার বাসনা উৎসারিত হয় ভয় থেকে। সরস্বতী সেই জ্ঞান, সেই দর্শন, যা আমাদের সেই ভয়কে জয় করার ক্ষমতা দেয়। বিশ্বের প্রকৃত রূপ, এবং নিজেদের আসল রূপ জানার মধ্য়ে দিয়ে এই ভয়কে জয় করা যায়, আর সেই জ্ঞানই হল বেদ। বেদ বলে, ভয় থেকে তৈরি হয় অহংকার এবং ভয়কে জয় করতে পারলে মন প্রসারিত হতে পারে। তখনই  নিজের প্রকৃত সত্তাকে (আত্মা) বোঝা যায়,  যা শান্ত ও আনন্দে ভরপুর। 

    যিনি জ্ঞানের উন্মেষ ঘটান, তিনিই দেবী সরস্বতী। এমনকী ব্রহ্মা এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করলেও সেই জ্ঞানের অধিকারী নন। বরং, ব্রহ্মা পৃথিবীকে ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। এবং সেই কারণেই, পুরাণে মহাদেব ব্রহ্মার মাথা কেটে দেন। আর আমাদের মতো নিতান্ত মনুষ্যের ক্ষেত্রে, সরস্বতী এখনও একতারা বাজানো দেবী, যতক্ষণ না আমরা তাঁকে জ্ঞানের আলোয় আবিষ্কার করতে সমর্থ হচ্ছি। 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook