মানুষ নাকি সব জীবের থেকে উন্নত! পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া আরও কত-শত জীব আছে সেই তুলনা না করলে, আমরা আদপে কত শ্রেষ্ঠ বলা যাবে না! তাই একটু শ্রেষ্ঠত্বর তুল্যমূল্য বিচার করা যাক; দেখা যাক, কীভাবে ‘উন্নত’ মানুষ সারা পৃথিবীকে ধ্বংস করছে।
অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে, কলকাতায় বায়ু মানের সূচক (air quality index, AQI) ছিল ১০৪ এবং হাওড়ায় ৯৭। নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতায় ৩৪৩ এবং হাওড়ায় ৩৫২। আমাদের বাৎসরিক সর্বজনীন বাজি পোড়ানো এবং ফাটানোর অনুষ্ঠানের পর পরই প্রতি বছর বায়ুর মান কমতে থাকে।
শুধু কলকাতা নয়, হাওড়া, বর্ধমান, হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনা, দুই মেদিনীপুর জুড়ে AQI আরও খারাপ হতে থাকে। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বায়ু মান সব থেকে খারাপ হয়, ৪০০ বা তার বেশি। খারাপ বায়ু মানে বা খুব বেশি AQI। এর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত নির্দিষ্ট রোগগুলির মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার, নিউমোনিয়া এবং ছানি। যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি ঘরের সমস্যা। এই AQI কয়েক বছর ধরে হাওড়া ও কলকাতাকে মধ্যবিন্দু করে খুব দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে যাচ্ছে সম্পৃক্ত রোগগুলিও। তাতে কি আমাদের কোনও হুঁশ আছে?
আরও পড়ুন: গাছপালার যৌনজীবনে যেভাবে মিশে থাকে মানুষ থেকে দেবদেবী! লিখছেন বিজলীরাজ পাত্র…
বায়ু ছেড়ে যদি আমরা পৃথিবীর দিকে তাকাই, আমাদের একটু অন্যরকম করে ভাবতে হবে। আমরা জীবজগতের একক পরিমাপ করি বায়োমাস দিয়ে। বায়োমাস হল কোনও নির্দিষ্ট বাস্তুতন্ত্রে, নির্দিষ্ট সময়ে জীবিত জীবের ভর। বায়োমাস পরিমাপ নির্ভর করে, কেন এবং কীসের জন্য এটি পরিমাপ করা হচ্ছে তার উপর। যেমন ধরুন, একটি পুকুরের সব মাছ যদি জল থেকে তুলে নেওয়া হয়, তাহলে জালের মধ্যে থাকা সব জীবিত মাছ, গেঁড়ি-গুগলি শ্যাওলা ইত্যাদির ভর মাপা যেতে পারে। ভর মানে কত কেজি। আবার আলাদা করে শুধু কত কেজি ভেজা রুই, কাতলা বা মৃগেল মাছ বা মৌরলা মাছ আছে তাও মাপা যেতে পারে। কিন্তু যখন সারা পৃথিবীর জীবকুলের বায়োমাস পরিমাপ করা হয়, তখন আমরা কীভাবে তা করব? সেক্ষেত্রে সমগ্র জীবিত উদ্ভিদ এবং প্রাণীতে উপস্থিত জৈবিকভাবে আবদ্ধ কার্বনের (সি) ভর হিসাবে বায়োমাসকে পরিমাপ করা হয়, এবং সাধারণতঃ গিগাটন সি এককে প্রকাশ করা হয়। এক গিগাটন মানে ১০০ কোটি টন, মানে প্রায় ২০ কোটি হাতির সমান।

সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে, পৃথিবীর জীবন্ত উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের বায়োমাস ৫৫০ গিগাটন সি। পৃথিবীর সমগ্র বায়মাসের প্রায় ৮২ শতাংশ (প্রায় ৪৫০ গিগাটন সি) এসেছে স্থলজ উদ্ভিদ থেকে। তারপরেই স্থান ব্যাকটেরিয়ার (৭০ গিগাটন সি, প্রায় ১৪ শতাংশ)। ছত্রাক রয়েছে তৃতীয় স্থানে (১২ গিগাটন সি, প্রায় ২.৫ শতাংশ)। ভাইরাস ০.২ গিগাটন সি। প্রাণীজগৎ ২ গিগাটন সি, দশমিক তিন ছয় (০.৩৬) শতাংশ। গৃহপালিত পশু এক গিগাটন সি, মাছ ০.৭ গিগাটন সি আর মানুষের বায়োমাস মাত্র ০.০৬ গিগাটন সি, যা প্রায় সমস্ত উইপোকার বায়োমাসের সমান। সুতরাং এই পৃথিবীর সমগ্র বায়োমাসের দিক থেকে আমরা খুবই নগণ্য।
বিজ্ঞান এবং সমাজব্যবস্থা মানুষকে শর্তসাপেক্ষে বাঁচতে শিখিয়েছে। সব কিছুতে নতুনত্ব চাই। নতুনত্বই যেন আমাদের বাঁচার একমাত্র উদ্দেশ্য। ছোটবেলায় একটা রচনা আমরা বারবার লিখতাম— ‘বিজ্ঞান হিতকর না ক্ষতিকার।’ এখন দেখা যাক, আমরা গত কয়েক দশকে, বিজ্ঞানের অতি ব্যবহারে এবং নতুনত্বের প্রতিযোগিতায় এই পৃথিবীর কী অবস্থা করেছি।
প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয় ১৯০৭এ। বর্তমানে আমরা গড়ে প্রতি বছর ৩০ কোটি টন প্লাস্টিক তৈরি করি, যার প্রতিটি স্তরে জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহার হয়। এই পরিমাণ প্লাস্টিক তৈরি করতে আমরা যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করি, তা প্রায় সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পোড়ানো কয়লার মিলিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের থেকে কমপক্ষে ৫০ গুণ বেশি। মানুষ জলের পর সব থেকে বেশি ব্যবহার করেছে কংক্রিট। এক কেজি সিমেন্ট তৈরি করতে প্রায় সম পরিমাণ কার্বনডাইঅক্সাইড আমরা বাতাসে ছাড়ি। আমেরিকা গত শতকে যে পরিমাণ সিমেন্ট উৎপাদন করেছে, চিন তিন বছরে তার থেকে বেশি সিমেন্ট তৈরি করেছে। রাস্তাঘাট, বাড়ি, যন্ত্রপাতি, পরিবহন, ইট-কাঠ ইত্যাদি সবকিছু মানুষ যা তৈরি করেছে এবং তার সঙ্গে প্লাস্টিকও। সোজা কথায়, আমাদের তৈরি জিনিসের ভর, সমগ্র জীবজগতের মিলিত ভরের থেকে বেশি হয়ে গেছে ২০২০ সালে। অর্থাৎ মানুষ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই পৃথিবীর সর্ব নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রথম, প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
নোবেল পুরস্কারজয়ী রসায়নবিদ পল কুৎজেন বর্তমান ভূতাত্ত্বিক যুগ কে ‘অ্যানথ্রোপসিন’ নামে অভিহিত করেছেন। পলের মতে, মানুষের কার্যকলাপ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভূতাত্ত্বিক শক্তির পরিবর্তন নির্ভর। উদাহরণস্বরূপ তিনি ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, বনভূমি এবং জীবাশ্ম-জ্বালানি পোড়ানোর কথা বলেছেন। মানুষের তৈরি জিনিস যে শুধু ভূতাত্ত্বিক শক্তি এবং প্লাস্টিক নির্ভর তাই-ই নয়, পৃথিবীর বাইরে মহাকাশেও তার বিশদ আঁচ পড়েছে। মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের যে জঞ্জাল আমরা তৈরি করছি, তার সমাধান হয়তো-বা সুদূর বিজ্ঞান গবেষণায় নিহিত।
বর্তমানে আমরা, নিজেদের শরীরের থেকে বেশি ওজনের জিনিস তৈরি করছি। আমরা এখন সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রয়েছি, যেখানে আমরা সর্ব নিয়ন্ত্রক হয়ে পৃথিবী এবং পারিপার্শ্বিক জগত গঠনের মূল ভূমিকা পালন করছি। কিন্তু ভাবুন পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ করোনা পরবর্তী সময়ে দরিদ্র এবং চরম দরিদ্রসীমার নীচে বাস করছে। এঁরা তো দেহের বেশি পরিমাণ জিনিস, বা বিশাল পরিমাণ ভূতাত্ত্বিক শক্তির পরিবর্তন, প্লাস্টিক উৎপাদন বা কংক্রিট তৈরি করছেন না। পাশাপাশি গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরিতে সেভাবে দায়ী থাকছেন না। অপর দলের লোভ এবং অবিমৃশ্যকারিতার ফলাফলে সবাইকে ভুগতে হচ্ছে।
আমরা গ্রিনহাউজ গ্যাস ও তার সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাব সম্পর্কে জানি। কার্বনডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ওজন, নাইট্রাস অক্সাইড (লাফিং গ্যাস নামে বেশি পরিচিত) এবং জলীয়বাষ্প হল সব থেকে কুখ্যাত পাঁচটি গ্রিনহাউজ গ্যাস। মানুষের কার্যকলাপ থেকে উদ্ভুত গ্রিনহাউজ গ্যাসের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড অন্যতম। আমরা ১৮৫০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, আমাদের শিল্প, জীবনযাপন এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে পরিবেশে ২৮০০ গিগাটন কার্বনডাইঅক্সাইড ছেড়েছি। শুধু ২০১৯ সালেই আমরা ৪৩ গিগাটন কার্বনডাইঅক্সাইড ছেড়েছি।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির মতে, ২০৩০ সালের আগে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকে ২৫ শতাংশ কমাতে হবে যাতে ২১০০ সালের আগে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি বাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। আর যদি এই বাড়া ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হয়, তাহলে আমাদের ৫৫ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে হবে ২০৩০ সালের আগে। করোনার জন্য আমাদের সীমিত জীবনযাপন এবং কার্যকলাপের জন্য প্রায় ৯ শতাংশ কম কার্বন ডাই-অক্সাইড আমরা ছেড়েছি।
কিন্তু জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে আমরা কী করলাম? সভ্যতার উষালগ্ন থেকে আমরা পার্থিব এবং সামুদ্রিক বায়োমাসের প্রায় ৮০ শতাংশ ধ্বংস, উদ্ভিদ বায়োমাসের প্রায় অর্ধেক বিনাশ, গাছ এবং জঙ্গল কেটে জংলি প্রাণীদের অর্ধেকই মেরে ফেলা, গৃহপালিত স্তন্যপায়ী পশুদের বায়োমাস চারগুণ বাড়ানো আরও কত কী!
মিথেন প্রায় ২৮ গুণ বেশি ক্ষতিকারক কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায়। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে আমরা প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ মিথেন গ্যাস বর্তমানে বাতাসে মেশাচ্ছি। প্রতি বছরে আমরা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টন মিথেন গ্যাস বাতাসে মেশাই। প্রকৃতি এর মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জল তৈরি করে। আমাদের তৈরি মিথেনের বেশিরভাগটাই আসে জ্বালানি তৈরি করে এবং পুড়িয়ে (১৯%), ৯ শতাংশ ধান, গম চাষ থেকে আর ১২ শতাংশ আসে মানুষ পালিত পশুর (মানে গরু, শুয়োর, ভ্যাড়া, ছাগল) ছাড়া পায়ু গ্যাস থেকে। সুতরাং কম জ্বালানি পুড়িয়ে, কম করে পালিত পশুর মাংস খেয়ে আমরা অনেকটাই কম মিথেন গ্যাস তৈরি করতে পারি।
আর-এক সাংঘাতিক, লাফিং গ্যাস যা একবার বায়ুমণ্ডলে এলে প্রায় ১১৪ বছর লাগে তা প্রকৃতিতে মিশতে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের তুলনায় প্রায় ৩০০ গুণ বেশি ক্ষতিকারক। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা লাফিং গ্যাসকে অবহেলা করেছি। চাষে যে কৃত্রিম অ্যামোনিয়া (নাইট্রোজেন মৌল বাহিত) যৌগ সার ব্যবহার করা হয়, মাটির জীবাণু একাধিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা ভেঙে ফেলে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রাস অক্সাইড বা লাফিং গ্যাস তৈরি করে। গত চার দশকে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি লাফিং গ্যাস আমরা বাতাসে মিশিয়েছি। সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, শুধু জৈব চাষ, অগভীর মাটি কোপানো বা বিনা লাঙলে চাষ করলে, লাফিং গ্যাস নির্গমন প্রথম দিকে বাড়লেও পরে অনেক কমে যায়। গবেষণা থেকে আমাদের চাষী বন্ধুদের নিয়ে যত তাড়াতাড়ি আমরা এই সব কার্যকারণ বাস্তবায়িত করতে পারি ততই আমাদের সবার মঙ্গল। একটু মনে করিয়ে দিই যে, ভারতবর্ষে গবেষণা কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয় না বা হলেও তার ফল রূপায়িত হতে অনেক সময় লাগে।
কিন্তু জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে আমরা কী করলাম? সভ্যতার উষালগ্ন থেকে আমরা পার্থিব এবং সামুদ্রিক বায়োমাসের প্রায় ৮০ শতাংশ ধ্বংস, উদ্ভিদ বায়োমাসের প্রায় অর্ধেক বিনাশ, গাছ এবং জঙ্গল কেটে জংলি প্রাণীদের অর্ধেকই মেরে ফেলা, গৃহপালিত স্তন্যপায়ী পশুদের বায়োমাস চারগুণ বাড়ানো— আরও কত কী! সংক্ষেপে বললে দাঁড়ায়, মানুষ সমগ্র জীবজগতের মাত্র দশ হাজার ভাগের এক ভাগ বায়োমাস হয়েও, অন্যদের অর্ধেক নিকেশ করেছে, যারা হিতকারী তাদের নগণ্য করে দিয়েছে। আর যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর তা প্রভূত পরিমাণে বাড়িয়েছি। সর্বোপরি যা আমাদের বাঁচাবে, সেই গাছই কেটে ফাঁকা করে দিচ্ছি! আমরা কি সত্যিই জীবশ্রেষ্ঠ?
প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যেমন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বিভিন্ন সময়ে আমাদের পৃথিবীকে পরিবর্তন করেছে। কিন্তু অ্যানথ্রোপসিন ভর, বিশেষত উন্নয়নের ভর এবং তার পরিবেশগত প্রভাব আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? আমাদের প্রতিদিনের আচার-আচরণ, আমাদের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, আমাদের ইচ্ছা এবং লোভ— এক বৈশ্বিক হুমকি (global threat) অবচেতন ভাবে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এখানে তথাকথিত শিক্ষা, অর্থ, সংস্কৃতি সবই গুরুত্বহীন। করোনাকালীন গৃহবন্দী অবস্থায় আমরা মাত্র ৯ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে পেরেছি। প্রাথমিক ভাবে আমাদের খুব কম করে ২৫ শতাংশ কমাতেই হবে আগামী চার বছরে, যদি আমরা এবং আমাদের সন্তানরা বাঁচতে চাই। কাজটা কত কঠিন বুঝতে পারছেন? কত লোভ ছাড়তে হবে, কতো আচার-আচরণ এবং ব্যবহারিক পরিবর্তন আনতে হবে। কতো খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। পারব আমরা?
আমরা বুদ্ধিবেচুরাম আর অতিচালাক-মুঠোফোন (স্মার্টফোন) ব্যবহারকারীরা প্রায় ৫ শতাংশ গ্রীনহাউসজ গ্যাস তৈরি করি— ইমেল পাঠিয়ে কিংবা সোশাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি মাধ্যমে নতুনত্ব বা লাইকের সংখ্যার গুঁতোয় আমরা যে ছবি শেয়ার করে অযথা উত্তেজনা তৈরি করি, তা না করলে আমরা আমাদের এবং পৃথিবীর অনেকটাই ক্ষতি কম করতে পারি। নাহলে যে লোকটা হোয়াটসঅ্যাপে ক’টা লাইক পায়, তার আনন্দে মুরগীর কোন পদ বা বিরিয়ানি খায়, যে-লোকটা রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক ক্ষমতাবলে, প্রাচীন গাছগুলো অজুহাতের মালায় কেটে ব্যাংকে টাকা রাখতে ছোটে, যে শিক্ষিত লোকটা সারা বছর ঘুমিয়ে পরিবেশ দিবসের দিনেও মরা গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে ছবির পসরা সাজায়, যে লোকটা অর্থবলে কতদিন বেড়াতে যাইনি বলে সুযোগ পেলেই সপরিবারে করোনা কালেও বেড়াতে যায়, যে লোকটা হাঁটা, সাইকেল ছেড়ে জ্বালানি পোড়ানো গাড়ি চড়ে কাঁচা বাজার করতে যায় কিংবা পয়সার জোরে এসি চালিয়ে, গরমকে ঠান্ডা করে আবার চাদর চাপা দিয়ে আরামের মৌজ করে তাদের কি কোন হুঁশ আছে? আর যে-লোকটা খেটে খায়, রিক্সা চালায়, ফুটপাতে শুয়ে থাকে কিংবা যে-লোকটা সব ভুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের নিয়ে গাছ লাগাতে এবং পালনে ব্যস্ত থাকে, সে তো অজান্তেই আমাদের সবার উপকার করছে। তাদের আমারা ছোট চোখে দেখি। যেমন দেখি অন্যান্য জীবকুলকে। আমরা কি আমাদের আচার আচরণে কোনও পরিবর্তন এনেছি? এই যে আমরা বাজি পোড়াই এবং ফাটাই, যথেচ্ছ জ্বালানি পোড়াই, প্লাস্টিক ব্যবহার করি, নির্মাণশিল্পের নামে প্রকৃতি ধ্বংস করি, তাতে কি একবারের জন্যেও আমরা কি বোঝাতে পেরেছি যে কেন আমরা জীবশ্রেষ্ঠ মানুষ। না। বাহ্ রে মানুষ বাহ্ কবে আমাদের হুঁশ হবে? আর কবে?