ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2024

 
 

ডাকবাংলায় আপনাকে স্বাগত

 
 
  • প্রাচীন ধর্মযুদ্ধের নতুন অবতার


    দেবদত্ত পট্টনায়েক (Devdutt Pattanaik) (December 24, 2022)
     

    পাশ্চাত্য বা পশ্চিম, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং মৌলবাদী শক্তির মধ্যে লড়াই হিসাবে দেখতে চায়, কিন্তু ইসলামী বিশ্বের অনেকেই এটিকে পুরানো ক্রুসেডের একটি নতুন পর্ব হিসাবে দেখছে। একেশ্বরবাদের ইতিহাসকে যদি কেউ পুনরুদ্ধার করতে চায়, তাহলে এটিই একমাত্র  অর্থ হিসেবে প্রতিভাত হয়। 

    একেশ্বরবাদে বিশ্বাস বা ধারাটি শুরু হয়েছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়, যেখানে প্রতিটি শহরের নিজস্ব দেবতা ছিল। একটি নগর-দেবতার ধারণা বিভিন্ন উপজাতির লোকদের একত্রিত করতে সাহায্য করেছিল। যখন শহরগুলি একে অপরের সঙ্গে লড়াই করেছিল, তখন নগর-দেবতার নামে বিজয় ঘোষণা করা হয়েছিল এবং পরাধীন শহরের দেবতাকে হয় ধ্বংস করা হয়েছিল বা কেবল বিজয়ী দেবতার পরিষদের অংশ করা হয়েছিল। এইভাবে বড় শহরগুলিতে অনেক দেবতার কাউন্সিল ছিল, প্রতিটি দেবতা একটি উপজাতি বা একটি জেলার প্রতিনিধিত্ব করত, যার মধ্যে একজন সর্বশক্তিমান দেবতা সবচেয়ে শক্তিশালী উপজাতি বা শহরের সকলের সভাপতিত্ব করতেন।

    ইব্রাহিমের স্ত্রী ছিলেন সারা, কিন্তু তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। একদিন, একজন ফেরেশতা তাঁর কাছে এসে বললেন যে সারা ভবিষ্যতে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবেন। সারা হেসেছিলেন, কারণ মা হওয়ার পক্ষে তখন তাঁর বয়স যথেষ্ট বেশি। তিনি ইব্রাহিমকে তাঁর দাসী হাজেরাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। হাজেরা ইব্রাহিমের একটি পুত্র ইসমাইলের জন্ম দেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই, সারার যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও তিনি গর্ভবতী হন এবং ইসহাককে জন্ম দেন।

    তারপর, একদিন, চার হাজার বছর আগে, উর শহরে, ইব্রাহিম (ওরফে আব্রাহাম) নামক এক যুবকের দিব্যজ্ঞান উন্মিলিত হয়েছিল। তাঁর পিতা আজর কাঠ ও পাথরের মূর্তি তৈরি করে শহরে বিক্রি করতেন। ইব্রাহিমের পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল যে এই কাঠ ও পাথর দিয়ে তৈরি মূর্তিগুলি দেবতা হতে পারে। যারা নিজেরা জল খেতে পারেন না, তাঁরা মানবতার তৃষ্ণা মেটাতে পারবেন কী করে! তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে তর্ক করায় ইব্রাহিম-এর পিতা তাঁকে পাথর মেরে হত্যা করার বা তার উগ্রবাদী ধারণার জন্য জীবন্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছিলেন। অবশেষে, পিতা মূর্তিপূজা ত্যাগ করতে প্রত্যাখ্যান করায় বিরক্ত হয়ে, ইব্রাহিম তাঁর পিতার নির্মিত সমস্ত মূর্তি ভেঙে ফেলেন এবং ঈশ্বরকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একমাত্র সত্যিকারের ঈশ্বর— আল্লাহ— যাঁর কোন রূপের প্রয়োজন ছিল না, যাঁর মহিমা একটি মূর্তিতে ধারণ করা যায় না। এভাবেই একেশ্বরবাদের জন্ম হয়েছিল।

    ইসমাইলের বংশধররা আরব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইসাহ-র বংশধর ইহুদিরা, যারা মিশরে গিয়েছিল, সেখানে মিশরের ফারাও শেষ পর্যন্ত তাদের দাসত্ব করিয়েছিল। তিন হাজার বছর আগে, ইহুদিদের মধ্যে মূসা বা মোসেজ নামক ঈশ্বরের একজন নবীর জন্ম হয়েছিল। তিনি ইহুদিদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এনে লেভান্টে প্রতিশ্রুত ভূমি লেভান্টে নিয়ে যান।

    ইব্রাহিমের স্ত্রী ছিলেন সারা, কিন্তু তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। একদিন, একজন ফেরেশতা তাঁর কাছে এসে বললেন যে সারা ভবিষ্যতে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেবেন। সারা হেসেছিলেন, কারণ মা হওয়ার পক্ষে তখন তাঁর বয়স যথেষ্ট বেশি। তিনি ইব্রাহিমকে তাঁর দাসী হাজেরাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। হাজেরা ইব্রাহিমের একটি পুত্র ইসমাইলের জন্ম দেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই, সারার যথেষ্ট বয়স হওয়া সত্ত্বেও তিনি গর্ভবতী হন এবং ইসহাককে জন্ম দেন। যে সারা, আব্রাহামের ঈশ্বরে সামান্যই বিশ্বাস করতেন, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঈশ্বরের শক্তি, তাঁর অনুগ্রহ এবং তাঁর ক্রোধ উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি তাঁকে মাতৃত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন, কিন্তু নিশ্চিত করেছিলেন যে সারার ছেলে হাজেরার  ছেলে ইসমাইলের থেকে বয়সে ছোট হবে এবং ইসমাইলের কাছে প্রণত থাকবে। কিন্তু সারা শান্তির থেকে অহংকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন বেশি। এবং তাই ইব্রাহিমকে হাজেরা ও তার ছেলেকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য করেছিলেন। হাজেরা মরুভূমিতে চলে যান ছেলেকে নিয়ে। কষ্টে, তৃষ্ণায় যখন তাঁর প্রাণ যায় যায় তখন আল্লাহ তাঁকে জমজম নামে পরিচিত একটি  জলের কূপের দিকে ইঙ্গিত করেন। পরবর্তীতে, আল্লাহর নির্দেশে, ইব্রাহিম হাজেরার সঙ্গে দেখা করেন, এবং ইসমাইলের সাহায্যে জমজমের কূপ থেকে অনতিদূরে, আল্লাহর সম্মানের জন্য কাবাঘর নির্মাণ করেন, পরে যার চারপাশে মক্কা শহর গড়ে উঠবে।

    দুই হাজার বছর আগে, ইহুদিদের মধ্য থেকে রাজা ডেভিডের বংশে যিশু নামে এক ব্যক্তির উত্থান হয়। তিনি ঈশ্বর সম্পর্কে ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি— ঈশ্বর শুধুমাত্র নির্বাচিত লোকদের জন্য যত্নশীল এবং ঈশ্বর ছিলেন একজন কঠোর পিতা যিনি পরম আনুগত্য দাবি করেন— এই মত প্রত্যাখ্যান করেন । তিনি বলেছিলেন যে, ঈশ্বর একজন প্রেমময় পিতা যিনি প্রত্যেক মানুষকে তাঁর নিকটে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এমনকী যখন তারা তার আইন ভঙ্গ করেছে, তখনও। তাঁর এই সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি ইহুদি ধর্মযাজকদের রাগ ও বিরক্তির উদ্রেক করেছিল, যারা যিশুকে গ্রেফতার করে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল।

    ইসমাইলের বংশধররা আরব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ইসাহ-র বংশধর ইহুদিরা, যারা মিশরে গিয়েছিল, সেখানে মিশরের ফারাও শেষ পর্যন্ত তাদের দাসত্ব করিয়েছিল। তিন হাজার বছর আগে, ইহুদিদের মধ্যে মূসা বা মোসেজ নামক ঈশ্বরের একজন নবীর জন্ম হয়েছিল। তিনি ইহুদিদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে এনে লেভান্টে প্রতিশ্রুত ভূমি লেভান্টে নিয়ে যান। এখানে, বহু বছর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে, বারোটি ইহুদি উপজাতি ইসরায়েল নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে, যার রাজধানী জেরুজালেম। সল, ডেভিড এবং সলোমনের মতো অনেক রাজার রাজত্বের পরে, ইহুদি রাজ্যের পতন ঘটে এবং ইহুদি গোত্রগুলি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

