ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • একটি তামাশাযোগ্য ঘটনা


    সব্যসাচী সমাজদার (November 11, 2023)
     

    ঘটনাটা এতই আকস্মিক যে মুহূর্তেই ভিড় জমে গিয়েছিল। বাসের পাদানির হাতলে ঝুলে থাকা লোকটার টুপ করে খসে পড়া এমনকী কন্ডাক্টরও টের পায়নি। আর চারদিক থেকে ‘গেল গেল’ রব ওঠার পর, কোনও কিছু না বুঝেই আক্রান্ত হওয়ার সহজাত ভয়ে এক্সিলেটরে চাপ মেরে ড্রাইভার স্পিড বাড়িয়েছিল দ্বিগুণ। নম্বরটা টুকে নেওয়ার আগেই সে কেটে পড়েছিল সটান। রাস্তায় খসে পড়া লোকটার মাথাফাটা খুলির রক্তে মাখামাখি দৃশ্যটা দেখতে যারা দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তাদের কারও কারও মাথায় হাসপাতালের কথা এলেও, পরে ঝামেলা হতে পারে ভেবে কেউ-ই শেষ পর্যন্ত কাজটা করে উঠতে পারেনি। 

    লোকটা প্রায় মরার পথে পা বাড়িয়ে খাবি খেতে যেই জিভটা বের করেছে অমনি কোথা থেকে জুটে গিয়েছিল এক দাঁতের মাজনওয়ালা। শহরের রাস্তায় এ ধরনের ঘটনা হামেশাই ঘটে থাকে বলে, জমে থাকা ভিড়টাকেই সম্ভাব্য কাস্টমার ভেবে নিয়ে সে তার ভাঙা ভাঙা পেটেন্ট স্বরে শুরু করেছিল ফিরিস্তি, ‘দাদারা-দিদিরা আর কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বের পয়লা নম্বর মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ভারতের যে হার্বাল প্রোডাক্টটিকে নিজস্ব ব্র্যান্ডে মার্কেটিং করবে সেই অত্যাশ্চর্য এখন আপনাদের হাতের নাগালে। দিনে দিনে আপনার এনামেল নষ্ট হয়। সিল করান, সিল থাকে না। তিনখানা অ্যান্টিবায়োটিক আপনাকে বানিয়ে দেয় গালফোলা গোবিন্দর মা। ঘাবড়াবেন না স্যার, এ হল সেই জিনিস তিনশো টাকা ভিজিট দিলে তবেই ডাক্তারবাবুরা আপনাকে লিখে দেবে। আপনি জানতেও পারবেন না মাত্র তিন টাকায় এই বেকার ভাইটি আপনাকে তা দিতে চেয়েছিল। দেরি করবেন না ভাইসাব, থাকতে থাকতেই মর্ম বুঝে নিন। বাড়িতে গিন্নির চিন্তা দূর হবে। অফিসে বসের খিঁচুনির জবাবে দু’পাটি শো করে দিতে পারবেন। সুন্দরী কলিগের সামনে লজ্জা পেতে হবে না স্যার। তিন টাকা লাগবে না দাদা। কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে মাত্র  দু’টাকা। ফুরিয়ে গেলে দোষ দেবেন না কাকু, স্টক মাত্র কয়েক ফাইল। একটু হাত বাড়াবেন মাসিমা…’

    ভিড়ের মধ্যে প্রায় সকলেরই দাঁতের কিছু না কিছু সমস্যা থাকায় দু-চার ফাইল যখন সে বিক্রি করে ফেলেছে তখনই পুলিশ ওর পিছনে ধাওয়া করেছিল। আর মাজনওয়ালাও তার অভিজ্ঞতায় দেখেছে পুলিশ কেবল তার মতন মানুষদের পিছনেই ধাওয়া করে, তাই টিকির নাগাল পাওয়ার আগেই সে ভিড়ের ভেতর থেকে হয়ে গিয়েছিল পগারপার। রাস্তায় পড়ে থাকা লোকটা শেষ খাবি খেয়ে নিয়ে, চোখ উল্টে মণির সাদা বের করে দিলে মজাটা সামান্য ম্যারম্যারে হয়ে যাওয়ায় ভিড়ের মধ্যে আগে আসা লোকদের জায়গা নিয়েছিল পরে আসা-রা। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ দুর্ঘটনার ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে এতই অভিজ্ঞ ছিল যে, তাদের দেওয়া পুরানো সব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ শুনে বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না যে, এরাই সেই লোক যাদের পূর্বাভাষগুলো কর্তৃপক্ষ যদি একটু কানে নিতেন, তাহলে অনায়াসেই ঠেকানো যেতে পারত পূর্বে ঘটে যাওয়া সকল দুর্ঘটনাগুলো।  

    ওইসব কথাবার্তা হইচইয়ে জায়গাটা বেশ জমে গিয়েছিল। পাঁচটা লোক যেখানেই ভিড় করে সেখানেই কিছু খাবারদাবার বিক্রির ব্যবস্থা হয়ে যায়। এখানেও এক বাদামওয়ালা গলায় ঝোলানো দড়িতে ঝুড়ি বেঁধে ঘুরঘুর করছিল। আর যেই ওর দিকে চোখ পড়ল লোকেদের, অমনি সে বেশ কয়েক প্যাকেট বিক্রি করে ফেলেছিল। কিন্তু ছোট হোক বা বড় হোক, ব্যবসায় সততাই মূলধন বলে পোকাধরা বাদাম বিক্রি করা নিয়ে এক দাদুর সঙ্গে বেধে গিয়েছিল তুমুল ঝগড়া। বাদামওয়ালা আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছিল— বাদাম হচ্ছে সেই বস্তু যা ওপর থেকে দেখে বোঝা যায় না ভেতরে কী আছে। পোকা থাকলেও থাকতে পারে। এ জন্য বিক্রেতা হিসেবে তাকে দায়ী করা যায় না। দায়ী করতে হলে সেই চাষিকে করো, যে এমন পোকা ধরা বাদাম উৎপাদন করেছে। অবশ্য সেই চাষিরই বা দোষ কী? দোষ দিতে হলে দিতে হবে বহুজাতিক বীজ-উৎপাদক সংস্থাকে। এ ধরনের তর্কাতর্কির মধ্যে কেউই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রকৃত দোষী কে? ফলে ব্যাপারটা বেশ ঘোঁট পাকিয়ে গিয়েছিল। আর ভবিষ্যদ্বক্তারা নতুন একটা বিষয় পাওয়া গেছে ভেবে শুরু করেছিল কোথায়-কবে-কোন বহুজাতিক সংস্থার প্রস্তুত করা মিনারেল ওয়াটারে কী সব নাকি আপত্তিকর বস্তু পাওয়া গিয়েছিল। ভবিষ্যদ্বক্তাদের সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে এসেছিল যুক্তিবাদী এক প্রগতিশীল। বলেছিল, ‘যাচ্ছেতাই মশাই, যাচ্ছেতাই! এ দেশের কিছুই আর হওয়ার নয়। বুঝলেন তো। দেখছেন না ব্রাইট ছেলেমেয়েরা সব দেশ ছেড়ে স্টেটস্‌-এ চলে যাচ্ছে। আর যাবে নাই বা কেন? এ দেশে থেকে করবেটা কী বলুন? হ্যাঁ হ্যাঁ, বলুন না? পারবেন বলতে? আগেই জানতাম পারবেন না।’  

