ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • তিরিশ ও বিয়ের পিঁড়ি


    প্রতীতি গণত্র (Pratiti Ganatra) (July 30, 2021)
     

    তিরিশ। না, আর একটু বেশি। সাড়ে তিরিশ। এই বয়সটা— সত্যি বলতে কী, খানিকটা আতঙ্কজনকই। এই সময়ে একমাত্র যে প্রশ্নটা সত্যি-সত্যিই লোকে আমাকে করতে পছন্দ করে, সেটা হল, ‘কবে বিয়ে করছ?’ আমার যারা কাছের লোকজন, তারা জানে অর্থহীন প্রশ্নটা করলে আমি কতটা উত্ত্যক্ত হই— ফলে তারা চেষ্টা করে কিছুটা রেখেঢেকে প্রসঙ্গটা তুলতে! ভাবে, আমি চট করে ব্যাপারটা বুঝতে পারব না, কিন্তু তাদের সূক্ষ্ম ইঙ্গিত আমি দিব্যি ধরতে পেরে যাই এবং খেপে উঠি।

    না, আমি রাগ উগরে দিচ্ছি না। বরং চেষ্টা করছি লেখাটা যাতে খুব রাগি না হয়ে ওঠে।   

    অতিমারী শুরু হওয়ার পর থেকে, আমি আর আমার ভাই রোজ বিকেলে বাড়ির ছাদে একটু হাঁটাহাঁটি করি, হাওয়া খাই। একদিন হাঁটতে হাঁটতে একজনের কথা ভাইকে বললাম, যাকে আমার ভাল লাগছে, আমি প্রায়ই তার ইন্সটাগ্রাম ঘাঁটছি। আমার মা এই আলোচনার কিছুটা আড়ি পেতে শুনে ফেললেন এবং মুহূর্তের মধ্যে কৌতূহলী ও উত্তেজিত হয়ে উঠলেন, যাক, আমার জীবনে একজন পুরুষ এসেছে, যাকে আমার পছন্দ। এটা এমনই একটা ঘটনা, যা কালেভদ্রে ঘটে। কিন্তু তারপরেই তিনি জানলেন, আমি যাকে নিয়ে কথা বলছিলাম, সে একজন ফর্মুলা ওয়ান ড্রাইভার (নেটফ্লিক্স-এ ‘ড্রাইভ টু সারভাইভ’ দেখার পর থেকে আমি এই খেলাটার অনুরাগী)।  মা হতাশ হয়ে বললেন, ‘আরে, জীবনে একবার অন্তত একটা নন-ফিকশনাল ছোঁড়াকে পছন্দ কর!’ আমি মজা করে বলি, বাস্তবের ছেলেরা কাল্পনিক চরিত্রের ধারেকাছে আসে না (বলার সময় তো এটাকে রসিকতাই মনে হয়), কিন্তু শুনে সবাই মুখ ভেটকায়।        

    কিন্তু এই ভাললাগার লোকজন এবং হাসিঠাট্টাগুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখলে, অতিমারী আমাদের প্রত্যেককে বাধ্য করেছে, নিজেদের জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে। বুঝতে শিখিয়েছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, কোনটা প্রয়োজনীয়, আর কোন কোন জিনিস ছাড়া একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে বা পারে না। এই দেড়টা বছর, আমিও নিজেকে নিয়ে অনেক ভেবেছি। এবং বেশির ভাগ লোক যদিও এই সময়টায় ধূপধুনো-টাইপ মহান সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে: জীবনে আসল জিনিস হল শুধু পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কগুলো— আমার সিদ্ধান্ত কিছুটা অন্যরকম। আমার মতে, এই অতিমারীর শিক্ষা হল, একজন মানুষের একা বেঁচে থাকা শেখা দরকার।  তোমার হাত ধরে থাকার জন্য বা তোমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য, আদৌ কেউ থাকবে কি থাকবে না— এর সত্যিই কোনও নিশ্চয়তা নেই। নিজের ওপর ছাড়া আর কারও ওপরই ভরসা করা যায় না। এক্ষেত্রে যে-শব্দটা মনে আসে, সেটা হল  ‘স্ব-নির্ভরতা’।

                

    আমার মতে, এই অতিমারীর শিক্ষা হল, একজন মানুষের একা বেঁচে থাকা শেখা দরকার।  তোমার হাত ধরে থাকার জন্য বা তোমাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য, আদৌ কেউ থাকবে কি থাকবে না— এর সত্যিই কোনও নিশ্চয়তা নেই। নিজের ওপর ছাড়া আর কারও ওপরই ভরসা করা যায় না। এক্ষেত্রে যে-শব্দটা মনে আসে, সেটা হল  ‘স্ব-নির্ভরতা’।

    অতিমারীর সময়ে এই একাকিত্ব বিষয়টা নিয়ে বিস্তর চর্চা এবং লেখালিখি হয়েছে। মানুষ এত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে যে হিস্টিরিয়া আর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু একাকিত্বের ধারণাটা আপেক্ষিক। একান্তই ব্যক্তিগত, স্বতন্ত্র।  কেউ হয়তো একঘর লোকের মধ্যেও একাকিত্ব অনুভব করে, কেউ হয়তো একা থাকলে করে। গত বছরে কোভিড-১৯ এসে একাকিত্ব ও সামাজিক সম্পর্কের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বিতর্কের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে— এবং বেশির ভাগ সমীক্ষাই বলছে, তথাকথিত নিঃসঙ্গতা বেড়ে চলেছে।  

    কিন্তু বিয়ে না করাকে একাকিত্বের সঙ্গে সমান করে দেখা হবে কেন? এটা কি সত্যি যে, যারা বিয়ে করেনি, তারা প্রত্যেকে নিঃসঙ্গ? নিশ্চিত ভাবে এটুকু বলতে পারি, আমি অন্তত নই!

    আমি মোটামুটি মুক্তমনা এক গুজরাতি পরিবারের মেয়ে। সত্যি বলতে গেলে, খুবই মুক্তমনা।  এই শীতেই, আমার ছোটভাই বিয়ে করে নিচ্ছে। হ্যাঁ, আমার আগেই। আমি সত্যিই ওর বিয়ে হচ্ছে বলে খুব খুশি, আর ওর বিয়েতে আনন্দ করার জন্য মুখিয়ে আছি। কিন্তু এও জানি, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রত্যেকে আমাকে এবং আমার পরিবারকে কী জিজ্ঞেস করবে। এমনকী যাদের সামনাসামনি সেটা জিজ্ঞেস না-করার সৌজন্যটুকু রয়েছে, তারাও মনে মনে কী ভাববে। আমার পরিবারের লোকেরা প্রশ্নটা করবে সহানুভূতি নিয়ে, আর ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ভাববে, এ মেয়েটার সমস্যাটা কোথায়? আমি এর মধ্যেই আমার পরিবারের লোকজনকে সতর্ক করে দিয়েছি, এই প্রশ্নটা আমায় করলে কিন্তু আমি ভদ্রতা দেখাতে পারব না এবং তারাও যেন না দেখায়! 

    শুধুমাত্র জীবনের এই একটা ঘটনা দিয়েই কি একজন মেয়ের মূল্য বুঝতে হবে আমাদের? পণ-সম্পর্কিত আর কতগুলো মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যার খবর জানতে পারলে আমরা এটুকু বুঝতে পারব যে, একজন মেয়ের জীবনে বিয়েটুকুই সব নয়? ২৪ বছরের বিস্ময়া নায়ারের (এই অতিমারীর মধ্যেই, পণের জন্য স্বামী এস কিরণ কুমারের হাতে অত্যাচারিত হতে হতে যাকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হয়েছে) মতো আর কতগুলো সাংসারিক-হিংস্রতার ঘটনা জানতে পারলে আমরা বুঝব যে, বিয়ের কারণে মেয়েদের কী কী দাম দিতে হয়?  

    শুধুমাত্র জীবনের এই একটা ঘটনা দিয়েই কি একজন মেয়ের মূল্য বুঝতে হবে আমাদের? পণ-সম্পর্কিত আর কতগুলো মৃত্যু কিংবা আত্মহত্যার খবর জানতে পারলে আমরা এটুকু বুঝতে পারব যে, একজন মেয়ের জীবনে বিয়েটুকুই সব নয়? ২৪ বছরের বিস্ময়া নায়ারের (এই অতিমারীর মধ্যেই, পণের জন্য স্বামী এস কিরণ কুমারের হাতে অত্যাচারিত হতে হতে যাকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে হয়েছে) মতো আর কতগুলো সাংসারিক-হিংস্রতার ঘটনা জানতে পারলে আমরা বুঝব যে, বিয়ের কারণে মেয়েদের কী কী দাম দিতে হয়?  

    আমার সম্পর্কে অন্য কিছু নিয়ে কারও প্রশ্ন নেই কেন? আমি সফল কি না, সুস্থ কি না, সুখী কি না— এই বিষয়গুলো নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথা নেই কেন?

    আমার জীবনে সত্যিকারের সম্পর্কের কোনও অভাব নেই, বরং উল্টোটাই। এমন পোক্ত একদল মেয়েবন্ধু আছে আমার, যারা আমাকে আর আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। সবসময়ই ওরা আমার পাশে রয়েছে— কোনওদিন সন্ধেয় ঘোরাঘুরি করে সময় কাটানোর সময়ও ওরা সঙ্গ দেয়, আবার যখন আমি ঘ্যানঘ্যান করি, বিয়ে-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে কেউ জাল প্রোফাইল থেকে আমার টাকা চুরি করার চেষ্টা করেছে— সেটাও ওরা ধৈর্য ধরে শোনে। ওদের সঙ্গে আমার জীবনের নানান মুহূর্ত ভাগ করে নিতে কোনও সমস্যা হয় না, আর ওদের কাছ থেকেই আমি প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা আর বন্ধুত্বপূর্ণ আন্তরিকতাটুকু পাই।

    কিছুদিন আগে আমার এক তুতো-দাদা মাকে বলল, একবার যখন মেয়েরা ‘খুব বয়স্ক’ আর ‘খুব স্বাধীন’ হয়ে যায়, পয়সা উপার্জন করে নিজেকে স্বনির্ভর মনে করে, তখন তাদের আর নতুন কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না। ও বলতে চাইছিল, আমিও এই জন্যেই জীবনসঙ্গী খুঁজে পাচ্ছি না। যখন এই কথাবার্তা চলছিল, আমি ঘরেই ছিলাম। এই দাদা কিন্তু মোটেই অশিক্ষিত, গেঁয়ো লোক নয়। যথেষ্ট শিক্ষিত একজন আমেরিকা-ফেরত পাইলট। খুব বুদ্ধিমান, মজা করতে ভালবাসে, আর পারিবারিক অনুষ্ঠানে ভীষণ হুল্লোড় করে— এসব কারণে আমি তাকে খুব পছন্দ করতাম। কিন্তু ওর মুখ থেকে এই কথা শোনার পর, ভাললাগাটা পুরো চলে গেল। সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে এইসব ধারণার কথা শুনলে, কষ্টটা বেশি হয়!        

    পাছে কেউ ভুল বোঝেন, সে-কারণে বলে রাখি, আমি মোটেই বিয়ের বিরুদ্ধে নয়। বরং উল্টো। অবশ্যই আমি কাউকে খুঁজে পেতে চাই, যার সঙ্গে জীবনটা কাটাব। কিন্তু আমার কাছে বিয়ের ব্যাপারে মূল শব্দটা ‘কবে’ নয়, ‘যদি’। বিয়ে করব, যদি কোনওদিন কাউকে দেখে মনে হয়, আমার স্বভাবের সঙ্গে এর মিল আছে। যদি কোনওদিন এমন কাউকে পেয়ে যাই, যার জীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, উদ্যম আমারই মতো। কিংবা অন্তত এমন কাউকে, যে আমার জীবনের লক্ষ্যটা বুঝতে চেষ্টা করবে আর প্রতি মুহূর্তে ভরসা জোগাবে আমায়।      

    কিন্তু শুধু বিয়ে করার জন্য বিয়ে করা! তা আমার দ্বারা হবে না। আর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার জন্য বিয়ে করার তো প্রশ্নই ওঠে না। এমনকী এই পৃথিবীব্যাপী অতিমারীর জন্যও ধাঁ করে বিয়ে করে ফেলব না। ততদিন পর্যন্ত এই দুনিয়া থেকে আমার দিকে যা খুশি ধেয়ে আসুক, এমনকী সেটা ভয়াবহ সাইন্স-ফিকশন টাইপ অতিমারী হলেও চিন্তা নেই— আমি তার মোকাবিলা করব, একজন অবিবাহিতা আর সক্ষম নারী হিসেবে!

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook