ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • শুভারম্ভ: পর্ব ৫


    শুভা মুদ্গল (Shubha Mudgal) (May 22, 2021)
     

    পর্ব ২

    চিল্লা: পর্ব ৩

    মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত রেওয়াজ, এক্সারসাইজ, তালিম ও বহু বিশদ পরিকল্পনার পরে অবশেষে এল সেই বিশেষ দিনটি। সিরি ফোর্ট প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছে গেলেন নির্মলা এবং বীণা, পিছনের গেট দিয়ে ঢুকলেই সোজা সাজঘর, যেটি সেদিন নির্মলার জন্য রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। এন কে’র এক চ্যালা আগেরদিন সন্ধেবেলাতেই সাজঘরে নির্মলার নিজের আরামকেদারা এবং পা-দানি রেখে গিয়েছিল, যাতে ভদ্রমহিলা একটু আরাম করেই বসতে পারেন— সাজঘরে রাখা বাকি চেয়ারগুলোর গদিতে সন্দেহজনক রকমের ময়লা জমেছে কিনা! জনাদুয়েক জমাদারকে ভাড়া করা হয়েছিল বাথরুমগুলো আগাপাশতলা সাফ করে রুম ফ্রেশনার এবং সাবানের ডিসপেন্সার রেখে যাবার জন্যে। সাজঘরের আয়নাগুলোকে খবরের কাগজ দিয়ে রগড়ে মোছা হয়েছিল, সেগুলোও ঝকমক করে যেন স্বাগত জানাচ্ছিল শিল্পীকে। একপাশে সাজানো একটা ট্রলি, তাতে চা-কফি বানানোর বৈদ্যুতিক কেটলি, চায়ের ব্যাগ, চিনি-চামচ এবং শুকনো ফলের বেশ কিছু বয়াম রাখা। নির্মলা একটু আরাম করে বসতে না বসতেই ঘরে ভিড় করে ঢুকে পড়লেন তাঁর একদল আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব। এঁরা মূলত মহিলা, কয়েকজনের লেজুড় হিসেবে কিছু ছেলেপিলেও এসেছে। সকলেই নির্মলাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতে চান এ-সন্ধ্যার জন্য, সকলেই পাশে আছেন।

    এই মহিলাদের মধ্যে এক যুবতী নির্মলাকে সম্ভাষণ জানিয়ে বললেন, ‘বৌদি, আমরা আপনাকে খুব বেশিক্ষণ জ্বালাব না। শুধু জিজ্ঞেস করতে আসা, আপনার আর আপনার দলের জন্য কিছু বাড়িতে রান্না করা খাবার পাঠাতে পারি কি? পারি না? আচ্ছা কেবল একটু টাটকা ফলের রস আর কিছু টুকিটাকি খাবার? সেটাও না? সে কী, চিল্লা শেষ হওয়া পর্যন্ত আপনি উপোস করবেন? বাপ রে! আপনি পারেনও বটে বৌদি। এই তোমরা শুনছ? নির্মলা বৌদি আজকে আ— (‘আমরণ’ বলতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে সামলে নিয়ে কেলেঙ্কারিটা এড়ালেন), ইয়ে মানে— চিল্লা শেষ হওয়া পর্যন্ত অনশন করবেন!’ মাসিমাদের মধ্যে একটু বয়স্ক একজন এ-কথা শুনে খিক করে হেসে মিচকে দৃষ্টিতে চোখ মারলেন, তারপর নিচু গলায় কী যেন একটা বললেন। এর ফলে ফিকফিক করে যে-হাসির রোলটা উঠল, তা নির্মলা বা বীণার কান এড়াল না। অতঃপর চটপট আন্ডাবাচ্চা সমেত সখী-সমিতিকে ঘরের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা গেল।

    অযাচিত ভিড়ের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে নির্মলা এসে আরামকেদারায় বসলেন, পা তুলে দিলেন পা-দানির উপরে, টুক করে একটা ছোট্ট ঘুম দিয়ে নেবেন বলে। কিছুক্ষণ পরেই তৈরি হওয়ার সময় হয়ে গেল। অনুষ্ঠানের জন্য একজন মেক-আপ শিল্পী, একজন চুলের স্টাইলিস্ট এবং একজন সাজপোশাকের সহকারীকে ভাড়া করা হয়েছিল। নির্মলাদের সঙ্গে যে প্রকাণ্ড সুটকেসটির আবির্ভাব হয়েছিল, তা থেকে চার সেট পোশাক বার করে আনল বীণা। পোশাকগুলো চোখে পড়তেই বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইল সাজপোশাক ও মেক-আপের টিম। প্রথাগত ভাবে কত্থকশিল্পীরা যে পেশোয়াজ বা সাবেকি লেহেঙ্গা-চোলি পরে থাকেন, তার বদলে নির্মলা ঠিক করেছিলেন, নিজে গবেষণা করে, একটু অন্যরকম পোশাকের উদ্ভাবন করবেন। সুটকেস থেকে বেরোল লাল, নীল, সবুজ ও লেবু-রঙা হলদে চারটি উদ্ভট রকমের চকমকে টু-পিস পোশাক। ‘জল বিন মছলি নৃত্য বিন বিজলি’ সিনেমার একটি নাচের দৃশ্যে মুখ্যাভিনেত্রী পোশাক পরেছিলেন, তার আদলেই এগুলো তৈরি। চোখ-ধাঁধিয়ে যাওয়াটা একটু ধাতস্থ হলে, প্রথম দর্শনে মনে হয় ড্রেসগুলো ভরতনাট্যমের পোশাক এবং জলপরি বা মারমেডের বেশের এক জগাখিচুড়ি। প্রতিটি পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গজের তৈরি স্বচ্ছ, ঝকমকে ওড়নাও আমদানি করা হয়েছিল। ফাইল বের করে বীণা চুলের স্টাইলিস্টকে ওই সিনেমার একটি স্থিরচিত্র দেখিয়ে বোঝাতে লাগলেন, নির্মলার কী ধরনের বাহারি বাবরি চুল দরকার, যার উপর ওই ওড়নাগুলো জড়িয়ে নেওয়া যাবে। যে যার কাজ শুরু করলেন, এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিঁদুর-পরিহিতা, হাস্যমুখ উত্তর ভারতীয় গৃহবধূ থেকে নির্মলা ভোল পালটে হয়ে উঠলেন বেশ চটকদার একটি বিচিত্র জীব।

    প্রথাগত ভাবে কত্থকশিল্পীরা যে পেশোয়াজ বা সাবেকি লেহেঙ্গা-চোলি পরে থাকেন, তার বদলে নির্মলা ঠিক করেছিলেন, নিজে গবেষণা করে, একটু অন্যরকম পোশাকের উদ্ভাবন করবেন। সুটকেস থেকে বেরোল লাল, নীল, সবুজ ও লেবু-রঙা হলদে চারটি উদ্ভট রকমের চকমকে টু-পিস পোশাক। ‘জল বিন মছলি নৃত্য বিন বিজলি’ সিনেমার একটি নাচের দৃশ্যে মুখ্যাভিনেত্রী পোশাক পরেছিলেন, তার আদলেই এগুলো তৈরি। চোখ-ধাঁধিয়ে যাওয়াটা একটু ধাতস্থ হলে, প্রথম দর্শনে মনে হয় ড্রেসগুলো ভরতনাট্যমের পোশাক এবং জলপরি বা মারমেডের বেশের এক জগাখিচুড়ি

    সে-জীবের চোখে বেড়ালমার্কা মেক-আপ ও চকমকি আই-শ্যাডো, মুখে গোলাপির গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রায় লালচে বেগুনি রঙের বাহার, ঠোঁটে ক্যাটকেটে লাল লিপস্টিক, নখে নেলপালিশ, আর মাথায় নানারকম বিচিত্র জিনিস গোঁজা একটা প্রকাণ্ড খোঁপা। এই শেষের বস্তুটি দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর মাথার উপর সগর্বে ফুলে উঠে, তার উপরে রুপোর তৈরি একটি চোঙা আকৃতির গয়না, আর সবার উপরে জড়ানো একটি গজের ওড়না, নির্মলার অর্ধেক মুখ তাতে ঢাকা পড়েছে। চারটি পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে চার রঙের কাচের চুড়ি শোভা পেল তাঁর কবজিতে, চুড়ির পিছনে-সামনে একটি করে মোটা ঝকঝকে বালা। কোমরে শক্ত করে বাঁধা হল একাধিক বৃত্ত ও রেশমের কাজ করা একটা বড় কোমরবন্ধ। গোড়ালিতে ঘুংরুর নিচে ওই একই প্যাটার্নের চওড়া নুপূর, এবং হাতে ও পায়ে জটিল নকশায় আলতার চিহ্ন। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে, কোমরবন্ধ-নুপূর-ঘুংরু-বালা-চুড়ি সব একে অপরের সঙ্গে লেগে ঝনাৎ-ঝনাৎ আওয়াজ তুলতে লাগল, যেন ব্যান্ডপার্টি!

    সন্ধে সাতটায় চিল্লা শুরু হবার কথা, কিন্তু তার আগে আনুষ্ঠানিক ভাবে একটা উদ্বোধনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। নির্মলা ঠিক করেছিলেন, চিল্লার ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে, এবার আর আগের মতো ভিআইপি বা তারকাদের আমন্ত্রণ করা হবে না। তার বদলে ‘দিদি’, অর্থাৎ রেবতী গুহ নিজে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করবেন, হয়তো দু’চার কথায় শুভেচ্ছা জানাবেন, আর তারপরে গুরুর আশীর্বাদ নিয়ে, গণপতি, গুরু, কৃষ্ণ, সরস্বতী ও হিন্দু ধর্মের অন্য দেবদেবীদের সংস্কৃত শ্লোকপাঠের সঙ্গে শুরু হবে চিল্লা। বেচারা রেবতী পড়লেন মুশকিলে, একেই জনসমক্ষে কথা বলতে ভদ্রমহিলার খুব একটা আগ্রহ নেই, তার উপর নির্মলার অনুষ্ঠানে যে হাসির রোল বয়ে যেত, সে বিষয়ে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিলেন। অতএব অনুষ্ঠানের সূচনা করার গুরুদায়িত্ব, এবং নির্মলার মতো শিল্পীর গুরু বলে চিহ্নিত হলে যে মশকরার মুখে তাঁকে পড়তে হবে, মরিয়া হয়ে এই দুয়ের হাত থেকেই রেহাই পাবার উপায় খুঁজতে শুরু করলেন রেবতী। অবশেষে, তাঁর ভীষণ জ্বর হয়েছে, আসতে পারছেন না, কিন্তু নিজের শুভেচ্ছাবার্তা লিখে পাঠাচ্ছেন, এই মর্মে একটি চিঠি উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা আগে নিজের এক শিষ্যার হাত দিয়ে নির্মলার কাছে পাঠালেন তিনি। নির্মলার ইচ্ছে ছিল জনসমক্ষে রেবতীর আশীর্বাদ নেবেন বলে আগে থেকেই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু পরিকল্পনায় এই পরিবর্তনের কথা শুনে ঠিক করলেন, শ্লোকপাঠ শুরু হওয়ার পরে তিনি নেপথ্য থেকে মঞ্চে প্রবেশ করবেন নাটুকে ঢঙে। নাচতে নাচতে প্রদীপটি তিনি নিজেই জ্বালাবেন, যে-প্রথা তাঁর হাত ধরে বেঁচে থাকছে— তার একটি রূপক হিসেবে।

    ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook