ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • এক্স ফ্যাকটরের দেবী

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (October 23, 2021)
     

    পুরীর জগন্নাথ মন্দির বা দক্ষিণ ভারতের একাধিক মন্দিরের মতো নানা উপাসনালয়ে বিষ্ণুর দু’দিকে লক্ষ্মীর দুই রূপকে দেখা যায়— শ্রীদেবী এবং ভূদেবী। এঁদের মধ্যে পার্থক্য কী?

    ভূদেবী পৃথিবীর দেবী, যে-পৃথিবী থেকে আমাদের সমস্ত সম্পদ উৎপন্ন হয়। পৃথিবীর বুক থেকেই উঠে আসে খনিজ পদার্থ, পৃথিবীর মাটির গভীরেই বীজে প্রাণ আসে, তারপরে তা ফসল বা গাছের রূপে উঠে আসে মাটির উপর, মানুষকে দেয় ফলমূল, শস্যাদি। পৃথিবীর বুকেই আমরা তৃণভূমি পাই, যা খেয়ে গবাদি পশুরা বাঁচে। অতএব সম্পদের কাছে, লক্ষ্মীর কাছে, পৃথিবীর গুরুত্ব অপরিসীম। এ কারণেই প্রাচীন ভারতবর্ষে পৃথিবীকে কল্পনা করা হয়েছে গো-রূপে। পৃথিবী যে শস্য এবং খনিজ পদার্থ উৎপন্ন করে, তাকে কল্পনা করা হয় সেই পৃথিবী-গাভীর দুধ হিসেবে।

    পৃথিবীকে ফলনের কাজে ব্যবহার করার জন্য প্রথম যে-রাজা বশ্যতা স্বীকার করান, তাঁর নাম পৃথু। ‘পৃথিবী’ নামটি তাঁর নাম থেকেই আসে। ভূদেবী হচ্ছেন পৃথিবী, পৃথিবী-গাভীর রূপেই তাঁর রূপায়ণ। একাধিক কাহিনি অনুযায়ী ভূদেবী বিষ্ণুর কাছে নালিশ করেন, রাজারা নাকি তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করছেন। তখন বিষ্ণু বিভিন্ন অবতারে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন এবং এই অত্যাচারী রাজাদের হাত থেকে দেবীকে রক্ষা করেন। বরাহ অবতারের রূপে তিনি সমুদ্রের গর্ভ থেকে পৃথিবীকে তুলে আনেন। ধর্মের মূল বিষয়বস্তুই হল পৃথিবীকে তার যোগ্য সম্মান দেওয়া। অতএব পৃথিবী স্বয়ং ভূদেবী, আর তাঁর পতিরূপে বিষ্ণু হচ্ছেন ভূপতি।

    শ্রীদেবীর রূপকল্পনা বেশ অন্যরকম। ভূদেবীর যেমন গাম্ভীর্য আছে, ধৈর্য আছে, বিষ্ণুর কাছে তিনি নালিশ জানান, শ্রীদেবী কিন্তু তেমন নন— তিনি খামখেয়ালি, তাঁর নানা দাবিদাওয়া থাকে। দেবরাজ ইন্দ্র যখন তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করেন, তখন তিনি দুধের সাগরে উধাও হয়ে যান। সমুদ্র মন্থন করে তাঁকে যখন তুলে আনা হয়, তখন তিনি পতি হিসেবে বেছে নেন বিষ্ণুকে, কারণ সে-ভূমিকায় বিষ্ণু যোগ্যতর। তাঁকে অনেক তোয়াজ করে, আদরআত্তি করে রাখতে হয়, না হলে তিনি পালিয়ে যান। মন্দিরের উপকথায় শোনা যায়, পৃথিবী যখন ধর্মচ্যুত হয়েছে তখন ঘুমোচ্ছেন বলে বিষ্ণুর বুকে ভৃগু পদাঘাত করেন, আর এই সময়েই লক্ষ্মী বৈকুণ্ঠ ছেড়ে চলে যান। তাই বিষ্ণু নানা অবতারে পৃথিবীতে নেমে আসেন তাঁকে ফিরতে রাজি করাবেন বলে। ঠিক এ কারণেই নানা মন্দিরের মূর্তি বা ছবিতে বিষ্ণুর ডান কাঁধে ভৃগুর পায়ের ছাপ রয়েছে।

    শ্রীদেবী খানিকটা কপালের ফেরের মতো, ক্যারিসমা বা জনপ্রিয়তা, ব্র্যান্ড বা সামাজিক প্রতিপত্তির মতো। যে-প্রতিপত্তিকে ঠিক অঙ্কের হিসেবে মাপা যায় না, কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় আমাদের কত দাম বা দর, তার পিছনে এ-জিনিসের অবদান অপার। শ্রীদেবী যা দান করেন তাকে বলা যায় জৌলুস, জোরোয়াস্ত্রীয় ধর্মে যার নাম ‘খোয়ারেনাহ’— যে-গুণ সাধারণ মানুষকে রাজকীয় এবং ঐশ্বরিক প্রতিপত্তি প্রদান করে তাদের রাজা বানিয়ে তোলে। খোয়ারেনাহ এবং শ্রী, এই দুই কল্পনার মিল দেখলে এক প্রাচীন ইন্দো-আর্য বিশ্বাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

    জৌলুস থাকলে মানুষ অন্যের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে; যে-ক্ষমতা থাকলে একজন কেবল একটি ঘরে প্রবেশ করেই বাকিদের তার দাপট বুঝিয়ে দিতে পারে! সে-লোকের প্রতিটি কথায়, প্রতি ব্যবহারে ফুটে ওঠে কর্তৃত্ব— মাথা নোয়াতে বলতে হয় না, লোকে এমনিই তাঁর সামনে নতমস্তক হয়ে থাকে! এই যে জিনিসটির জোরে একজন অন্যদের অনুপ্রেরণা দেন, অন্যদের সম্মানের পাত্র হয়ে ওঠেন, ইনিই হলেন শ্রীদেবী। শ্রীদেবী হচ্ছেন সেই বস্তু যা ‘তারকা’দের থাকে, সেই রহস্যময় ‘এক্স ফ্যাকটর’ বা ‘je na sais quois’ যার প্রসাদে তাঁরা সর্বজনপূজ্য, যা অন্য মানুষকে প্রভাবিত করে তাঁদের সম্পদে, উপহারে, আদরে, অনুরাগে ভরিয়ে দিতে।

    ভূদেবী হচ্ছেন সেই সম্পদ যার আমরা অধিকারী, আর শ্রীদেবী হচ্ছেন সৌভাগ্য-সুসময় ডেকে আনার ক্ষমতা। আমাদের অস্থাবর সম্পদের রূপকল্পনায় ফুটে ওঠেন শ্রীদেবী, স্থাবর সম্পদে ভূদেবী। রাজা হতে চাইলে উভয়েরই প্রয়োজন। নেতা হতে চাইলে উভয়েরই প্রয়োজন। বাস্তববাদী দার্শনিকেরা কেবল ভূ নিয়েই মাথা ঘামান, যাকে মাপা যায়। কিন্তু শ্রীয়ের যাদু না থাকলে সে সম্পদকে বড়ই কেঠো, বড়ই নির্জীব বলে মনে হয়।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook