ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ‘বৎসরের আবর্জনা’

    সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় (April 19, 2025)
     

    সময়ের চেয়ে আর বিষম বস্তু কী-ই আছে! সে কত দ্রুত বেগে চলছে-ফিরছে-ছুটছে, এ তো আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, কারণ মাসের পর মাস পেরিয়ে একটি করে আনকোরা  নতুন বছর– সে বাংলাই হোক আর ইংরেজিই হোক– সপাটে সেঁধিয়ে দিচ্ছে আমাদের জীবনে (অবশ্যই কিছু ভাগ্যবান ছাড়া, অর্থাৎ যাদের যথেচ্ছ টাকা আছে এবং অন্য দল, যাদের ডাক্তার মাটন বিরিয়ানি খেতে বারণ করেনি) আর মুহূর্মুহূ দুর্ভাগ্যের যাত্রা রচছে বছরময়। কেবল চৈত্র কিংবা ডিসেম্বর শেষে যখন ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকি আর পাশ কাটিয়ে বছরটা হুশশশ করে চলে যায়, তখন গলার কাছে কান্না পাকিয়ে আসে একই কথা ভেবে যে– এবারেও হল না! হায় হায়! প্রতিজ্ঞাগুলো ফের রিপিট করতে হবে! 

    অবশ্য আমরা বাঙালিরা প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে ইংরেজি মাস-বাংলা মাস ভেদাভেদ করি না। জানুয়ারি বা বৈশাখ— যা-ই হোক না কেন, নতুন বছর তো বটে। আমাদের উদার মন সবকিছুকে ঠাঁই দেয়। সুতরাং, জানুয়ারি মাসে নেওয়া রেজ়োলিউশনগুলো যখন তিন মাস পরেও পালন করা হয়ে ওঠে না, তখন আমরা সেসব সুচারুভাবে স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাই বৈশাখে। ভাবটা এমন, যেন বাংলা বছরের সন-তারিখ আমাদের জীবনের অঙ্গ! একমাত্র পয়লা বৈশাখ ছাড়া কে-কবে অন্য বাংলা তারিখ মনে রেখেছে, সে কথা জিজ্ঞেস করলে হোলসেল ধ্যাড়ান্তি। কেউ কেউ অবশ্য নিজের জন্মদিন কিংবা বিয়ের তারিখ বলতে পারে। বাকি বাঙালি বৈশাখ আর শ্রাবণ মাসে গুটিকয়েক রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে বাংলা দিয়ে আত্মা আঁচিয়ে নেয়!

    আরও পড়ুন : ক্রেডিট কার্ড কি বাঙালির আলাদিনের জিন? ‘নববৈশাখী’ সংখ্যায় লিখছেন পিনাকী ভট্টাচাৰ্য…

    আগেকার কাল হলেও না হয় কথা ছিল। চাঁদসদাগররা পাঁজি দেখে দিনক্ষণ ঠিক করে, মাস অনুযায়ী পুব-পশ্চিমের হাওয়ার চালচলন বুঝে ব্যবসা-বাণিজ্যে বেরোত। মেয়েদের বার-ব্রত, ফসলের বীজ রোয়া, ধান তোলা, নবান্নের তোড়জোড়– সবই বাংলা তারিখ দেখে হত। এখন তো সেসবের বালাই নেই, তাই বাংলা মাসের তেমন মাহাত্ম্যও নেই।

    সুতরাং, পয়লা বৈশাখ আমাদের কাছে উৎসবের উপলক্ষ মাত্র। প্রত্যেকদিনের অসহনীয়তা থেকে আনমনা হওয়ার আরও একটি প্রকরণ! নতুন শাড়ি-জামাকাপড় পরে, বেঙ্গলি-থালি খেয়ে, দুগ্গাপুজোর প্ল্যান করে হেদিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমরা সার্থকতা খুঁজে নিই। যদি পয়লা বৈশাখের আগে-পরে শনি-রবিবার থাকে, তাহলে একসঙ্গে ছুটি জড়ো করে বেড়িয়ে আসি।  আর বসে বসে জাবর কাটি যে, ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখে কেমন দোকানে দোকানে গিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতাম আর বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে ফিরতাম। যেন, ওই প্রাপ্তিটাই আনন্দের মাপকাঠি!

    এখন আর সেসবের বালাই প্রায় নেই বললেই চলে, অতএব কপি-বুক আনন্দ যে-ই বিদায় নিয়েছে, অমনি আমাদের পার্সোনাল জীবন গিয়াছে ছারেখারে! তাতে অবশ্য কুছ পরোয়া নেই, এক্ষণে যেমন আমরা গ্লোবাল ও লোকাল রাজনীতি নিয়ে, রিয়েলিটি শো নিয়ে এবং মোবাইলে চোখ আটকে মেতে থাকি, তেমনই আছি। সন্ধে হলেই বিশ্বচরাচর হাঁকুপাঁকু টিভিতে সেঁধিয়ে তার পসার নিয়ে চ্যানেলে চ্যানেলে চলে আসে, আমাদের মন-মস্তিষ্কের খিদে মেটাতে, আমরাও ঢালাও গা ভাসিয়েছি তাতে। অবশ্য পয়লা বৈশাখের দিন কিছু বিশেষ অনুষ্ঠান হয়, সেসব দেখে আমরা আমোদ পাই। কিন্তু এ-বছর একটা বিশেষ চিন্তা ছিল বইকি! বাংলাদেশে ঠিকমতো ‘পহেলা বৈশাখ’ পালিত হয়েছে কি না, সেটা জানা খুব জরুরি ছিল! কারণ ওদেশে পয়লা বৈশাখের কদরই আলাদা। পহেলা বৈশাখই তো ওদের কাছে সেরা পার্বণ। কিন্তু এবার কি ততটা জাঁকজমক হল? জানা নেই। 

    পয়লা বৈশাখ আমাদের কাছে উৎসবের উপলক্ষ মাত্র। প্রত্যেকদিনের অসহনীয়তা থেকে আনমনা হওয়ার আরও একটি প্রকরণ! নতুন শাড়ি-জামাকাপড় পরে, বেঙ্গলি-থালি খেয়ে, দুগ্গাপুজোর প্ল্যান করে হেদিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমরা সার্থকতা খুঁজে নিই।

    তবে এটা জানা বাকি নেই যে, আমাদের এখানে অযোগ্যের দুর্নীতিতে যোগ্য শিক্ষকরা চাকরিহারা– তাদের পয়লা বৈশাখ কেমন কাটল? মুর্শিদাবাদে এত হিংসা, মারামারি, খুনোখুনি হয়ে গেল, সেখানে পয়লা বৈশাখের দিন কী হয়েছিল? কুম্ভে এবার পদপিষ্ট হয়ে যে পরিবারের মানুষজন মারা গিয়েছেন, তাদের পয়লা বৈশাখ এসেছে কি? পয়লা বৈশাখ বলে আজ কোনও মেয়ে ধর্ষিত হয়নি তো?

    আর আমরা গ্লোবাল সিটিজেন, খেয়াল করেছি কি যে, মধ্য-এশিয়ার একটা ভূখণ্ডের মানচিত্র বদলে গিয়েছে? রাফা বলে একটা শহরের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে? প্যালেস্টাইন-ও আর মানচিত্রে কতদিন ধুকপুক করে জিইয়ে থাকে, সেটাই দেখার। সিরিয়া, প্যালেস্তাইন, মধ্য-এশিয়ার আরও অন্যান্য জায়গায়, যেখানে হাসপাতলে বোম পড়ছে, যেখানে বাচ্চারা হরিল্লুঠের বাতাসার মতো ছিটকে গিয়ে পড়ছে বোমের স্প্লিন্টারের সঙ্গে, একটা আস্ত জেনারেশন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে পনেরো এপ্রিল দিনটা কেমন ছিল? এত সংবেদনশীল বাঙালি আমরা, নিশ্চয়ই মনে রেখেছি এসব কথা, তাই না? 

    রাফা আর বাসযোগ্য নেই

    অবশ্য প্রশ্ন উঠবে, আগেও কি যুদ্ধ হয়নি, না আন্দোলন হয়নি না দাঙ্গা হয়নি? কলেরায়, প্লেগে গ্রাম কে গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে, এমনকী, হালে কোভিডও আমাদের ঘরবন্দি করে রেখেছে। তখনও নতুন বছর এসেছে, তখনও মানুষ আনন্দে মেতে উঠেছে। সত্যিই তো। হয়েছে তো। এত ভয়াবহ সব ঘটনা সমান্তরালে চলতে থাকে সময়ের পাতায় পাতায়,তবুও চোখ মুছে বচ্ছরকার দিনকে আমরা স্বাগত জানাই, নিয়ম মেনে জানাতে হয় বলে। 

    কিন্তু সময় আর ঈশ্বর কয়েনের এ-পিঠ আর ও-পিঠ, ভাই-বেরাদর। তারা মোটামুটি একই চাল চালে আর অলক্ষ্যে মুচকি দেয়। দু-দিকেই হেড বা দু-দিকেই টেল। আমরা ‘শোলে’-র অমিতাভ বচ্চন। হার জেনেও এগিয়ে যাই। সাধারণ জীবনযাপন করি, যেন কিছু হয়নি। বিশেষ বিশেষ তিথি আঁকড়ে আনন্দের খুদকুঁড়ো কুড়িয়ে নিই। কিন্তু আবারও, বর্ষাদিনে জলজমা গর্তে গাড়ির চাকা লাফিয়ে উঠে যে কাদা-জল ছিটিয়ে দেয় আর আমরা কোনও দিকে সরতে না পেরে চোখ-মুখ কুঁচকে সেই নোংরা জল গায়ে নিতে বাধ্য হই আর গজগজ করতে থাকি, জীবন ঠিক সেই রকমই সময় ছুড়ে দেয় আমাদের দিকে। আমরা গায়ে নিতে বাধ্য হই। অনেক সময়ই পয়লা বৈশাখের আনন্দের চেয়ে, আছড়ে পড়া কাদা-জল মনের সঙ্গী হয়ে থাকে। তবুও চৈত্র সেলের ভিড় ঠেলতে ঠেলতে মনে হয়, এ-বছরটা নিশ্চয়ই ভাল যাবে!

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook