ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ৯


    খান রুহুল রুবেল (November 19, 2021)
     

    আগুনপাখি ও গোলাপ

    And it’s hard to hold a candle
    In the cold November rain’
                                      — Guns N’ Roses

    যারা বলেছিল শীতকাল আসবে না, তারা মিথ্যে বলেছিল। বার্ষিক গতির কারণে পৃথিবীর এ-গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে রয়েছে। আবহাওয়ার স্বভাব এখন শ্রোয়ডিঙ্গারের বেড়ালের মতো । সে-বেড়াল যেমন নিজেও জানে না সে জীবিত না মৃত, তেমনি ঢাকার আবহাওয়াও জানে না এখন শীত না গরম। বৈদ্যুতিক পাখা চালালে কিছু পরেই বেশ শীত লাগতে থাকে, পাখা বন্ধ করে দিলেই বাতাসের অশ্রুর মতো ঘাম জমে ওঠে। তবে, শীতের চাইতে গরমের দাপটই বেশি। এরই মধ্যে আচমকা, কোনও পূর্বসংকেত ছাড়াই অতর্কিতে গত শনিবার হামলা চালাল বৃষ্টি। অফিস ফেরত চিমসে থাকা মুখ ও হাতে বুলেটের মতো বিদ্ধ হল শান্ত জলকণা। ঢাকায় শীতের লক্ষণচিহ্ন হচ্ছে চিতই পিঠা। রাস্তার দু’ধারে, ফুটপাথে, বাজারের সন্নিকটে, যেখানেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, সেখানে গেলেই দেখা যাবে উপগ্রহের মতো অজস্র চিতই পিঠা লোকের হাতে-হাতে ঘুরছে। বছর দশ-পনেরো আগেও চিতই পিঠা এমন নাগরিক হয়ে ওঠেনি। তখনও শহরে চিতই পিঠা বিক্রি হত, তবে তা কিছু-কিছু জায়গায়। চিতই পিঠা শহরে তখনও মূলত শ্রমজীবী মানুষের জলখাবার হিসেবেই ছিল। শিক্ষাঙ্গনের আশেপাশে ভ্যানগাড়ির ওপর অস্থায়ী চুলা আর হরেক ভর্তার পসরায় শিক্ষার্থীরাও আগ্রহ করে খেতেন। এখন এটা বিকেলের সুলভ নাশতায় পরিণত হয়েছে। শহরে চিতই পিঠা বানাবার আয়োজন সুলভ নয়। ফলে ধনীর বাড়িতেও এই ফুটপাথের চিতই রাজকীয় সম্মান নিয়ে ঢুকে পড়ছে। চিতই পিঠার সাথে আর যে-দুটো পিঠা সহযাত্রী হিসেবে থাকে, তা হল মালপোয়া ও ভাপা পিঠা। তবে তেলে ভাজা ও ভেজাল গুড়ের ভয় থাকায় সেগুলোর জনপ্রিয়তা কম। একটা চিতইয়ের দাম পাঁচ টাকা। এর সাথে অন্তত ১০ রকমের ভর্তা সাজানো থাকে। যে-কোনও ভর্তাই ইচ্ছেমতো নেওয়া যায়, কোনও বাধানিষেধ নেই। গরম পরিপাটি করে চোখের সামনে চুলোয় তৈরি করা হয়। ফলে, রোগ-বালাইয়ের ভয়ও কম। 

    এই বৃষ্টিতে বড় মুশকিলে পড়েছে রাস্তায় বসত করা মানুষের দল। এমনিতে হিম, এরপর বৃষ্টি। হিম তাড়ানোর উপায় আগুন জ্বালানো, কিন্তু বৃষ্টিতে শহরের শুকনো পাতারা ভিজে একশা! তবু তাই কুড়িয়ে আগুন জ্বালানোর আয়োজন চলে। বৃষ্টি থেকে নিজেদের আড়াল করবে কী, হাতের মধ্যে আগুনকে জীবন্ত রাখাই দায়! আগুন কি তবে পোষমানা পাখি? বড় যত্নে তাকে লুকিয়ে রেখেছে?

    ২.
    কিছুক্ষণ আগেই খবর পাওয়া গেল হাসান আজিজুল হক আর নেই। বেশ কিছুকাল অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালেও ছিলেন। হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতেও ফিরেছিলেন। যেন চলে যাবেন বলেই এই গৃহপ্রবেশ। এই আগুনপাখির দিনে উঁকি দিয়ে দিগন্ত দেখার স্বাদ হল তাঁর। হাসান আজিজুল হক সেইসব লেখকদের একজন, যাঁরা তাঁর লেখার অনুরাগী ছিলেন না, তাঁরাও তাঁকে বড় লেখক বলে মানতেন। শুধু লেখক বলে নন, একটা প্রজন্ম— যাঁরা অধ্যয়ন, অধ্যবসায়, আদর্শগত দৃষ্টিকোণকে গুরুত্ব দিতেন, যাঁরা একটি তরুণ দেশের শৈশবকালে নিজেদের তারুণ্য আর সঞ্জীবন দিয়ে জারিত করেছিলেন, তাঁদের প্রজন্ম একে-একে বিলীয়মান। বিদায় আগুনপাখি। জীবন ঘষে যে-আগুন আপনি জ্বেলেছিলেন, তাঁর উত্তাপ এখন রাজশাহী থেকে সারাদেশে কুসুমিত হয়ে আছে।

    .
    ‘চাঁদ উঠলে
    ঘণ্টাধ্বনি মিলিয়ে যায়
    আর
    অগম পথগুলি জেগে ওঠে।’
    — লোরকা (অনুবাদ: অমিতাভ দাশগুপ্ত)

    বহুদিন পর মিরপুর-১২-তে গিয়েছিলাম, প্রায় ১০ বছর পরে, আমার এককালের অস্থায়ী আবাস।

    যেতে-যেতে ভাবি, কী করে শহর বদলে যায়, দিনে-দিনে অপরিচিত হয়ে ওঠে, অথবা বহুকাল আগে চেনা সব জায়গাও মনে হয় অচেনা-অশরীরী, জানা হয়ে যায় আমি বহিরাগত, আগন্তুক।

    হিম তাড়ানোর উপায় আগুন জ্বালানো, কিন্তু বৃষ্টিতে শহরের শুকনো পাতারা ভিজে একশা! তবু তাই কুড়িয়ে আগুন জ্বালানোর আয়োজন চলে। বৃষ্টি থেকে নিজেদের আড়াল করবে কী, হাতের মধ্যে আগুনকে জীবন্ত রাখাই দায়! আগুন কি তবে পোষমানা পাখি? বড় যত্নে তাকে লুকিয়ে রেখেছে? 

    অথচ পূর্ণিমা জাগার আগে গাঢ় সন্ধ্যার আকাশে তাকিয়ে দেখি, সে একই রকম অন্ধকার, পৃথিবীর সব দেশের আকাশ একই রকম সমতল। আপনি যদি আকাশের বিজ্ঞান না জেনে থাকেন, তো মনে হবে অযুত-নিযুত বছর ধরে আকাশের কোনও পরিবর্তন নেই, তার চরিত্র রয়ে গেছে একই রকম চরিত্রহীন।

    সিপাহিকুঞ্জের সিংহদ্বার পেরোতেই ঝলকে ওঠা তীক্ষ্ণ বাতাস লাগে গায়ে, শহরের এই একেবারে সীমানায় শীত লুকিয়ে ফিরছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে চূড়ান্ত আঘাতের, যদিও শহরের ভিতরে সে-খবর জানা নেই কারো। দূরে তখন মার্চপাস্ট থেমে গেছে, সৈনিকের বুট পেয়েছে অবসর। শুধু রক্ষীফৌজেরা তখনও সটান, ক্লান্ত আগামী কার্তিকের ধুলোয় তাদের চোখ ম্লান হয়ে গেছে, কিন্তু পা আর কাঁধ সামরিক সালামের ভঙ্গিতে সতর্ক, ভীত, এই বুঝি কাঁধে আভিজাত্য আর চোখে ইস্পাত নিয়ে ঢুকবেন কোনও সামরিক কর্তা। একজন আমাকেই স্যালুট করলেন, ভুল করে আমাকেও সামরিক কর্তা ভেবেছেন নিশ্চয়ই। ভাবলাম কাছে গিয়ে বলি, ‘ভাই, আমি ক্যাপ্টেন নই, কবি, এখন কি ফিরিয়ে নেবেন স্যালুট?’ বলা হল না। 

    তাদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতেই থমকে গেছি! সুরম্য সব অট্টালিকা— ঝকঝকে, তকতকে, নিপুণ। একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে, যেন কুচকাওয়াজ শুরু হবে। সামরিক ব্যবস্থাপনার চিহ্নে ভুল নেই কোথাও, সারিবদ্ধ রাস্তার পর রাস্তা, তাদের সংখ্যাচিহ্ন, সাইনবোর্ড, অ্যাভিনিউ, বাড়ির নম্বর— আমার কাঙ্ক্ষিত বাড়িটি পেতে সময় লাগল না মোটেই। এই শহরে অন্য কোথাও হলে সেটা বিরাট হ্যাপার, যদি না অন্য কোনও অভিজাত এলাকা হয়। যে-জায়গার ওপর দিয়ে হাঁটছি, মিলছে না কিছুই (মেলার কথাও নয়)। শেষবার যখন এসেছিলাম, তখন এখানে ধু-ধু বালু ছিল। এর কাছাকাছি নদী, নদীর ওপারে গোলাপের গ্রাম, অর্থাৎ সে-গ্রামে নাকি গোলাপের চাষ হয়! ফুলের চাষ তাদের পেশা, তাদের চাষ করা রাশি-রাশি তাজা ফুল মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে শাহবাগে, তাজমহল রোড কিংবা মিরপুরে। নৌকায় করে আনা হত সেসব, এখন কী করে আনা হয়? নদীটি কোনদিকে? ঠাহর হল না। বরং ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনের সরোবরে নীলচে আলোর ঝলকানি দেখা গেল। আর, দু’সারি দালানের ভিতর ঢুকে যেতেই, যার জন্য অপেক্ষায় ছিল আজকের আকাশ, সেই প্রগাঢ় চন্দ্রিমা! কীরকম ছায়া-ছায়া, লাতিন আমেরিকার আকাশেও এরকম চাঁদ ওঠে, এরকমই জাদুবাস্তব, মার্কেজ নিশ্চয়ই জানেন।

    ১. ঢাকা শহরের ভেতর দুটো বৃহৎ সেনানবিবাস অবস্থিত, একটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, অপরটি মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট। এখানে মিরপুর ক্যান্টমেন্টের কথা বলা হয়েছে। 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook