

অসুখ : পর্ব ২
‘এই ফ্ল্যাটের প্রতিটা জিনিস কীভাবে ওরা কিনেছে, সাজিয়েছে— সব মনে পড়ে যায়। এক মুহূর্তে সব বৃথা হয়ে যাবে? কোনও কি উপায় নেই? উপায় নেই বলেই তো আজকের এই দিনটা, তাই না?’
‘এই ফ্ল্যাটের প্রতিটা জিনিস কীভাবে ওরা কিনেছে, সাজিয়েছে— সব মনে পড়ে যায়। এক মুহূর্তে সব বৃথা হয়ে যাবে? কোনও কি উপায় নেই? উপায় নেই বলেই তো আজকের এই দিনটা, তাই না?’
‘এক মাস আগে দেবুর জ্বর হয়। রক্ত পরীক্ষায় দেবুর শরীরে এক মারাত্মক রোগ ধরা পড়ে। ডাক্তার দেবু-কে জানিয়ে দেয়, খুব বেশি হলে আর দু-মাস। এই কিছুদিন আগেও ওরা সিকিম থেকে ঘুরে এলো, একদম সুস্থ। হঠাৎ কী হয়ে গেল?’
‘কত নেকড়ে ডেকে উঠল টিলার উপরে/ সেসবের কোনও চিহ্ন তোমার হাতে নেই।/ আছে কেবল বিয়ের নিমন্ত্রণ, সন্ধেবেলা মৃদু আড্ডা/ আর থিয়েটারের বিজলি আলো।/ আমি, বোকা লোক, তোমার হাত ধরতে এসে কেবল একা হয়ে যাই’ নতুন কবিতা।
‘তপেশের কথায় যেন হালকা রসিকতা। সদ্য মাতৃবিয়োগ হয়েছে, অথচ ওর চালচলনে শোকের বদলে যেন ভারমুক্তির স্বস্তি। শেষের দিকে বিনু কি খুব ভুগছিল? কই, তেমনটা তো শোনেননি! নিশিকান্ত মনে-মনে ক্ষুণ্ণ হলেন।’
‘আধশোয়া হয়ে এক বোতল জলে মুখ ধুয়ে আর এক বোতল জল পান করে ব্রহ্ম দেখলেন এরিক দত্ত দাঁড়িয়ে আছেন একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ হাতে। ঝাপসা চোখে তাঁর মনে হল, বুড়ো এরিকের চোখে যেন তিনি জল দেখতে পেলেন। তাঁর বৃদ্ধ বন্ধু কাঁদছেন।’
‘তিনজন বামন সাইজের জংলী মানুষ এসে প্রথমেই দুটো বিষতির টেনে তুলে ফেলেছে ব্রহ্মের পিঠ আর কাঁধ থেকে। তারপর ক্ষতস্থানে কী যেন ঘষে দিয়েছে জোরে ঠুসে। ব্রহ্মকে বহন করে সেন্টিনেলিজ়দের দ্বীপের অদূরে সমুদ্রে ভাসমান একটি ভেলাতে তুলল ওরা।’
‘বিলি গিলচারের হাতে বেমক্কা একটা ক্যারাটে-লাথি এসে লাগল বটে, তবে তা মারলেন অন্য এক ব্যক্তি। লাথিটা লাগবার আগে মুহূর্তের ভগ্নাংশের মধ্যে শোনা গেছিল এক সড়সড় শব্দ— সিঁড়িটার উলটোদিকে ঝুলে থাকা অশ্বত্থ গাছের লম্বা ঝুরি বেয়ে নেমে এসেছিলেন কেউ।’
‘যে-ফুল ফোটেনি গাছে/ আমি তাকে খুঁজে ফিরি তারায় তারায়/ তারাফুল আমাকে জানায়/ না লেখা কবিতাগুলি কোথাও লিখিত/ আছে হাওয়ায় বাতাসে’ নতুন কবিতা।
‘এরিক দত্তর ফিসফিসানি মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেল। হুড়মুড় শব্দের পরই একটা হইচই এল ওদের পাঁচধাপ উপরের সিঁড়ি থেকে, এবং সঙ্গেসঙ্গেই ঝুপ করে একটা শব্দ। শব্দটার সাথেই আশ্চর্য দেখল তার পায়ের কাছে উপর থেকে এসে পড়েছে একটা রিভলভার।’
‘অনেকটা নীচে হলেও ঠিকরে আসা রোদের আলোয় দেওয়ালগুলো দেখা যাচ্ছে। দেওয়ালের গায়ে গর্ত অনেকগুলোই আছে, কিন্তু একেবারে চৌকো একটা গর্তকে দেখে আশ্চর্য আলাদা করে চিনতে পারল। সে হাতটা ঢুকিয়ে দিল গর্তটার মধ্যে।’
দাসপাড়াতে গোলাপি রঙের কুয়াশা ভেসে বেড়ায়। অলিগলি দিয়ে মা হারা বাছুরের মতো কেঁদে বেড়ায়। বছর কুড়ি আগে এখানে প্রচুর পুকুর ছিল। সেগুলো বুজিয়ে ফেলে তৈরি হয়েছে মানুষের বাসস্থান, কুৎসিত দেখতে ফ্ল্যাটবাড়ি। তারপর থেকে বিকেল থাকতেই কুয়াশা।
‘ব্রহ্ম ঠাকুরের যখন জ্ঞান ফিরে এল তখন তিনি মাঝআকাশে। একটা হেলিকপ্টারে বসে আছেন, দু’হাত বাঁধা। পা খোলা থাকলেও তা নাড়ানোর উপায় নেই, হেলিকপ্টারটায় ততটা জায়গাই নেই আসলে। ব্রহ্ম ঠাকুরের জ্ঞান ফিরলে তাঁর অবস্থাটা বুঝে নিতে খানিকটা সময় লাগল।’
This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.
©2025 Copyright: Vision3 Global Pvt. Ltd.