ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • রাজনীতির রূপে রূপকথা

    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (August 6, 2021)
     

    শৈশবে মুম্বইতে রাজন আঙ্কলকে দেখেছিলাম চাকিয়ার কূটু করতে। আমার বাবা-মা ছিলেন অর্থনৈতিক অধিবাসী, তাঁরা ওড়িশা থেকে এসেছিলেন। আমার প্রতিবেশীরা ছিলেন মহারাষ্ট্র, কেরল ও তামিলনাডুর লোক। অতএব যেসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওড়িষা বা মহারাষ্ট্রের মানুষের কাছে সচরাচর পৌঁছত না, তা দেখার সুযোগ হত আমাদের। যেমন, চাকিয়ার কূটু। সারা মুখে সাদা রং মেখে, সোনালি টুপি পরে রাজা-আপ্পা (আমরা ওঁকে ওই নামেই ডাকতাম) তামিল এবং মালয়লম ভাষায় কথা বলতেন, সারা রাত ধরে দেখতাম দর্শকেরা সেইসব কথা শুনে হাসছেন, ঠাট্টা-তামাশা করছেন। আমরা জিজ্ঞেস করতাম, কী বলছেন, আপনি কী বলছেন? অতএব আমাদের সুবিধার জন্য একবার ভদ্রলোক ইংরেজিতে অনুষ্ঠানটি করে দেখিয়েছিলেন। তখন বুঝতে পেরেছিলাম, উনি আমাদের পুরাণের নানা গল্প বলছেন। কিন্তু গল্পগুলো বলার পাশাপাশি তিনি নানা রকম রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মন্তব্যও করছেন। তার মধ্যে কিছু কিছু বিদ্রূপের কথা, কিছু সিনিক্যাল উক্তি, কিছু দুষ্টুমি করে বলা। ওঁর কাছে শুনেছিলাম, এ হচ্ছে বিদূষকের শিল্প, যার কাজ ছিল রসিকতার মাধ্যমে রাজার কানে সাধারণ মানুষের রাগ-দুঃখের কথা পৌঁছে দেওয়া। 

    শিল্পের থেকে তার রাজনীতিটুকু কেড়ে নিলে পড়ে থাকে কেবল পৃষ্ঠপোষকের জন্য নিছক বিনোদন (যেমন স্বর্গে ইন্দ্রের জন্য অপ্সরাদের নাচ)। তখন শিল্পমন এবং আত্মাকে উচ্চস্তরে নিয়ে যাওয়ার তার যে মূল লক্ষ্য, তাতে বিফল হয় (যেমন দেবদারু বনে ঋষিদের সামনে শিবের নাচ)। শিল্পের রূপকগুলো তখন হয়ে ওঠে বেশি কল্পধর্মী, কম বাস্তবধর্মী। উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে দেহব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে যখন দেবদাসী সংস্কৃতিকে দায়িত্ব নিয়ে নষ্ট করে দিলেন দক্ষিণ ভারতের উচ্চশ্রেণি, তখন সঙ্গীত এবং নৃত্যকে আত্মসাৎ করে নিলেন তাঁরা। তাঁদের হাতে সঙ্গীত ও নৃত্য হয়ে উঠল ভারতের শাস্ত্রীয় প্রথাকে বাঁচিয়ে রাখার উপকরণ, তার সমস্ত শারীরিক ও যৌন আঙ্গিক যথাযথ ভাবে ধুয়েমুছে সাফ করে তাকে বানানো হল মঞ্চে, নান্দনিক ভাবে দেব-দেবীদের গল্প বলার উপযুক্ত মাধ্যম। রাজনৈতিক নয়, আধ্যাত্মিক পরিচয়ে দেখা হতে শুরু করল এই মাধ্যমগুলোকে। কিন্তু কাজটা কি উচিত হল?

    উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে দেহব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে যখন দেবদাসী সংস্কৃতিকে দায়িত্ব নিয়ে নষ্ট করে দিলেন দক্ষিণ ভারতের উচ্চশ্রেণি, তখন সঙ্গীত এবং নৃত্যকে আত্মসাৎ করে নিলেন তাঁরা। তাঁদের হাতে সঙ্গীত ও নৃত্য হয়ে উঠল ভারতের শাস্ত্রীয় প্রথাকে বাঁচিয়ে রাখার উপকরণ, তার সমস্ত শারীরিক ও যৌন আঙ্গিক যথাযথ ভাবে ধুয়েমুছে সাফ করে তাকে বানানো হল মঞ্চে, নান্দনিক ভাবে দেব-দেবীদের গল্প বলার উপযুক্ত মাধ্যম।

    নরসিংহের মিনার ভেদ করে বেরিয়ে এসে শান্তিপ্রিয় প্রহ্লাদের উপর অত্যাচার করা হিরণ্যকশিপুর পেট চিরে হত্যা করাটা কিন্তু রাজনীতি। পার্বতীকে বন্দি করতে চেষ্টা করার অপরাধে অন্ধককে ত্রিশূলবিদ্ধ করে মারাটা শিবের রাজনীতি। মোহিনী মূর্তি ধারণ করে দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করে বিষ্ণুর অমৃত বিতরণ আসলে রাজনীতি। রামায়ণ এবং মহাভারতের কাহিনি সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ এবং বৈবাহিক অধিকারের কথা বলে। পরবর্তী যুগের শাসকদের বা রাজাদের এসব গল্প ধর্ম, অধর্ম এবং ধর্মসঙ্কটের বিষয়ে বোঝায়। এ-কাহিনিগুলোর পুনরানুষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তব জীবনকে ভুলে থাকা নয়, মানুষকে যেই জীবনের ওঠাপড়াগুলো নিয়ে লড়তে শেখানো।

    চামু আর ভামুর ছেলেদের মধ্যে নিজেদের মাতামহের সিংহাসন লাভ করার জন্য যে রেষারেষির গল্প, সেসব গল্প কোনও অনুষ্ঠানে দেখতে পাই না কেন? একদিন প্রাসাদের ভিতর এক হাতির মৃত্যু হল। ভামুর ছেলে চামুর ছেলেকে চ্যালেঞ্জ করে শক্তির পরীক্ষা দিতে বলল— ওই হাতির মৃতদেহটিকে তুলে প্রাসাদের বাইরে ফেলে আসতে হবে। এ-কাজ করতে চামুর ছেলেকে কোনও বেগ পেতে হল না। কিন্তু যেই না হাতিটাকে দু’হাতে ধরে প্রাসাদের চৌকাঠ পেরিয়েছে, অমনি ভামুর ছেলে ফটক বন্ধ করে দিয়ে তাকে অপবিত্র বলে ঘোষণা করে দিল, দুই নাতির মধ্যে বেশি পবিত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে দখল করল মাতামহের সিংহাসন। উত্তর ভারতের একটি চর্মকার সম্প্রদায়ের কথ্য উপকথায় এ-গল্পটি পাওয়া যায়, এ-গল্পের মাধ্যমে তাঁরা শোনান কীভাবে তাঁদের ভাইয়েরা তাঁদের উচ্চাসন থেকে বঞ্চিত করে তাঁদের জমি নিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁদের লৌকিক স্মৃতিতে জিইয়ে রাখা অন্যায়ের ইতিহাস এবং তাঁদের জাতিগত পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই গল্প। 

    এ-কাহিনিকে যদি সাবেকি ভারতনাট্যমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত করা হয়, তাতে কি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অশান্তির সৃষ্টি হবে? মন্দিরের নৃত্যের আধ্যাত্মিকতায় কি তাতে বাধা পড়বে? আমাদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজনৈতিক নেতা, আমলা, এবং বিচারকেরা এমন ভারতীয় রূপকথার স্পর্শকাতর রাজকন্যা কবে হয়ে গেলেন, চাঁদের আলোতেও যাঁদের চামড়ায় ছ্যাঁকা লাগত? চাকিয়ার আর বিদূষকদের কথকতা আমাদের বিনোদন দেবার পাশাপাশি কি আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে না, সেই সব মুনি-ঋষিদের মতো, যাঁরা কাঁটার শয্যায় ঘুমোতে যেতেন?

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook