ছানা মাছ: মা, মা, জলে বহুত মানুষের বডি ভাসছে! ফিস্ট হবে!
বাবা-মাছ: উঁহু উঁহু, একদম ছুঁবি না। বিষ থাকতে পারে। হয়তো আমাদের মারার জন্যেই এক্সএক্সএল টোপ ফেলছে। এরা ডেঞ্জার জানোয়ার।
কাকা-মাছ: তুমি থামো তো দাদা। নদীময় কার্নিভাল লেগে গেছে, সবাই পাখনা তুলে নেত্য করছে! না রে, বিষ-ফিস কিস্যু না, ব্যাটারা দলে দলে মরছে, পোড়ানোর ঝক্কি এড়াতে দেহ ভাসিয়ে দিচ্ছে। আমরা সুযোগ নেব না কেন?
লম্বা প্রতিবেশী: এগজ্যাক্টলি। হাতের মৃতদেহ কেউ ন্যাজে ঠ্যালে? কবে বেঘো ভ্যাকসিন বেরিয়ে যাবে—
বেঁটে প্রতিবেশী: ভ্যাকসিন! রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রেম হয়ে যাচ্ছে, লেঙ্গি অবধি চলে যাচ্ছে, তবু কুপন পাচ্ছে না।
মা-মাছ: সরকারটা তোতলা তো, ক’টা ডোজ লাগবে, কবে লাগবে, গুছিয়ে বলে উঠতে পারেনি।
বেঁটে: হাহা, তোতলা নয়, কোতলা! লোক কোতল হলে হেভি মস্তি পায়।
কাকা: তা কেন, বারবার হাত ধুতে বলছে, ওরা হাত থেকে দায়িত্ব ধুয়ে ফেলেছে!
পুরোহিত-মাছ: ওসব না, মানুষের পাপের ভারা পূর্ণ হয়েছে। এবার ভগবান পানিশ করছেন।
বাবা: আমাদের সাবড়াচ্ছে অ্যাদ্দিন ধরে— সেটাই তো ট্রিমেন্ডাস পাপ! এবার বরং জাঁকিয়ে ইনসাফ হবে, খাদ্য-খাদক ইকুয়েশন উল্টে দাও পাল্টে দাও! নাথিং টু লুজ বাট ইওর ফুড চেন!
পুরোহিত: যতই হাসুন, ভগবানই পুরোটা কন্ট্রোল করছেন। এদের প্রাইম মিনিস্টারকেই দেখুন না। রাম-মন্দির গড়ল বলেই তো এত কদর।
বেঁটে: হ্যাঁ, এবার একটা ঘ্যামচ্যাক শ্যাম-মন্দির গড়লেই করোনাভাইরাস স্পাইক তুলে পালাবে। এই ইজি সলিউশনটা কেন মাথায় আসছে না কে জানে।
লম্বা: আপনার ভগবানের সেরা লীলা দেখা গেল কুম্ভ মেলায়। পুণ্য-ডুব দেওয়া কতজনকে ডুবজল খাইয়ে ছাড়লেন! গ্যাদাড়ে মরছে শালারা।
পুরোহিত: সেই তো, পুরোটাই গ্র্যান্ড ডিজাইন। এবার মানুষের পপুলেশন হু-হু কমবে, আমরাও কম মরব। অ্যাদ্দিনে ফিশেশ্বর মুখ তুলে চাইছেন।
বাবা: কত মরছে কিস্যু বোঝা যাচ্ছে না। ইচ্ছে করে মিথ্যে ডেটা দিচ্ছে। কিছু হাসপাতাল তো করোনা ডেথ নিয়ে আইসপাইস খেলছে। হরিদ্বারের কী একটা হসপিটাল…
কাকা: আরে তাতে আমাদের কী? মরছে, এটাই আসল কথা। ব্যাটারা বহুত বেড়েছিল।
লম্বা: এগজ্যাক্টলি! ভেবেছিল, ইলিশ জন্মেছে ওদের পাতে পড়বে বলে। ডলফিন জন্মেছে খেলা দেখাবে বলে। তিমি জন্মেছে ‘মবি ডিক’ লেখা হবে বলে। মার মেলভিল-কে!
বাবা: কিন্তু অন্তত একটা লোকের বলার সাহস আছে, ভাইরাসও প্রাণী, তারও বাঁচার অধিকার আছে।
কাকা: কে বলেছে?