    দুই হাজার বছর আগে, ইহুদিদের মধ্য থেকে রাজা ডেভিডের বংশে যিশু নামে এক ব্যক্তির উত্থান হয়। তিনি ঈশ্বর সম্পর্কে ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি— ঈশ্বর শুধুমাত্র নির্বাচিত লোকদের জন্য যত্নশীল এবং ঈশ্বর ছিলেন একজন কঠোর পিতা যিনি পরম আনুগত্য দাবি করেন— এই মত প্রত্যাখ্যান করেন । তিনি বলেছিলেন যে, ঈশ্বর একজন প্রেমময় পিতা যিনি প্রত্যেক মানুষকে তাঁর নিকটে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, এমনকী যখন তারা তার আইন ভঙ্গ করেছে, তখনও। তাঁর এই সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি ইহুদি ধর্মযাজকদের রাগ ও বিরক্তির উদ্রেক করেছিল, যারা যিশুকে গ্রেফতার করে ক্রুশবিদ্ধ করেছিল। যিশুর অনুসারীরা বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর মৃত্যুর তিন দিন পরে নিজেকে পুনরুত্থিত করেছিলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে র‍্যাপচারের সময় ফিরে আসবেন, যখন পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে এবং সমস্ত বিশ্বস্তকে তাঁর পিতা, এক সত্যিকারের ঈশ্বরের রাজ্যে নিয়ে যাবে।

    যিশুর অনুসারীরা আরও বলেছিলেন যে— যে যিশু মৃত্যুকে অস্বীকার করেছিলেন, তিনি মরিয়ম নামক এক কুমারীর গর্ভে গর্ভধারণ করেছিলেন, যিনি পরবর্তীকালে জোসেফ নামক একজনকে বিয়ে করবেন। তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে যিশু হলেন খ্রিষ্ট, ঈশ্বরের মসিহা, মানবতার পাপের জন্য যন্ত্রণা ভোগ করতে প্রেরিত। তাঁদের শব্দ গসপেল হয়ে ওঠে, এবং তারা ঈশ্বরের দূত হিসেবে পরিচিত হন। যীশু যা বলেছিলেন, তাঁর গল্প এবং ব্যাখ্যাগুলি প্রাচ্যের তুলনায় পাশ্চাত্যে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল, প্রথমে রোমান ক্রীতদাসদের মধ্যে, তারপরে রোমান সম্ভ্রান্তদের মধ্যে এবং শেষ পর্যন্ত রোমান রাজবংশের মধ্যে। এভাবেই বহু ঈশ্বরবাদী রোমান সাম্রাজ্য একেশ্বরবাদী পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হয়। নিন্দুকেরা বলেন যে সম্রাটের কাছে ধর্মান্তরই একমাত্র উপায় ছিল  যার মাধ্যেমে তিনি ভেঙে পড়া সাম্রাজ্যকে একত্রে আবদ্ধ করতে পারেন। কিন্তু খ্রিস্টধর্ম ঐক্যবদ্ধ ছিল না। পূর্বে বাইজেন্টিয়ামে বসবাসকারী খ্রিস্টানরা সচেতনভাবে নিজেদেরকে পশ্চিমে বসবাসকারী খ্রিস্টানদের থেকে আলাদা করেছিল এবং রোমের প্রতি অনুগত ছিল। 

    তারপর, প্রায় ১৫০০ বছর আগে, মুহাম্মদ নামক একজন আরব ব্যবসায়ী ফেরেশতা জিব্রাইলের কাছে এসেছিলেন এবং ঈশ্বরের বাণী পাঠ করতে বলেছিলেন। এই ধরনের একাধিক সাক্ষাতের মধ্যে, কুরআন তাঁর কাছে প্রতিভাত হয়েছিল এবং তাঁকে চূড়ান্ত নবী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল যিনি মানবতাকে সঠিক পথে নিয়ে আসবেন। এমনকী তাঁকে এমন একটি ঘোড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল উড়ে স্বর্গে যেতে পারে যেখানে তাঁকে মুসলমান হওয়ার সঠিক উপায় বলা হয়েছিল। এরপর আর জেরুজালেম নয়, মক্কার দিকে মুখ করে প্রার্থনা করার রীতি শুরু হয়েছিল। নবীজীর জীবদ্দশায় ইসলাম আরবে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পরপরই, মুসলমানরা সুন্নি হিসাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে যাঁরা নবী মুহাম্মদের শ্বশুর দ্বারা তৈরি করা পথ অনুসরণ করে এবং শিয়ারা যারা নবী মুহাম্মদের জামাতা দ্বারা তৈরি করা পথ অনুসরণ করে। কিন্তু এই বিভাজন আরব থেকে পারস্য হয়ে আফ্রিকা এবং সেখান থেকে এশিয়া ও ইউরোপে ইসলামের আশ্চর্যজনকভাবে দ্রুত বিস্তার বন্ধ করতে পারেনি। এটি শেষ পর্যন্ত খ্রিস্টান ইউরোপে কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল।

    অনেক মুসলমান, ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাকে ক্রুসেডের শেষে অটোমান সাম্রাজ্যের কাছে খ্রিস্টানদের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে। তার কারণ, যে খ্রিস্টানরা যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইহুদিদেরকে খ্রিস্ট হত্যাকারীদের বংশধর হিসেবে নিপীড়ন করেছে তারা তাদের সাহায্য করার জন্য তাদের পথ ছেড়ে যেতে চাইবে, এটা খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়।

    এক হাজার বছর আগে, মুসলমানদের কাছে থেকে পবিত্র ভূমি লেভান্ট, বিশেষত জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ খ্রিস্টান ইউরোপের নেতৃত্বে ক্রুসেড নামে পরিচিত মিসলমানদের বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধ অভিযানের জন্ম দেয়। ক্রুসেড বহু শতাব্দী ধরে চলে এবং অবশেষে পাঁচশ বছর আগে কনস্টান্টিনোপলের পতনের মাধ্যমে ক্রুসেড শেষ হয়। এর মাধ্যমে মুসলমানদের, বা বরং অটোমান সুলতানদের প্রাচ্যের প্রভু ঘোষণা করা হয়েছিল এবং খ্রিস্টানদেরকে পাশ্চাত্যের অধিকার নিয়েই উপর সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। 

    গত ৫০০ বছরে, খ্রিস্টান-অহং নিজেকে আলোকিতকরণ, শিল্পায়ন, উপনিবেশ এবং অবশেষে পুঁজিবাদ দিয়ে পুনরুত্থিত করেছে। এটি পৃথিবীর গতিপথ চিরতরে বদলে দিয়েছে। আমেরিকা বলশালী অস্তিত্ব নিয়ে পৃথিবীর কাছে পরিচিত হল, এবং উপনিবেশগুলি অবশেষে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার সুযোগ পেল। কিন্তু এ সবই হয় বিংশ শতকের দুটি বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের পরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল হল পূর্ববর্তী অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে জন্ম নিল কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র এবং একটি ইহুদি রাষ্ট্র – ইসরাইল।

    অনেক মুসলমান, ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাকে ক্রুসেডের শেষে অটোমান সাম্রাজ্যের কাছে খ্রিস্টানদের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে। তার কারণ, যে খ্রিস্টানরা যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইহুদিদেরকে খ্রিস্ট হত্যাকারীদের বংশধর হিসেবে নিপীড়ন করেছে তারা তাদের সাহায্য করার জন্য তাদের পথ ছেড়ে যেতে চাইবে, এটা খুব বিশ্বাসযোগ্য নয়। জার্মানির নাৎসি শাসনের দ্বারা লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলোকাস্টের প্রতি অন্ধ চোখ ফেরানোর অপরাধবোধ কমানোর জন্য সম্ভবত এই কাজ তারা করেছিল। অথবা হতে পারে, এটি ছিল খ্রিস্টান জাতি রাষ্ট্রগুলোকে শক্তিশালী ইহুদি ব্যাঙ্কারদের দ্বারা নিয়ন্ত্রণের ফল, যারা বুঝতে পেরেছিল যে  কয়েক শতাব্দী ধরে গৃহহীন ও নির্যাতিত হওয়ার পরতাদের নিজস্ব একটি জাতি রাষ্ট্র থাকা গুরুত্বপূর্ণ। 

    ইহুদি রাষ্ট্রের উত্থান এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে ইউরো-আমেরিকান বাণিজ্যিক শক্তির আধিপত্য— বিশেষ করে সেখানে লাভজনক তেল নিয়ন্ত্রণ করা যায়— কট্টরপন্থী ইসলামের উত্থানকে উত্সাহিত করে যা আধুনিক (পড়ুন পাশ্চাত্য) সবকিছুকে প্রত্যাখ্যান করে, প্রথমে ইরানে এবং এখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রায় প্রতিটি দেশে। যদিও কখনো স্বীকার করা হয়নি, উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং আফগান যুদ্ধ এবং এখন আইএসআইএস-এর বিরোধিতা, অনেকেই মধ্যযুগীয় ক্রুসেডের একটি নতুন রূপ হিসেবে দেখছেন। পশ্চিম যতই অস্বীকার করতে চাক না কেন, মুসলিম বিশ্বের প্রতি ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তিবাদ, উদারতাবাদ এবং গণতন্ত্র, তাদের পুরানো খ্রিস্টান শত্রুদের নতুন অবতার মাত্র।

    Read in English

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     




 

 

Rate us on Google Rate us on FaceBook