এই টি-টোয়েন্টি সিরিজ এর মধ্যেই একেবারে ধ্রুপদী মর্যাদা পেয়ে গেছে, একেবারে সমান-সমান অবস্থায় রোববারে শেষ ম্যাচটা খেলা হবে এবং বোঝা যাবে কে হল সিরিজ-জয়ী। এখনও অবধি সেরা পিচে, ভারত একেবারে সেই পরিকল্পনার ক্ষমতা দেখাল, যা তাদের ব়্যাংকিং-এ ২ নম্বরে নিয়ে গেছে: বুঝেশুনে খেলা, একটা ভাল স্কোর করা, আর দুরন্ত বল করা— হার্দিক পান্ডিয়া আর শার্দূল ঠাকুর যার নেতৃত্ব দিল।
প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচে ভারতের হারের প্রাথমিক কারণ হল, প্রথম ছ’ওভারের মধ্যে তিন উইকেট পড়ে যাওয়া। টসে জিতে ইংল্যান্ড দ্বিতীয়বার যখন ভারতকে ব্যাট করতে বলল, তখন ভারত ব্যাট করল খুব কমন সেন্স নিয়ে। ইংল্যান্ডের উঁচু মানের বোলিং আক্রমণ মোকাবিলার জন্য ভারত কোনও বেপরোয়া চেষ্টা করেনি, কিন্তু মারার বল পেলে ব্যাটসম্যান নিঃসঙ্কোচে মেরেছে।
সূর্যকুমার যাদব তর্কাতীত ভাবে একজন সত্যিকারের তারকা। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচের প্রথম বলে যে ভাবে ও ছয় মারল, তাতে আবারও বোঝা গেল, ও একেবারে জাত-ক্রিকেটার। সূর্যকে এই সুযোগটার জন্য সত্যি অনেক দিন অপেক্ষা করতে হল। কিন্তু সুযোগটা পেয়েই জোফ্রা আর্চার-এর বলে হুক করে একটা দুরন্ত ছয় মেরে, ও বহু দিন মনে রাখার মতো একটা মুহূর্ত তৈরি করে দিল। এ ছাড়া, আদিল রশিদ-এর একটা গুগলিতে এমন একটা ইনসাইড-আউট ড্রাইভ মারল এক্সট্রা কভার দিয়ে, সেটাই বলে দেয় ও নিজের প্রতিভা সম্পর্কে কতটা আত্মবিশ্বাসী। গত কয়েক মাসে, নতুন যারা এসেছে দলে, তাদের মনোভঙ্গি আর স্থৈর্য ভারতীয় দলের উন্নতির ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এবং সূর্যকুমার সেই ঝলমলে তালিকায় নতুন সংযোজন।
শ্রেয়স আইয়ার-ও শেষের দিকে নেমে খুব ভাল খেলেছে। দিল্লি ক্যাপিট্যালস-এর অধিনায়ক জানে যে, সব সময় ও হয়তো ভারতীয় টিমে নিজের পছন্দের জায়গায় ব্যাট করতে পারবে না। এবং সেই জন্যই নিজের খেলাটাকে আরও উন্নত করার জন্য যে ও পরিশ্রম করছে, সেটা স্পষ্ট। ওর খানদানি ভঙ্গিতে মারের আতসবাজি ভারতের স্কোর তুলে নিয়ে গিয়েছিল ভদ্রস্থ জায়গায়, তবে আরও ১৫ রান হলে হয়তো ভাল হত, কারণ বেশিমাত্রায় শিশির পড়ছিল।
ভুবনেশ্বর কুমার বল করতে এসে প্রথম ওভারটা মেডেন নিয়ে একটা দারুণ শুরু করেছিল, এবং দ্বিতীয় ওভারে সে ইংল্যান্ডের জস বাটলার-এর উইকেট তুলে নেয়। কিন্তু ইংল্যান্ডকে খেলায় ফিরিয়ে আনে জ্যাসন রয় এবং পরে জনি বেয়ারস্টো আর বেন স্টোকস-এর ব্যাটিং। যে কোনও ফর্ম্যাটেই সেরা ডট-বল হল এমন বল যাতে একটা উইকেট পড়ে, তাই শার্দূল যখন ভয়ঙ্কর স্টোকস এবং অভিজ্ঞ মর্গ্যানকে পর পর দু’বলে ফেরাল, ভারত আবার খেলায় ফিরে এল।
হার্দিক পান্ডিয়াকে যতই প্রশংসা করা হোক, যথেষ্ট নয়, কারণ সে চার ওভারে দিল মাত্র ১৬ রান আর তুলে নিল দু’উইকেট, যে খেলায় রান হচ্ছিল কিনা ওভার নয়ের বেশি। পিঠের একটা সার্জারি হওয়ার পর তাকে যে বাড়তি পরিশ্রমটা করতে হয়েছে, সেটাকে কৃতিত্ব দিতে হবে। আর কৃতিত্ব দিতে হবে বোলিং কোচ বি অরুণকেও, যে হার্দিকের বোলিং-এর প্রতি উৎসাহটা জিইয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।
সূর্যকুমারের আউট-টার সময় আম্পায়ারের ‘সফট সিগনাল’ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। এই সফট সিগনাল ব্যাপারটা নিয়েই নতুন করে ভাবা উচিত। যেখানে প্রযুক্তি দিয়েই আমরা অনেক কিছু ঠিক করে বুঝে উঠতে পারছি না, সেখানে মাঠে থাকা আম্পায়ার কীভাবে ৭০ গজ দূরে একটা ক্যাচ একদম ঠিকভাবে নেওয়া হচ্ছে কি না বুঝতে পারবেন?