বাবা: ওই তো বিজেপির একটা লোক। আগে উত্তরাখণ্ডের সিএম ছিল। তাকে সবাই খিস্তি করছে।
বেঁটে: স্যালুট ভাই! এই বিজেপি হচ্ছে সাচ্চা জীবপ্রেমী। হোলসেল নিরামিষ খায়।
লম্বা: হ্যাঁ, এরা গরুকে ভালবাসে, মাছফাছ, ফড়িং-গুবরে, সবাইকে ভালবাসে। শুধু দাঙ্গায় মানুষ মরলে কোনও আপত্তি করে না।
মা: বাংলায় কি তাহলে এই জন্যেই বিজেপি আটকে গেল? বাঙালিগুলো মাছখেকো বলে?
বেঁটে: কিংবা বং-গুলো হয়তো দাঙ্গায় ডরায়। ক্যাংলাপ্যাংলা চেহারার সব ভিতুর ডিম! পোলট্রির ঢ্যাপলা মতো খোবরানো ডিম হয় না?
বাবা: ওই জন্যেই এখন তেড়ে টাইট খাচ্ছে। নারদা মামলায় সব ব্যাটাকে জেলে পুরছে।
কাকা: পুরবে না? সিবিআই রাজ্যপাল আদালত সেন্সরবোর্ড মিডিয়া সবার জিভে তু-তু বিস্কুট।
ছানা: মাছ না-খাওয়ার দল জিন্দাবাদ!
পুরোহিত: আরে, ফিরে এলি কেন? মানুষ খেতে গেছিলি তো।
ছানা: একটু খেয়েই কেমন গা গুলোচ্ছে। মনটাতেও কেমন অনুস্বর দেওয়া জিনিস বগবগাচ্ছে। হিংসা, জিঘাংসা, রিরংসা।
মা: কোনখানটা খেয়েছিলি?
ছানা: ঘিলু।
বাবা: অ্যাঁ! তখনই বলেছিলাম, বাচ্চাগুলো খুবলে-খাবলে মানুষের ব্রেন খাবে! কাল থেকে দেখবি তোপসে-মাছ বোয়ালকে সহ্য করতে পারছে না, কাতলা মৌরলার নামে চুকলি কাটছে।
লম্বা: প্রেম নিয়েও ফতোয়াবাজি শুরু করবে। ওদের পঞ্জাব-হরিয়ানার কোর্ট তো বলে দিয়েছে, লিভ-ইন সম্পর্কটা সামাজিক ও নৈতিক ভাবে গ্রহণযোগ্যই নয়।
কাকা: আবার নিজের দলের লোক চোর হলেও ধরবে না, শুধু অন্য দলকে হ্যারাস করবে।
বেঁটে: কিন্তু এগুলো তো ভাল।
মা: ভাল?
বেঁটে: সাম্প্রদায়িকতা, রক্ষণশীলতা, স্বজনপোষণ— ভাল না? ক্লিয়ার মাইন্ডে ভাবুন, এগুলো আসলে আত্মসংরক্ষণ। নিজের কোলে ঝোল টানতে গেলে পরের ঝোল একটু কেড়ে নিতে হয়। নিজের লোক, নিজের ভ্যালু— সবচেয়ে আপন, বাকিটা হ্যালু। তাই এরা সারাক্ষণ আওড়াচ্ছে, আমি ভাল, পাকিস্তান খারাপ। ব্রাহ্মণ ভাল, হরিজন খারাপ। কাউ-বেল্ট ভাল, সাউথ খারাপ।
পুরোহিত: আবার, শাস্ত্র ভাল, কাস্ত্রো খারাপ। হার্ডওয়ার্ক ভাল, হার্ভার্ড খারাপ। ক্লিয়ার-কাট একরোখা রাস্তায় রথ চালাচ্ছে বলেই তো এরা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা।
লম্বা: তা বইকি! সতীদাহের ঐতিহ্য, পাদ্রি পোড়ানোর বীরত্ব, হিন্দু-মুসলমান কাটাকাটির জাত্যভিমান, মন্দিরে যুবতী ঢুকতে না দেওয়ার ধার্মিকতা, অভিযুক্তকে এনকাউন্টারে মেরে ফেলার ন্যায়বিচার…
বেঁটে: আরে পাতি লব্জ আওড়াচ্ছেন কেন? এরা প্যাশনেটলি নিজেদের মতকে আঁকড়াতে জানে। নিজের ধর্মকে রিয়েলি প্রাণ দিয়ে ভালবাসলে, মন্দিরে একটা বিধর্মী জল খেতে ঢুকলে তাকে পিটিয়ে লম্বা করে দেবে না? নিজের বাড়ির মেয়ে যদি অন্য ধর্মের লোফারের সঙ্গে ভেগে যায়, দুজনকেই কুপিয়ে কাটার মধ্যে একটা প্রগাঢ় প্রথা-প্রেম নেই, যা এমনকী নিজের মেয়ের প্রতি স্নেহকেও পেরিয়ে যাচ্ছে?
মা: এগজ্যাক্টলি। যেমন নিজের ব্যাঙ্ক ব্যালান্সকে আষ্টেপৃষ্ঠে ভালবাসলে, অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়েও ব্ল্যাক করতে হয়। নিজের রাজনৈতিক দলকে সত্যিকারের ভালবাসলে—
বাবা: তাদের বাটাম-বাজি প্রাণ দিয়ে সাপোর্ট করতে হয়। এই তো লখনৌতে তিনজন সমাজকর্মী পোস্টার সাঁটছিল, তাতে লেখা ছিল, স্বাস্থ্য পরিষেবার জাতীয়করণ করতে হবে, আর লকডাউনে গরিবদের খাওয়া-পরার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। ব্যাস, মহল্লার লোকেরা ধরে ব্যাটাদের পিটিয়েছে। বলেছে, তোরা আর্বান নকশাল, তোরা মোদীর বিরুদ্ধে, আর মুসলিমদের পক্ষে।
বেঁটে: আর দিল্লিতে যারা পোস্টার সেঁটেছিল ‘মোদীজি, আমাদের বাচ্চাদের ভ্যাকসিন কেন বিদেশে পাঠিয়েছেন?’ স্ট্রেট জেলখানা।
বাবা: ঠিকই করেছে। ভারতে থাকবে, ভারতেরই প্রাইম মিনিস্টারের বিরুদ্ধে কথা বলবে? ন্যাকা!
কাকা: যে প্রধানমন্ত্রীর দৌলতে কিনা আমরা আজ এতগুলো বডি খেতে পাচ্ছি!
ছানা: ভাবতে পারবে না, আরও কত জমে আছে বিচ-এ। বৃষ্টি হয়েছে, বেশি ডিপ কবর খোঁড়েনি, সব ভেসে এখানেই আসবে। উন্নাওতে ৯০০টা, কনৌজে ৩৫০, কানপুরে ৪০০, গাজিপুরে ২৮০। উফ, কেয়া পিকনিক ভাই!
লম্বা: এদের সিএম-এর স্লোগানটাও বোঝো। তোমরা ওদিকে লাশ জমিও, আমি স্কোয়াড গড়ছি অ্যান্টি-রোমিও।
পুরোহিত: না না, এদের একদম মায়োপিক ভাববেন না। নজর সর্বত্র রেখেছে। দুটো তেলুগু নিউজ চ্যানেল দেশদ্রোহের চার্জে এফআইআর খেয়েছে তো!
বেঁটে: আর ওই গুজরাটের মহিলা কবি, চোদ্দো লাইনের কবিতা লিখেছে? এখনও অবশ্য জেলে ভরেনি, কিন্তু ট্রোল যা করছে না, জেলের বাবা!
বাবা: ও, ‘শববাহিনী গঙ্গা’! মোদীকে বলেছে ন্যাংটো রাজা, যে নাকি রামরাজ্য চালাচ্ছে? একে গারদে ভরাই উচিত।
কাকা: আলবাত। আজ শববাহিনী গঙ্গা বলেই না আমাদের হৃদয় চাঙ্গা। কীভাবে পুরো মানুষের শাসনটা মাছের দিকে ঘেঁষে আসছে, ইন্টারেস্টিং!
পুরোহিত: নস্ত্রাদামুস তো বলেই গেছিলেন, একটা সময় আসবে, যখন পৃথিবীতে মাছেরাই রাজত্ব করবে।
লম্বা: করছে তো! আমাদের নীতিই তো এখন ‘ইন’। গোটা দেশে তো মাৎস্য ন্যায় চলছে।
বেঁটে: ওভাবে বলবেন না। ওটা তো একটা ভুল প্রয়োগ। বড় মাছ সবসময় ছোট মাছ ধরে ধরে খায়?
মা: কেন খাবে? এই তো এখন মানুষ খাচ্ছে। তারপর মাসতিনেক আগে একটা অক্টোপাস ভেসে এসেছিল না?
বাবা: তাছাড়া ছোট মাছের মনে তো এ নিয়ে কোনও খার নেই। দল পাকায় না। ছোট মুখটা নিচু করে বড় হাঁ-য়ে সেঁধিয়ে যায়। ক্ষোভ না থাকলে অন্যায়ের কোশ্চেন উঠছে কোত্থেকে?
বেঁটে: মানুষ সেই নম্রতাটা শিখবে না। ফেসবুক-টেসবুকে সারাদিন ক্যাঁওক্যাঁও বিপ্লব। গঙ্গায় বডি ভাসছে। আরে ভাসছে তো ভাসছে, তোর কী? তুই ওয়েব-সিরিজ দেখছিস দ্যাখ না!
লম্বা: এই বডিগুলোই না ফ্লোটিং ভোটার হয়ে যায়। মানে, ফ্লোটিং ভোটারের ঘাড়ে না চেপে বসে।
কাকা: আরে ছাড়ুন তো! ইলেকশন হতে এখনও তিন বচ্ছর। সাতাশি হাজার নতুন টপিক চলে আসবে। লোয়ার কোর্ট চৌষট্টি চোরকে ছাড় দেবে। হাইকোর্ট জামিন নাকচ করবে।
বাবা: বামপন্থীরা মৌলবাদীর সঙ্গে জোট করে ধেইধেই নাচবে। কংগ্রেস কমতে কমতে শুধু একটা পোড়ো বাড়ির চিলছাদে এসে ঠেকবে। ডোল-দেওয়া দল বলবে, দু’টাকায় চাল নাও, তারপর এক টাকায়, শেষে বলবে চাল নিলে তুমিই টাকা পাবে।
মা: অনলাইন মেলা হবে। জুমে জলসা হবে। শিবাজির উঁচু স্ট্যাচু হবে।
পুরোহিত: বজরঙ্গবলীর আরও উঁচু স্ট্যাচু হবে। মাস্ক ছিঁড়ে ফেলে চারধাম যাত্রা হবে। পাঁচধাম যাত্রা হবে।
বেঁটে: তারপর সবসুদ্ধু গঙ্গাযাত্রা হবে। উইনার কে? দিস ফিশ রেস।
ছানা: ঝড়ে পঙ্গপালে আর নতুন নতুন অসুখে বডির স্টেডি সাপ্লাই শিওর, না বাবা? আমাদের জেনারেশনকে আর তোমাদের মতো স্ট্রাগল করতে হল না, বলো?
পুরোহিত: আমি চিরকাল বলেছিলাম, এমন মহান দেশে আমাদের জন্ম বৃথা যেতে পারে না।
লম্বা: মহান, মহতোমহীয়ান! বেদ আছে, বেড নেই।
বাবা: হাহা, সারভেইল্যান্স আছে, অ্যাম্বুল্যান্স নেই।
কাকা: ভিড় আছে, রেমডেসিভির নেই।
ছানা: শিল্ড আছে, কোভিশিল্ড নেই।
মা: প্রক্সি আছে, অক্সি নেই।
বাবা: এটা কী হল?
মা: বাঃ, ফায়ার এক্সটিংগুইশারকে অক্সিজেন সিলিন্ডার বলে বিক্কিরি করে দিচ্ছে না?
পুরোহিত: ‘থামো!’ আছে, পরিকাথামো নেই।
বেঁটে: এ বাবা, যা-তা হচ্ছে। আসল কথা, কাটাপোনা আছে, ব্যবস্থাপনা নেই।
বাবা: হেহে, চারাপোনা আছে, পরিকল্পনা নেই।
কাকা: আরে ব্যাস ব্যাস, এবার খেতে চলুন। আর দেরি করলে দেখবেন শেপ আছে, বাইসেপ নেই।
লম্বা: ভয় নেই, অনন্ত লাঞ্চ। রিকশার বডিতে যেমন লেখা থাকে, এদেরও ওল্টালে দেখা যাবে: হাইপোথেকেটেড টু কোভিড, ইন্ডিয়া গভঃ ব্রাঞ্চ।