উত্তর কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে যেদিন প্রথম ঢুকলাম ক্লাস ইলেভেনে ভর্তি হবার ফর্ম নিতে সামনের সিঁড়ির দিকে চোখ আটকে গিয়েছিল। যে সময়ের কথা বলছি তখনও মুঠোফোনে গোটা পৃথিবীটা ভুবনগ্রাম হয়ে যায়নি এবং প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় লিঙ্গের সম্পর্ক আজকের মতো ভার্চুয়াল রসায়নে জারিত ছিল না। রঙিন প্রজাপতির মতো রঙিন খোলামেলা পোশাকে আমারই বয়সী ছেলেমেয়েরা স্কটিশ চার্চের প্রশস্ত সিঁড়িতে বসে গল্প গুজব করছিল।
ওদের মধ্যে একটি ছেলে বিরাট থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল একা।উস্কোখুসকো চুল, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম সেলুলয়েড ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটিকে দেখে আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল কারণ— অনিমেষ মিত্র! কালবেলা উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট অনিমেষ জীবন্ত হয়ে গিয়েছিল। অবচেতনে ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার নিশ্চয়ই চলাফেরা করছিলেন আমি স্কটিশ চার্চে পা রাখার পর থেকেই, নয়তো ষোল বছর বয়সের তরুণী চোখ কেন অনিমেষকে খুঁজতে যাবে নব্বই দশকের সেই হেদুয়ার ধারে?
বলা বাহুল্য, সার্থক উপন্যাস, কবিতা, গল্পর চরিত্ররা এভাবেই বোধহয় নতুনভাবে জন্ম নেয় পাঠকের কল্পনায়, বিশেষ বিশেষ প্রেক্ষাপটে। সমরেশ মজুমদারকে আমি চিনতাম সাতকাহনের দীপাবলী, উত্তরাধিকারের অনিমেষ, কালবেলার মাধবীলতার অনুপুঙ্খ বর্ণণার মধ্যে দিয়ে।যদিও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখকের যে কয়েকটি সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম, তাতে উনি বলেছিলেন উপন্যাসে নায়ক কোনো ব্যক্তি নন, নায়ক হল সময়। সময়ের সেই প্রবাহমান ধারাকেই ধরতে চেয়েছেন অক্ষরে কিন্তু পাঠক হিসাবে মনে হতো ওই প্রতিটি চরিত্র, মুখ্যচরিত্রের মধ্যে খন্ড খন্ড ভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন ঔপন্যাসিক। সমরেশ মজুমদার বলতে তাই অনিমেষ মিত্রকেই বুঝতাম।
বহু বছর পর চর্মচক্ষে লেখককে দেখবার সৌভাগ্য হল একটি বাংলা প্রকাশনার আমন্ত্রণে। নববর্ষের বৈঠকী আড্ডায়। দীর্ঘদেহী মানুষটাকে দেখে আমার ধারণা আরও বদ্ধমূল হল।
সত্যি বলতে গেলে সেদিন একটু আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম। যে হাত দিয়ে বেরিয়েছে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম চরিত্রগুলো, সেই হাতই যদি আমাকে নির্দেশ দেয় নিজের জন্য শরবতের গ্লাস তুলে নিতে তবে চোখে ধাঁধা লেগে যায় না? সেটাই স্বাভাবিক।
প্রণাম করতে গিয়েও হলো বিপদ। কিছুতেই প্রণাম নিলেন না। বললেন, ‘বিপদে ফেলোনা।’
আমি তো অবাক ! বিপদ?
উনি বললেন, ‘পাপ বাড়বে হে!’
হেসে ফেলেছিলাম। ‘আপনি পাপপুণ্যে বিশ্বাস করেন?’
‘এ সেই পাপ নয়। দিনগত পাপক্ষয়ের কথা বলা হচ্ছে। এ বয়সেও রোজ লিখতে হয় আমাকে ভূরি ভূরি। তোমাকে প্রণাম করতে দিলে আরও বোঝা বাড়বে লেখার।’
মুখচোরা হিসেবে আমার দুর্নাম সব জায়গায়। কিন্তু সেদিন হঠাৎ সেটা কাটিয়ে উঠে বলেছিলাম, ‘তাহলে তো আরও বেশি করে প্রণাম করা দরকার কারণ টেট্রালজির শেষ উপন্যাস মৌষলকাল পড়েও আমার খিদে মেটেনি। শুধু মনে হয়,‘শেষ হয়ে হইলনা শেষ’, আরও কিছু যেন পাব আপনার কলম থেকে।’
উনি চশমা খুলে ফেললেন। ঘন সবুজ পাঞ্জাবির কোনা দিয়ে চশমার কাচ মুছতে মুছতে বললেন, ‘যদি পালাবদল হয়, তবে ফের কলম ছুটবে।’
দুঃসাহসীর মতো প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আর যদি না হয়? সেই কবে থেকে আপনার লেখা পড়তে পড়তে রাজনৈতিক উপন্যাস সম্পর্কে বোধ হয়েছে। লোভ হয়েছে আরও বেশি করে সিংহাসন বদলের কাহিনি জানার, বিপ্লব তবে কি একদম মরে গেল?’
অর্বাচীন এক পাঠকের এমন বেয়াড়া প্রশ্নের উত্তর না দিলেও চলত, কিন্তু উনি বোধহয় সেদিন দরাজহাতে বিলি করছিলেন সবার সব উত্তর। স্মিতমুখে বললেন,‘বিপ্লব থেমে থাকেনা। আমার ওখানেই ইতি।হয়তো অন্য কেউ লিখবে।’
যাঁরা উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ পড়েছেন তাঁরা জানেন, এই সিরিজটি রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে লেখা। উত্তরাধিকার উপন্যাসে ঔপন্যাসিক, স্বাধীনতা পরবর্তী কংগ্রেস শাসনকে তুলে ধরেছেন। উত্তরবঙ্গের স্বর্গছেঁড়া চা-বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য এবং সেই চা-বাগানে ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকরি করা মিত্র পরিবারের গল্প হল উত্তরাধিকার।এই গল্পে অনিমেষের শিশু থেকে কিশোর হয়ে ওঠার বাঁকে বাঁকে প্রতিটি দ্বন্দ্ব, কৌতূহল ধরা পড়েছে। অনিমেষের মনে জেগে ওঠা প্রত্যেকটা প্রশ্ন নাড়িয়ে দিয়ে গেছিল আমাকেও। অনিমেষের মতো একই প্রশ্ন ছিল আমার।
বাবার নতুন করে বিয়ে হতে পারে তবে পিসিমার কেন হয় না? স্বাধীনতা যদি কষ্ট করেই পাওয়া হয়ে থাকে, তবে তা মিথ্যে হতে যাবে কেন? কমিউনিস্টরা সমানাধিকার চায়, কংগ্রেস তা দিচ্ছে না কেন? কংগ্রেসের ধনীরা আরো ধনী হচ্ছেন কেন? গান্ধীজি কি এই কংগ্রেসই গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন? মানুষ রাজনীতির পাশে থাকতে ভয় পায় কেন, আর যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনীতি করেন কেন?
পরবর্তীতে কালবেলায় তুলে ধরেছেন কংগ্রেসের প্রতি অন্যান্য দলের অনাস্থা, বামপন্থী দলের বিরোধিতা ও নকশাল আন্দোলন। কালবেলা যখন প্রথম পড়েছিলাম তখন নকশাল আন্দোলন, কমিউনিজম, রাজনীতি এসব নিয়ে কিছুই বুঝতামই না বলা চলে। আজ পরিণত বয়সে এসে বইটি পড়ে অনেক ভাবছি। সত্তর দশকের উত্তাল রাজনীতির দৃশ্যপট হচ্ছে উপন্যাসটি। কিন্তু ২০২৩ সালেও কিছুই পরিবর্তন হয়নি সেই সমাজের। শুধুমাত্র কিছু টেকনোলজির ছোঁওয়া ছাড়া। কালবেলাকে রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে দাগিয়ে দিলে ভুল। জীবনের গল্প কালবেলায় জিতে গেছে আসলে প্রেম। সেই প্রেমের আখ্যানের মূল কান্ডারী কে?
কে আবার?মাধবীলতা!
টেট্রালজির তৃতীয় কিস্তি কালপুরুষে চিত্রায়িত হয়েছে সিপিএমের ক্ষমতা দখল ও নিজেদের সমাজতান্ত্রিক নীতির ভুলে পুঁজিবাদ রাজনীতির চর্চা। উত্তরাধিকার আর কালবেলার উত্তরাধিকারী ঠিক হয়ে উঠতে পারেনি কালপুরুষ। অনিমেষ নায়ক ছিল, কালের নায়ক। হয়ত ব্যর্থ, তবু ব্যর্থতা অনিমেষকে মহত্ত্বের সোপান থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি। ঠিক যেন গ্রিক মহাকাব্যের গল্প। স্পার্টাকাসও শেষ অবধি একজন পরাজিত নায়ক। জয়ের চেয়ে পরাজয় অনেক সময় মহান।গর্বের।
অর্ক, অনিমেষ আর মাধবীলতার সন্তান। কালপুরুষের নায়ক। কালবেলা আর উত্তরাধিকারের তুলনায় যেমন কালপুরুষ ম্রিয়মান, তেমনি অনিমেষের তুলনায় অর্কও ম্লান। যে কাদামাটিকে গড়ে তোলার আশাবাদ আমরা কালবেলার শেষে অনিমেষের হৃদয়ে উচ্চারিত হতে শুনি, তার প্রতিফলন কিন্তু কালপুরুষে পাইনি।তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনের বস্তির এক ছোট ঘর তাদের ঠিকানা। চারপাশের নোংরা পরিবেশ থেকে অর্ককে আগলে রাখাই মাধবীলতা এবং অনিমেষের একমাত্র চাওয়া। অনিমেষের চিকিৎসায় খরচ হওয়া অর্থের ঋণে জর্জরিত মাধবীলতা কখনো অন্যায়কে গ্রহণ করেনি।দুহাতে আগলে রেখেছিল স্বামী এবং ছেলেকে। বস্তির পরিবেশে যেখানে খিস্তি, মাতলামো আর গুন্ডামি করা স্বাভাবিক সেখানে হঠাৎই যেন এসব বিষের মত নাড়া দেয় অর্কর মনে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সাহায্য ছাড়া বস্তির সবাইকে এক করে শুরু হয় নতুন লড়াই। অনিমেষ যা একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া ভাবতে পারেনি, অর্ক তা করে ফেলেছিল সহজেই কিন্তু এখানেও ষড়যন্ত্রের দায়ে জেল খাটতে হয়েছিল অর্ককে। সবার মুখে তখন একই চিৎকার, “অর্কর মুক্তি চাই”। অর্ক তার নামের মতই অন্ধকারাচ্ছন্ন বস্তির সকলের কাছে সূর্যের আলো হয়ে উঠেছিলো।
কালবেলার পর কালপুরুষ- দুটি ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় বেড়ে উঠা দুটি প্রতিবাদী চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোথাও যেন মনে হয়েছে অর্ক চরিত্রটিকে আরেকটু যাচাই করা যেত।
সেই অতৃপ্তি নিয়েই পড়তে শুরু করেছিলাম টেট্রোলজির শেষ উপন্যাস মৌষলকাল। মোটামুটি বাম জমানার শেষের দিক এবং তৃণমূল কংগ্রেস জমানার প্রথম দিকের সময়ের উপন্যাস। মৌষল হল মহাভারতের একটি অংশবিশেষ। উপন্যাসের নামকরণ রূপক অর্থে। ৭০- এর দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময়কে লেখক মহাভারতের কুরুক্ষেত্র পরবর্তী অংশের রূপক সাদৃশ্য বিবেচনায় এই উপন্যাসের নাম দিয়েছেন ‘মৌষলকাল’।
অর্ক চাকরি করে। সদ্য চল্লিশ তার বয়স। স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হয়নি। অর্কের সঙ্গে বস্তির একটু ভদ্রস্থ বাড়িতেই থাকে সত্তর ছুঁই ছুঁই অনিমেষ এবং চাকরি থেকে অবসর নেওয়া মাধবীলতা। উপন্যাসের শুরুতেই বামফ্রন্ট তথা সি পি আই(এম)-এর মুখোশ দেখা যাচ্ছে সুরেন মাইতির মতো তোলাবাজদের দাদাগিরিতে। অর্ক বা অনিমেষ রাজনীতির মধ্যে নেই। অবশ্য অনিমেষ সব কিছু অনুধাবন করে নিজের মতো করে। মাধবীলতা এখনও একই রকম। সারাক্ষণ আগলে রেখেছে দুই অতৃপ্ত মানুষকে।
প্রশ্নগুলো বহুদিন বহুবছর ধরে মাথায় ঘুরত। মাধবীলতারা কেন একই থাকে? কী দায় তাঁদের?সেদিন লেখককে পেয়ে বলেই ফেলেছিলাম অকপটে।
কেন জানিনা ধৈর্য ধরে শুনেছিলেন। বলেছিলাম, ‘‘আপনার কালবেলা পড়ে কোন মেয়ে মাধবীলতা হতে চায়নি? এই যেমন কালবেলায় মাধবীলতার বর্ণনা দিয়েছেন, ‘অনিমেষ দেখল ঠাস দাঁতের সারির একটা দিকে গজদাঁতের আদল, যেটা হাসিটাকে আরও সুন্দর করেছে। সেটা চোখে পড়ায় অনিমেষ একটুও রাগতে পারল না কথাটা শুনেও। বলল, ‘আপনি একনাগাড়ে ঝগড়া করে যাচ্ছেন।’ মেয়েটি আবার গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করল।’’
প্রশ্ন করেছিলাম, ‘মাধবীলতার গজদাঁত, পদ্মের মতো মুখ, নরম শরীর কেন? নায়িকা বলে? মিউজ বলে? আপনি মাধবীলতাকে প্রত্যক্ষ বিপ্লবে আনলেন না কেন? একজন মেয়ের কি এটাই ভূমিকা যে সে সারাজীবন ধরে বিপ্লবীর প্রেমিকা, স্ত্রী, মা হয়ে থাকবে? মাধবীলতা নিজেও কি যথেষ্ট শিক্ষিত এবং দৃঢ়চেতা ছিল না?’
বলে ফেলেই ভাবলাম, বর্ষীয়ান সাহিত্যিককে এমন প্রশ্ন করাটা কি ঠিক হল? যদি উনি রেগে যান? যদি প্রশ্নের উত্তর না দেন!
কিন্তু উনি হো হো করে হেসে বললেন, ‘এই তোমাদের দোষ। বড্ড নারীবাদী চিন্তা! কেন অনিমেষকে বিপ্লবী দেখিয়েছি বলে কি মাধবীলতা ছোট হয়ে গেল? অনুপ্রেরণা ব্যাপারটা কম মহত?’
উত্তর দিলাম নম্রসুরে। প্রিয় সাহিত্যিক, কালবেলা পড়েছিলাম আমার তেরো বছর বয়সে। পরেও পড়েছি বারবার। বাংলা সাহিত্যে এত শক্তিশালী আধুনিক চরিত্র আর দ্বিতীয় কোনটি আছে বলে মনে পড়ছে না।
উনি আমার দিকে তাকালেন।
আপনার উত্তরাধিকার পড়ে মা মরা অনিমেষের প্রতি যতটাই সহানুভূতি হয়েছিল, কালবেলা পড়ে অনিমেষকে একজন আবেগের বশবর্তী বোকা মানুষ বলে মনে হয়েছে। অনিমেষ নিজেই নিজের সম্পর্কে প্রত্যয়ী ছিল না। নিজেকে বুঝতও না। আসল বিপ্লবী তো মাধবীলতা,যার নিজের সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে এমনকি রাজনীতি সম্পর্কেও অনিমেষের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান।যে প্রতিনিয়ত তার নিজের সত্তার সঙ্গে বিপ্লব করে গেছে, কোনও কিছুর বিনিময় ছাড়া। তাহলে সেই তো আসল বিপ্লবী!
‘তোমার আসল খেদটা কোথায় তাহলে?’ শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক এবার আমাকেই প্রশ্ন করেছেন।
ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘‘আসলে কী জানেন, চিরকাল নিজেকে মাধবীলতা ভেবেছি। বান্ধবীদের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি ওরাও এক একজন মাধবীলতা। কিন্তু বাস্তবে মাধবীলতারা প্রকাশ্যে কিছুই করতে পারেনা। যেসব ছেলেবন্ধুদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, অনিমেষ না মাধবীলতা কোনজন বেশি বৈপ্লবিক, তারা বলেছে ‘অনিমেষ মিত্রর সুবাসদা, মহাদেবদারা বিপ্লবের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল। চারিদিকে ‘নির্বাচন বয়কট করো’ ‘পার্লামেন্ট শুয়োয়ের খোঁয়ার’ শ্লোগানে নিজেদের রক্তে আগুন জ্বালিয়েছিল। কিন্তু তাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে তার পরিণতি হয় আতঙ্কবাদী রূপে। ওই একজনই বিপ্লবী। মাধবীলতা। যে সারাটা সময় অনিমেষকে সমর্থন জুগিয়েছে, পরম নির্ভরতায় তাকে লতার মতো আঁকড়ে ধরেছে। অনিমেষ অবাক চোখে শুধু দেখেছে। বিয়ে না করেও সমাজের বিরুদ্ধে তার এই নীরব বিপ্লব অনিমেষকেও অবাক করে দিয়েছিল।’’
‘তা বেশ তো! পাঠকের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে!’ উনি হাসছেন।
আমার দুঃখের জায়গাটা এবার উজাড় করে দিলাম প্রিয়তম ঔপন্যাসিককে— আপনার লেখায় ভালোবাসার জন্য মাধবীলতার ত্যাগ সবকিছুকেই ম্লান করে দেয়। আসলেই কি এভাবে সবছেড়ে ছুড়ে কাউকে ভালোবাসা যায়? বাস্তবে ছেড়ে দিন, আমি তো কোনও পুরুষকে উপন্যাসেও দেখিনি কোনও মাধবীলতার জন্য সব ছেড়ে দিতে!বড় কষ্ট হয়, বুকের মধ্যে হাহাকার ওঠে! কী পেল মাধবীলতারা?
শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিকের সামনে যা বলতে পারিনি সেদিন মুখফুটে, বিপ্লবের আরেক নাম নয়, আসল নাম হল মাধবীলতা।