কয়েকটি কবিতা

অসুখ করেনি

আমাদের অসুখ করেইনি, সারবে কী?
আমার সঙ্গী আমাকে বলে—
ওই যে কালকে শালিখ পাখিটাকে দেখলে
সুকুমারদের ছাতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে,
এখন সে জলাভূমিতে শ্বেতপদ্ম হয়ে ফুটে রয়েছে।
এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন নয়,
শুধুই এক, এতদিনেও বোঝো না।
সন্ধ্যা নেমে আসে, অন্ধকার আর আলোর তফাত কী?

যদি দেবীর কপালে শরৎকালের আকাশের মতো
লম্বা টিপ জ্বলজ্বল করে সারারাত,
কখনও তো তমসা হয় না।

দুঃখ-কষ্ট-দারিদ্র-বেদনা-অশান্তি তো
প্রথম থেকে আছে, থাকবেই।
তবুও তুমি আমি কিন্তু দুজনে চিরদিন
একসঙ্গে আছি, একসঙ্গে থাকব।
আমাদের অদৃষ্ট কেউ খণ্ডাতে পারেনি, কেউ পারবেও না,
অসুখ করেইনি তো সারবে কী!


শুধু রূপ আছে

রূপান্তর বলে কিছু নেই, রূপ আছে।
ঢালু আকাশের রহস্য যে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে কে জানে?

ও সব বোঝে, আমি কেবল চেয়ে থাকি।
স্বপ্নের চেয়েও বিস্ময়কর
একটার পর একটা ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে, ঘটে যাবে।
তবু আমি কোনও কূলকিনারা পাব না।

ও বলে অত দেখো না, ভাবো, একা একা ভাবো।
দেখছ না আমি তোমাকে ভাবি,
ব্রহ্মাণ্ডকে ভাবি তাই শান্তিতে আছি।
আমরা দুজনে ছাড়া দুজনের আর কে আছে বলো?


সবই অখণ্ড

টুকরো টুকরো করে কিছু দেখো না,
সবই অখণ্ড।
ভাগ-বিয়োগে কী লাভ?
যোগ আর গুণ অঙ্কেরই বা কী দরকার?
এই যে আমরা দুজনে আছি,
সারাদিন গল্প করছি, এসব যথেষ্ট নয়!

সাইবেরিয়া থেকে একটা বিরাট হাঁস
পাশের পুকুরে এসে নেমেছিল।
সে যদি পরের বছর আর না আসে,
তখন কি পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসবে?
দেখো, অনন্তে চার দিক ডগমগ করছে,
আমরা অখণ্ড—
তাছাড়া আর কিছু নই।


ভয় পেয়ো না

আমার বৈধব্য হয়েছে,
তাহলে কি শাঁখ বাজাব, উলুধ্বনি দেব,
চিন্টুর ছেলে জন্মেই মরে গেল,
কত বড় বিরাট মুক্তি পেল এসব ভাবব?

ও আমাকে বলে,
জগৎটা বিশ্ববিদ্যালয় নয়।
ভুল লেখো, ঠিক লেখো নম্বর কাটা যাবে না।
নম্বর বাড়বেও না, নম্বর কমবেও না।
যে ছেলে মা-বাপের পদসেবা করছে,
সে কী পেল না পেল
কোনওদিন তুমি অন্তত তা জানতে পারবে না।
সুখ-দুঃখ নিয়ে মাথা ঘামিও না,
সবেতে ভয় পেয়ো না।
আমরা একসঙ্গে পাশাপাশি আছি,
এতদিনে এটা বুঝতে পেরেছ তো?


দুজনে মিলে একা একা

ও আমাকে বললে—
নীল পাথরের মালা পরে থাকো কেন?
আকাশ কি নীল, শুধুই নীল,
আকাশ আর নীলাকাশে আমাদের এখন কী দরকার?
বর্ণ গন্ধ দৃশ্য হাসি ও অশ্রু সবই তো আমরা
দুজন দুজনের মধ্যে খুঁজে পাই।
তবে আকুল হবার কষ্ট কেন করবে?

এইভাবে এসো, স্বপ্নকেও মুছে ফেলে
আমরা দুজনে মিলে একা একা থাকি।
অস্তিত্বে জাগরণ ও তন্দ্রা অহরহ
অনুভব করি।

কেউ আমাদের বোঝে না, বুঝবেও না।


ছবি এঁকেছেন শুভময় মিত্র