১
ডুগডুগ করে ঢোলক বাজছে দূরে
শান্ত চোখের কালো মহিষ উঠে এল জলের ভিতর
আশেপাশে ডুলুং নামের কোনও নদী নেই, নেই শালবন
শেষ বাস ধুলো উড়িয়ে চলে গেল।
এখানে হাড়িয়া এত সহজে মেলে না।
শুধু তুমি আমি বসে আছি পাষাণ সোপানে।
ডুমুরগাছ, পাশেই সনকা দেবীর মন্দির।
আমার কান বদলে গেছে অপরূপ যোনিতে।
তোমার সমস্ত কথা পুরুষাঙ্গ হয়ে প্রবেশ করছে ভিতরে।
ধীরে ধীরে রাঙা মেঘের ভিতর দিয়ে উঁকি দিল সন্ধ্যাতারা,
উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার চিহ্ন আকাশে।
ভিতরে ভিতরে রমণ চলেছে আমাদের,
আর খুলে খুলে যাচ্ছে মেরুদণ্ডে লুকানো গুপ্ত-সন্ধ্যা
২
রাঢ়দেশের বাতাসে বিয়ের আগেই তোমার গর্ভ হল।
পিঠে গামছা বেঁধে চলে যাও এই চুনভাঁটা আর পানের বরজের দেশ ছেড়ে।
কিচ্ছু পাবে না তুমি।
গাভিন ঘোড়া, পীচফল, সামান্য তেল ছাড়া।
জলপথে দস্যু এলে আসতে দিও;
নিজস্ব কোলে সুন্দর করো,
মাই দিও, সন্তানস্নেহ।
যদি দাবনা খেয়ে নেয় বোয়ালমাছে;
বন্ধু হোক কালো জামবনের স্ত্রী-চিকিৎসক
নতুন দাবনায় সুতো বুনো, গান বেঁধো, ভেঙো গম।
হে আদিম বউ, ভেবো না,
শান্ত কবরে এই আমগাছ তোমার পিসতুতো বোন…
৩
নেয়েধুয়ে শব্দহীন বসে আছি নির্জন।
রতিশাস্ত্র জানি না, কামকলাও,
তাই ধনেশপক্ষীর তেল মালিশ করে খোলা আয়নায় হাত গিলে নিচ্ছি, পা গিলে নিচ্ছি, খেয়ে ফেলছি গোল-গোল একজোড়া ডিম।
দূরে উজ্বল তরকারি বাগান ফুটে আছে
জিয়ানো মাছ খলবল করছে মাটির মালসায়।
সবাইকে লুকিয়ে ভোলা তোমায় বিছানায় তুলছি।
জটাজুট খুলে রাখছি, প্লাস্টিকের সর্প, মালা, ত্রিশূল।
মাথার কাছে ঘুরে ঘুরে মাথা কুটে মরছে জলের মতো ধুনুচির অন্ধকার।
হিম নামছে শব্দ করে বেলের পাতায়।
কাশবনে জন্ম হচ্ছে ছটফটে ময়ূরছানার।
এইমাত্র সরস্বতীর পায়ের চেয়েও সুন্দর চাঁদ উঠল আকাশে…
৪
ফাল্গুন মাসে সুস্থ আমাকে পলাশের বনে দণ্ড দেওয়া হয়েছিল কপালে উল্কি এঁকে।
আমার প্রাণ হাতের মুঠোয় চেপে রেখেছিলে কবিরাজ বাড়ির মেয়ে,
আমায় নিয়ে পদ্মফুলের ব্যবসা করেছিলে।
বিশ্বনাথের বেয়াইয়ের মটরক্ষেতে ঢুকে
বলি দিয়েছিলে দিনের আলোয় টিনের খাঁড়ায়।
সেই থেকে আমি দেবীর সাপ।
রাতের দিকে জ্যান্ত আহার ধরে আনি।
তুমি সেসব কালীর জিভে ছুঁড়ে জড়িয়েমড়িয়ে শুয়ে থাকো,
যেন আমি তোমার পোষ্য নই, সন্তান!
৫
তুমি নেই,
তবু তোমার গলার আওয়াজ ভেজা গাছের কোটর থেকে উঠে আসে।
নলকূপ খুলে গেছে বুকের, সকালে কিশোরী ছিলাম বিকেলে জরতী।
এসেছ তুমি চৈত্র-ফুলের বিষ।
গলায় নেব আজ হারিয়েছি শক্তি।
পায়রার মাংসের মতো বিকেলের মেঘ উঠে যায় শূন্যে,
আমি পথে পড়ে থাকা ভুলে যাওয়া সতীর আঙুল।
ছবি: সোমনাথ হোর
সৌজন্যে: গ্যালারি ৮৮