ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • উত্তরবঙ্গ ডায়েরি: পর্ব ৪


    সুমনা রায় (Sumana Roy) (June 4, 2021)
     
    ঋতু বিচারে দার্জিলিং 

    আমাদের পাঠ্যক্রমের ধরনটা এমন, আমরা যেখানে থাকি তার চেয়ে ইউরোপের ইতিহাস সম্বন্ধে বেশি জানি। তাই লেখনাথ পৌড়িয়াল সম্বন্ধে যে আমি কিছুই জানতাম না, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দার্জিলিং-এ এক বা দু’বছর পড়ানোর পর, আমার এক ছাত্র ‘ঋতু বিচার’-এর কথা বলে। তার সঙ্গে চকবাজারে যাই, শহরের যে ছোট বইয়ের দোকানগুলো আছে, তা থেকে যদি একটা কপি জোগাড় করা যায়। বইটার বিশেষত্বহীন ফিকে নীল মলাটটা দেখে আমার দুঃখ হয়েছিল— আমার মতো মানুষের এবং আমাদের সংস্কৃতির যেন একটা সমবেত উপেক্ষার ইতিহাসের সাক্ষী ছিল ওই মলাট।  

    ঋতু সম্বন্ধে লেখা এই কবিতাগুচ্ছ আমি পড়তে শুরু করি বর্ষাকালে। দার্জিলিং পাহাড়ে এবং উত্তরবঙ্গে বর্ষার মাসগুলো সবচেয়ে দীর্ঘ মনে হয়। ছাতা, টিনের চালে অবিরাম বৃষ্টি, বর্ষায় ভেজা রাস্তায় পায়ের এবং জুতোর শব্দ, প্যাচপ্যাচে কাদা— বছরের অর্ধেক সময়েই কথোপকথনের পিছনে চলে এই আবহসঙ্গীত। মানুষের গলার শব্দের সঙ্গে যেন বৃষ্টির শব্দের একটা টানা প্রতিযোগিতা চলে— নিজের অজ্ঞাতসারেই সবাই হয়ে ওঠে গায়ক, কারণ বৃষ্টি তো টানা সঙ্গত করে যাচ্ছে। তাই এই শব্দের প্রেক্ষাপটেই আমি ‘ঋতু বিচার’ পড়া শুরু করেছিলাম।     

    আমি জোরে, গলা খুলে পড়তাম, কেন তা ঠিক বলতে পারব না। আমার একমাত্র শ্রোতা ছিলেন আরতি সিং। তিনি আমাদের রান্না করে দিতেন এবং বকুনি দিতেন, এবং দুটোই অনেকটা স্নেহ এবং মমতা দিয়ে। তিনি হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘ঋতু বিচার!’ বলতে লজ্জা করছে, আরতি যে এই কবিতা চেনেন, তা জেনে আমি অবাক হয়েছিলাম; বাড়ির কাজের লোকেরা, বা এই ধরনের কাজ যাঁরা করেন, তাঁরা নিরক্ষর হন— এইরকমই ধারণায় আমরা অভ্যস্ত। আরতি স্কুল থেকেই এই কবিতার কিছু লাইন মুখস্থ করে রেখেছিলেন। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে কিছু নেপালি কথা মিশে যেতে শুনছিলাম, আমার ভাড়াবাড়ির একচিলতে বারান্দায় বসে, হ্যাপি ভ্যালি চা-বাগানের বিস্তার দেখতে-দেখতে।  

    দার্জিলিং পাহাড়ে এবং উত্তরবঙ্গে বর্ষার মাসগুলো সবচেয়ে দীর্ঘ মনে হয়। ছাতা, টিনের চালে অবিরাম বৃষ্টি, বর্ষায় ভেজা রাস্তায় পায়ের এবং জুতোর শব্দ, প্যাচপ্যাচে কাদা— বছরের অর্ধেক সময়েই কথোপকথনের পিছনে চলে এই আবহসঙ্গীত।

    ‘কবি শিরোমণি’ লেখনাথ পৌড়িয়াল-কে আধুনিক নেপালি সাহিত্যের স্থপতি ধরা হয়। তাঁর নামের অর্থ লেখার (‘লেখ’) ঈশ্বর (‘নাথ’)। আদতে ধ্রুপদী এক কবি, সংস্কৃত কাব্যের কাছে তাঁর নিজের কবিতারীতি ঋণী, এবং পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের উপর তাঁর প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে। দার্জিলিং-এ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আমি কখনও আমার চেনা নেপালি কবিদের মুখে তাঁর কথা শুনিনি। তাই, তাঁর কবিতা আরতির মুখস্থ আছে দেখে আমি আরও অবাক হয়েছিলাম। 

    পৌড়িয়াল-এর প্রথম বৃহত্তর রচনা ‘বর্ষা বিচার’, যা ১৯০৯ সালে লেখা। 

    हुन त मधुर मेरो छैन वर्षाविचार
    नजर गरनुहोला तैपनी एक बार।
    भनिकन कर जोडी हार्दिक स्नेहसाथ
    गरदछ कविलाई प्रार्थना लेखनाथ

    পৌড়িয়াল-এর প্রায় দুশো বছর আগে, স্কটিশ কবি জেমস টমসন অনুরূপ কবিতাগুচ্ছ লেখেন, যার নাম ছিল ‘দ্য সিজন্স’। টমসন-এর কাজ তাঁর সমকালীন লেখকদের এবং পরের প্রজন্মের কবিদের উপর প্রভাব ফ্যালে, যাঁদের মধ্যে ছিলেন জোশুয়া রেনল্ডস এবং জে এম ডাব্লিউ টার্নার। ঋতুর অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে তিনি ব্ল্যাংক ভার্সের সাহায্য নেন, মিল্টন-এর ব্ল্যাংক ভার্স থেকে ধার করে, এবং তাকে আরও প্রসারিত করে। সমালোচকেরা টমসন-এর প্রতি সবসময় সদয় হননি, যা পৌড়িয়াল-এর ক্ষেত্রেও ঘটে। দুজনের ক্ষেত্রেই, তাঁদের ক্লাসিসিজম-এর প্রতি আনুগত্যের কারণে ঋতু-কেন্দ্রিক লেখায় একটা জড়তা রয়ে গেছে— এই অভিযোগ করা হয়।  

    আমি আরতিকে টমসন এবং ‘দ্য সিজন্স’-এর কথা বলি। বলি, সেই কবিও, পৌড়িয়াল-এর মতই, পাহাড়ের কোলে বসে ঋতু-কেন্দ্রিক কবিতা লিখেছিলেন। টমসন-এর কবিতার সমালোচনায় রেমন্ড ডেক্সটার হ্যাভেন্স-এর কথাগুলো পৌড়িয়াল-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য— এই কবি কোনও কিছুকে তার সহজ নামটা ধরে ডাকেন না, সরাসরি ভাবে, সোজাসুজি ভাবে, স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেন না। আমি স্বগতোক্তি করি, ‘ওঁরা কেন এরকম করতেন?’ আরতি, যিনি অসম্ভব রসিক, এবং যিনি তাঁর প্রথাগত শিক্ষার অভাবকে কখনওই নিজের জীবন বা  শিল্পের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বাধা হিসাবে দাঁড়াতে দেননি, বলে ওঠেন, ‘কিছু জিনিস সোজাসুজি বলা যায় না, জীবনের এটাই নিয়ম। পায়খানা করতে গেলেও আমরা সেটা বলতে পারি না, বলি, টয়লেটে যাচ্ছি।’ 

    অদ্ভুত জীবন— বৃষ্টির আগে জলের অভাবের ভয়ানক সমস্যা আমাদের অপেক্ষা করাত ওই সময়টার জন্য, যখন ট্যাঙ্ক আর জলাধারগুলো প্রাকৃতিক ভাবে ভরে উঠবে; আবার বর্ষা নামলে আমরা ভাবতাম, উফ কবে যাবে এই বৃষ্টি।     

    আমি ‘ঋতু বিচার’ প্রায়ই পড়ি, এবং মাঝে মাঝে কালিদাসের কথা ভাবি, বা ঋতু-বিষয়ক যে কবিতাগুলো তাঁর লেখা মনে করা হয়, সে কবিতাগুলোর কথা ভাবি। শিক্ষকতার বছরের অধিকাংশ সময়— মার্চ থেকে মধ্য-ডিসেম্বর— বৃষ্টি আমাদের জীবনকে চালনা করত। অদ্ভুত জীবন— বৃষ্টির আগে জলের অভাবের ভয়ানক সমস্যা আমাদের অপেক্ষা করাত ওই সময়টার জন্য, যখন ট্যাঙ্ক আর জলাধারগুলো প্রাকৃতিক ভাবে ভরে উঠবে; আবার বর্ষা নামলে আমরা ভাবতাম, উফ কবে যাবে এই বৃষ্টি। এমনকী যখন বৃষ্টি পড়ত না, আমি বৃষ্টি শুনতে পেতাম, যেমন কালিদাস পেতেন— ‘বৃষ্টি এগিয়ে আসে সম্রাটের মতো,/এক প্রচণ্ড রাজকীয়তায়’।    

    একদিন আরতি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন দুই কবির কবিতায় ঋতুদের সম্বন্ধে। এই সুযোগে আমি ওঁকে এই ধরনের দীর্ঘ কাব্যের ছয়-ঋতু সর্গ সম্পর্কে বলতে শুরু করলাম। আরতি মাথা নেড়ে আপত্তি জানালেন— পৌড়িয়াল দার্জিলিং-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঋতু সম্বন্ধে কিছু লেখেননি কেন? 

    আমি কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে আরতির দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি কি ‘ঋতু বিচার’-এ কোনও ঋতু বাদ দিয়ে গেছি? 

    ‘কেন, টুরিস্ট সিজন?’, আরতি হেসে উঠে বললেন, ‘দার্জিলিং-এর সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট সিজন!’ 

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook