ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • গন্ধর্বের খোঁজে

    অদীপ দত্ত (Adip Dutta) (June 5, 2021)
     

    একজন শিল্পীর পক্ষে উপাদান ও পদ্ধতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ— বিশেষত একজন ভাস্করের পক্ষে, যাঁর কাছে ভাস্কর্য সৃষ্টি করার শারীরিকতায় শিল্পপদ্ধতির শুরু এবং শেষ? 

    বস্তু এই সৃষ্টির চরিত্র স্থির করে দেয়, গঠনবিন্যাসে উদ্ভাসিত হয় সমগ্র পদ্ধতি। যে কোনও শিল্পাভ্যাস, যা বস্তু নিয়ে কাজ করে, তা উপাদানগুলো দিয়ে প্রেক্ষিতটা তৈরি করে, আর প্রক্রিয়াটাকে করে তোলে একটা ইন্টেলেকচুয়াল স্টেটমেন্ট ।  

    ভারতবর্ষে আধুনিক ভাস্কর্যের পিতৃসম শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজ এই একীকরণের প্রতিভূ ছিলেন। এবং তাঁর শিল্পে এই পদ্ধতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠে এক সময় প্রায় জৈব প্রকৃতি ধারণ করে।

    বোলপুরে তাঁর বাড়িতে রামকিঙ্কর
    ছবি সৌজন্য: জ্যোতি ভট্ট, এশিয়া আর্ট আর্কাইভ

    বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে, যখন কলা ভবনের স্বাধীনতা-পূর্ব শিল্পচিন্তায় স্পষ্টতই নব্য ভারতীয় মডার্নিজমের ছোঁয়া দেখা যায়, যার গোড়ায় ছিল অভিন্নতামূলক স্বদেশি ভাবনা, রামকিঙ্করের কাজ তখনও রয়ে যায়  বহুমুখী, বহুগ্রাহী। তাঁর শিকড় ছিল তাঁর নিজের অস্তিত্বে ও পরিবেশে। এক দিকে বিভিন্ন প্রকারের লোকশিল্পের সঙ্গে সংযোগ এবং অন্য দিকে শিল্প ইতিহাসের এক মার্জিত অনুভূতি তাঁর শিল্প অভ্যাস গড়ে তুলেছিল। চরিত্রগত রূপে মূলত প্রতিনিধিত্বমূলক (বাস্তববাদী আলংকারিক) হলেও, এই শিল্পচর্চাই পরবর্তীকালে বিমূর্তবাদের ফরম্যাটের প্রতি অগ্রসর হয় (বিশেষত ‘ধান ঝাড়াই’-এর ক্ষেত্রে)। 

    ‘ধান ঝাড়াই’, কলা ভবন, শান্তিনিকেতন
    ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমনস
    সাঁওতাল পরিবার’, কলা ভবন, শান্তিনিকেতন
    ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমনস

    গ্রামবাংলা তথা ভারতের গ্রাম্যজীবনের নিচুতলার মানুষের দৈনন্দিন সংগ্রাম সম্বন্ধে এক গভীর ধারণা রামকিঙ্করের শিল্প অবস্থান নির্ণয় করে দেয়। এই ধারণা এতই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তা পরবর্তী কয়েক দশকে তাঁর শিল্পের দর্শন এবং দিশা গড়ে দেয়। কাজ দেখে মনে হয়, তা যেন সমাজের অবহেলিত মানুষের এক অবিরাম অনুসন্ধান। এই রূপায়ণের আর এক অনন্য দিক ছিল, এই মানুষদের সঙ্গে তাঁর একাত্মবোধ এবং একইসঙ্গে, যেন এক বহিরাগতের দৃষ্টিতে তাঁর সমানুভূতি। এক অস্থির উদ্যমে, দ্রুত কাজ শেষ করতে চাওয়ার প্রক্রিয়ায়, যেন কাজটা করার প্রতি মুহূর্তের অনুভূতিগুলি টাটকা হয়ে কাজটার মধ্যে ধরা থাকত।  

    কলা ভবনে অবস্থিত রামকিঙ্কর বেইজের প্রায় সবকটি বিশালায়তন ভাস্কর্যেই রয়েছে এই গতিশীলতা, আবার একটা আঙ্গিকগত কর্কশতা। এর ফলস্বরূপ ফুটে ওঠে এক ধরনের ভৌগোলিক অমসৃণতা, যা বীরভূম জেলার রুক্ষ মাটির প্রকৃতিবিশেষ। শিল্প ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আর শিবকুমার বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের খোয়াই-এর উপর আঁকা ড্রয়িং সম্বন্ধে লিখেছেন যে শিল্পী যেন এই কাজে ‘ল্যান্ডস্কেপ থেকে ল্যান্ড (ভূমি)-এ এসেছেন।’ বস্তু, পদ্ধতি, ফর্ম এবং সেই সূত্রে ভাস্কর্যের বাইরের আস্তরণ সহ রামকিঙ্করের ভাস্কর্য যেন এই মাটিরই স্মৃতি তুলে ধরে, প্রাকৃত এবং সাংস্কৃতিক, দুই রূপেই; যে মাটির দেশে শিল্পী এবং তাঁর শিল্পে খুঁজে বেড়ানো মানুষেরা— দুই’ই ভূমিসন্তান। 

    দিল্লির রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গেটে অবস্থিত রামকিঙ্করের যক্ষী
    ছবি সৌজন্য: উইকিমিডিয়া কমনস

    আলোচনার সূত্র ধরে দিল্লির রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গেটে করা ‘যক্ষ-যক্ষীর’ কথায় আসি। ১৯৫৫ সালে ভারত সরকার রামকিঙ্করকে দিল্লিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অফিস বিল্ডিং-এ ভাস্কর্য গড়ে দিতে আমন্ত্রণ জানান। বস্তুর দিক থেকে, এই দুই বিশালাকার ফিগার রামকিঙ্করের পূর্ববর্তী কাজের চেয়ে একেবারেই আলাদা। রামকিঙ্কর এতদিন কাজ করেছেন কংক্রিটে, কিন্তু এই দুটি কাজ ছিল পাথরের। আঙ্গিকের দিক থেকে না হলেও, বস্তু এবং তার গাত্রত্বক-এর বিন্যাসে কাজদুটি রামকিঙ্করের বাকি ভাস্কর্যের তুলনায় দৃশ্যত পৃথক হয়ে উঠেছিল। শিল্পী হিসাবে আমি সবসময়ে ভেবে এসেছি, যদি (বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের সুইস ভাস্কর) আলবের্তো জিয়াকোমেত্তির ভাস্কর্যগুলির বহির্ভাগ অন্যরকম হত, কাজগুলোর শিল্প-মূল্যায়ন কী অন্যরকম হতে পারত? রামকিঙ্করের যক্ষ-যক্ষীর আলোচনায় এহেন প্রশ্ন নিতান্তই তত্ত্বগত। অসামান্য জীবনীশক্তির নিদর্শন এই মূর্তিদুটি একটা কিউবিস্ট ধারণায় তৈরি, যার সাথে আদিমতার মেলবন্ধনে সৃষ্টি হয় আকারগত বলিষ্ঠতা।   

    যক্ষী-B ম্যাকেট, সম্মুখভাগের দৃশ্য

    যক্ষী-Aম্যাকেট, সম্মুখভাগের দৃশ্য

    এই বলিষ্ঠতার সম্বন্ধে এক সম্যক ধারণা তৈরি হতে পারে রামকিঙ্করের তৈরি করা ‘ম্যাকেট’ (ভাস্করের তৈরি ছোট মডেল বা স্কেচ) থেকে, যা তিনি স্টাডি হিসাবে ১৯৫৪-৫৯ সাল অবধি বানিয়েছিলেন। একদিকে এগুলি এই উপমহাদেশের প্রাচীন, ধ্রুপদী চাক্ষিক ঐতিহ্য়ের স্টাডি, অন্যদিকে এ যেন পুরাকালীন ভাষার এক মহাসন্ধান। এই দুই দর্শন এবং শিল্পভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে রামকিঙ্কর তাঁর মডেল তৈরি করেন এমন ভাবে, যেখানে ফিগারগুলির অন্তর্নিহিত বলিষ্ঠতা তাদের বহির্ভাগে ফুটে ওঠে। অসাধারণ ‘ম্যাকেট’ থেকে এই ভীষণ, প্রাচীন সজীবতা ফর্ম এবং স্পিরিট, দুই ক্ষেত্রেই সর্বশেষ ফিগারগুলিতে দেখা যায়। ‘ম্যাকেট’-গুলির সম্পূর্ণ তালিকা ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে এক প্রতিভাস, যার উৎসে রয়ে যায় রামকিঙ্করের চিরকালীন, অতুলনীয়, অপরিশোধিত আকর্ষণ। 

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook