ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১০

    খান রুহুল রুবেল (December 11, 2021)
     

    শীতের বৃষ্টিতে বইপাড়া

    ‘যদি বর্ষে আগুনে,
    রাজা যায় মাগনে।’
                    — খনার বচন

    ডিসেম্বরের শুরুর সপ্তাহের অবিরল বৃষ্টিতে ফের ভেসে গেল দেশ। বর্ষাতেও এমন বৃষ্টি বিরল ছিল এবার। অঘ্রানের বৃষ্টি রাজাকেও ভিখারি করে, খনা এমনই বলেছিলেন। তবে, বৃষ্টিতে ক্ষণে ক্ষণে সকলেই ভেবেছিল, এ হচ্ছে শীতের দুন্দুভি। বৃষ্টির দেওয়াল পার হলেই দুর্জয় শীতের কামান ঢুকে পড়বে শহরে, বিনা যুদ্ধে বিনা রক্তপাতে। বৃষ্টি ধরে এল মঙ্গলবার, দলে-দলে লোক জ্যাকেট, উলের জামা, সোয়েটার পরে রাস্তায় বেরিয়েছে। ফলাফল, আকাশে গনগনে রোদ, গরম কাপড় পরে রাস্তায়-রাস্তায় সমস্ত শহর ঘামছে। এ-জল আমাদের অচেনা, এ-বায়ু আমাদের অচিন, এ-জলবায়ু আমাদের অজানা। জলবায়ু পরিবর্তন বুঝতে এখন আর সভা-সেমিনারে যাওয়া লাগে না। আমাদের চারধারের জল ও বায়ুই বারে বারে সে-কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা বলেছিল শীতকাল আসবে, তারা তবে মিথ্যে বলেছিল?

    ২.
    বহুদিন পর বইপাড়ায়। তবে, শাহবাগে নয়, কাঁটাবনে। বইয়ের বাজার ক্রমশই কাঁটাবনের দিকে ভারী হয়ে উঠছে। শাহবাগ বহুদিন হল পোশাকের দোকানের কব্জায়। সেই ভিড়ের ঠেলায় বইয়ের দোকান হয়ে পড়েছে মাঝারি। ধীরে ধীরে দোকানদারেরা বিকল্প জায়গা খুঁজছেন। এ-কথা ঠিক যে, আজিজ সুপার মার্কেটে এখনও বড় ও প্রধান দোকানগুলো রয়েছে, কিন্তু সংখ্যায় ও বৈচিত্রে কাঁটাবনের বইয়ের দোকানই বৃহত্তর। আজিজে যেটা সংকুচিত হয়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে আড্ডা। আগে হাত-পা ছড়িয়ে কেতাবি দুরস্তের ধার না ধেরেও এখানে-সেখানে বসে সুবিধামতো আড্ডা দেওয়া গেছে। এখন সেসব জায়গা সংকুচিত, ফলে আড্ডাও ম্রিয়মান। আড্ডা এখন বসছে বুক ক্যাফেতে। সেখানে কেতা মেনে এবং বেশ খানিকটা সংকোচ ও খরচ ব্যয় করে স্নায়ু শক্ত করে আড্ডা দেওয়া হয়। তবে, কাঁটাবন এখন আড্ডার প্রধান জায়গা, সেখানের দোকানগুলির ব্যবসাবুদ্ধি এখনও তত খোলেনি, বদলে রয়েছে মার্কেটের সামনে অনেক খোলা জায়গা। কাঁটাবনের অধিকাংশ দোকান অবশ্য প্রকাশনানির্ভর। অর্থাৎ কোনও একটি নির্দিষ্ট প্রকাশনীর নিজস্ব দোকান, অফিস বা কাজের জায়গা। ‘কবি’, ‘সংহতি’, ‘জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ’, ‘গ্রন্থ প্রকাশ’, ‘সংঘ’, ‘গদ্যপদ্য’, ‘প্রকৃতি’, ‘অগ্রদূত’— এরা এই ধাঁচের দোকান। এদের কেউ-কেউ অবশ্য অন্যদের বইও বিক্রি করে থাকে। আবার, ‘উজান’, ‘এবং কয়েকজন’, ‘বুকস অফ বেঙ্গল’, ‘আদর্শলিপি’, ‘নির্বাচিত’— এরা পুরোদস্তুর স্বাধীন বইয়ের দোকান। আমি যে-সময়ে এসেছি, তাতে বাজার বন্ধ হতে ঘণ্টাখানেক বাকি। ফলে দুটো দোকান নির্দিষ্ট করেই আড্ডা ও বই কেনা চলল। বেশ পুরনো কিছু আত্মজীবনী ও আত্মস্মৃতি পেয়ে গেলাম কয়েক জায়গায়। আজকাল আত্মজীবনী সংগ্রহের নেশা ধরেছে। মানুষের জীবন তাঁর নিজের, কিন্তু আত্মজীবনী লেখা হয় অন্যের জন্য। এ যেন আলমারিতে থরে থরে অন্যের জীবন সাজিয়ে রাখা!

    আজিজে যেটা সংকুচিত হয়ে উঠেছে সেটা হচ্ছে আড্ডা। আগে হাত-পা ছড়িয়ে কেতাবি দুরস্তের ধার না ধেরেও এখানে-সেখানে বসে সুবিধামতো আড্ডা দেওয়া গেছে। এখন সেসব জায়গা সংকুচিত, ফলে আড্ডাও ম্রিয়মান। আড্ডা এখন বসছে বুক ক্যাফেতে।

    ৩. 
    ‘শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকবো—’
    — ভাস্কর চক্রবর্তী

    রিকশাচালকদের মনস্তত্ত্ব খুব সহজ, যেদিক দিয়ে আমি গন্তব্যে যেতে চাইছি, সেদিকের কথা না বলে তাঁদের অনুরোধ করতে হবে যাতে অন্য রাস্তা দিয়ে যায়। তাহলে তিনি আপনার কথায় কর্ণপাত না করে আপনার বাক্যপ্রপাতকে উপেক্ষা করেই আপনার দাবিকৃত রাস্তায় না গিয়ে ভিন্ন রাস্তা ধরবেন। অর্থাৎ, আদতে আপনি মনে-মনে যে-রাস্তায় যেতে মনস্থ করেছিলেন সেটা দিয়ে যাবেন। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে এখন আমি ধানমণ্ডির ফাঁকা রাস্তা দিয়ে ফুরফুরে হাওয়ার ভেতর রিকশা করে যাচ্ছি। ধানমণ্ডি লেকের আশাপাশের অঞ্চলে এলেই আমার নাক অজান্তে সতর্ক হয়ে ওঠে। আশেপাশে নিশ্চয়ই ওত পেতে আছে নিশাচর ছাতিমের রাইফেল। এ-বুলেট অবিলম্বে আপনার নাসারন্ধ্র বিদ্ধ হয়ে সে-স্থান বিবশ করে দেবার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তেমন কিছুই পাওয়া গেল না। এই অঘ্রানে ছাতিম নেই! হেমন্ত কি দুষ্মন্তের বিস্মৃতির মতোই বৃথা যাবে? দূরে তুষারের মতো পাতলা ভাসমান বৃষ্টি নেমে আসছে, ফের! তবে কি সম্ভাবনা আছে শীতকালের? যারা বলেছিল শীতকাল আসবে না, তারা তবে মিথ্যে বলেছিল? ওপরে আকাশে চাঁদ, তাতে অন্তহীন উলবোনা এক বুড়ি। আমাদের কিশোরীরা কি চাঁদের বোতামের কার্ডিগান পরে ঘুরবে না পাড়াময়? আমরা কি তাদের দিকে ছুঁড়ে দেব না জোছনার নিপীড়ন? অথবা মন? 

    ‘পুরনো পকেট থেকে উঠে এল কবেকার শুকনো গোলাপ।
    কবেকার? কার দেওয়া? কোন মাসে? বসন্তে না শীতে?
    গোলাপের মৃতদেহে তার পাঠযোগ্য স্মৃতিচিহ্ন নেই।
    স্মৃতি কি আমারও আছে? স্মৃতি কি গুছিয়ে রাখা আছে
    বইয়ের তাকের মত, লং প্লেইং রেকর্ড-ক্যাসেটে
    যে-রকম সুসংবদ্ধ নথীভুক্ত থাকে গান, আলাপচারীতা?’
    — পূর্ণেন্দু পত্রী

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook