ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • জীবনে শেখাটা থেমে গেল

    বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় (June 5, 2021)
     

    আপনার কোমরে যেটা সুড়সুড়ি দিচ্ছে, সেটা আগ্নেয়াস্ত্র…।’ ফেলুদা আর রক্ষিত, এরপর বেনারসের মানমন্দিরে মুখোমুখি। রক্ষিতের মিথ্যে ধরা পড়ে গেছে। ফেলুদার জেরা চলছে। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমায় আমার প্রথম শট। বেশ টানটান উত্তেজনার সিন। কিন্তু উতরে গেলাম। মজার কথা, সৌমিত্রদা সব শটের পরে আমায় জিজ্ঞেস করত, ‘কী, ঠিক ছিল?’ অত বড় একজন অভিনেতা, তিনি কিনা আমায় জিজ্ঞেস করতেন শট ঠিক ছিল কি না! এই হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের ইউনিট। 

    মানিকদার সঙ্গে যখন আমার প্রথম আলাপ, তখন উনি লেক টেম্পল রোডে থাকতেন। প্রথম আলাপের সঙ্গে সিনেমা বা অভিনয়ের কোনও যোগাযোগ ছিল না। সম্পূর্ণ অন্য কাজে গিয়েছিলাম। সকালবেলা সাড়ে সাতটায় দেখা করতে গেছিলাম। তখনই দেখি মানিকদা চান-টান করে রেডি হয়ে, ব্রেকফাস্ট সেরে বাইরের ঘরের টেবিলে কীসব লিখছেন। এরপর যখনই গেছি, সে সকালই হোক বা বিকেলই হোক, সবসময় দেখেছি উনি কাজ করছেন। হয় লিখছেন, নয় আঁকছেন, নয় সম্পাদনার কাজ করছেন। প্রথম সাক্ষাতের বেশ কিছু দিন পর ‘দেশ’ পত্রিকায় দেখলাম মানিকদা ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ সিনেমা করবেন এবং তার জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন। সোজা মানিকদার বাড়ি গিয়ে বললাম, ‘আপনার কাছে আগের কাজের ব্যাপারে আসিনি, আপনার সিনেমায় অভিনয় করব বলে এসেছি।’ মানিকদা বললেন, ‘একটি ছেলে স্ক্রিন-টেস্ট দিয়েছে, যদি সে না পারে, তা হলে তোমায় নেব। আর যদি সে উতরে যায়, তাহলে তুমি অন্য একটা রোল করবে।’ এবং সেই ছেলেটি উতরে গেল। আমি একটা ছোট্ট রোলে অভিনয় করলাম। ১৯৭০ সাল, ১৬ এপ্রিল আমি প্রথম শট দিলাম সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায়। 

    এর পর দশ বছরের গ্যাপ। মাঝে আর কোনও সিনেমায় উনি আমায় ডাকেননি। দশ বছর পর বিখ্যাত স্থিরচিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষের ভাই নিশীথ ঘোষ এক দিন আমায় বললেন, ‘মানিকদা, তোমায় খুঁজছেন।’ শোনামাত্র সটান পৌঁছে গেলাম ওঁর কাছে। বললেন, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ পড়েছ?’ বললাম, ‘হ্যাঁ।’ আমার ঠোঁটের ওপর নজর রেখে বললেন, ‘ওখানে একটি চরিত্র আছে তোমার জন্য, কিন্তু তার জন্য তোমায় এই গোঁফটা কেটে ফেলতে হবে।’ আমি বললাম, ‘গোঁফ কেন, চুল-দাড়ি যা বলবেন, কেটে ফেলব।’ সেই শুরু হল জয়বাবা ফেলুনাথের জার্নি। সবাই মিলে একসঙ্গে হইহই করে বেনারস যাওয়া, শুটিং করা সবই হল। শুটিং-এর ফাঁকে মজা, আনন্দ— এসবই তো আমাদের জীবনের সঞ্চয়। 

    ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়

    ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর ইনডোর শুটিং হয়েছিল কলকাতার মুভিটোন-এ। আর তখন কলকাতায় খুব লোডশেডিং হত। স্টুডিয়োয় জেনারেটর ছিল না। লোডশেডিং হয়ে গেলে আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে আসতাম। আমি, সৌমিত্রদা আর অন্য যাঁরা ছিলেন আমাদের সঙ্গে। জমিয়ে আড্ডা হত, চা খাওয়া চলত। কিন্তু মানিকদা কখনও সেইসব আড্ডায় থাকতেন না। উনি নিজের মতো কাজ করে যেতেন। হয় সেই সিনেমার কোনও সিন নিয়ে, বা মিউজিক নিয়ে, কিংবা অন্য কোনও খুঁটিনাটি নিয়ে লেখালিখি করছেন, নোটস বানাচ্ছেন, বা অন্য কোনও সিনেমা বা কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। আমি কখনও মানিকদাকে এমনিই বসে থাকতে দেখিনি। আমার মনে হয় মানিকদার জীবনের কোনও মুহূর্ত নষ্ট হয়নি। মাঝে মাঝে ওঁর সঙ্গে হয়তো বেশিক্ষণ কথা বলে ফেলেছি আর তার পরেই বলেছি, ‘মানিকদা, আপনার অনেকখানি সময় নষ্ট করে দিলাম।’ হেসে বলতেন, ‘আরে না না, আমার সময় নষ্ট হয়নি, কত কিছু শিখলাম আমি!’ মনে হয়, হয়তো আমায় দেখে কিছু নোট করে রাখতেন, চরিত্রের খুঁটিনাটি মাথায় রেখে দিতেন, পরে কাজে লাগাতেন।

    এরপর আর কোনও ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ হয়নি, কিন্তু ওঁর সান্নিধ্যে থাকতে পেরেছি শেষদিন অবধি। সন্দীপ একটা সিনেমা করেছিল ‘ফটিকচাঁদ’ বলে। সেই সিনেমায় আমি একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। তখনও ওঁকে কাছ থেকে দেখেছি। ওঁর কাছাকাছি থাকতে পারাটাই একটা বিরাট ব্যাপার। ওঁর যাপনের ভঙ্গিই একটা শিক্ষণীয় বিষয়। প্রতিবারই মনে হত একটা নতুন কিছু আবিষ্কার করলাম, একটা নতুন কিছু শিখলাম। আমাদের সেই সমস্ত অনুভূতির ধারাবাহিকতা শেষ হল ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে। ওঁর কাছ থেকে জীবন শেখাটা থেমে গেল।     

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook