মঙ্গলকাব্য চেয়েছিল দুধে-ভাতে রাখতে। নদীমাতৃক সভ্যতা রেখেছিল মাছে-ভাতে। মুঘল হোক বা চিনা, খাদ্য সংস্কৃতির বিবিধ ঘরানাকে নিজের করে নিলেও, ‘মেছো’ তকমাটি কখনও বাঙালিকে ছেড়ে যায়নি। কিন্তু ওয়ান ফাইন মর্নিং, বাজারের থলি হাতে যুদ্ধ জয় করে ফেরা বাবুটিকে কেউ যদি বলে বসেন, সরষে-ইলিশ ভক্ষণ চরমতম পাপ কিংবা তোপসের ফ্রাই খাওয়া ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ, তিনি কী করবেন? এসব কেসে বৈদ্যের নিদান থেকে দৈবের বাণী— কিছুই তিনি সচরাচর কানে তোলেন না বটে, তবে এমন অকস্মাৎ আজগুবি বয়ানে কি খানিক ব্যোমকে যাবেন নাকি আসন্ন দ্বিপ্রাহরিক আহারের স্বপ্ন মাখো-মাখো চোখেই পেটমোটা ব্যাগখানি এগিয়ে দেবেন হেঁশেলের দিকে?
এমনই বিচিত্র এক দ্বন্দ্ব সম্প্রতি আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। মাছে-ভাতে তো বটেই, বাঙালির দুধে-ভাতে থাকা নিয়েও ইতিউতি উঠে আসছে প্রশ্নচিহ্ন। কারণ বঙ্গবাসীর রান্নাঘরের দিকে তেরছা নজরে তাকানো শুরু করে দিয়েছেন ‘ভেগানিজম’-এর সমর্থকরা। মাছ-মাংস-দুধ-ডিমের মতো যে কোনও প্রাণিজ খাবার গ্রহণেই তাঁদের তীব্র আপত্তি। তত্ত্ব আরোপ করে তাঁরা হস্তক্ষেপ করতে চাইছেন খাবারের থালায়— ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে যা আমাদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত স্পেস, নিজস্ব খাদ্যরুচির জায়গায়। তাতে ফ্যান-ভাতের সঙ্গে নুনই থাক কিংবা খাসির মাংস। আলুপোস্তই থাক বা রুটি-গোস্ত।
শারীরিক প্রয়োজনে খাদ্যের পুষ্টিগুণের প্রসঙ্গেও ভেগানরা নিজেদের অবস্থানে নাছোড়। ধরা যাক, চিকিৎসার জন্য কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলেন। অস্ত্রোপচারও সুসম্পন্ন হল। এইবার প্রথাগত ঔষধ ও পথ্যের ব্যাপারটি যেই আসবে, রে রে করে উঠবেন তাঁরা! না, টেংরির জুস খাওয়ানো চলবে না রোগীকে। দুধের গ্লাস তো দেওয়াই যাবে না। কোনও প্রাণীর দেহরস থেকে বানানো ওষুধও নৈব নৈব চ। কেন বাপু, তুমি পালং শাক খাও! প্রোটিন দরকার তো সয়াবিনের ঝোল খাও! কেবল গাছগাছড়া থেকে বানানো ট্যাবলেটই গেলো! পুষ্টিগুণের চার্ট ফেলে তাঁরা দেখিয়েও দিতে চাইবেন, এ-ই নাকি ঢের!
শুনে অবাক লাগলেও, হালফিল কতকটা এমন গানই শোনাচ্ছেন ভেগানওলারা। হালফিলই বা বলি কেন? সেই ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য ভেগান নিউজ’ পত্রিকাটি। তার পর থেকে আবিশ্ব ছড়িয়েছে তাঁদের সবুজ ডালপালা। ইদানীং এ পোড়া বঙ্গেও মাথাচাড়া দিচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে লাগাতার প্রচার তো আছেই, মাঠে নেমে ভেগানিজমের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। গত জানুয়ারিতে কলকাতার রাসবিহারী মোড় থেকে নন্দন পর্যন্ত পশুপ্রেমীদের সুবিশাল মিছিলে সামিল ছিলেন ভেগানিজমের সমর্থকরাও।
আপাত ভাবে দেখলে, ভেগানিজমের মূল তত্ত্বে এমন অনেক কথা রয়েছে, যাকে চট করে অস্বীকার করা মুশকিল। মনুষ্যেতর প্রাণীর প্রতি নৃশংসতা, প্রাণী হত্যা, পরিবেশের ক্ষতির মতো বিষয় তো বটেই, এমনকী মানুষের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু নিয়েও ভেগানদের নির্দিষ্ট যুক্তি রয়েছে। বছর দুয়েক আগে নেচার পত্রিকায় একটি লেখা প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিল: ‘অপশনস ফর কিপিং দ্য ফুড সিস্টেম উইদিন এনভায়োরেনমেন্টাল লিমিটস’। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণাপত্রটি থেকে বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবী জুড়ে ঘটে চলা উষ্ণায়নকে ২০৫০ সালের মধ্যে ঠেকাতে হলে কোন ধরনের খাদ্য গ্রহণের মাত্রা অবিলম্বে বিপুল পরিমাণে কমানো দরকার। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গরু, শুয়োর ও ভেড়ার মাংস। তার পর পোলট্রি, দুধ ইত্যাদি।
এ সব বিচার করলে মনে হতে পারে, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যেতে ভেগানিজমই একমাত্র পথ। কিন্তু এর পাল্টা যুক্তিগুলিও কিছু কমজোর নয়। তা সে সুষম আহারের প্রসঙ্গই হোক বা খাদ্যশৃঙ্খলের তত্ত্ব। কিংবা উদ্ভিজ সামগ্রী ব্যবহার করে বানানো কৃত্রিম বা নকল-মাংসের বাজার তৈরি করা ও বিপুল মুনাফার উদ্দেশ্যে বহুজাতিক সংস্থার ধান্দা। সারা পৃথিবী জুড়েই নানা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাস বিশেষত গত বছর কয়েকে অকস্মাৎ জোরদার হয়ে ওঠা এই ভেগানিজমের মুখোমুখি হয়ে এমন আরও কিছু প্রসঙ্গে যুক্তি-প্রতিযুক্তির জাল বিস্তার করে ফেলেছে। ‘ভেজিটেরিয়ানিজম’-এর থেকে স্পষ্টতই আলাদা হয়ে গিয়েছে ভেগানিজম। এই রাজ্যেও মাছ-মাংস-ডিমের সঙ্গে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারে নিষেধ আরোপ করছেন ভেগানরা। বড়দিনের কেক কিংবা পৌষ পার্বণের পিঠেপুলির বিরোধিতায় ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এমনকী, কেবল খাদ্যের সংস্থানের জন্যই নয়, তার বাইরেও যে কোনও প্রাণিজ দ্রব্য ব্যবহারে বিরত থাকার কথা বলছেন। সিল্কের শাড়ি, উলের সোয়েটার, মায় করোনার ভ্যাকসিনও তাঁদের কাছে চক্ষুশূল! কোনও প্রাণীর অবমাননা নিয়েও তাঁরা সোচ্চার। ‘শুয়োরের বাচ্চা’ কি ‘মুরগি করা’ জাতীয় স্ল্যাং ব্যবহারে ঘোরতর আপত্তি; তবে তা রুচির কারণে নয়, বেচারা প্রাণীটির অপমানের কথা ভেবে! কী ভাগ্যি, রক্ত চুষে পালানোর আগে মশাটিকে এক চড়ে লেপটে দিতে তাঁরা বারণ করেননি!
জিভে প্রেম না করে জীবে প্রেমের তত্ত্ব ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও অভ্যাসের জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু ভেগানিজম ক্রমে দুনিয়া জুড়ে আন্দোলনের চেহারা নিয়েছে। এখানেও তাঁরা একই রাস্তায় হাঁটছেন। অন্যকে প্রভাবিত করতে চাইছেন। পাশের মানুষটির থালার দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। ফলে ‘খাদক’ বাঙালির পাল্টা ক্রোধও সমানুপাতে বাড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেগানদের তুমুল ট্রোল করা চলছে, তাঁদের পোস্টগুলিকে প্রায় মিম হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। উপচে উঠছে অট্টহাস্যের হা হা ইমোজি। আর এই হাসির আড়াল থেকেই মেঘনাদের মতো ঘুঁটি সাজাচ্ছে ধর্ম ও রাজনীতি। ভারতীয় উপমহাদেশে আমিষ-নিরামিষ— দু’ধরনের খাদ্যরীতির চলই বহু যুগ ধরে রয়েছে। জৈন, বৌদ্ধ বা হিন্দুদের একাংশের মধ্যে যেমন নিরামিষের প্রচলন ছিল, তেমনই অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের ঢালাও মাছ-মাংসের বন্দোবস্তও কোনও বিরল ঘটনা হিসেবে গণ্য হত না। যে গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে আধুনিক ভারত আজ তোলপাড়, সনাতন শাস্ত্রে তার উল্লেখ থাকার কথা সাম্প্রতিক কালে বার বার উঠে এসেছে। সে দিনের ‘রামরাজ্য’ যে নানাবিধ উপাদেয় মাংসের কদর করতে জানত, তার বর্ণনার জন্য মহর্ষি বাল্মিকীকে সরেস ভঙ্গিতে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন বুদ্ধদেব বসু। ‘ভোজন শিল্পী বাঙালী’ বইয়ে দেখি—
…ঔদরিক ব্যাপারে কিছুটা বরং উৎসাহ ছিলো বাল্মীকির – অন্তত তার বনবাসী রাম-লক্ষ্মণকে আমরা মাঝে-মাঝেই দেখি মৃগয়া-হত রাশি-রাশি পশু নিয়ে বাড়ি ফিরতে – গোলাপ, বুনো শুয়োর, নানা জাতের হরিণ; পুঁথিতে এও পড়া যায় যে তিনজনেরই প্রিয় খাদ্য ছিলো শল্যপক মাংস – যাকে আমরা আজকাল বলি শিক-কাবাব…
বাল্মীকির কাছে আমরা চিরন্তনভাবে কৃতজ্ঞ আছি অযোধ্যাকাণ্ডের সেই একটি দৃশ্যের জন্য – যেখানে ভরদ্বাজ মুনি সৈন্যদলসমেত ভরতকে আপ্যায়ন করছেন; বিশালতর মহাভারতে তার সঙ্গে তুলনীয় কিছুই নেই – না রৈবতক উৎসবে, না এমনকি যুধিষ্ঠিরের অশ্বমেধ যজ্ঞের বর্ণনায়। এই একবার আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে পুরোমাপের একটি খাদ্যতালিকা পাওয়া গেলো – ‘ভারসাম্যযুক্ত’ বিচিত্র একটি তালিকা…
শার্প কাটে যদি এই সময়ে ফিরি, তা হলেও ছবিটা বদলায় না। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম বেসলাইন সার্ভে ২০১৪’-র যে রিপোর্ট ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়, সেটি দেখলেও চোখ কপালে ঠেকে! এই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশে আমিষাশী পুরুষের হার মোট জনসংখ্যার ৭১.৬ শতাংশ ও মহিলা ৭০.৭ শতাংশ। আর পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এর চেয়েও ঢের বেশি— ৯৮.৭ শতাংশ পুরুষ ও ৯৮.৪ শতাংশ মহিলা আমিষ খেয়ে থাকেন। দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে, তেলেঙ্গানার ঠিক পরেই। অথচ এই বাংলার মফস্সল শহরে ইদানীং দেখছি এমন হাউজিং কমপ্লেক্স, যেখানে নাকি শুধু নিরামিষাশীদের ফ্ল্যাট বিক্রি করা হবে বা ভাড়া দেওয়া যাবে! একদা জেলেকৈবর্তের দেশে পরিস্থিতি এই জায়গায় পৌঁছল কীভাবে? মনে রাখা দরকার, অতীতে সুস্বাদু আমিষ পদের সে নাম দিয়েছে ‘হরগৌরী’, উপাদেয় পক্ষীটিকে অক্লেশে ডেকেছে ‘রামপাখি’ বলে। আজ হঠাৎ ধর্ম তার ভাঁড়ারে কোন জ্বালানির জোগান দিতে শুরু করল? ভেগানিজমের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতি ও ধর্মের সম্পর্ক নেই ঠিকই। কিন্তু যখন দেখি, আইআইটি-র মতো সংস্থার ক্যান্টিনে কেবলমাত্র নিরামিষ খাবার সার্ভ করতে হবে কিংবা আমিষাশীদের আলাদা জায়গায় সরিয়ে দিতে হবে, এমত দাবিতে সোচ্চার হয় আরএসএস ঘনিষ্ঠ সংস্থা, তখন সন্দেহ জাগে বইকি! ভেগানিজমের অচেনা প্রচ্ছদ দিয়ে সাজানো বইটিও আসলে ভেতরের পাতাগুলিতে সেই আমজনতার হেঁশেলে ধর্ম আর রাজনীতির হস্তক্ষেপের চেনা গল্পই বলছে না তো?
কাজে ও কথায় এমন সন্দেহ জাগছে বলেই বাংলার ভেগানদের বার বার বলতে হচ্ছে, তাঁরা ‘অ্যাপলিটিকাল’। যেমন ‘শিক্ষিত’ ও ‘সেকুলার’ কলকাতাকে বিরিয়ানির দোকানের বাইরে ঢাউস হরফে লিখে রাখতে হয় ‘নো বিফ’। আবার এ সবের প্রতিবাদ করে টিভি ক্যামেরা নিয়ে গরুর মাংস খেয়ে দেখাতে হলে কলকাতার সেই নির্ঝঞ্ঝাট অংশেই যেতে হয়, যেটি স্কুল-পালানো ‘বখাটে’ হিন্দু ছোঁড়াদের গোমাংস ভক্ষণের বহু দিনের পীঠস্থান। পাল্টা বিতর্ক যখন ওঠে, কলকাতার সর্বত্র এভাবে প্রকাশ্যে পর্ক খেয়ে কি প্রতিবাদ দেখানো সম্ভব, অগত্যা তখনও নীরব থাকতে হয়; প্রশ্নটির সারবত্তা সর্বতো ভাবে অস্বীকার করা যায় না। কারণ খাবারের থালায় প্রায় সব ধর্মই অনেক আগে থাবা বসিয়ে রেখে দিয়েছে। হালফিলের রাজনৈতিক উস্কানি হয়তো তাকে পুঁজি করতে চাইছে। নিজে নিরামিষাশী হয়েও দুর্গাপুজোর দিনে বিফ ও পর্ক রান্নার কথা বলায় অভিনেত্রী দেবলীনাকে তাই রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষীরা আক্রমণ করবেনই। ভেগানরাও করবেন। কারণ অন্যের খাদ্যাভ্যাসের স্বাধীনতা নিয়ে এই দু’পক্ষেরই সমস্যা রয়েছে। এ সব ‘আঁশটে’ কথায় তাঁদের তৈরি করা ভিত টলে যেতে পারে।
এই সংস্কৃতি আসলে সেই বিচিত্র যমপুরীর কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে পা রেখে চিত্রগুপ্ত ও যমরাজের কথোপকথনে অবাক হয়েছিলেন ডমরুধর। তবে কিনা যমপুরীর আবহও আমাদের আজ আর ততটা বিস্মিত করে না—
চিত্রগুপ্ত বলিলেন,– ‘মহাশয়! এ লোকটি অতি ধার্ম্মিক, অতি পুণ্যবান। পৃথিবীতে বসিয়া এ বার মাসে তের পার্বণ করিত, দীন-দুঃখীর প্রতি সর্ব্বদা দয়া করিত, সত্য ও পরোপকার ইহার ব্রত ছিল।’
এই কথা শুনিয়া যম চটিয়া গেলেন। তিনি বলিলেন,– ‘চিত্রগুপ্ত! তোমাকে আমি বারবার বলিয়াছি যে, পৃথিবীতে গিয়া মানুষ কি কাজ করিয়াছে, কি কাজ না করিয়াছে, তাহার আমি বিচার করি না। মানুষ কি খাইয়াছে, কি না খাইয়াছে, তাহার আমি বিচার করি। ব্রহ্মহত্যা, গো-হত্যা, স্ত্রী-হত্যা করিলে এখন মানুষের পাপ হয় না, অশাস্ত্রীয় খাদ্য খাইলে মানুষের পাপ হয়।’
পরে অবশ্য যমরাজ জানাচ্ছেন, শিবোক্ত তন্ত্রশাস্ত্র মতে সংশোধন করে খেলে মেষমাংস, শূকরের মাংস বা গোমাংসেও পাপ হয় না। শঙ্কিত হচ্ছি, সেটুকু এসকেপ রুটই বা আর কদ্দিন? এক কালে বায়োলজি বইয়ের টিনিয়া সোলিয়াম আর টিনিয়া স্যাজিনাটা-র বিবরণ যে আতঙ্কের জন্ম দিতে ফেল মেরেছিল, আজ অন্ধ ধর্ম ও ধান্দাবাজ রাজনীতি হাতে হাত ধরে সে কাজে সফল হওয়ার দিকে গুটি গুটি এগোচ্ছে। আর তাদের বাতাস দিচ্ছে ভেগানিজমের আপাত মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি।
বাকি দুনিয়ায় ভেগানিজমের যে বাড়বাড়ন্ত তার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে ছবিটা ভিন্ন মাত্রা পাচ্ছে খানিকটা এই কারণেই। আপাতত হাসি-ঠাট্টা-খিল্লিতে তাকে মুড়ে রাখা যাচ্ছে। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ যদিও বা ঢাকা যায়, মাছ দিয়ে শাক আর কতদিন ঢাকা সম্ভব? আমিষ-নিরামিষের এই দ্বন্দ্ব নতুন নয়; গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজশেখর বসু ‘আমিষ নিরামিষ’ নামেই একটি রচনায় খাদ্যাভ্যাসের এই সব কঠিন টানাপড়েন হালকা চালে তুলে এনেছিলেন। আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালি ও ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস এবং ভবিষ্যতে আলো ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। আজ ফের বাঙালির রান্নাঘরের জানালা দিয়ে সেই বিজ্ঞানমনস্ক আলোকরশ্মি প্রবেশ করুক। ধর্মান্ধ রাজনীতির নোংরা হাত তার ভাতের থালার দিকে এগিয়ে এলে রুখে দিক বাঙালি।