    এমন একটা তামাশার দৃশ্য পাবলিক খুব খায় বলে টিভি চ্যানেলগুলোও হাজির হয়েছিল অবিলম্বে। তাদের কোমরসরু টাইট জিন্স আর টি-শার্ট পরা রিপোর্টার ‘বুক-দেখ’ মেয়েরা তিন নম্বর প্রেমিকের গিফ্‌ট দেওয়া চকোলেট চিবুতে চিবুতে এসে দাঁড়িয়েছিল ক্যামেরার সামনে। ভিড়ের হাভাতে লোকেরা ওইসব মেয়েদের নায়িকা-নায়িকা চেহারা আর বিদেশি পারফিউমের গন্ধে এতই মোহিত হয়েছিল যে, চোখ না বুজেই ওরা এমন এক বেডসিনের কল্পনা করেছিল যা বাংলা বাজারের তাবড় লেখকদেরও লিখতে গেলে কলম ভেঙে যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা যে এখনও বাংলা সাহিত্যের আকাশে তেমন কোনও পর্ন লেখক পয়দা হয়নি। এ সব ভেবে লিটল ম্যাগাজিনের প্রতিবাদী কবির মন উদাস হয়ে যায়। আর যে হেতু সে নিজেও হাভাতেদের দলেই পড়ে, তাই ওইসব মেয়েদের আর একটু ভাল করে দেখে নিয়েছিল।    

    ঘটনার গতি ছিল বেশ সাবলীল। আর এমন ঘটনায় সচরাচর যা ঘটে থাকে— ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’-জনতা হঠাৎ আবেগবশত রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে পড়েছিল। আর বর্তমানে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে অবরোধ, তা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

    এ ধরনের ঘটনার পিছনে যে হেতু অর্থনৈতিক কারণ থাকে প্রায়শ, তাই নিন্দুকেরা বলেছিল ‘লোভ মশাই, লোভ। দেখবেন যখন ফাঁকা থাকে মনে হবে যেন গরুর গাড়িতে উঠেছেন। কিন্তু যেই পেছনে একটা এসে গেল অমনি শুরু হয়ে যাবে টান। তখন আপনি থাকলেন কি থাকলেন না কিছুই এসে যায় না। এটাই তো এখনকার ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম। হয় না দাদা। এ ভাবে হয় না। রেকলেস ড্রাইভিং। বুঝলেন না টিকিটের ওপরেই তো কমিশন। যত প্যাসেঞ্জার তত পয়সা।’ নিন্দুকের কথায় কেউ সায় দেয়নি। কেউ-কেউ ভেবেছিল, ‘ধুর, ভাট বকছে! শালা দু’নম্বরি…’  

    ঘটনার গতি ছিল বেশ সাবলীল। আর এমন ঘটনায় সচরাচর যা ঘটে থাকে— ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’-জনতা হঠাৎ আবেগবশত রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে পড়েছিল। আর বর্তমানে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে অবরোধ, তা শুরু হয়ে গিয়েছিল। পর পর কয়েকখানা আটকে দিলেই যা হয়ে থাকে, সেই জট বেঁধে যাওয়ায় গাড়িগুলো থেকে নেমে পড়া এক ভিড় কৌতূহল ‘কেসটা কি দাদা’-র জন্য নিজেদের মধ্যে জুড়ে দিয়েছিল গুঁতোগুঁতি। আসলে এতক্ষণ চলন্ত যানগুলোর ভেতরেও তারা ওই গুঁতোগুঁতিই চালিয়েছে। প্ৰকৃতপক্ষে শুধু গতিমান অবস্থায়-ই নয়, এমনকী শুয়ে-বসেও তারা সর্বদা ওই গুঁতোগুঁতি করা ছাড়া তেমন ইন্টারেস্টিং কাজ কিছুই পায়নি বলা যেতে পারে। সুতরাং চিৎকার-হইচই-গুঁতোগুঁতি বেশ একটা কার্নিভাল মেজাজ এনে দিয়েছিল।     

    হঠাৎ ভিড়টা নড়ে উঠেছিল সামান্য। হতাশাগ্রস্ত, জঙ্গি-টাইপ, চাকরিপ্রার্থী যুবকদের বিক্ষোভের মুখ থেকে মন্ত্রীকে এসকর্ট করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে, হেড-কোয়ার্টারে ফিরতে থাকা পুলিশ জিপ পুনরায় ভিড় দেখে খানিক অস্বস্তি ও গোপন আতঙ্কে দাঁড়িয়ে পড়েছিল রাস্তায়। অফিসারের পিছনে নেমে আসা থলথলে ভুঁড়ি ও দশাসই চেহারার কনস্টেবল, এমন ভিড়ে দু-একটা চেনা পকেটমার পেয়ে গেলে সন্ধের পাঁইটের পয়সা উঠে যাবে ভেবে, বেশ একটু উৎসাহের সঙ্গেই পৌঁছে গিয়েছিল একেবারে ভিড়ের মধ্যিখানে। তার সন্ধানী চোখ পড়েছিল সবুজ শাড়ির পকেটমারি ও বেশ্যাবৃত্তির দ্বৈত-ভূমিকার ওপর। পালাবার মতলব ভাঁজবার আগেই সে ধরা পরে গিয়েছিল পুলিশটার হাতে। তাই সে সবুজ ব্লাউজের বন্ধনে উপচে পরা, খরিদ্দারের হাতে হাতে অস্বাভাবিক বড় হয়ে যাওয়া স্তনদুটোর মাঝখানে, গোপনে লুকিয়ে রাখা তিন ভাঁজের পঞ্চাশ নোটখানা দু’আঙুলে তুলে বাড়িয়ে দিয়েছিল কনস্টেবলের দিকে। তিন বছর হল এ লাইনে; আসার আগে সে ছিল ভদ্রগোছের এক শ্রমিকের মেয়ে, যার বাবার হাতে তৈরি হত মানুষের পোশাক। ন’মাস বন্ধ কারখানার গেটে ‘আজ খুলবে’ আশা নিয়ে গিয়ে, প্রতিদিনই সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়ন অফিস থেকে আসা পেশাদার নেতাদের বক্তৃতা শুনতে শুনতে, আন্তর্জাতিক বাজারের বদমায়েশির নাড়ি-নক্ষত্র জেনে ফেলার পর একদিন ক্ষুধার্থ অভিমানে ঝুলে পড়েছিল দড়িতে। আর বিধবা মা ও ছোট ছোট তিনটি ভাই-বোনের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য রোজ বিকেলের লোকাল ট্রেন ঠেঙিয়ে, মহানগরীর রাস্তায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে, ক্রমেই মেয়েটা পোক্ত হয়েছিল বর্তমানের দ্বৈত ভূমিকায়। তাই সে জানত টাকাটা না দিলে, একভিড় লোকের সামনেই পুলিশটা নিজের হাত, ওর ব্লাউজের ভেতর গুঁজে দিয়ে, বেশ খানিক চটকে ঠিক টাকাটা বের করে নেবে। আর যে হেতু এটা পুলিশ ও বেশ্যার নিজস্ব মামলা, তাই জনগণও একে শ্লীলতাহানির পর্যায়ে ফেলতে চাইবে না। 

    পুলিশ অফিসার যখন দেখেছিল রাস্তায় পড়ে থাকা লোকটা টেঁসে গেছে, তখন ওকে হাসপাতালে না সোজা মর্গে পাঠাবে বুঝতে না পেরে নির্দেশ চেয়েছিল কন্ট্রোল রুমের— ‘হ্যালো কন্ট্রোল… হ্যালো… হ্যালো… ফোর টু জিরো রিপোর্টিং… হ্যালো, ফোর টু জিরো…’
    কন্ট্রোল রুমের রিসিভার চা-পানে ব্যস্ত থাকায় ‘শালা বড্ড চেঁচায়’ বিরক্তিতে উত্তর দিয়েছিল, ‘হ্যালো কন্ট্রোল… হ্যালো কন্ট্রোল… ওভার…’ 

    ঘটনার সমাপ্তি এ ধরনের কেসের ক্ষেত্রে কিছুটা একঘেয়ে হলেও, মজা কিন্তু তাতে কমেনি তিলমাত্রও। রাস্তায় পড়ে থাকা লোকটার রক্ত থকথকে আকার নিলে পর, একদল মাছির এসে পড়ায় কোনও-ই বাধা পড়েনি। আর যে হেতু শহরের বেড়ে যাওয়া জঞ্জাল তাদের সামনে খুলে দিয়েছে অতিপ্রজ হাইব্রিড কৃষি উৎপাদনের মতন খাদ্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার, তাই জেলিটাইপ রক্তে তারা চমৎকার এক ভোজ বসিয়ে দিয়েছিল।    

    পুলিশ অফিসার আর পরিস্থিতিটা সামাল দিতে পারেনি। অবরোধে আটকে পড়া লাল-আলো, হোমরাচোমরা গাড়ির বডিগার্ড নেমেই ধমকাতে শুরু করেছিল অফিসারকে, ‘বাড়তি ফোর্স চান না মশাই। স্যারের মিটিংয়ের যে দেরি হয়ে যাচ্ছে। ও’দিকে সি এম ওয়েট করছেন!’ হোমরাচোমরার নামে দু’ভ্যান বাড়তি ফোর্স এসে পড়েছিল অতি শীঘ্র। আর কোনও কথা না শুনেই, তারা লাঠিচার্জ শুরু করেছিল। জনতার ছত্রভঙ্গ হওয়ার দৃশ্য এখন আর পাবলিক তেমন খায় না বলে, টিভি ক্যামেরাগুলো প্যান করছিল হোন্ডা সিটি, পাজেরো, ও টয়োটার জানলা দিয়ে মুখ বাড়ানো সাদাসাদা চেহারার সেক্সি মেয়েগুলোর শরীরে।     

    যেমন জমে যায়, তেমন ছড়িয়ে পড়তেও দেরি হয় না জনতার। জনতা জানে, একমাত্র শাসনব্যবস্থা ছাড়া আর কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়। জনতা কেটে পড়তেই জায়গাটা ঘিরে ফেলেছিল খাকি পোশাক। আর হোমরাচোমরা তার সিএ-কে বলেছিল, ‘লাশটাকে এখুনি সরাতে বলো। কি কাণ্ডটাই না হতে যাচ্ছিল!’

    হোমরাচোমরার মন্তব্যে এটা পরিষ্কার যে, জীবন্তরা যা ঘটাতে পারে না, কখনও কখনও এমন দু’একটা লাশ তা ঘটিয়ে দিতে পারে। শুধুমাত্র কখন ও কী ভাবে, সেটাই রহস্য।

    ইতিমধ্যে রক্তের ওপর ভোজে বসা মাছির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে এখন আর রক্ত নয়, শুধু মাছিদেরই দেখা যাচ্ছিল। যেমন ইদানীং মানুষ নয়, দেখা যায় তাদের সমস্যাগুলোকেই। 

    শেষপর্যন্ত লাশটাকে মর্গে পাঠানোর পর ‘যাক বাবা, বাঁচা গেছে’ ভেবে পুলিশ অফিসার নিশ্চিন্ত হয়েছিল। সরকারি, বিশেষত পুলিশের দায়িত্বপূর্ণ পদমর্যাদারা সচরাচর দিনগুলোকে এ রকমই ‘বাঁচা গেল’ ধরনের কাটাতে চায়।

    ঘটনাস্থল এখন ফাঁকা। লোকজন যে যার ধান্দায় ফিরে গেছে। ঘটনা শেষ। ঘটনাগুলোর এ রকম হঠাৎ শুরু হয়ে, হঠাৎ শেষ হয়ে যাওয়াটাই বর্তমান রেওয়াজ। কিন্তু এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সমূহের অংশমাত্র। সুতরাং কাগজের পলিসি অনুযায়ী, খবর মোল্ড করা ছাড়া যে হেতু নিরপেক্ষ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের নিজস্ব মন্তব্য বর্জনীয়, তাই জমাট রক্ত ঢেকে বসে থাকা মাছিদের পরবর্তী গন্তব্য বিষয়ে এ প্রতিবেদনে যা লেখা হল না, তা বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠকের যার যার নিজের নিজের।  

    ছবি এঁকেছেন চিরঞ্জিৎ সামন্ত

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook