ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • সাক্ষাৎকার: যোগেন চৌধুরী: পর্ব ১


    অর্ক দাশ (Arka Das) (February 15, 2021)
     

    এই অতিমারী আপনাকে শিল্পী হিসেবে কীভাবে প্রভাবিত করেছে? 

    আমি গত বছর একটা বড় লেখা লিখেছিলাম এই অবস্থার উপর। পৃথিবীটা আরও কাছাকাছি এল। আমরা আবার শিখলাম, সমস্যা একার হয় না, সবার হতে পারে, এবং একই সঙ্গে। এর ফলে, মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে কী করতে হবে তার একটা অন্য রকম দিশা তৈরি হবে এখন। 

    কোভিডের ফলে যে লকডাউনটা হল, তাতে আমরা সম্পূর্ণ ভাবে ঘরে বন্দি হয়ে গেলাম। আমি কলকাতাতেই আটকে গেছিলাম; আমার রাজ্যসভায় হ্যান্ডওভারের তারিখ ছিল এপ্রিল ; দেশে লকডাউন শুরু হয় মার্চ ২৩। আমি আর শান্তিনিকেতন ফিরতে পারিনি। কলকাতায় আমার শিল্পকেন্দ্র চারুবাসনা’ বন্ধ রেখেছিলাম বহু মাস।  

    এভাবে হঠাৎ আটকে পড়া, সংক্রমণের ভয় এই সব মিলিয়ে আমি বেশ ডিস্টার্বড হয়ে পড়ি, এবং তার মধ্যে কাজ করতে শুরু করি, বিশেষ করে লকডাউনের প্রথম দিকটায়। প্রথম পাঁচছ’মাস আমি কিছুকিছু কাজ করেছি, পরের দিকে নানা কারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এখন আবার কাজ শুরু করার ইচ্ছে আছে। 

    ছবির উপর যে কোনও সামাজিক অবস্থারই একটা প্রতিক্রিয়া হয়, তা সে সরাসরি হোক বা অন্য ভাবে। সরাসরি ভাবে কিছু ইমেজ আসতে পারে। অন্যদিকে, মনস্তত্ত্ব বদলে যেতে পারে। আজকে একটা ভূমিকম্প হলেও সেটা আমাদের মধ্যে একটা মানসিক পরিবর্তন করে দিয়ে যেতে পারে। সেরকম ভাবে এই প্যানডেমিক এসেও আমাদের মানসিক ভাবে অস্থির করে দিয়েছে, বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। এত মৃত্যু হয়েছে, এত লোক সংক্রমিত হয়েছে। বহু চেনাপরিজনের সামান্য অসুস্থতাকেও এই অতিমারী অনেক বাড়িয়ে তুলেছে, যার ফলে প্রচুর মানুষজন চলে গেছেন। বিশেষ করে সৌমিত্রদার (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) কথা বলব। উনি চারুবাসনায় আসতে খুব পছন্দ করতেন। আমার সাথে ওঁর শেষ দেখা একটা শুটিং, রবীন্দ্র সদনে; আমরা ওঁর ছবি নিয়ে একটা কাজ করার কথা আলোচনা করেছিলাম। 

    লকডাউনের প্রথম দিকটায় আমার যে-টেনশন তৈরি হয়েছিল, সেই অস্থির অবস্থা থেকে কিছু ড্রয়িং করেছিলাম আমি। কিছু পেপার ওয়ার্ক করেছি, ক্যানভাসের উপর ড্রয়িং করেছি কিছু, ৭ ফুট বাই .৫ ফুট সাইজের, চারকোল আর প্যাস্টেল, কখনও একটু রং দিয়েছি। কিছু ক্রসহ্যাচ করা পেপার ওয়ার্ক করেছি।     

    ওই পিরিয়ডটাকে ইলাস্ট্রেট করে আঁকা কিছু অন্য রকম ছোট ড্রয়িং ছাপাও হয়েছে। অতিমারীর মানসিক প্রতিফলন হিসেবে কিছু ইমেজারি এবং বিষয় কাজের মধ্যে যেন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে চলে আসছে। কাজগুলোর মধ্যে একটা অস্থিরতা চলে এসেছে, যা আগে ছিল না। 

    আপনার ছবির মধ্যে এই আদ্যন্ত বাঙালিয়ানা কীভাবে ফুটে ওঠে?

    আমি গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের ছাত্র, যেখানে আমাদের কোনও হিস্ট্রি অফ আর্ট পড়ানো হত না। শিল্পচর্চা সংক্রান্ত ভাবনা নিয়ে, বা শিল্পের ইতিহাস নিয়ে কলেজে মাস্টারমশাইরাও কিছু বলতেন না, এবং যে সামান্য দু-একটা লেকচার হত, সেগুলোর একটার সঙ্গে আর একটার কোনও যোগ থাকত না, ব্যাপারটা দানা বাঁধত না। 

    তার ফলে এখনও কলকাতার অধিকাংশ শিল্পীদের মধ্যে ছবি আঁকা বলতে ল্যান্ডস্কেপ আর পোর্ট্রেট করার টেকনিকাল দিকটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে, কিন্তু শিল্পের ঐতিহাসিক দিকটার সঙ্গে যোগাযোগ কম থাকে। এবং শিল্পের পেছনে যে চিন্তা-ভাবনাটা করা উচিত, সবাই সেটা করে না।

    আমি প্রথম থেকেই প্রচুর লেখা পড়তাম, অবনীন্দ্রনাথের ‘বাগেশ্বরী’ (শিল্পপ্রবন্ধাবলি), রবীন্দ্রনাথের বিক্ষিপ্ত লেখা, যেগুলো এখানে-ওখানে বেরোয়, ‘এক্ষণ’ এবং ‘দেশ’ পত্রিকায়, দুই বা তিন পাতার লেখা। আমার নিজের মধ্যে একটা ভাবনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল: কী আঁকব? সবাই যা আঁকছে, তা-ই আঁকতে হবে আমাকে? আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়েই আমার এই ধরনের ভাবনা শুরু হয়, এবং ভাবনাগুলো আমি ডাইরিতে লিখে রাখতাম। আমার ছবির উপরেও তার প্রতিফলন হয়। ছবির ভাষাও সেই সময় থেকেই বদলাতে শুরু করে যদিও কলেজে পুরোপুরি অ্যাকাডেমিক কাজের উপরেই জোর দেওয়া হত, এবং আমি থার্ড ইয়ার থেকে ক্লাসে প্রথম হয়েই এসেছিলাম। 

    আমার বাবা শিল্পী ছিলেন না। ফরিদপুরের স্মৃতি আছে, উনি কিছু জমিদারি কাগজের পেছনে ছবি আঁকতেন, তার মধ্যে একটা কলকাতার শহিদনগরের বাড়িতেও ছিলএক মহিলার ছবি, মনগড়া ছবি। ওঁর কাজে একটা টেম্পার ছিল; আমরা একটু ভাবুক প্রকৃতির। মা খুবই ভাল আলপনা আঁকতেন। আমার কাজের যে-দিকটার কথা তুমি বলছ, কিছুটা অবশ্যই সেখান থেকে এসেছে। এবং দু’জনেই অসম্ভব সৎ ছিলেন। এই সততাটা খুব জরুরি, যে কোনও ক্রিয়েটিভিটির সঙ্গে এটা যুক্ত হয়। টেকনিকের দিকটা তো আছেই, কিন্তু অনেস্টিটা শিল্পের মধ্যে একটা সত্যের খোঁজ করতে সাহায্য করে। অনেস্টিটা ধরে থাকলে একটা ইনটুইটিভ বোধশক্তি তৈরি হয়, যার ফলে অনেক পড়াশোনা না করলেও পরিবেশ, মানুষজন, চলাফেরা, জীবনের মধ্যে থেকে আমরা শিখে ফেলি কিছু।  

    আমার নিজের মধ্যে একটা ভাবনা তখন থেকেই শুরু হয়েছিল: কী আঁকব? সবাই যা আঁকছে,
    তা-ই আঁকতে হবে আমাকে? আর্ট কলেজ থেকে বেরিয়েই আমার এই ধরনের ভাবনা শুরু হয়, এবং ভাবনাগুলো আমি ডাইরিতে লিখে রাখতাম। আমার ছবির উপরেও তার প্রতিফলন হয়। ছবির ভাষাও সেই সময় থেকেই বদলাতে শুরু করে।

    প্যারিসে গিয়ে সবাই প্যারিসের মতো হয়ে যায়। আমি দু’বছর প্যারিসে ছিলাম; আমার ঠিক তার উল্টোটা হয়েছিল। আমার মনে হত, এখানে আমি ছবি দেখছি, কিন্তু আমি এদের মতো কেন আঁকব? আমার জায়গা, আমার জীবন, আমার পরিবেশ সব কিছু আলাদা, তার মধ্যে থেকে আমার বিষয়টা গড়ে উঠবে।   

    থ্রি উইমেন, ১৯৯২
    ছবি সৌজন্য পুন্ডোল আর্ট গ্যালারি

    প্যারিসে বাস করার সময় কোনও শিল্প আন্দোলন কি আপনাকে প্রভাবিত করেছিল? বা কোনও ব্যক্তিত্ব?  

    না। আমার কোনও ব্যক্তি সম্বন্ধে আলাদা করে উৎসাহ ছিল না, বা আলাপ করারও ইচ্ছে ছিল না। পিকাসো তখন জীবিত, সাউথ অফ ফ্রান্সে থাকতেন। পরে ওঁর অন্টিবের বাড়ি ঘুরে এসেছিলাম, কিন্তু আমি কোনও ব্যক্তির দ্বারা প্রভাবিত হইনি, এবং সে ভাবে দেখলে কোনও আন্দোলনের দ্বারাও না। পিকাসো আমার একজন প্রিয় শিল্পী। যাঁরা ভাল কাজ করেন, কমবেশি সবার কাজই আমার ভাল লাগে; যেমন রুশো, বা জিয়াকোমেত্তিআবার পল ক্লি আমার খুব ফেভারিট আর্টিস্ট। আবার আমাদের এদিকের শিল্পীরা, যেমন রামকিঙ্কর, বিনোদবিহারী, নন্দলাল বসু, অমৃতা শেরগিল প্রত্যেকের নিজস্বতাটা বোঝার চেষ্টা করি। সেখান থেকে আমার দিক-নির্ণয় হয়।  

    আমরা আপনাকে শিল্পী হিসেবেই চিনি, কিন্তু আপনি কবি এবং লেখক; ‘আর্টইস্ট’-এর সম্পাদক। সাহিত্য আপনার শিল্পকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?   

    ছোটবেলা থেকেই ঢাকুরিয়ায় আমাদের একটা সাহিত্যসভার চল ছিল। সরোজলাল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক কবি ছিলেন; তারপর অরুণাচল বসু, যিনি সুকান্তর প্রিয়পাত্র ছিলেন, তাঁরা এসেছিলেন আমাদের ওই সাহিত্যসভায়। আমি কবিতা লিখতাম, সহজেই লিখছি, অল্প সময়ে লেখা যায়, এই কারণে! আমার বড়দাপরিচয়’ পত্রিকা আনতেন বাড়িতে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পড়তাম। 

    এখন অনেক লেখা পড়া হয় না, সময় পাই না। দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে কাজ শুরু করার সময় থেকে পড়ার অবকাশ কমে গেছিল; ছবি আঁকার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, জাতীয় স্তরে আমার পরিচিতিরও সেই শুরু। তার ফলে সাহিত্যচর্চা আলাদা করে হয়নি। তবে প্রচুর লিখেছি, ছবি আঁকার উপরেই লিখেছি, শিল্পীদের উপর লেখা আছে।     

    সাহিত্যিকদের মধ্যে উৎপল বসু, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, এবং পরে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। উৎপলের কবিতা আমি ভীষণ পছন্দ করতাম, যাকে বলে ফ্যান। যদিও বলা হয় তাঁর কবিতার উপর স্যঁ জঁ পেয়র্স-এর একটা প্রভাব ছিল, আমার মতে উৎপলের কবিতা একদমই ইউনিক, ওর একটা নিজস্ব স্টাইল ছিল। আমাদের এখানে একটা রাজনৈতিক কবিতার স্রোত আছে, কিন্তু উৎপলের কবিতার মুভমেন্ট, ইমেজারি একেবারেই আলাদা। শক্তির কবিতাও আমার খুব পছন্দের; আমার কাছে ওর হাতে-লেখা কবিতা আছে। ‘নান্দীমুখ’ পত্রিকার তিন জন প্রতিষ্ঠাতার একজন আমি। সুতরাং সাহিত্য তো আমাদের জীবনে আছেই, এবং তার প্রভাবও ছবিতে আছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে।

     

    আলোকচিত্র সৌজন্য: নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

    পর্ব ২

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook