পত্রিকা

শ্রীজাত

কবির সঙ্গে দেখা: পর্ব ১৩

অমিয় চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যের এক অসামান্য কবি, যাঁর কবিতায় আমরা পাই অভিনব চিত্রকল্প, পুরনো ও সমসাময়িক শব্দ পাশাপাশি সাজিয়ে তৈরি করা আশ্চর্য আবেদন, সময় নিয়ে অপূর্ব খেলা। মাত্র একটা শব্দের স্থান বদলে তিনি জাদু সৃষ্টি করেন, নরম অথচ সপ্রতিভ কবিতায় কখনও মিলিয়ে দেন ঝোড়ো হাওয়া আর পোড়ো দরজার বৈপরীত্যও।

ঢাকা ডায়েরি: পর্ব ১২

‘একজন অন্তর্মুখী মানুষ যে উপায় নিতে পারেন কাজী আনোয়ার হোসেন তাই করলেন। কুয়াশা নামে একটা রহস্যভেদী চরিত্র তৈরি করে দুই খণ্ড রহস্যকাহিনী লিখলেন। শুরু হলো প্রকাশকদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরা। এক প্রকাশক দুই বইয়ের বিনিময়ে দুইশ টাকা দিতে চাইলেন। কিন্তু দুইশ টাকায় তো রাইফেল কেনার পয়সা উঠবে না। অতএব তিনি পাণ্ডুলিপি ফেরত নিয়ে এলেন। লেখালেখিতে আপাতত কিছুটা বিরতি। শিকারী হওয়া আর হলো না। তবে, মাছ শিকারের নেশা ছাড়তে পারেননি সমস্ত জীবন। মাছ শিকার করতে তো আর বিলেতি রাইফেল লাগে না।’ কাজী আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর রহস্যকাহিনি।

চন্দ্রিল ভট্টাচার্য

এক শালিক: পর্ব ১৩

রাশিয়ায় এক আর্ট গ্যালারিতে এক প্রহরী একটা ছবিতে দুটো মুখে ছোট্ট চোখ এঁকে দিল। হুলুস্থুলু। সে বলল, কী করব, বোর লাগছিল। এই স্বীকারোক্তি এত সরল ও ভানহীন, চমক জাগায়। আর মনে হয়, একঘেয়েমি থেকেই কি নষ্টামির মতোই, সমস্ত শিল্প বা বিনোদনেরও জন্ম নয়?

উপল সেনগুপ্ত

অ্যাবরা কা থ্যাবড়া ৫১

কথা থাকবে না, শুধু ছবি। মানে কার্টুন, ব্যঙ্গচিত্র। অবশ্য শুধু ব্যঙ্গ কেন, থাকবে হিহি, খিলখিল, ঠোঁট টিপে মুচকি, একলা দোকলা ফোকলা হাসি। ব্যঙ্গচিত্র কখনও হবে বঙ্গ-চিত্র, কখনও স্রেফ তির্যক দৃশ্য। ছোট্ট ফ্রেম, বিশাল ক্যানভাস।

হেঁশেলের হিস্‌সা: পর্ব ১২

‘আমাদের পূর্বপুরুষ ও পূর্বমাতারা উনিশ শতক থেকে পশ্চিমের দেশগুলিতে যাতায়াত শুরু করেন, কিন্তু বিদেশ বিভুঁইয়ে তাঁরা খেতেন কী? রামমোহনের সমস্যা ছিল না, তিনি ১৮৩১ সালের বিলেতযাত্রায় সঙ্গে করে নিয়ে গেছিলেন পাচক শেখ বক্সকে। আর বাবুর্চি নিয়ে গেছিলেন দ্বারকানাথও, যদিও বেলগাছিয়া ভিলার নিয়মিত পার্টিতে বিলিতি খানা ও মদিরায় অভ্যস্ত প্রিন্সের এ-ব্যাপারে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা ছিল না।’ প্রবাসে বাঙ্গালি-ভোজন।

বিমল মিত্র

বিনিদ্র: পর্ব ৫০

‘কে একজন সেই ফাঁকে বারান্দার একমাত্র আলোটা নিভিয়ে দিলে। আর সঙ্গে সঙ্গে নিবিড় নীলিমায় অলংকৃত হয়ে উঠল বাইরের আর মনের আকাশ। মনে হল আমরা যে আর মহাবলীপুরম্-এ নেই। আমরা সুদূর কোন্ দ্বীপের ভেতরে চলে গিয়েছি। সেখানে শুধু হাসি, শুধু গল্প আর শুধু আনন্দ। তখন সামনে পেছনে পাশে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। শুধু কথা শুনছি। শুধু সিগারেটের আগুনে বিন্দুগুলো দেখতে পাচ্ছি। আর পুরুষ-নারী সব একাকার হয়ে গেছে।’ মহাবলীপুরম্‌-এ গুরুর পার্টি।

দেবশঙ্কর হালদার

স্পটলাইট: পর্ব ৩

নান্দীকার-এ যেদিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম, সেদিন জানতাম না যে নির্বাচিত হব। লিস্ট দেখতে গিয়ে দেখি নীচ থেকে কয়েকটি নাম ছেড়ে আমার নাম রয়েছে। আর লিস্ট-এ আরও একজন হালদার পদবীর ছেলে ছিল। তার নাম গৌতম হালদার। দুজনের যাত্রাশুরু।

পূর্ণিমা দত্ত

ভিড়ের মধ্যে একক

বার্লিনে দেখেছি, পৃথিবীখ্যাত সব ফিল্ম ডিরেক্টর এবং ফিল্ম-ব্যক্তিত্বরা মানিকদাকে কী অসম্ভব শ্রদ্ধা করেন। প্রত্যেকে এসে কথা বলছেন, হাত মেলাচ্ছেন, গল্প করছেন। যেন মানিকদার সঙ্গে কথা বলা, দেখা করাটা অবশ্যকর্তব্য। আর মানিকদার টাওয়ারিং পার্সোনালিটি!

চন্দ্রিল ভট্টাচার্য

সামথিং সামথিং: পর্ব ২৪

‘নির্জীব আগাছা-ল্যান্ডে একমাত্র পরিত্রাণ করতে পারত কৃষ্ণনগরের স্কুলে দুই শিক্ষকের পরস্পরকে হাঁইহাঁই পেটানোর ভাইরাল ভিডিও। একজন আরেকজনকে চড় কষাতেই আক্রান্তের তুরন্ত তেড়ে যাওয়া ও প্রায় ফাস্ট-ফরোয়ার্ডে ঝটিতি প্রতি-আক্রমণ। তারপর আবার প্রশ্ন ধেয়ে আসছে, আপনি তো হেডস্যার, আপনি গায়ে হাত দিলেন কেন? এই রে, ফের বৃত্ত সম্পূর্ণ। প্রায়-সুমন-ঘটনা। প্রবৃত্তির পানে ধাইব, না নিবৃত্তি?’

দীপশেখর দালাল

কয়েকটি কবিতা

‘বন্যাত্রাণে আমি পাঠিয়েছি বেশ কিছু কলার মান্দাস/ আর কিছু চাতকপাখির দল/ তারা মেঘকে গালাগালি দিয়ে পাঁজরে ফিরবে আমার/ তোমার তাতেও রাগ?/ কেন? আমি কি সমস্ত ডুবন্ত মানুষকে আগুন শেখাব?/ সেইটেই হবে আমার শাস্তি?’

সুমনা রায় (Sumana Roy)

উত্তরবঙ্গ ডায়েরি: পর্ব ১২

‘শপথ-গ্রহণের দিন এসে গেল এবং তিনি যত্নসহকারে তাঁর পোষাক বেছে নিয়েছিলেন। কর্তব্যক্ষেত্রের পরিধানে যেন সাংস্কৃতিক গর্ব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, এই ছিল তাঁর ইচ্ছা— দাউরা-সুরুয়াল এবং বির্কে টোপি, কোমরবন্ধে খুখুরি। সঙ্গী জ্যোতি বসুর চেয়ে উচ্চতায় প্রায় এক ফুট দীর্ঘ রতনলাল, ধীরেসুস্থে বিধানসভা ভবনের দক্ষিণ প্রবেশদ্বারে এসে পৌঁছলেন।’

খুচরো খাবার: পর্ব ৫

‘সরস্বতী পুজোর ঘনঘটায় কুলের দাপট ব্যাপারটা আমার কাছে খুব একটা ইন্টারেস্টিং নয়। তার প্রধান কারণ, দেবীর উপাসনায় যে কুলটা ঢেলে উৎসর্গ করা হয়, সেই নারকোল কুলটা বস্তুত শুধুই মিষ্টি, এবং তাই একটু পানসে, একটু বেশিই ফর্মাল, একটু নিয়মসর্বস্ব। আমি এ-কুলে নেই। আছি, অবশ্যই, টোপা, এবং বুনো কুলে; ইলেকট্রিক, বা কারেন্ট নুন-মাখানো কাগজের ঠোঙায়, অথবা আঠা-আঠা আচারে— যার আধা-বয়াম আমি এক সিটিং-এ যে-কোনো দিন সাবড়ে দিতে পারি।’