ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • খেরোর খাতা পেরিয়ে


    মোহন আগাশে (April 2, 2022)
     

    সত্যজিৎ রায়ের ছবি প্রথম দেখি বেশ বড় বয়সে, তখন বাইশ-টাইশ হবে। জব্বর পটেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, ওর কাছ থেকে শিখছি দেশ-বিদেশের বড়-বড় শিল্প ও শিল্পী সম্পর্কে। ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভের সতীশ বাহাদুর তখন ভাল-ভাল ছবি দেখানো শুরু করেছেন, সেখানেই প্রথম ‘অপু ট্রিলজি’ দেখলাম। দেখেই মনে হল, এই হচ্ছে সিনেমা। এতদিন যা দেখেছি, যেখানে নায়ক-নায়িকা প্রেম করছে, গাছের চারপাশে ঘুরে-ঘুরে গান গাইছে, তা থেকে এ-ছবি এতটা আলাদা, একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এই সময়েই গিরিশ কারনাড পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর হয়ে এল, প্রতি সন্ধেয় ওর বাড়ি যেতাম, ছবি দেখতাম, তারপর ও এবং অন্যরা সেসব ছবির বিশ্লেষণ করত, শুনতাম। তখন সত্যজিতের আরও কিছু ছবি দেখলাম এবং সেগুলোর মাহাত্ম্যও বুঝতে শিখলাম। ‘চারুলতা’ দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমাকে সবচেয়ে টেনেছিল, সত্যজিতের সেন্সিটিভিটি, সূক্ষ্ম সংবেদনশীলতা। উনি মানুষকে বুঝতেন, তাদের মধ্যে যে কত রকম ভেতরের তাগিদ আছে, যা বাইরের লোকের আড়ালে থাকে, কত পরস্পরবিরোধী স্রোত আছে, সেগুলো বুঝতেন। এবং সেগুলোকে অমোঘ নৈপুণ্যে প্রকাশ করতে পারতেন। সিনেমার ভাষাটায় পুরোপুরি দখল ছিল। এই জন্যেই উনি পরের দিকে নিজের ছবির ক্যামেরা নিজে অপারেট করতেন। বলতেন, একটা শটে যদি সামান্য টেকনিকাল গোলমাল হয়, তাহলে ক্যামেরাম্যান শট কেটে দেবে। কিন্তু আমি বুঝব, অভিনয়টা এত ভাল হচ্ছে, এখানে ট্রলিতে যদি অল্প একটু ঝাঁকুনিও হয়, বা ক্যামেরাটা একটু কেঁপেও যায়, বিরাট কিছু এসে যাবে না। আর যেটা বড় কথা, সত্যজিৎ রায় একেবারে একনিষ্ঠ ভাবে বাংলার মানুষের কথা বলতেন। যে-শিল্প যত সৎ ও দায়বদ্ধ হয়ে একটা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের কথা বলে, তা-ই সবচেয়ে বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে। বিজয় তেন্ডুলকর বলতেন, তিনি মারাঠিদের জন্যই নাটক লেখেন। আমার ভীষণ প্রিয় জার্মান নাট্যকার ভলকার লুডউইগ বলেন, তিনি শুধু বার্লিনের বাচ্চাদের জন্যই নাটক লেখেন, জার্মান ছাড়া অন্য ভাষায় তাঁর নাটক অভিনীত হলেই খুব নার্ভাস হয়ে যান।

    কলকাতায় ‘ঘাসিরাম কোতোয়াল’ নাটকটা আমরা করেছিলাম ১৯৭৮-এ (আমি নানা ফড়নবিশ-এর ভূমিকায় অভিনয় করতাম), তখন মানিকদাকে আমন্ত্রণ জানাতে গেছিলাম। উনি বললেন, ছবির মিউজিকের কাজ করছি, যেতে পারব না। পরে আবার জব্বরের সঙ্গে গেলাম, বললাম, পাঁচ মিনিটের জন্যে হলেও আসুন, তারপরেই নাহয় বেরিয়ে যাবেন, আমরা জিজ্ঞেস অবধি করব না কোনটা খারাপ লাগল। এসেছিলেন তো বটেই, গোটা নাটকটা দেখে, একঘণ্টা আমাদের সঙ্গে গল্প করেছিলেন। তারপর ১৯৮১ সালে, আমার একটা অসুখ হয়েছিল, বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ছিলাম, বেরিয়েই দেখি, আমার একটা চিঠি এসেছে, সত্যজিৎ রায় লিখেছেন। টাইপ করা চিঠি। তাতে লেখা, আমার অসুস্থতার খবর পেয়ে উনি দুঃখিত, আমি কি ওঁর ৫০ মিনিটের টেলিফিল্ম ‘সদ্‌গতি’তে একটি মূল চরিত্রে অভিনয় করব? আমি তো তক্ষুনি লিখে দিলাম, অবশ্যই করব। পরের চিঠিটাও এল টাইপ করা, সেখানে জরুরি আর ক’টা কথা। প্রেমচন্দের এক গল্পের ‘ঘাসিরাম’ চরিত্রে আমাকে ভেবেছেন। আমি এখনও ভাবি, তবে কি চরিত্রের নামটাই ওঁকে আমার কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছিল? তৃতীয় চিঠিটা পেয়ে চমকে গেলাম। হাতে লেখা। মানে, এবার সত্যজিৎ রায় আমাকে তাঁর ঘনিষ্ঠজন মনে করছেন। এরপর থেকে যত চিঠি লিখেছেন, প্রতিটি হাতে লেখা। এখন ভাবলে অবাক লাগে, অত বড় পরিচালক কত সহজে আপন করে নিতে পারতেন। আজকাল কাজ করার আগে যে ২০ পাতার টাইপ করা চুক্তিগুলো পাই, পড়ে মনে হয় ক্রীতদাসের সঙ্গে মালিকের চুক্তি। প্রযোজক যা বলবেন আমি তা-ই করতে বাধ্য থাকব। এর মধ্যে এতটুকু আন্তরিক স্পর্শ নেই, পারস্পরিক সমীহ ও সৌহার্দ্য নেই। আমি আর ওম পুরী ‘সদ্‌গতি’র জন্য একসঙ্গে যাচ্ছিলাম। ট্রেনে যেতে-যেতে আমরা আলোচনা করলাম, সত্যজিৎ রায়কে আমরা চিনি, কিন্তু প্রোডাকশন থেকে যে বা যারা আমাদের নিতে আসবে, তাদের তো চিনি না। এদিকে প্ল্যাটফর্মে তো থাকবে রাশি-রাশি মানুষ। তাহলে? স্টেশন আসার আগে, আমরা দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ওম তখন খুব নাম-করা, ওকে দেখে হয়তো সেই লোক চিনতে পারবে। হঠাৎ তাকিয়ে দেখি, স্টেশনে সবার মাথা ছাড়িয়ে একটা মাথা উঁকি মারছে। সত্যজিৎ রায় নিজে আমাদের নিতে এসেছেন! দেখা হতেই বললাম, ‘আপনি নিজে আসতে গেলেন কেন?’ উনি বললেন, ‘তোমরা আসছ, আমি আসব না? সে হয় না কি? ইউ আর মাই অ্যাক্টরস!’ বোঝা যায়, একজন পরিচালক তাঁর অভিনেতাদের কতখানি মূল্য দিতে পারেন। সেই জন্যেই তিনি অত তাড়াতাড়ি ‘মানিকদা’ হয়ে যেতে পারতেন।

    ‘সদ্‌গতি’র শুটিং-এ মোহন আগাসে, সত্যজিৎ রায় ও অনিল ঘোষ (ডান দিক থেকে)
    ছবি সৌজন্যে: অনিল ঘোষ

    যখনই কলকাতায় আসতাম, মানিকদার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করতাম। তবে ওঁর সামনে গিয়ে খুব একটা কথা বলতে পারতাম না। বরং তাঁর কথা থেকে যতটা পারতাম আহরণ করার চেষ্টা করতাম। অবশ্য অন্য অনেক পরিচালক যেমন সকলের সঙ্গেই জমিয়ে গল্প করেন, মানিকদা তেমন ছিলেন না। ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বৃত্তে হয়তো দারুণ আমুদে ছিলেন, কিন্তু অন্যদের সামনে সাধারণত একটু গম্ভীর। মনে আছে, ‘সদ্‌গতি’র সময় একবার একজন কালেক্টরের বাড়িতে আমাদের নেমন্তন্ন খেতে যেতে হয়েছিল, ভদ্রলোক ইউনিটকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। মানিকদা গেলেন বটে, কিন্তু খুব একটা সহজ হতে পারলেন না, একটু আড়ষ্ট হয়েই থাকলেন। তবে আমি যখনই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতাম, পুনের ‘কায়ানি’ বেকারি থেকে জিঞ্জার বিস্কুট নিয়ে যেতাম, দেখলেই উনি ছোট ছেলের মতো আনন্দিত হয়ে উঠতেন। একবার আমি আর এক বন্ধু ওঁর বাড়ি গেছি, সেদিনই উনি ‘উত্তরণ’-এর চিত্রনাট্য শেষ করেছেন। খুব খুশি ছিলেন। আমাদের দেখেই বললেন, একটা স্ক্রিপ্ট শেষ করেছি, তোমরা শুনবে? আমরা তো হাতে চাঁদ পেলাম। মানিকদা পড়তে শুরু করলেন। মনে হল, আমাদের শোনাচ্ছেন না, নিজেকেই শোনাচ্ছেন। বোধহয় যাচাই করে নিচ্ছেন, ঠিক-ঠিক হয়েছে কি না। একদম একটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন। একবার বৌদি (বিজয়া রায়) কী একটা বলতে যেতেই একটু বিরক্ত হলেন। বিশ্বের একজন সেরা চিত্রনাট্যকার নিজের সৃষ্টিটা পড়ে-পড়ে ওজন করছেন, এমন দুর্লভ মুহূর্তের সাক্ষী থাকলাম। তারপরেই ভুলটা করে বসলাম। বললাম, ‘মানিকদা, এই ছবির নায়ক তো একজন ডাক্তার, আমিও তো ডাক্তারি পড়েছি, আমাকে এই পার্টটা দিন।’ জীবনে কখনও কারও কাছে পার্ট চাইনি। জানি, কারও যদি মনে হয় আমি অমুক চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে পারব, সে নিজেই ডাকবে, আর তা নইলে হাজার সুপারিশেও লাভ হবে না। কিন্তু ওই সময়টায় বোধহয় বড্ড আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। মানিকদা কিছু বললেন না। কয়েক মাস পরে, ওঁর কাছ থেকে একটা চিঠি পেলাম। তিন পাতার চিঠি। তাতে লেখা আছে, যদিও আমি ওই চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম, কেন উনি আমাকে পার্টটা দিতে পারবেন না। ধাপে-ধাপে সেটা ব্যাখ্যা করে উনি আমাকে চিঠি লিখেছেন! চিঠির মূল যুক্তিটা হল, এই চরিত্রটা করতে গেলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির খুঁটিনাটি সম্পর্কে জ্ঞান দরকার, যা আমার নেই। কিন্তু সেটা বড় কথা না। একজন পরিচালক তাঁর ছবির রোল (শেষ অবধি ছবিটা উনি পরিচালনা করতে পারেননি, তার আগে মারা যান, সন্দীপ রায় ছবিটা পরিচালনা করেন) কাকে দেবেন সেটা তিনিই ঠিক করবেন, তাঁর তো কারও কাছে জবাবদিহির দায় নেই। একবার দেখা করতে গিয়ে আমি পার্টটা চেয়েছিলাম, সেটা মনে রেখে তিনি আমাকে একটা চিঠি লিখছেন, যাতে আমার মন না খারাপ হয়! অত বড় একজন মানুষ সহস্র ব্যস্ততার মধ্যে সবার সুখ-দুঃখের প্রতি এতটা খেয়াল রাখছেন! 

    মানিকদাকে কাজ করতে দেখেছি তো মাত্র ১৪ দিন, ‘সদ্‌গতি’র শুটিং-এ। তাতেই আমি তাঁর অ্যাটিটুড দেখে মুগ্ধ। কাজের প্রতি কী নিষ্ঠা, কী প্রচণ্ড অধ্যবসায়! সেই যে উনি স্টেশন থেকে আমাদের নিয়ে গেলেন, তারপর আমরা নিজেদের ঘরে যাওয়ার আগেই ওঁর ঘরে যেতে হল। গিয়ে দেখি, ওঁর সেই বিখ্যাত খেরোর খাতায় আমাদের সব ছবি আঁকা আছে, তার ভিত্তিতে ‘লুক টেস্ট’ হল। খাতায় গোটা চিত্রনাট্যটা বোধহয় পাঁচ-ছ’বার লেখা। একবার লোকেশন অনুযায়ী, একবার চরিত্র অনুযায়ী, একবার দিনের সময় অনুযায়ী…। শুটিং-এর শুরু থেকেই ওঁর মধ্যে যে পরিমাণ উৎসাহ, মনোযোগ, যেভাবে প্রতিটি ব্যাপার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভেবে রেখেছেন, আর তার প্রয়োগ করছেন, মনে হচ্ছে এটা ওঁর প্রথম ছবি। একজন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক দূরদর্শনের জন্য একটা টেলিফিল্ম করছেন, এ-কথা ওঁকে দেখে কে বলবে! অভিনয় করার সময় অনেক রকম নির্দেশ দিতেন না। প্রথমে আমরা আমাদের মতো করতাম। আদ্ধেক সময়ই বলতেন, একদম ঠিক আছে, এইটাই করো। কখনও ভুল-টুল হলে, শুধরে দিতেন। আর কখনও অমোঘ পরামর্শ দিতেন। একটা দৃশ্যে আমি চামারদের বস্তি থেকে লাশ তোলার কথা বলে ফিরেছি, কিন্তু চামাররা রাজি হয়নি। আমার স্ত্রী এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, এবার কী হবে। মানিকদা বললেন, তুমি প্রথমে হাত গিয়ে কপাল আর চোখ ঢেকে শুয়ে থাকো, তারপর দেওয়ালের দিকে পাশ ফিরে শোও। সেভাবেই সংলাপ বলো। আমি ভাবছিলাম এই দৃশ্যে মুখের কী অভিব্যক্তি হবে, উনি মুখটা দেখাতেই দিলেন না, আর তাতে স্ত্রীর কাছে আমার মুখ লুকোনোর ব্যাপারটা সবচেয়ে ভালভাবে ফুটে উঠল। কোনও শট যদি খারাপ অভিনয়ের জন্য আবার নিতে হত, উনি তার কারণ হিসেবে অন্য কিছু একটা বানিয়ে বলতেন। অমুকটা ঠিক জায়গায় রাখা ছিল না, তাই টেক নিতে হবে। অনেক পরে আমরা বুঝলাম, উনি আসলে কোনও অভিনেতাকে বলবেন না, তার ভুল হয়েছে, তাতে তার মনোবল ভেঙে যেতে পারে। যেটুকু রাগ হত, অ্যাসিস্ট্যান্ট পুনু সেনের ওপর তা উগরে দিতেন। আমরা এও বুঝতাম, পুনুদা বকুনি খাচ্ছেন না, খাচ্ছে আসলে অন্য লোক। পুনুদা ছিলেন অসম্ভব ভালমানুষ, সব বকুনি একা খেয়ে তাঁর কোনও বিকার ঘটত না।

    একজন পরিচালক তাঁর ছবির প্রতিটি ডিটেল আগে থেকে কতটা নিখুঁতভাবে ভেবে রাখতে পারেন তা দেখে শুটিং-এ পদে-পদে অবাক হচ্ছি, হঠাৎ দেখলাম, এক মুহূর্তে কত অনায়াসে নিজেরই গড়া ছক পুরোপুরি ভেঙে ফেললেন! ঠিক ছিল, ‘সদ্‌গতি’র ক্লাইম্যাক্স তোলা হবে প্রচণ্ড রোদ্দুরে, সূর্যের প্রখর উত্তাপে। একদিন অন্য দৃশ্যের শুটিং চলছে, মেঘলা হয়ে এসেছে। তারপর বৃষ্টি শুরু হল। মাত্র দু’সেকেন্ড কী ভাবলেন। তারপরেই বললেন, ‘পুনু, ক্লাইম্যাক্স শুট করব, স্মিতাকে রেডি হতে বলো।’ পুরো ক্লাইম্যাক্স শুট করা হল অঝোর বৃষ্টিতে। মানে দুখির মৃতদেহের ওপর বৃষ্টি পড়ছে, তার স্ত্রী এসে মৃতদেহ দেখে বিলাপ করছে, তারপর ব্রাহ্মণের বাড়ির দরজায় ঘা দিচ্ছে আর বলছে, তুমিই ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী। এখানে মানিকদা প্রকৃতিকে নিজের চিত্রনাট্যের কাজে ব্যবহার করে নিলেন। শুধু তা-ই নয়, পরে এক দৃশ্যে আমি স্ত্রীকে বলছি, এই প্রচণ্ড বৃষ্টিতে পুলিশ আসবে না, এবং তারপরেই ভেবে বার করছি, এই সময়ে বাড়ি থেকে কেউ বেরোবে না এবং আমিই মৃতদেহটা ফেলে আসতে পারব। এই সময়ে, ‘সোচনে দো’ কথাটা আমি  বলছি এবং তখন আমার মুখের ওপর বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। ‘সদ্‌গতি’র একটা বড় আবেদন ক্লাইম্যাক্সের এই বৃষ্টি, যা কিনা আদৌ পরিকল্পনায় ছিল না, আর একজন পারফেকশনিস্ট তাঁর ইম্প্রোভাইজেশনের চরম ক্ষমতা দেখিয়ে তা ছবিতে ধরে রাখলেন। শুটিং-এর পর আমার এক জায়গায় যাওয়ার কথা হচ্ছিল, তাহলে তো আমি ডাবিং-এ সময় দিতে পারব না। মানিকদাকে সে-কথা বলতেই তিনি বললেন, কোনও ব্যাপার না, তুমি ইমেজ ছাড়াই ডাবিং করবে! মানে? পর্দায় ছবি না দেখে ডাব করব কীভাবে? মানিকদা বললেন, তুমি অভিনয়ের সময়ে কীভাবে কোন সংলাপ বলেছ তা পাইলট ট্র্যাকে যতবার খুশি শোনো, তারপর ঠিক সেইভাবে বলে দাও। কীভাবে তোমার ঠোঁটে সংলাপ মিলিয়ে বসাতে হয়, সেটা আমি বুঝে নেব। আজ অবধি কেউ ‘সদ্‌গতি’ দেখে বলেনি, সংলাপগুলো আমার ঠোঁটের নড়াচড়ার সঙ্গে ঠিক মিলছে না। এ থেকে বোঝা যায়, একটা লোক সিনেমা-কুশলতার কোন চূড়ান্তে উঠলে, এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বোঝা যায়, সত্যজিৎ রায়কে শুধু তাঁর খেরোর খাতা দিয়ে মাপা যায় না!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook