ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • রাখি কি সৌগন্ধ


    দেব রায় (November 6, 2021)
     

    নীরদ সি চৌধুরীর লেখায় পড়েছি, গেল শতকের তিনের দশকে লেখক নারকেলডাঙা থেকে হ্যারিসন রোডের দিকে আসছিলেন। পথে জটলা, তুমুল উত্তেজনা। এক কিশোরীর সঙ্গে অসভ্যতা করার জন্য এক যুবককে সবাই ভর্ৎসনা করছে। যুবকটি শেষমেশ মরিয়া হয়ে বলে, সে আসলে নিজের বোনের মতো মনে করে কিশোরীটির স্তনবৃন্তে ‘কুড়কুড়ুনি’ দিয়েছিল। পাড়াতুতো বোনের সঙ্গে সবাই এরকম অসভ্যতা করে, এমনটা কিন্তু নয়। তার আগে বলে নেওয়া ভাল, অনাত্মীয়াকে বোন বলে ভাবা হয় কেন। পাশ্চাত্যে নারী-পুরুষের সম্পর্ক-সমীকরণ অনেকান্ত। আমাদের বাইনারি ছাড়া পোষায় না। ভাল-মন্দ, দেবী-বেশ্যা, প্রেমিকা (অর্থাৎ কামনার)-বোন (নিষ্কাম, অকলুষ)। তাই বাস্তবে পাড়াতুতো বোন মানে শিব্রাম-কথিত কিসতুতো বোন হলেও হতে পারে, রুপোলি পর্দায় পাড়াতুতো মাস্তান দাদার ভূমিকা দেবতুল্য। এমনিতে হয়তো ধেনো খাওয়া ছেনো মাস্তান, কিন্তু স্নেহের কাঙাল। সোনার হৃদয়। সঙ্গে কড়ক চায়ের মতো সড়ক-ছাপ সংলাপ, ‘গরিব হতে পারি কিন্তু মা-বোনদের ইজ্জত দিতে জানি।’ আর সংখ্যালঘু গুন্ডা হলে কেন কে জানে, বাংলা ছবিতেও সে ‘বহিনের জন্য জান কুরবান’ করতে রেডি।

    এন চন্দ্রা পরিচালিত হিন্দি ছবি ‘অঙ্কুশ’ এই গোত্রের ছবির মধ্যে অগ্রগণ্য। শিক্ষিত বেকার অর্জুন মহাভারত পড়ার ভান করে পাশের বাড়ির যুবতীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে জানলা দিয়ে তাকায়। আবার সেই অর্জুনই পাড়ার মেয়েকে বেপাড়ার মাস্তান-দল টিজ করলে রুখে দাঁড়ায়। ইজ্জত কি সওয়াল যে। শিভালরি, রাইভালরি মিলেমিশে ভারী দায়িত্ব কাঁধে। পাড়ার মেয়েকে বেপাড়া থেকে এসে টিজ করবে? কেন, আমরা কি হাতে চুড়ি পরে বসে আছি? রীতিমতো মাচো মস্তান। ওই ছবিতেই লালিয়া, বাপ মা’কে অল্প বয়েসে হারিয়েছে, আর বাড়িওলার বদমায়েশিতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটাও হারিয়েছে সম্প্রতি। বিপদের ওপর বিপদ। সিনেমা হলের পাশে টিকিট ব্ল্যাক করতে গিয়ে পুলিশের হাতে রামধোলাই খেয়েছে। আরও পিটুনি কপালে ছিল। সদ্য পাড়ায় আসা অনীতা পুলিশের হাত থেকে বাঁচায়। বাড়ি নিয়ে লালিয়ার ক্ষতস্থানে শুশ্রূষার প্রলেপ দেয়। গরম দুধের গ্লাস এগিয়ে দেন অনীতার স্নেহময়ী মা। লালিয়া, জীবনের প্রতি পদে হ্যাটা হওয়া লালিয়া, মার খাওয়া লালিয়া, এই স্নিগ্ধতা রাখবে কোথায়? তাই ওদের চারজনের দলটা, রবীন্দ্র, শশী, অর্জুন আর লালিয়া— আস্তে আস্তে অনীতা আর তার মায়ের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে থাকে। চূড়ান্ত সিনিক অবস্থান ছেড়ে মানবিক, কিছুটা আস্তিক হয়ে ওঠে। তাই অনীতা ক্ষমতাধর অমানুষদের হাতে ধর্ষিতা হয়ে আত্মঘাতী হলে, এবং আসামিরা প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেলে, আইন নিজেদের হাতে না তুলে নিয়ে ওদের আর পরিত্রাণ থাকে না। একে একে অপরাধীদের খুন করে রবীন্দ্র (নানা পাটেকরের স্মরণীয় অভিনয়) ও তার বন্ধুরা। এবার কিন্তু বিচার-ব্যবস্থায় কোনও ত্রুটি ঘটে না। চারজনেরই মৃত্যুদণ্ড হয়। অনীতার মায়ের কাছে শোনা প্রার্থনাসঙ্গীত বুকে নিয়ে ফাঁসির দড়িতে ঝোলে ওরা চারজন। স্নেহের কাঙাল, ভালবাসার কাঙাল চারজন পথভ্রষ্ট যুবক।

    ফিল্মের মতো বাস্তবেও স্নেহ ভালবাসার খোপ থেকে হৃদয় চালান হয় প্রেমের খোপে। এবং সেটা মোটেই আশ্চর্যের কিছু না। পরপর কয়েক বছর ভাইফোঁটা নিয়ে পাড়াতুতো বোনকে চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করেছে, এমন ঘটনা বিরল নয়। ছোটবেলায়, ইস্কুলে এক কাঠি-আইসক্রিমওলা তার লেখা চিঠি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। তাতে মোদ্দা লেখা ছিল, ভগবানকে আশীর্বাদ, আমার তুমি বোন হও। মন কোন তুরীয় পর্যায়ে গেলে খোদ ভগবানকেও আশীর্বাদ করা যায়, তা ফিলজফি দিয়ে কিছু কিঞ্চিৎ বুঝতে হয়তো পারি

    আসলে ফিল্মে পাড়াতুতো মাস্তান দাদা সংক্রান্ত ট্রোপ টেমপ্লেট মোটের ওপর এর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। বিপথগামী যুবক, উদ্ধত, বেপরোয়া। কিন্তু পাতানো বোনের রাখি কি সৌগন্ধ অথবা ভাইফোঁটার দিব্যি, জান লড়িয়ে দেবে। সবটা যে সবসময় খোপ-দুরস্ত থাকে এমনটা কিন্তু না। সে ফিল্ম হোক বা বাস্তব জীবনে। রামগোপাল ভার্মার ‘সরকার’ ছবিতে শংকর নাগরে ( অভিষেক বচ্চন) অবন্তিকাকে ( তনিশা মুখার্জি) এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলির একজন বলেই জানে, তুতো-বোন যেন। বিদেশে গিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় আধুনিকা সুন্দরী পূজার (ক্যাটরিনা কাইফ) সঙ্গে। ঘরেলু অবন্তিকা যে যে মনে মনে তাকে ভালবেসে ফেলেছে, সে টেরও পায়নি। কিন্তু ক্যাটরিনা অর্থাৎ পূজা দেশে ফিরে সুভাষ নাগরে (অমিতাভ বচ্চন) ও তার পরিবারের কীর্তিকলাপ জেনে এবং শংকর ওই পরিবারতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বুঝতে পেরে, মানে মানে বিদায় নেয়। শংকরও বুঝতে পারে ‘সরকার’-এর উত্তরাধিকার বজায় রাখতে গেলে, পূজা নয়, নিবেদিতপ্রাণ অবন্তিকাই কাম্য। ‘সরকার রাজ’ -এ অবন্তিকাকেই দেখি শংকর নাগরের সহধর্মিনী রূপে।

    ফিল্মের মতো বাস্তবেও স্নেহ ভালবাসার খোপ থেকে হৃদয় চালান হয় প্রেমের খোপে। এবং সেটা মোটেই আশ্চর্যের কিছু না। পরপর কয়েক বছর ভাইফোঁটা নিয়ে পাড়াতুতো বোনকে চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করেছে, এমন ঘটনা বিরল নয়। ছোটবেলায়, ইস্কুলে এক কাঠি-আইসক্রিমওলা তার লেখা চিঠি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। তাতে মোদ্দা লেখা ছিল, ভগবানকে আশীর্বাদ, আমার তুমি বোন হও। মন কোন তুরীয় পর্যায়ে গেলে খোদ ভগবানকেও আশীর্বাদ করা যায়, তা ফিলজফি দিয়ে কিছু কিঞ্চিৎ বুঝতে হয়তো পারি, কিন্তু ভগিনী-প্রেমের ওই চিঠিকে সেই কাঠি-আইসক্রিমওলা কেন ‘লাভ লেটার’ বলেছিল, আজও তার তল পেলাম না।

    ‘জন অরণ্য’ ছবিতে সিনেমার সোমনাথ আর তার বন্ধু সুকুমারের বোন কণা একদম এই ছকের বাইরে। শিক্ষিত বেকার সোমনাথ মরিয়া হয়ে জীবন নিয়ে সাপলুডো খেলতে বসেছে। অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতে নেমে মধ্যবিত্ত মূল্যবোধ খসে পড়ছে ধীরে ধীরে। ওপরে ওঠার সিঁড়ি মিলে যাচ্ছে ঠিক ঠিক। কিন্তু পদে পদে ভয়াল সাপ হাঁ করে আছে গিলে খাওয়ার জন্য। এক শাঁসালো মক্কেলকে তুষ্ট করার জন্য, যাকে বলে, ‘মেয়েছেলে’ জোগান দিতে হবে। আদর্শবাদী সোমনাথের কাছে যা অকল্পনীয়। কিন্তু গরজ বড় বালাই। শেষমেশ যে মেয়েটি জোগাড় হয় মক্কেলের মনোরঞ্জনের জন্য, সভয়ে সোমনাথ লক্ষ করে, সে তার বন্ধু সুকুমারের বোন কণা। সুকুমারও শিক্ষিত বেকার। চাকরি না পেয়ে ট্যাক্সি চালাচ্ছে। সুকুমারের বোন কণা বেছে নিয়েছে আদিমতম পেশাটি। বিবেক-যন্ত্রণায় তাড়িত সোমনাথ কণাকে বলে, তাকে যেতে হবে না ওই মক্কেলের কাছে। কণাকে এমনিই টাকা দিতে চায় সোমনাথ। কণা তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। আর প্রত্যেকবার সোমনাথের মুখে ‘কণা’ ডাক শুনে উদ্ধতভাবে উত্তর দেয়, আমার নাম যূথিকা। অর্থাৎ পূর্বাশ্রমকে অস্বীকার করে বেরিয়ে এসেছে পিছুটানহীন। কণা ঢুকে যায় বিলাসবহুল হোটেলের ঘরে। সোমনাথ বাড়ি ফিরে বাবাকে জানায়, অর্ডারটা পেয়ে গেছে সে। তার আদর্শবাদী বাবা স্বস্তির শ্বাস ফ্যালে। কিন্তু এক বিপন্নতার, বিষণ্ণতার ময়াল সাপ তাকে গ্রাস করতে আসে যেন। তবে তা সাময়িক। এরপরে হয়তো অভ্যাস হয়ে যাবে।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook