পরিচালনা — টিসকা চোপড়া
অভিনয় — টিসকা চোপড়া, অর্জুন মাথুর, চিত্রাশি রাওয়াত
চিত্রনাট্য — টিসকা চোপড়া, নম্রতা শেনয়
দৃশ্যগ্রহণ — শীর্ষ রায়
আবহসঙ্গীত — রাজা নারায়ণ দেব
সম্পাদনা — অনন্ত সিংহ, কোনার্ক সাক্সেনা
অভিনেতা কখন অভিনয় করা বন্ধ করেন? মঞ্চ বা পর্দা থেকে সরে এলে কি তিনি অভিনয় থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যান? জীবনের মঞ্চে, জনসাধারণের চোখে তাঁর জীবন নিয়ে যে কৌতূহল, তার অবসান ঘটাতে কখনও কি, এক মুহুর্তের জন্যেও, অভিনয় বন্ধ করা সম্ভব? এমন কিছু প্রশ্ন, এবং আরো কিছুর, উত্তর দিলেন ‘রুবারু’-র পরিচালক, লেখক, সহ-চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা টিসকা চোপড়া। কথোপকথনে অর্ক দাশ।
‘যৌবন নিয়ে মাতামাতি এবার থামুক’
‘রুবারু’ তৈরির অনুপ্রেরণা…
অনুপ্রেরণা অভিনেতার জীবন; আমার দেখা শত-শত অভিনেতা, এবং আমার নিজের জীবনও। অনুপ্রেরণা ছিল মঞ্চ বা পর্দার আড়ালে অভিনেতার যে জীবন আমরা দেখতে পাই না, সেটাকে তুলে ধরা। একটা পারফর্ম্যান্সের পেছনে যে কত বেদনা লুকিয়ে থাকতে পারে, সেটাই ‘রুবারু’-র মূল ভিত্তি।
ভার্জিনিয়া উল্ফ-এর জীবন এবং ‘রুবারু’…
সাহিত্যের সঙ্গেএকটা সংযোগ রয়েছে এই ছবিতে। এডওয়ার্ড অলবি-র ‘হু ইজ অ্যাফ্রেইড অফ ভার্জিনিয়া উল্ফ’ নাটকের কিছু সূত্র রয়েছে ‘রুবারু-তে, যেমন রয়েছে (নায়িকা) রাধা মালহোত্রার জীবনের সঙ্গে ভার্জিনিয়া উল্ফ-এর যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনের তুলনা। ‘রুবারু’ নাটকে রাধা লেখিকা ‘শামা’র চরিত্রে অভিনয় করেন। অস্থির জীবনের শেষে উল্ফ আত্মহত্যা করেন। রাধা মালহোত্রার চরিত্র নিজের জীবনযুদ্ধের সম্মুখীন হন। ‘রুবারু’ মানেই তো মুখোমুখি। কিন্তু নিজস্ব লড়াই লড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও হাল ছাড়েন না।
‘রুবারু’ শেষ হয় আশার কথা শুনিয়ে; কোনও বিকল্প উপসংহার ভাবা হয়েছিল কি…
না, গল্পটা প্রথম থেকে এই রকমই ভেবে নেওয়া হয়। আমি মনে করি শিল্পের একটা দায়িত্ব রয়েছে এবং সেটা উত্তরণের পথেই নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। আমি নিজে খুব একটা নৈরাশ্যবাদী কাজ পছন্দ করি না। রাধার জীবন-সংগ্রামের শেষে একটা নির্দিষ্ট ফলাফল দেখানোর প্রয়োজন করেছি, এবং সেটা ইতিবাচক হওয়াটা জরুরি ছিল।
অভিনেতা থেকে পরিচালক হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত…
আমি এর আগে কখনোই, কোনও ফর্ম্যাটেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু পরিচালনা করিনি। তাই এটা সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হল। মজার কিছু ঘটনাও ঘটে; খুবই কঠিন একটা দৃশ্য শুট করার পর আমি বেশ কিছুক্ষণ নিজের চেয়ারে বসে থাকি, কিন্তু পরবর্তী শট তৈরি আর হয় না। সবাই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারি, আমিই তো পরিচালক, আমাকেই তো সবাইকে নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী শট রেডি করতে হবে!
নিজে পরিচালনা এবং অভিনয় না করলে ‘রুবারু’-র গল্প আমি বলে উঠতে পারতাম না; আমাকে গোটাটাই নিজের মতো করে বলতে হত। তাই পরিচালনা থেকে চিত্রনাট্য, অভিনয়— সব কিছুর দায়িত্ব নিজেই নিয়েছি। কারণ এখানে বেশ কিছু অংশ আমার নিজের জীবনের ওপর ভিত্তি করেই লেখা।
‘রুবারু’-র প্রধান বিষয় বয়স; যৌবনোত্তীর্ণ অভিনেত্রীর বয়স বাড়ার সাথে-সাথে প্রত্যাখ্যান এবং নিরাপত্তাহীনতার ভয়…
দুঃখের বিষয়, আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি যা এখনও শূন্যগর্ভ; রূপ এবং যৌবন নিয়ে মেতে থাকি আমরা। বয়স-কে তার মূল্যের চেয়ে বহুগুণ বেশি প্রাধান্য দিই। জোসেফ ক্যাম্পবেল-এর ‘দ্য হিরো উইথ আ থাউজ্যান্ড ফেসেস’ নামের পুরাণভিত্তিক লেখায় আমরা দেখতে পাই বয়সের উদযাপন; শিশুর শারীরিক শক্তি নেই, আছে সরলতা, যুবকের আছে শক্তি এবং উদ্যম, নেই অভিজ্ঞতা, বৃদ্ধ বিচক্ষণ। আমাদের সমাজে, বিশেষত সিনেমাজগতের সমাজে, সবাই যেন যৌবনকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়; পঞ্চাশ বছরের মধ্যবয়স্ক অভিনেতা প্রাণপণে বয়স লুকিয়ে ৩০ বছরের যুবক সাজতে ব্যস্ত। আর বয়স নিয়ে এই মাতামাতি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। অথচ আমার নিজের কিন্তু মনে হয় আমার পঁচিশ বছর বয়সের তুলনায় আমি এখন অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। ‘রুবারু-তে এই বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।
‘রুবারু’-তে আত্মহত্যা একটা থিম। ‘রুবারু’ গত বছর তৈরি, যে বছর জুন মাসে সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহনন সারা দেশে সাড়া ফেলে দেয়…
এই বিষয়ে এটুকুই বলতে পারি যে, শিল্প এবং জীবন একে অপরের প্রতিবিম্ব। অভিনেতাদের যে জীবন সাধারণ দর্শক পর্দার বাইরেও দেখতে পান, সেটাও কিন্তু সত্য নয়— যে-টুকু আমরা দেখাতে চাই, সেটুকুই দেখতে পাই। ‘রুবারু’-তে এটাও একটা স্তর। আমি দেখাতে চেয়েছি একটা সত্যিকারের ‘বিহাইন্ড দ্য সিন্স’ কেমন হতে পারে। এটাও দেখাতে চেয়েছি যে শিল্পী তো আর পাথর নন, তাঁদেরও কষ্ট হয়। দর্শকের কঠিন কথায়, রুঢ় সমালোচনায় তাঁরাও ভেঙে পড়তে পারেন। শুধু এই, যে সেই ভেঙে পড়া দেখা যায় না, দেখানো হয় না। রাধার চরিত্রের ব্যথা এবং তাঁর মানসিক অবসাদ এবং অসুস্থতার মাধ্যমে সেই অনুভূতি দেখানোর প্রচেষ্টা রয়েছে ‘রুবারু-তে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা…
বাকি কাজের সঙ্গে এখন আর শর্ট ফিল্ম নয়, একটা পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র পরিচালনা করছি।