ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • খুচরো খাবার: পর্ব ৩


    অর্ক দাশ (Arka Das) (December 4, 2021)
     

    তেলেভাজা

    তেলেভাজা কাকে বলে? মহা ঝামেলার প্রশ্ন। মণ্ড মেখে, পাঁউরুটির গুঁড়ো বা বেসন মাখিয়ে, তেলে ডুবিয়ে ভেজে ফেললেই কি ব্যাপারটা তেলেভাজা হয়ে যাবে? না, বাঙালি ফুঁসে উঠবে; বাঙালি খাদ্যসম্ভারে এমন বহু ভাজা রয়েছে যাকে কোনওমতেই রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া, জলখাবার হিসেবেই পরিচিত তেলেভাজার সঙ্গে একাত্ম করে তোলা যাবে না (যেমন কুমড়োফুলের বড়া)। কলকাতার তেলেভাজা আদ্যন্ত জলখাবার; তাকে কখনই ‘স্কোয়্যার মিল’-এর অন্তর্গত করা চলবে না, মধ্যাহ্নভোজ বা নৈশভোজে তো নয়ই (ডিনারে আলুর চপ বা ফুলুরি? জাস্ট ভাবা যায় না!)। কিন্তু মহান পূর্বভারতে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায়, স্থানমাহাত্ম্যে খাদ্যাভ্যাসের নানা নিদর্শন, এবং কোনও কিছুই বেদবাক্যসম নয়। মেদিনীপুরে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনার তিন দফাতেই মুড়ি-চপ চলে, কলকাতায় নির্ঘাৎ অম্বল। বোঝো ঠেলা! 

    আমি তেলেভাজা-প্রেমী। একটা সময় ছিল যখন আমার বিকেলের জলখাবার মানেই ছিল দু-চারটে আলুর চপ আর পেঁয়াজি, বা ঝালমুড়ি; কখনও দুটোই, কখনও একইসাথে, বেশ কিছু কাঁচালঙ্কা সহযোগে। তেলেভাজা নিয়ে লেখার সুবাদে আমি এই গত কয়েক সপ্তাহ শহর জুড়ে, আর কিছুটা শহরের প্রান্তে, একটু হেঁটে বেড়ালাম, আর ঠিক আগেকার মতো না হলেও, তত্ত্বাবধানহীন, স্বাধীন হয়ে বেশ কিছু তেলেভাজা খেলাম।

    এই খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো সিদ্ধান্তে আসা গেল— এক, তেলেভাজা বেসনে মাখানো হতে হবে; দুই, সর্ষের তেল, বা সর্ষের তেলের মতো কিছু একটা কুকিং মিডিয়াম ছাড়া তেলেভাজা ভাজা হবে না। বলা বাহুল্য, এই মাগ্যিগন্ডার দেশে সর্ষের তেলের যা দাম, রাস্তায়-রাস্তায় কড়াই-ভর্তি আর যা তেলেই বেগুনি-পেঁয়াজি-আলুর চপ ভাজা হোক, তা পুরোপুরি সর্ষের তেল নয়। হ্যাঁ, তেল ফুটে আসার পর মিনিটদুয়েক সর্ষের তেলের গন্ধ বেরোয় বটে, কিন্তু ওই অবধি— এর পরের তেল-অবতারের ঠিকুজি-কুষ্ঠি বোঝা মুশকিল। 

    বড় প্রশ্নে ফেরত আসি। ‘তেলে ভাজা’, এই প্রকৌশলগত অর্থে সব চপই তেলেভাজা। কিন্তু ‘চপ’ বলতে আমরা যা বুঝি, বাঙালি মতে, তেলেভাজা তা নয়, এবং এইসব ভাজা বস্তু তেলেভাজা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত না-ও হতে পারে। বড়া হলে আলাদা ব্যাপার, কিন্তু চপ নয়, ভাজা হলেও, কেননা চপ মানেই পাঁউরুটির গুঁড়ো মাখানো হতে হবে, যাকে বলে ‘ব্রেডেড’। তেলেভাজার ‘ব্যাটার’ হতে হবে বেসন। সেই অর্থে, আলুর ‘চপ’ ঠিক যথার্থ চপ নয়, বা নামটা ভুল। 

    সোজা কথায়, তেলেভাজা বলতে আমরা যা বুঝি, তাতে এই চারটে আইটেম থাকতেই হবে— আলুর চপ, বেগুনি, পেঁয়াজি আর ফুলুরি; তেলেভাজার চারমূর্তি, ‘বিগ ফোর’। যে-কোনও তেলেভাজার দোকানে আর যা-ই পাওয়া যাক বা না যাক, এই চারটে বেসনে ভাজা পদ থাকতেই হবে, সঙ্গে আরও অভিনব কিছু, যদি সম্ভব হয়। তাই ধনেপাতার বড়া, ক্যাপসিকাম-এর চপ, লঙ্কার বড়া, টমেটোর চপ, এবং বিরল, অনবদ্য পলতার বড়া সবই বাঙালি ভাজার মাল্টিভার্সের এক-একটা চরিত্রবিশেষ। 

    উত্তর কলকাতায় নেতাজির আশীর্বাদধন্য লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ-এর ঐতিহাসিক তেলেভাজার দোকানের আলুর চপ যেমন বিখ্যাত, তেমনই বিখ্যাত ধোঁকার বরফি; আজ কিনে আজই খাওয়া, বা কালকের ধোঁকার ডালনার জন্য বাড়ি নিয়ে যাওয়া, দুই-ই চলে। তেলেভাজায় মাংস বা মাছের পুর নৈব-নৈব চ; বেসন মাখানো হলেও দক্ষিণী উদিপি রেস্তোরাঁয় উপলব্ধ ‘আলু বড়া’ তেলেভাজা নয়, যেমন তেলেভাজা নয় ‘বড়া-পাও’এর আলু বড়া। দেখা যাচ্ছে, গোটাটাই স্বাদ-বিশেষে স্থির হয়।  

    উত্তর কলকাতায় নেতাজির আশীর্বাদধন্য লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ-এর ঐতিহাসিক তেলেভাজার দোকান

    কলকাতা থেকে বেরিয়ে এলেই তেলেভাজার স্বাদ, আকার এবং পাকপ্রণালী বদলে যায়। মেচেদার আলুর চপ ভর্তি থাকে কাটা নারকোলে, এবং বিক্রি হয় ‘নারকোল-আলুর চপ’ নামে। শিলিগুড়ির হিল কার্ট রোডে, শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর পোস্ট-অফিসের সামনে ঠেলাগাড়িতে, তেলেভাজা আসে কাসুন্দি-সহযোগে (অবশ্য এখন সূর্য সেন স্ট্রিটে কালিকা-তেও), কেননা বাকি পদের সঙ্গে এখানে থাকে ডিমের ডেভিল, চিংড়ির চপ এবং মাছ-মুরগি আর বেশ কিছু রকমের সবজির চপ। বহরমপুর শহরে গ্রীষ্মকালে আম কাসুন্দি পাওয়া যায় যে-কোনও চপের দোকানে; হাতের তালুর সাইজের পেঁয়াজি আর ফুলকপির বড়া শীতকালে আবশ্যক। 

    ইতিহাসের কথায়-কথায় তেলেভাজার গোড়ার কথা ভাবতে বসি। তেলেভাজার কোনও নথিভুক্ত ইতিহাস নেই, নেই এ সম্পর্কে কোনও গবেষণাকেন্দ্রিক লেখা। গৌণ খাবার হিসাবে বাংলা সাহিত্যে ছিটেফোঁটা উল্লেখ থাকলেও সেটা গবেষণামূলক বিষয়ে উত্তীর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু মনুষ্যজাতির খাদ্যাভ্যাস সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত, এবং যে-কোনও শহরের অর্থনৈতিক অবস্থার অসাধারণ, আকর্ষণীয় আয়না– বিশেষত যদি আমরা পথচলতি খাবার, জনসাধারণের সুলভ জলখাবারের কথা ধরি। 

    তেলেভাজার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই হাতে তৈরি; বেসন ফেটানো থেকে শুরু করে সবজি ইত্যাদি কাটা, সেদ্ধ করা, মাখা এবং তার পুর তৈরি করা, তারপর বেলে কড়ায় ফুটন্ত তেলে ভাজা, পুরোটাই ‘হ্যান্ড-মেড’। যুক্তিমতে, চ্ছুত-অচ্ছুৎ মানা কোনও ব্রাহ্মণই বিকেলের ফুলুরির লোভে চাঁড়ালের হাতের ছোঁয়া খাবেন না, কেননা খেলে গঙ্গাস্নান করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক ছিল। আজকে তেলেভাজার যে জনপ্রিয়তা দেখা যায়, সেটা একমাত্র এইসব প্রাচীন রীতি উঠে যাওয়ার পরই সম্ভব হয়েছে।

    ইতিহাসে স্বামী বিবেকানন্দ এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর তেলেভাজা-প্রীতির কথা পাওয়া যায়। বিধান সরণির ওপর, স্কটিশ চার্চ স্কুলের কাছে লক্ষ্মী সাউ-এর দোকান ১০০ বছর পার করেছে এই সেদিন; শুধুমাত্র নেতাজির ব্র্যান্ডিং-এ রমরমিয়ে চলেছে ব্যবসা। প্রতি বছর ২৩ জানুয়ারি এই দোকান থেকে তেলেভাজা বিতরণ করা হয়ে থাকে। ভোজনরসিক স্বামীজি পছন্দ করতেন তামাক, চা, আইসক্রিম, আর বেগুনি।   

    কিন্তু তেলেভাজা কবে, এবং কীভাবে, বঙ্গদেশে জনসাধারণের জনপ্রিয় জলখাবার হয়ে উঠল, বিশেষত উনবিংশ শতাব্দীর জাত-পাত, ছোঁয়াছুঁয়ি, পাপপুণ্য, সাত্ত্বিক-নিরামিষাশী প্রভৃতি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন বঙ্গদেশে? কালীপ্রসন্ন সিংহ-এর ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’‌য় (প্রথম প্রকাশিত ১৮৬১) কলকাতায় তেলেভাজার ঠিকানা মেলে না। স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ১৮৬৩ সালে। লেখক-শিল্পী-খাদ্যঐতিহাসিক অমিতাভ মালাকার মনে করেন, তেলেভাজার জন্ম এইসব বজ্রকঠিন নিয়মাবলি ‘সমাজে যখন প্রায় উঠে যাওয়ার মুখে’, অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। তেলেভাজার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াই হাতে তৈরি; বেসন ফেটানো থেকে শুরু করে সবজি ইত্যাদি কাটা, সেদ্ধ করা, মাখা এবং তার পুর তৈরি করা, তারপর বেলে কড়ায় ফুটন্ত তেলে ভাজা, পুরোটাই ‘হ্যান্ড-মেড’। যুক্তিমতে, চ্ছুত-অচ্ছুৎ মানা কোনও ব্রাহ্মণই বিকেলের ফুলুরির লোভে চাঁড়ালের হাতের ছোঁয়া খাবেন না, কেননা খেলে গঙ্গাস্নান করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক ছিল। আজকে তেলেভাজার যে জনপ্রিয়তা দেখা যায়, সেটা একমাত্র এইসব প্রাচীন রীতি উঠে যাওয়ার পরই সম্ভব হয়েছে।

    ভারতবর্ষে খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে বর্ণপ্রথার একটা নাড়ির যোগ রয়েছে, এবং সময়ের সাথে-সাথে এক্ষেত্রেও একটা আমূল পরিবর্তন চোখে পড়ে। রাস্তার তেলেভাজা নয়, কিন্তু আজও কলকাতায় কিছু দোকানে ‘নিরামিষ তেলেভাজা’ পাওয়া যায়, যেমন লক্ষ্মী সাউ-এর ঠিক উল্টোদিকে ‘রক্ষাকালী তেলেভাজা’-য়। একটা সময় ছিল, যখন তেলেভাজা মানেই ছিল নিরামিষ – পেঁয়াজ-রসুন বাদে তৈরি। পেঁয়াজির প্রবর্তনেই সাধারণ মানুষের খাদ্যাভাসে আমিষ-নিরামিষের বদলের একটা সূত্র রয়ে যায়, কিন্তু তা কখনওই অনুসন্ধান করা হয়নি, এবং আজ বোধহয় তা আর সম্ভব নয়। 

    তেলেভাজার দোকানের অবস্থান নিয়ে মালাকার আরও একটি অদ্ভুত তথ্য তুলে ধরেন। দেখা যায়, কলকাতায় অধিকাংশ তেলেভাজার দোকানগুলো (রাস্তার অস্থায়ী বিক্রেতাসহ) হয় কোনও বেশ্যাপল্লী বা পানশালার রাস্তায় পড়ে— সোনাগাছির পথে লক্ষ্মী সাউ বা মৌচাক, হাড়কাটা গলির পথে কালিকা, কালীঘাট বুড়ি গঙ্গার পথে রাসবিহারী এভিনিউ-এর ছোট-ছোট দোকান; খালাসিটোলা-বারদুয়ারি-গড়চা-টালিগঞ্জ ব্রিজের বাংলার ঠেকের বাইরে তেলেভাজা স্টল। ‘তেলেভাজায় পেঁয়াজ-রসুনের প্রচলন বাঙালি ভদ্রলোকের পক্ষে আশীর্বাদসম; বাড়ি ফেরার পথে একপাত্তর বা একটু বেশ্যাবাড়ি ঘুরে আসার অশালীন গন্ধ ঢাকার পক্ষে মোক্ষম অস্ত্র হয়ে উঠতে পারত পেঁয়াজ-রসুনে ঠাসা তেলেভাজা’, মালাকার বলেন। 

    তেলেভাজার ইতিহাসের অন্যদিকে রয়েছে লিঙ্গ। আজকের দিনেও, উত্তর কলকাতায় মহিলারা তেলেভাজা বিক্রি করছেন, বিশেষত নামজাদা দোকানে, এমন দৃশ্য বিরল। প্রধানত ওড়িশা-অভিবাসী পুরুষেরাই এই দোকানগুলোয় প্রথম থেকে শেষ অবধি তেলেভাজা বিক্রি করেন এবং হিসাবপত্র সামলান। নারীবর্জিত এই পদ্ধতির উৎস সম্ভবত স্ত্রীদ্বেষী রজঃসম্বন্ধীয় কিছু প্রাচীন আচারে, এই অভাগা দেশে যা এখনও ধ্বংস করা যায়নি।

    তেলেভাজা ব্যবসায় মহিলাদের দাপট দেখা যায় শহরের দক্ষিণ প্রান্তে। গড়িয়াহাট, রাসবিহারী, বেহালা, যাদবপুর, কসবা, গড়িয়া, সোনারপুর, এবং অবশ্যই সল্টলেক-বিধাননগরের পাড়ার মোড়ে-মোড়ে একক তেলেভাজা-মাসির দোকানে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরই মেলে হাতে-গরম আলুর চপ। তেলেভাজা-দম্পতির ক্ষেত্রেও, পুরুষ শুধুমাত্র গ্রাহকের হাতে তেলেভাজা তুলে দেওয়া এবং গুনে পয়সা নেওয়ার কাজই সামলান; ভাজাভুজির আসল কাজটা করে যান স্ত্রী। ‘মাসির হাতের তেলেভাজা’র স্বাদই আলাদা, এ-কথা তেলেভাজা-প্রেমী মাত্রেই বলে থাকেন।  

    দোকানি, এলিট, ঐতিহ্যশালী তেলেভাজার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে সান্ধ্যবাজারের তেলেভাজা। বিকেল নামার সাথে-সাথে স্টেশনের ধারে গজিয়ে ওঠা, যেন অন্ধকার ফুঁড়ে ওঠা এই বাজারের তেলেভাজা তৈরি হয় দিনের ছাঁট সবজি দিয়ে— যাদবপুর, দমদম, বাঘা যতীন, বালিগঞ্জে। গুণগ্রাহীরা বলেন যে এই তেলেভাজার স্বাদ একেবারেই আলাদা।     

    এই তেলেভাজার দোকানগুলোর মাসিদের কোনও নাম নেই। কোনও অদ্ভুত মায়ায়, এই সম্পূর্ণ নামগোত্রহীনতাই যেন তেলেভাজাকে অনবদ্য করে তোলে। পছন্দের ফুচকাওয়ালার নাম অনেকে জানেন, কিন্তু পছন্দের তেলেভাজা বিক্রেতার পরিচয়? অতিমারীর চোখ-রাঙানি সত্ত্বেও যে শত-শত তেলেভাজা-বিক্রেতা প্রতি সন্ধ্যায় শহরের ফুটপাথে-ফুটপাথে ব্যবসা করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে নাম জানি আমরা একটা কালিকার, একটা লক্ষ্মী সাউ-এর। বাকিরা নামহীন; ‘দাদা’, ‘কাকা’, ‘মাসি’। 

    এর একটা যুক্তি আছে বটে। খুব খুঁতখুঁতে এবং মাত্র একটা দোকান থেকেই খান এমন লোক না হলে, তেলেভাজা খেতে যাঁরা ভালবাসেন তাঁরা পায়ে হেঁটে শহরে ঘুরে বেড়ান, এবং একটা নয়, তিনটে বা চারটে জায়গা থেকে তেলেভাজা কিনে খান। শ্রেণিরও তারতম্য নেই — রিকশাওয়ালা থেকে মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ, ডিশ অ্যান্টেনা সারাইওয়ালা থেকে অফিস একজিকিউটিভ, সাংবাদিক থেকে চিন্তক বা শিল্পী, এমনকী খুব স্বাস্থ্য-সচেতন ফিটনেস ফ্যানাটিক বেগুনি দিয়ে একটা চিট্‌ মিল করে ফেলেন।   

    রাস্তার খাবারের বিক্রেতারা নামহীন হয়েই থাকেন, সেটাই খুচরো খাবারের দস্তুর, কিন্তু তেলেভাজার ক্ষেত্রে এই নামগোত্রহীনতাটা আমি একটা ব্যক্তিগত রোমান্টিকতার পর্যায় নিয়ে চলে গেছি। আমার মনে হয় এই নামহীনতা যেন একটা বিশাল মেট্রোপলিসে একটা অজ্ঞাতনামা জীবনের মেটাফর। মাঝে-মাঝে যখন অভ্যস্ত ঘনিষ্ঠতা, সামাজিক নিয়মাবলি, গঠন, পরিধি বা শহুরে-জীবন দাঁত কিড়মিড় করে, নামগোত্রহীন এক তেলেভাজা মাসির কাছে থেকে কেনা, গতকালের বাসি খবরের কাগজে মোড়া একটা পেঁয়াজি হাতে নিয়ে আমি ময়দানে চলে যাই। এক-একটা কামড়ে যেমন ভাজা বেসনের পরত সরে যায়, তেমনই খসে পড়ে জীবন আর জীবিকানির্বাহের অজুহাতে পরে ফেলা এক-একটা চরিত্রের মুখোশ। 

    ছবি সৌজন্য: লেখক

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook