আমাদের বাড়ি
১.
সুভাষগ্রাম নাম যে স্টেশনের, তার পাশে আমাদের বাড়ি, পড়ে আছে সে বহু দিন—
দাদু জমি কিনে ছিল, তার পর সোয়া চার বছর ধরে
হল বাড়ি, দোতলা সে বাড়ি, আকাশে
থোপা থোপা তৈরি করে দিল মেঘ…
সেই ষাট কি বাষট্টি সালে আমাদের এই গৃহপত্তন—
তার পর কী হল? একটা তুচ্ছ ভূমিকম্পে আমাদের বাড়ি ভেঙে পড়ল সেদিন, তির তির করে
তার উপর
হালকা চালের ওই থোপা থোপা মেঘ… হালকা হালকা
সাদা, কয়েকটা কালোর ছিটে
২.
বাবা-ই তৈরি করেছিল বাড়ির অনেকটা
তার পর?
তার পর
এক দিন হঠাৎই বাবা পাগল হয়ে গেল
‘প্রোমোটার-প্রোমোটার’ করতে করতে…
পাগল হয়ে গেল বাবা
তার পর এক দিন বলল সে, ‘জল দে না, তেষ্টায় গলাটা শুকিয়ে’
জলবৎ তরলং মৃত্যু তখন ওর কাছে,
কিন্তু বাবা যে আমাদের জল নেবে না, ফ্যাসফ্যাসে গলায় সে বলেছিল, ‘প্রোমোটার-প্রোমোটার…’
না, ভাই প্রোমোটার এল না, বাধ্য হয়ে, আমাকেই…
কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল সেই জল… টপ টপ করে… মেঝেতে পড়ল,
বাবা বলল, ‘কী রে, ধরতেও পারলি না!’
৩.
সকাল বিকেল কেটে গিয়ে এল রাত
বাড়িটা ভেঙে পড়ছিল, বড় বড় আওয়াজে
বড় বড় পাথর, পড়ছিল নীচে, অনেক টিকটিকি ছিল, সেইগুলির টিক-টিক শব্দের উপর পড়ছিল পাথর,
বোবা হয়ে যাচ্ছিল টিকটিকিগুলি একের পর এক, সমস্তই বোবা,
কতগুলি হল? গুনতে গুনতে ক্যালকুলেটর ছাপিয়ে গিয়ে সেটা হ্যাং
আমি ফোন করছিলাম, ‘হে ক্যালকুলেটরের হোলসেলার, আমায় গুনতির ক্ষমতা
দাও হে…’
কিন্তু সে ফোন তুলছিল না বলে
এ বাড়িতে যা হল, তার সারনেম— ভুল, ভুল… ভুউল…
ঐতিহাসিক তার নাম
৪.
বাড়ির চার দিকে জঙ্গল হয়ে আছে,
আজ বাবা নেই, মা-ও তো সেই কবে মরে গেছে,
একটা অজগর বাড়িটা পাহারা দিত, বাবার মৃত্যুর পর সে খোলস ফেলে রেখে চলে গেছে,
এক শ্যেনপাখি আকাশে পাক খেত,
ঘুড়ির মাঞ্জায় দশ দিন হল প্রয়াত সে-ও
তা হলে বাড়িটা পাহারা দেবে কে?
বাড়ি-ঘেরা জঙ্গল তো, যে কোনো দিন যা কিছু ঘটে যেতে পারে?
ঘটলও, জঙ্গল থেকে একটা বাঘ বেরিয়ে এসে হালুম করল আর খেয়ে ফেলল আমায় গোটা,
তার পর হাঁ-করে সারা পাড়াকে দেখাল সে, তার গজদন্তে আমার সোনার আংটির সরু সরু আলো…
৫.
আমাদের কোনও বাড়ি নেই, তাই তোমাদের বাড়ি যাব কাল, আমরা সকলে,
থাকব সেখানে, বাকিটা জীবন, আমার প্রৌঢ় সব কিছু
ঢেলে দেব তোমাদের হাতে
কয়েকটা আলু, পাগল মুরগি, আর বিয়ারের বোতল, কোমরে গোঁজা ছোট এক ছুরি
এই তো আমার কাছে আছে,
আলুর ঝোল, মুরগির রোস্ট করে, বিয়ারের বোতল খুলে ফেলব দাঁত দিয়ে,
আর হাত দিয়ে কোমরের ছুরিটাকে অনুভব করে
আস্তে আস্তে উঠে যাব ছাদে, শেষ রাতে,
বিয়ার খেতে খেতে…
খেতে খেতে… ইউটিউবে চালাব একটা ‘শোঁও-শোঁও’…
ওই শব্দটায় বেশ শিহরন আসে গো, তোমরা বারণ কোরো না