ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • দিল্লি ডায়েরি: পর্ব ৭


    অরুণাভ সিংহ (November 5, 2021)
     

    নম্বরের আড়ম্বর, কলেজে ভর্তির হিড়িক

    সাধারণত ব্যাপারটা হয় জুন-জুলাই মাসে, এ বছর করোনার জন্য অক্টোবর। সারা দেশ থেকে সতেরো-আঠেরোর ছেলেমেয়ে এবং তাদের মা নয় বাবা, বা দুজনেই, দিল্লি পৌঁছে যায়। হাজারে হাজারে। রাজধানীতেও বাড়িতে-বাড়িতে সতেরো-আঠেরোর হইহই কাণ্ড। কলেজে ঢোকার সময় হয়েছে। বহু দিন হল সারা দেশে একটা ধারণা হয়েছে, দিল্লির কলেজে না পড়তে পারলে জীবন বৃথা। যদিও প্রত্যেক বছর যে শ্রেষ্ঠ কলেজের তালিকা বেরোয়, তাতে অন্যান্য শহরের বহু কলেজ আছে। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনই ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে (বা করা হয়েছে) যে, বহু ছাত্রছাত্রী তথা তাদের মা-বাবার ধারণা— এখানে পড়তে না পারলে জীবন বৃথা।

    এখন বিভিন্ন বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় নম্বরের যা দাপট, তাতে এমনিতেই নব্বই না পেলে তথাকথিত ভাল কলেজে ঢোকা মুশকিল। কিন্তু সেই অনুপাতেও দিল্লির কলেজগুলো দশ পা এগিয়ে। অনেক কলেজেই একশোয় একশো নম্বর না থাকলে আসন পাওয়া অসম্ভব— অন্তত প্রথম তালিকা অনুসারে। কারা পায় এত নম্বর? কীভাবে পায়? এক স্কুল-শিক্ষিকার মতে বিজ্ঞান ধারায় পড়লে এরকম নম্বর পাওয়া সম্ভব বইকি। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে পদার্থবিদ্যা-রসায়ন-জীববজ্ঞান-গণিতশাস্ত্র পড়া ছাত্রছাত্রীরাও ইংরেজি-ইতিহাস-অর্থনীতি-সমাজবিজ্ঞান এই সব বিষয়ের জন্য দিল্লির নানা কলেজে আবেদনপত্র জমা দেয়। তাদের পাওয়া নম্বর দেখেশুনে কলেজ কর্তৃপক্ষর তো খাবি খাওয়ার অবস্থা! সবাই একশোয় একশো। প্রথম তালিকায় এদের নাম না রেখে তো উপায় নেই!

    মাঝখান থেকে যারা ইতিহাস-সমাজবিজ্ঞান-রাজনীতি-বিজ্ঞান-ইংরিজি এসব নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তারা হয়তো পেয়েছে নিরানব্বই বা আটানব্বই, সুতরাং তাদের সুযোগ নেই। যদি প্রথম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছেলেমেয়েরা অন্য কোথাও পড়তে চলে যায় (যেমন আইআইটি বা ডাক্তারির কলেজ), তবেই দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ কোনও একটা তালিকায় নাম দেখার সম্ভবনা থাকে তাদের। সাতানব্বই-আটানব্বই নম্বর পেয়েও এই অবস্থা। এই হচ্ছে দিল্লির কলেজে পড়ার উন্মাদনা।

    বহু দিন হল সারা দেশে একটা ধারণা হয়েছে, দিল্লির কলেজে না পড়তে পারলে জীবন বৃথা। যদিও প্রত্যেক বছর যে শ্রেষ্ঠ কলেজের তালিকা বেরোয়, তাতে অন্যান্য শহরের বহু কলেজ আছে। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমনই ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে (বা করা হয়েছে) যে, বহু ছাত্রছাত্রী তথা তাদের মা-বাবার ধারণা— এখানে পড়তে না পারলে জীবন বৃথা।


    এখন অবশ্য দিল্লির আশেপাশে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রভূত পরিমাণে ছাত্রছাত্রী নেওয়া হচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধাঁচে তৈরি এইসব বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ লোকের ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও কিছু-কিছু উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হচ্ছে, এতে দিল্লির সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি কলেজগুলোর ওপর চাপ কমছে না। সমস্ত প্রদেশ থেকে প্রার্থীর ভিড়।

    সম্প্রতি তো দিল্লির কিরোরি মল কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক রাকেশ কুমার পান্ডে ভস্মে ঘি ঢালার প্রচেষ্টায় রাষ্ট্র করেছেন যে, কেরালাতে নাকি ‘মার্কস জিহাদ’ চলছে, তা নয়তো ওই রাজ্যের এত ছাত্রছাত্রী কাঁড়ি কাঁড়ি নম্বর পাচ্ছে কী করে? পান্ডে সাহেবের মতে, এসব নিশ্চয়ই দিল্লির কলেজগুলো কেরালার ছাত্রছাত্রী দিয়ে ভর্তি করার ষড়যন্ত্র। আর যেহেতু ‘জিহাদ’, ব্যাপারটা কোন দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছেন বোঝাই যায়। কেরালা এবং আরও নানা স্থান থেকে প্রতিবাদ আসায় পান্ডে সাহেব অবশ্য বলেন, উনি সাম্প্রদায়িক অভিযোগ আনেননি, আঞ্চলিক জিহাদের কথা বলেছেন।

    তা হবে। কেরালা থেকে আসা এক মা ও মেয়ে জানালেন, তাঁদের রাজ্যে ভাল কলেজ আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা দিল্লিতেই পড়াশোনা করতে চান। এই জন্য নয় যে, রাজধানীর শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত, সত্যি কথা বলতে সে-সম্বন্ধে ওঁদের ভাল ধারণা নেই। তাহলে উজিয়ে দিল্লি আসা কেন? ‘দিল্লিতে পড়লে অনেক দরজা খুলে যাবে। এখানে কত লোকের সাথে আলাপ হবে, কত গণ্যমান্য ব্যক্তি, কত সুযোগ! সেসব কি আর কেরালায় পড়ে থাকলে পাওয়া যাবে?’ তাই দুজনে অতিথিশালায় উঠেছেন, এক কলেজ থেকে আরেক কলেজ হন্যে হয়ে ঘুরছেন। যতদিন লাগে থাকবেন, কিন্তু ভর্তি না হয়ে ফেরত যাবার প্রশ্নই নেই। যে-কোনও কলেজ হলেই চলবে, যে-কোনও বিষয়। নম্বর নব্বইয়ের নীচে, কাজেই অপেক্ষা করতে হবে বুঝতে পারছেন, কিন্তু এও জানেন শেষপর্যন্ত কোথাও-না-কোথাও হয়ে যাবে ঠিকই। তা কলেজের মাইনে না হয় কম, কিন্তু দিল্লিতে থাকা-খাওয়ার খরচা? ‘তার ব্যবস্থা তো করতেই হবে। এখানে আমাদের ওদিককার অনেক লোকজন থাকে, তাদের সূত্রেই বন্দোবস্ত হয়ে যাবে।’

    কেরালা থেকে আসা এক মা ও মেয়ে জানালেন, তাঁদের রাজ্যে ভাল কলেজ আছে ঠিকই, কিন্তু তাঁরা দিল্লিতেই পড়াশোনা করতে চান। এই জন্য নয় যে, রাজধানীর শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত, সত্যি কথা বলতে সে-সম্বন্ধে ওঁদের ভাল ধারণা নেই। তাহলে উজিয়ে দিল্লি আসা কেন? ‘দিল্লিতে পড়লে অনেক দরজা খুলে যাবে। এখানে কত লোকের সাথে আলাপ হবে, কত গণ্যমান্য ব্যক্তি, কত সুযোগ! সেসব কি আর কেরালায় পড়ে থাকলে পাওয়া যাবে?’ তাই দুজনে অতিথিশালায় উঠেছেন, এক কলেজ থেকে আরেক কলেজ হন্যে হয়ে ঘুরছেন।



    আগে যেরকম লম্বা লাইন পড়ে যেত কলেজে-কলেজে, এখন বেশির ভাগ জিনিস অনলাইন হওয়ায় সেটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য হাজিরা দিতেই হবে। এইসবের মধ্যে দিল্লিতে প্যাচপ্যাচে গরম, বৃষ্টি সবই হয়েছে। এখন প্রবেশপর্ব প্রায় শেষ, পরবর্তী প্রশ্ন, ক্লাস কবে শুরু হবে? গত বছর তো সময়মতো শুরু-শেষ কিছুই হয়নি, এ-বছরও নম্বর দেরিতে আসায় সব কিছু এদিক-ওদিক। শিক্ষকরা বলছেন, সবই বিশ বাঁও জলে, হয়তো এবারও অনলাইন দিয়েই শুরু হবে। কর্তৃপক্ষ এখনও ঝুঁকি নিতে রাজি নন। দিল্লিতে স্কুল খোলার তারিখ ১ নভেম্বর, কিন্তু স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ৫০ শতাংশের বেশি যেতেও দেওয়া হবে না, ক্লাসও অনলাইনই চলবে। সুতরাং কলেজে ঢোকা নতুন ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরিস্থিতি পরিষ্কার নয়। গত বছর যারা ঢুকেছিল, তারাও প্রায় সবাই চাক্ষুষ কলেজ বা নিজেদের শিক্ষকদের দেখেনি। যে-জগাখিচুড়ি ছিল, প্রায় সেরকমই রয়ে যাবে।

    এই তো গেল কলেজের উপাখ্যান। এদিকে দিল্লিতে দীপাবলির প্রাক্কালে অন্য সমস্যা, এবং এর জের ১৫ নভেম্বর অবধি চলবে। একে তো আতশবাজি নিষেধ, এবং সেটা সবার ভালর জন্যই, কিন্তু কিছু দিগ্‌গজ তার ধার ধারেন না। তবে আসল কথা হল বেশির ভাগ সুরার দোকান বন্ধ, সব দোকানই বেসরকারি হাতে চলে যাচ্ছে, তার আগে পুরো বন্দোবস্ত নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। অর্থাৎ বেশির ভাগ দোকানের ঝাঁপি নামানো, যে যৎসামান্য কয়েকটি খোলা তাদের কাছে ভাল জিনিস নেই বললেই চলে। চতুর্দিকে হাহাকার।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook