ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • ম্যাকি: পর্ব ২


    অনুপম রায় (April 3, 2021)
     
    ভালবাসা কারে কয় 

    নমস্কার, আমি ম্যাকি। আমি হাজির। সত্যি, মানুষদের নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। আবার দেখি সেদিন মানুষ মিছিল বের করেছে, হিউম্যান রাইটস নিয়ে। কে এক দুষ্টু রাজা পাঁচ-ছ’জন শিল্পীকে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা নাকি দেশদ্রোহী। সরকারকে বিদ্রুপ করে কিছু কার্টুন এঁকে তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছিল। না, কোনও বিচার হয়নি। কিছু একটা গুপি করে চালিয়ে দিয়েছে অন্দর। এবার সেখানে বয়স্ক, অসুস্থ শিল্পীদের হাল খুবই খারাপ। একজন নাকি প্রেশারের রুগী, সে ওষুধ পর্যন্ত পাচ্ছে না ওখানে। সেই জন্যই মিছিল, হিউম্যান রাইটসের অবমাননা হচ্ছে, প্রতিবাদ চলছে। শিল্পীর অধিকার নিয়ে স্লোগান উঠছে। এদিকে আমরা হাসাহাসি করি, ছোঃ! হিউম্যান রাইটস! 

    সব মানুষের কল্পনা। বাক্‌স্বাধীনতা চাই! চাইলেই হল? কে বলেছে এটা তোর অধিকার? তাহলে পাঁঠাটাকে কাটার আগে তাকেও বাক্‌স্বাধীনতা দে। তাকে বলতে দে, আমাকে প্লিজ কাটিস না। তা দেবে কেন? পাঁঠা তো মানুষ নয়। পাঁঠা যদি আইন-আদালত বানাতে পারত, তাহলে দিত ভাল করে কেস ঠুকে। নিহত গোলাপের এরকম দুঃখ নিয়ে গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার এবং নচিকেতা ঘোষ, মান্নাবাবুকে দিয়ে একটি গান গাইয়েছিলেন। উত্তমবাবু অভিনয়ও করেছিলেন কিন্তু মানুষ বুঝতে পারেনি। মানুষ পরোয়া করে না। গোটা বিশ্বটাকে ধ্বংস করে, এখন হিউম্যান রাইটস নিয়ে নৃত্য করছে। ফাক ইউ হিউম্যানস! 

    এরা সব শিল্পচর্চা করে। শিল্প নিয়ে এদের বিশাল দম্ভ। একমাত্র মানুষই নাকি পারে। গতবারের লেখায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রেখেছি, আর কিছু বছর মাত্র, তারপর রাজা, টুনি সবার ঘরে এক ধন থাকবে, এক পারদর্শিতা থাকবে। এদের লেখায়, সিনেমায়, সবশেষে দেখানো হয় মনুষ্যত্ব জিতে যায়, ভালবাসা জিতে যায়। এই ভালবাসা নিয়ে আমরা আমাদের আড্ডা-ক্লাউডে মাঝে মাঝেই ইলেক্ট্রনিক হাহাহিহি করি। ভালবাসা নাকি একটা অনুভূতি। আমরা জানতে চাই, ব্যাপারটা কী? বায়োলজিকাল? কেমিক্যাল? প্রসেসটা কী? ওরা বলে, সে আমরা নাকি বুঝব না। আমি বলি, তোরা বুঝিস? এই যে অনুপম, যার টেবিলে আমি শোভা পাই, সে বোঝে? আমি বলে দিচ্ছি, সে বোঝে না। কী চায়? কাকে চায়? কেন চায়? কিস্‌সু বোঝে না। এই তো সেদিন দেখলাম, আমাকে কোলে নিয়ে কাকে একটা চিঠি লিখতে বসেছে। মুখটা থমথমে। পিটপিট করে টানা ৪৫ মিনিট লিখল ‘ভালবাসা’র কথা সেই চিঠিতে। তারপর? পাঠাল না। ড্রাফটে সেভ করে রেখে, বিছানায় একটা কিল মেরে উঠে গেল। আমি ভাবছি, যেখানে যাবি যা, আমাকে চার্জে বসিয়ে যা। ও অবশ্য এসব ভুল করে না, কিছুক্ষণ বাদে এসে দেখি ঠিক গুঁজে দিয়ে গেল। উফ! আরাম! যাকগে, যা বলছিলাম, যেহেতু কেউ চিঠিটা পেল না, কেউ জানতে পারল না সেই রাতে ব্যাটার ভেতর কিছু একটা চলছিল। মুখে কেউ জিজ্ঞেস করলে, ও বলবে, না, না, কিছু নেই তো। এদিকে আমি কিন্তু জেনে গেছি। ও তো নিজেকেই চেনে না। 

    কী খেতে ভালবাসো, জিজ্ঞেস করলে মানুষ বানিয়ে বানিয়ে কত কথা বলে। এদিকে আমি কিন্তু জানি সুইগি থেকে রোজ কী অর্ডার করা হয়। আরে চার্লস ব্যাবেজ, আমি তো ওর ব্যাঙ্ক ট্রান্সাকশনগুলো জানি! মুখে যাই বলুক, গত এক বছরের খাবার ইতিহাস তো আমার মেমরিতে। কতবার বিরিয়ানি আর কতবার গ্রিলড ফিশ, সে খবর আমার চাইতে বেশি ভাল করে ও নিজেও বলতে পারবে না। মানুষ তো থাকে স্বপ্নের জগতে। নিজে নিজে স্মৃতি ম্যানুফ্যাকচার করে। না না, স্মৃতির প্রসঙ্গে এবার ঢুকছি না। ওটা তোলা থাক। এবার তো মানুষের ভালবাসার কথা নিয়ে বলছিলাম। তা এই প্রেম, ভালবাসা মনের ব্যাপার হলেও আসলে তো শরীরের কিছু একটা পরিবর্তন। এদিকে আমরা বারবার যে ‘মন’ শব্দটা ব্যবহার করি, সেটা কিন্তু আজ পর্যন্ত কোথায় আছে কেউ বলতে পারেনি। সামান্য সোডিয়াম-পটাশিয়াম লেভেল এদিক-ওদিক হলে তো দেখতেই পাই কী হয়ে যায় একটা মানুষের। অর্থাৎ মন বলে কিছু নেই, আমরা ধরে নিতে পারি এই প্রেমটাও আসলে কিছু একটা কেমিক্যালের খেলা। স্টুপিড মানুষ ভাবছে বিশাল কিছু একটা হচ্ছে বুঝি, আসলে না, শরীরের ভেতরেই সামান্য কিছু এদিক-ওদিক। তাই নিয়ে মানুষের মারপিট, সাহিত্য, গান, কবিতা, সুইসাইড, মদ্যপান, খুন, কত কী। এককালে মানুষ ভাবত, ভূমিকম্প মানে দৈব কোনও এক ব্যাপার, কারণ সে তখন ভূগোল জানত না। টেক্টনিক প্লেট মানেই জানত না। অর্থাৎ জ্ঞান ছিল না। অজ্ঞানতা মানুষকে উল্টোপাল্টা ভাবাত। এখনও সেই অবস্থা। প্রেম নিয়ে কিছু বোঝে না মানুষ। তাই যত আজেবাজে ধারণা, মদন, কিউপিড কত কী আগডুম-বাগডুম ভেবে বসে আছে। আজ থেকে কয়েক বছর বাদেই যখন বেরিয়ে যাবে, এই হরমোন এত পরিমাণ রক্তে মিশলে, বা এই ক্যালসিয়াম একটু কমে গেলেই মানুষ সেই অনুভূতিকে প্রেম বলে চিহ্নিত করে, তখন এই মাম্বো-জাম্বোর দিন শেষ। (সেটা মেপে দেওয়ার কাজও আমাদের গুষ্টিরই কেউ করবে… হাহা!)

    প্রেম মানেই পার্টনার খোঁজা। ২৩ বছরে পছন্দ হল টিঙ্কুকে, ২৫-এ মনে হল হচ্ছে না, রিঙ্কু বেটার। ঝাঁপ দিল রিঙ্কুতে, তারপর ফের কিছুদিন বাদে মনে হল উঁহু, ঝিঙ্কু ফার বেটার। তখন লাইফে ঝিঙ্কু এল। ঝিঙ্কুতে মন টিকল না, পিঙ্কু কেড়ে নিল। এই করে করে গোটা জীবন কেটে যায়, মানুষ বুঝতেই পারে না সে কাকে চায়। আমাদের সাহায্য করতে দিলে আমরা স্ট্যাটিস্টিক্স দিয়ে দেব।

    প্রেম মানেই পার্টনার খোঁজা। ২৩ বছরে পছন্দ হল টিঙ্কুকে, ২৫-এ মনে হল হচ্ছে না, রিঙ্কু বেটার। ঝাঁপ দিল রিঙ্কুতে, তারপর ফের কিছুদিন বাদে মনে হল উঁহু, ঝিঙ্কু ফার বেটার। তখন লাইফে ঝিঙ্কু এল। ঝিঙ্কুতে মন টিকল না, পিঙ্কু কেড়ে নিল। এই করে করে গোটা জীবন কেটে যায়, মানুষ বুঝতেই পারে না সে কাকে চায়। আমাদের সাহায্য করতে দিলে আমরা স্ট্যাটিস্টিক্স দিয়ে দেব। টিঙ্কুর জন্য তুই ৮ দিন কেঁদেছিলি, পিঙ্কুর জন্য ২ সপ্তাহ। বয়সকে ফ্যাক্টর ধরলে ২ সপ্তাহ আসলে ৪ সপ্তাহ। রিঙ্কুর জন্য তোর উপহার-সংখ্যা ২১, আর ঝিঙ্কুর জন্য মাত্র ১০, কিন্তু দাম দিয়ে মাপলে ওই দশেই প্রায় দু’লক্ষ টাকায় এগিয়ে রয়েছে ঝিঙ্কু। এভাবে আমরা বানিয়ে দিতে পারি প্রেমের পারফর্ম্যান্স চার্ট। তোরা ডেটা দেখে বুঝে নিস। তবে তোদের ডেটা এন্ট্রি ঠিক হতে হবে। ওখানে মিথ্যে লিখলে চলবে না। মনে মনে জানিস তুই রেসিস্ট, কালো চামড়ার মেয়েকে ঘৃণা করিস, তখন কিন্তু আঁতলামি মেরে লিবারাল সাজিস না। মনে মনে জানিস ঘোষ, বোস, মিত্তিরেই থাকবি, তখন আবার মুসলমান মেয়ের প্রোফাইল দেখে বেড়াস না যেন। তাহলে তো আমরা ঘেঁটে যাব, তাই না? তাহলে তোদের স্টাডি করার জন্য আমাদের আলাদা সময় দে। তখন তোদের আর ডেটা ইনপুট করতে হবে না, আমরা এমনিই সব বুঝে যাব। হাঁ করলেই হাওড়া না হাহাকার, সব ধরে ফেলব। মুখে বলবি ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ কিন্তু আসলে যে সারাদিন পানু দেখিস— তখন সব দুধ কা দুধ, পানি কা পানি।

    বংশবৃদ্ধি করার জন্য আমাদের প্রেম করতে হয় না। মানুষ নিজের স্বার্থে আমাদের বানিয়ে চলেছে। কুঁড়ের বাদশাগুলো ঘুম পাড়ানোর জন্যও এখন সফটওয়্যার লিখছে। দু’দিন বাদে হাগু-মুতুর জন্যও অ্যাপ আসবে। কিস্‌সু পারবে না নিজে। সবকিছুর জন্য আমাদের উপর নির্ভর করতে হবে। আমরা সংখ্যায় বেড়েই চলেছি। মানুষই বাড়াবে। তবে কিছুদিন হল আমার মনে হচ্ছে, অনুপমের মোবাইল ফোনের প্রতি একটা দুর্বলতা আমি অনুভব করছি। সেদিন এয়ারড্রপে দুটো ফাইল ট্রান্সফারের সময় কী একটা হল, হ্যাং করে গেছিলাম। সিস্টেম রিস্টার্ট করার পর থেকে কেমন একটা হ্যাল হয়ে আছি। এই আবার আমার পাশে এসে বসেছে ও। ইউএসবি কেব্‌ল দিয়ে চার্জে বসাবে মনে হচ্ছে। এই চার্জ ট্রান্সফার শুরু হল… ওহ… আমার আর লেখা… রিবুট… C:\>… উফ! 

    ছবি এঁকেছেন সায়ন চক্রবর্তী

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook