ডাকবাংলা

এক ডাকে গোটা বিশ্ব

 
 
  

"For those who want to rediscover the sweetness of Bengali writing, Daakbangla.com is a homecoming. The range of articles is diverse, spanning European football on the one end and classical music on the other! There is curated content from some of the stalwarts of Bangla literature, but there is also content from other languages as well."

DaakBangla logo designed by Jogen Chowdhury

Website designed by Pinaki De

Icon illustrated by Partha Dasgupta

Footer illustration by Rupak Neogy

Mobile apps: Rebin Infotech

Web development: Pixel Poetics


This Website comprises copyrighted materials. You may not copy, distribute, reuse, publish or use the content, images, audio and video or any part of them in any way whatsoever.

© and ® by Daak Bangla, 2020-2025

 
 
  • ‘ওকে বাঁধিবি কে রে’

    সমীরকুমার ঘোষ (March 24, 2025)
     

    সেটা ১৯০০ সালে‌র জুন-জুলাই হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি লন্ডন শহর তখন সংস্কৃতি ও বিনোদনেরও পীঠস্থান। এক তরুণ মার্কিন জাদুকর সস্ত্রীক এসেছে। বিখ্যাত রঙ্গালয় ‘‌আল্‌হামব্রা’য় খেলা দেখাতে চায়। রঙ্গালয়-কর্ণধার ডান্ডাস স্লেটার এক অদ্ভুত শর্ত আরোপ করলেন। বললেন, হাতকড়া থেকে মুক্ত হওয়ার খেলা ইংরেজ দর্শকের কাছে নতুন কিছু নয়। তুমি যদি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতকড়া থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারো, দু’সপ্তাহ সেখানে খেলা দেখানোর সুযোগ দিতে পারি। জাদুকর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। বললেন, এখুনি চলুন।

    ‘শোনো হে ছোকরা, ‌স্কট‌ল্যান্ড ইয়ার্ড তামাশা বা সস্তা প্রচারের জায়গা নয়। ‌হাতকড়া লাগালে সত্যিকারের হাতকড়াই লাগাব, আর তার চাবিও তোমার হাতে দেব না।’‌ সাফ জানিয়ে দিলেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট মেলভিল। জাদুকর হেসে জানালেন, কোনও সমস্যা নেই। একাধিক হাতকড়া, এমনকী, পায়ে বেড়ি পরালেও আপত্তি নেই। মেলভিল টেবিল থেকে একজোড়া ‘‌রেগুলেশন হ্যান্ডকাফ’‌, যা কয়েদিদের পরানো হয়, হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে জাদুকরকে ইঙ্গিত করলেন অনুসরণ করতে। হঠাৎ একটা থামের কাছে থেমে জাদুকরের দুটো হাত থামের দু-দিকে চালিয়ে তাতে হাতকড়া পরিয়ে আটকে দিলেন। থামের সঙ্গে আবদ্ধ জাদুকর। হাতকড়া না খুললে মুক্তি নেই। এরপর স্লেটারের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘‌চলুন আমরা যাই। ঘণ্টাখানেক বাদে এসে ওকে খুলে দেওয়া যাবে।’‌

    এই বলে দু-জনে কিছুটা এগিয়েছেন, হঠাৎ শুনতে পেলেন জাদুকরের পিছুডাক, ‘‌আপনারা বুঝি অফিসে চললেন?‌ একটু দাঁড়ান। আমিও যাব আপনাদের সঙ্গে!‌’ দু-জনে পিছনে তাকিয়ে সবিস্ময় দেখলেন, জাদুকর মুক্ত। মিটিমিটি হাসতে হাসতে এসে মেলভিনের হাতে ফিরিয়ে দিলেন হাতকড়া। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ঝানু পুলিশকর্তা মেলভিল। চাবি ছাড়াই ছোকরা হাতকড়া খুলে ফেলেছে!‌ বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন জানালেন তরুণ জাদুকরকে। প্রতিশ্রুতিমতো স্লেটার আল্‌হামব্রা রঙ্গালয়ে দু-সপ্তাহ খেলা দেখানোর অনুমতি দিলেন।

    আরও পড়ুন : করাত দিয়ে মেয়েটিকে কাটলেন পি সি সরকার, হয়ে উঠল না জোড়া লাগানো! লিখছেন কৌশিক মজুমদার…

    লন্ডন গোয়েন্দা পুলিশের সদর দপ্তর স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড হার মেনেছে নবাগত তরুণ মার্কিন জাদুকরের কাছে। খবর ছড়িয়ে পড়ল দাবানলের মতো। রাতারাতি তারকা হয়ে উঠলেন সেই জাদুকর। যাঁর নাম হ্যারি হুডিনি। দু-সপ্তাহের চুক্তি হয়েছিল, প্রবল জনপ্রিয়তার কারণে ছ’মাস খেলা দেখাতে হয়েছিল সেখানে।

    এই ধরনের খেলাকে জাদুর পরিভাষায় বলে ‘‌এসকেপ’‌। এই খেলায় জাদুকর হাতকড়া, শিকল, ডান্ডাবেড়ি থেকে, মুখবন্ধ থলে কিংবা তালাবন্ধ বাক্স বা পিপেতে বন্দি অবস্থা থেকে নিজেকে জাদুশক্তির সাহায্যে মুক্ত করে নেন। দর্শক বহু মাথা খাটিয়েও রহস্য ভেদ করতে পারে না। অনেকে তো বিশ্বাস করে, অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া এ-জিনিস করা সম্ভব নয়। শুধু সাধারণ মানুষ নন, শার্লক হোমসের স্রষ্টা আর্থান কোনান ডয়েল পর্যন্ত হুডিনির খেলা দেখে নিঃসন্দেহ হয়েছিলেন, হুডিনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর যুক্তি ছিল, এর সাহায্যে তিনি পঞ্চভূতে গড়া দেহটিকে সূক্ষ্ম করে বন্ধন থেকে বেরিয়ে এসে আবার স্থূল দেহ ধারণ করেন। আমাদের জাদুসম্রাট গণপতির ইলিউশন বক্স, কংসের কারাগার ইত্যাদি খেলা দেখেও লোকে তেমনটি বলতেন। হুডিনির সঙ্গে গণপতির আরেক মিল ছিল, দু-জনেই প্রথম জীবনে সার্কাসে জাদুর খেলা দেখিয়েছেন।

    কেউ কেউ কোনও কোনও বিষয়ে বিস্ময়প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। আর যথাযথ সুযোগ পেলে সেই প্রতিভার দৌলতে একজন সামান্য হয়ে ওঠে অসামান্য। জাদুজগতে হ্যারি হুডিনিও তেমন।

    বিখ্যাত আন্ডারওয়াটার এসকেপ-এর প্রস্তুতি

    আসল নাম ছিল এহরি‌শ ভাইস (‌Ehrich Weiss)। ‌বাবা হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট শহরের এক গরিব, ধর্মপ্রাণ ও পণ্ডিত ইহুদি ‘‌রাব্বি’‌ বা যাজক। বুদাপেস্ট থেকে সপরিবার আমেরিকা চলে এসেছিলেন। ছোটখাট হলেও এহরিশের শরীর-স্বাস্থ্য বরাবরই মজবুত, সুগঠিত ও কষ্টসহিষ্ণু। সাঁতার থেকে দৌড়ঝাঁপ, সবেতেই ছিলেন তুখড়। অভাবের সংসারে ঠেকনা দিতে এহরিশ কিছুদিন খবরের কাগজ বিক্রি করেন। তারপর ঢুকে পড়েন নেকটাই তৈরির কারখানায়। কাজ ছিল কাপড় কাটা। সহকর্মী জ্যাক হেম্যানের ছিল জাদুর নেশা। তার কাছেই হাতেখড়ি। জাদু নিয়ে যখন আগ্রহ বাড়ছে, তখনই হাতে পেলেন ফরাসি জাদুসম্রাট রবেয়ার উদ্যাঁ-র (‌Robert Houdin‌) জীবনস্মৃতি। পড়ে মুগ্ধ এহরিশ। মনে হল, এক সাধারণ ঘড়ি মিস্ত্রির ছেলে এবং উকিলের কেরানি যখন অত বড় জাদুকর হয়ে উঠতে পারেন, এক পণ্ডিত রাব্বির ছেলে হয়ে তিনিই বা পারবেন না কেন!‌

    রবেয়ার উদ্যাঁ-র জাদুখেলার বিজ্ঞাপন

    উদ্যাঁ-র প্রতি মুগ্ধতা দেখে সহকর্মী হেম্যান পরামর্শ দিল উদ্যাঁ-র শেষে একটা ‘‌আই’‌ যোগ করে দিলে (‌Houdini‌)‌ তার মানে হবে উদ্যাঁ-র মতো। কথাটা মনে ধরল এহরিশের। তখন মার্কিনি জাদুজগতের দিকপাল ছিলেন হ্যারি কেলার। হ্যারি নামটাও এহরিশের কাছাকাছি। তাই হুডিনির আগে বসল হ্যারি। জন্ম নিলেন জাদুকর হ্যারি হুডিনি।

    আরেকখানি বই হুডিনির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। নাম ‘‌রিভিলেশনস অভ আ স্পিরিট মিডিয়াম অর স্পিরিচুয়ালিস্টিক মিস্ট্রিজ এক্সপোজড— আ ডিটেইলড এক্সপ্ল্যানেশন অভ দ্য মেথডস ইউজড বাই ফ্রডুলেন্ট মিডিয়ামস— বাই আ মিডিয়াম’‌। বইটিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছিল দড়ির বাঁধন ও অন্য বিভিন্ন রকমের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে কীভাবে পেশাদার মিডিয়ামরা ভৌতিক কাণ্ড ঘটিয়ে ভৌতিক চক্রে হাজির লোকজনকে ঠকাত। যারা চক্রে বসত, তারা ভাবত, যেভাবে মিডিয়ামকে আটকে রাখা হয়েছে, তারপর বিভিন্ন রকমের বাজনা বাজানো, জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলা, ছবি আঁকা ইত্যাদি তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যি সত্যি আত্মা বা ভূত এসে এসব করছে। ১৮৯১ সালে এই বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে আলোড়ন পড়ে যায়। পেশাদার মিডিয়ামরা পাইকারি হারে বইগুলো কিনে পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে। কিন্তু তারই একটা কোনওভাবে রক্ষা পেয়ে হুডিনির হাতে পড়ে। তিনি ভৌতিক তত্ত্ব নয়, বন্ধনমুক্তি ও পলায়ন কৌশলগুলো নিয়ে পড়লেন। স্থির করলেন, এই খেলাকে তিনি জাদুবিদ্যার সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলায় পরিণত করবেন, আর তিনি হবেন এই খেলায় অদ্বিতীয়। হলেনও তাই।

    মাত্র ১৭ বছর বয়সেই জাদুকে পেশা হিসাবে নিতে ছেড়ে দিলেন চাকরি। ঝাঁপিয়ে পড়লেন অনিশ্চয়তা আর সংগ্রামের পথে। ইতিমধ্যে ১৮৯২ সালে মারা গেলেন বাবা। সংসারের দায়িত্ব পড়ল কাঁধে। হুডিনি তখন এখানে-ওখানে খেলা দেখিয়ে যৎসামান্য রোজগার করছেন। সেই সময়েই এক দুঃস্থ জাদুকর তাঁর একটি বাক্সের খেলা নামমাত্র দামে বেচতে চাইলে হুডিনি টাকা ধার করে বাক্স ও গুপ্ত কৌশল কিনে নিলেন। ভাই থিওডোর ওরফে ড্যাশকে নিয়ে খুললেন ‘‌হুডিনি ব্রাদার্স’‌। ড্যাশকে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে বাক্সে পুরে তালাবন্ধ করে দেওয়া হত। হুডিনি বাক্সের সামনে পর্দা টেনে দিয়ে মুখ বের করে এক, দুই করে গুনতেন। তিন বলার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জায়গায় দেখা দিত ড্যাশের মুখ। বাক্স খুলে দেখা যেত, হুডিনি ভেতরে হাত বাঁধা অবস্থায়। ১৯ বছর বয়সে হুডিনি বিয়ে করেন বিয়াত্রিশ রাহনারকে। তারপর বাক্সের খেলায় হুডিনির সঙ্গী হতেন বিয়াত্রিশ বা বেসি হুডিনি।

    হুডিনি জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন। কারণ তিনি যে-কোনও বন্দিদশা থেকেই ভূতুড়ে ক্ষমতায় পালিয়ে আসতে পারতেন। এ থেকে মার্কিন-ইংরেজি অভিধানে হুডিনাইজ (‌‌Houdinize) নামে নতুন‌ শব্দ যুক্ত হয়েছিল। কথাটার মানে যে কোনওরকম বন্দিদশা বা আটক অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেরিয়ে আসা।

    বেঁধে রাখা যেত না হ্যারি হুডিনিকে

    ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে প্রেততত্ত্ব নিয়ে আমেরিকায় বেশ আলোড়ন উঠেছিল। গড়ে উঠেছিল সাইকিক সোসাইটি। তাতেই অনেক মিডিয়াম গজিয়ে ওঠে, যারা প্রেতশক্তির নামে নানা কৌশলে ভূতুড়ে ব্যাপার ঘটিয়ে লোকের মনে ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি করত যে, সত্যি পরলোক থেকে আত্মা এসেই এসব কাণ্ডকারখানা ঘটাচ্ছে। আসলে এগুলো ছিল নিছক লোকঠকানো। এর ভেতর অলৌকিক বলে কিছুই থাকত না, থাকত শুধু গুপ্ত জাদু-কৌশল, নিছক চালাকি।

    ভৌতিক চক্রে মিডিয়ামকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বা অন্যভাবে বেঁধে রাখা হত, যাতে সে তার জায়গা থেকে উঠতে না পারে, বা হাত-পা ব্যবহার করতে না পারে। তারপরে ঘর অন্ধকার করে দেওয়া হত। কারণ অন্ধকার না হলে আত্মা বা ভূত আসবে না!‌ মিডিয়ামের নাগালের বাইরে বাদ্যযন্ত্র, জলভরা গ্লাস, স্লেট ইত্যাদি থাকত। আত্মা এসে বাজনা বাজাত, গ্লাস থেকে জল খেত, স্লেটে কিছু লিখত ইত্যাদি অদ্ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটাত। আলো জ্বাললে দেখা যেত, মিডিয়াম যেমন কে তেমন বাঁধা। মানে, এসব তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। অতএব, সত্যিই যেন আত্মা বা ভূত এসেছিল!‌

    জাদুর অত্যাশ্চর্য খেলা দেখানোর পাশাপাশি হুডিনি আর-একটা দারুণ কাজ করেছিলেন। সাইকিক রিসার্চের নামে প্রেতচক্র বসিয়ে মিডিয়ামদের দিয়ে অলৌকিক কাণ্ডকারখানা ঘটানোর ধুম পড়ে গিয়েছিল। সেই জোচ্চুরি তিনি ফাঁস করে দিয়েছিলেন। আমেরিকায় ডেভেনপোর্ট ব্রাদার্স নানা জায়গায় ভৌতিক খেলা দেখিয়ে আলোড়ন ফেলে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে বিখ্যাত জাদুকর ম্যাসকেলিন তাদের প্রতারণা ও গুপ্ত কৌশল ধরে ফেলেছিলেন। হ্যারি কেলার যে চোখের পলকে দড়ির শক্ত বাঁধন থেকে হাত বের করে নিয়ে আবার বাঁধনের ফাঁদেই ফিরে গিয়ে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দিতেন, সে কৌশলটি এই ভূতুড়ে মিডিয়ামদের কৌশল থেকেই নেওয়া। কেলার কিছুদিন ডেভেনপোর্ট ভাইদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে তাদের কৌশল রপ্ত করে ফেলেছিলেন। মেকি ভূতুড়ে মিডিয়ামদের প্রতারণা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর জন্যই কেলার এই ধরনের খেলা দেখাতেন। হুডিনিও পরে মিডিয়ামদের জোচ্চুরি ফাঁস করে দিয়েছিলেন ‘‌‌মার্জারি: দ্য মিডিয়াম এক্সপোজড‌’ নামে একটি বই লিখে।

    একবার ‘‌সায়েন্টিফিক আমেরিকান’‌ পত্রিকার তরফে সাইকিক ফেনোমেনন বা অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তারা হুডিনিকে স্পিরিচুয়ালিজম বা প্রেততত্ত্ব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু লেখা দিতে অনুরোধ করে। ব্যস্ততার কারণে হুডিনি তা লিখে উঠতে পারে না। এদিকে জেমস ব্ল্যাক নামে একজন বেশ কয়েকটি আর্টিকেল লেখে। যা পড়ে হুডিনি বিস্তর অসংগতি পান। আসলে হুডিনি নিজের চোখে না দেখে এ নিয়ে কিছু লিখতে চাননি। এদিকে পত্রিকার প্রবীণতম সম্পাদক এ এ হপকিন্স একটি কমিটি গঠন করেছেন বলে খবর পান। তাতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড.‌ উইলিয়াম ম্যাকডুগাল, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউ অভ টেকনোলজির প্রাক্তন অধ্যাপক ড.‌ ড্যানিয়েল কমস্টক প্রমুখের সঙ্গে হুডিনিকেও রাখা হয়েছিল। প্রেতচক্রের মিডিয়ামরা তাদের অতিলৌকিক ক্ষমতা প্রমাণ করলে পাঁচ হাজার ডলার দেওয়া হবে বলে ঘোষণাও করা হয়েছিল।

    জার্মানিতে তখন কাইজারের রাজত্ব। সেখানে হুডিনি ভের্নার গ্রাফ নামে এক পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ভের্নারের অভিযোগ ছিল, হুডিনি ধাপ্পা দেন, ওঁর হ্যান্ডকাফ খোলার ক্ষমতা নেই। কোলন আদালতে সকলের সামনে তালাসমেত শিকল খুলে ফেলেন হুডিনি। উচ্চ আদালতেও হার হয় ভের্নারের। হুডিনি পাঁচ বিচারকের সামনে মাত্র চার মিনিটে খুলে ফেলেন তালা।

    হুডিনি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেন, তাঁকে ছাড়াই কমিটি বেশ কয়েকটি প্রেতচক্রে হাজির হয়। ১৯২৪-এর সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকায় তা ছাপাও হয়। মিসেস ক্রানডন নামে এক মহিলা মিডিয়ামকে তো টাকা প্রায় দেওয়াই হয়ে যাচ্ছিল। হুডিনি তাতে বাগড়া দিয়ে নিজে প্রেতচক্রে হাজির থাকেন এবং কী কৌশলে মিডিয়াম হাত-পা আটকানো অবস্থাতেও আলো জ্বালাচ্ছে, টেবিল তুলছে বা কোনও জিনিস দূরে ছুড়ে ফেলছে, তা ধরে ফেলেন। মিডিয়ামদের জারিজুরি খতম হয়ে যায়। কেউ কেউ তাঁকে হুমকিও দেন। হুডিনি তাতে না দমে জোচ্চুরির সচিত্র বিবরণ নিয়ে প্রকাশ করেন বই। ফলে মিডিয়ামদের আর পরীক্ষায় পাশ করে টাকা জেতা হয় না।

    ‘‌আমারে বাঁধবি তোরা, সে বাঁধন কি তোদের আছে?‌’ রবীন্দ্রনাথের গানটি যেন হুডিনির উদ্দেশেই লেখা। বন্ধ কফিন, লোহার বয়লার, দড়ি দিয়ে বাঁধা ট্রাঙ্ক, তালা দিয়ে মুখ বন্ধ করা জলভরা দুধের ক্যান— কিছুই তাঁকে ধরে রাখতে পারেনি। রহস্যজনকভাবে বেরিয়ে এসেছেন ‘‌চাইনিজ টর্চার সেল’‌ থেকে। শিকাগো শহরের জেলখানায় তাঁকে হাতকড়া, পায়ে ডান্ডাবেড়ি আটকে একটা সেলে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বেরিয়ে এসেছিলেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কথা তো আগেই বলা হয়েছে।

    জার্মানিতে তখন কাইজারের রাজত্ব। সেখানে হুডিনি ভের্নার গ্রাফ নামে এক পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। ভের্নারের অভিযোগ ছিল, হুডিনি ধাপ্পা দেন, ওঁর হ্যান্ডকাফ খোলার ক্ষমতা নেই। কোলন আদালতে সকলের সামনে তালাসমেত শিকল খুলে ফেলেন হুডিনি। উচ্চ আদালতেও হার হয় ভের্নারের। হুডিনি পাঁচ বিচারকের সামনে মাত্র চার মিনিটে খুলে ফেলেন তালা। আদালত ভের্নারকে জরিমানা করে, মামলার খরচ দিতে বলে এবং রায়ের নকল কাগজে ছাপাতে নির্দেশ দেয়।

    রাশিয়ায় কয়েদিদের গাড়ি থেকেও তিনি পালিয়েছিলেন। জার খুশি হয়ে তাঁকে মূল্যবান উপহার দিয়েছিলেন।

    প্রসঙ্গত, একটা কথা জানাই। হুডিনি খুব ভাল সাঁতারু ছিলেন, প্রচুর দম ছিল। মিল্ক ক্যান, চাইনিজ টর্চার সেল বা বাক্সে ভরে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া— সব খেলাতেই ইচ্ছে করে দেরি করে বেরতেন, যাতে দর্শকদের মধ্যে প্রবল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। আমাদের এক বরেণ্য জাদুকর একবারই বাক্সে ভরে সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার খেলাটি দেখিয়েছিলেন। তারপর এ-প্রসঙ্গ উঠলেই কত অল্প সময়ে তিনি বাক্স থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন, তা সগর্ব জাহির করেন। এ নিয়ে মন্তব্য না করাই ভাল।

    হুডিনি হুডিনিই।‌

     
      পূর্ববর্তী লেখা পরবর্তী লেখা  
     

     

     



 

Rate us on Google Rate us on FaceBook